জীবনচিত্র নামঃ ডা. কাজী মো. ওবায়দুল হক সিদ্দিকী
Dr. Kazi Md. Obaidul Huq Siddique
ডাকনামঃ কাওসার
পিতার নামঃ কাজী মো. আবদুল্লাহ
পিতার পেশাঃ শিক্ষকতা
মাতার নামঃ মাহমুদা খাতুন
ভাইবোনের সংখ্যাঃ সাত ভাই ও পাঁচ বোন, নিজক্ৰম-চতুর্থ
ধর্মঃ ইসলাম
স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম/ইউনিয়ন/ডাকঘরঃ সরুলিয়া,
উপজেলাঃ তালা, জেলা-সাতক্ষীরা
নিহত হওয়ার সময় ঠিকানাঃ বাড়ি নং-৮, সড়ক-হাজী মো. মোহসীন রোড, দড়াটানা, থানা-কোতোয়ালী, ডাকঘর। জেলা-যশোর।
জন্মঃ ৫ মে, ১৯২৯, চট্টগ্রাম শহর
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
ম্যাট্রিকঃ প্রথম বিভাগ, ১৯৪৪, যশোর জিলা স্কুল
আইএসসিঃ প্রথম বিভাগ, ১৯৪৬, রংপুর কারমাইকেল কলেজ
এমবিবিএসঃ ১৯৫১, ঢাকা মেডিকেল কলেজ*
(*১৯৪৬ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭-এর দাঙ্গায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে চলে আসেন।)
শখঃ খেলাধুলা (লন টেনিস)
সমাজসেবাঃ সভাপতি, লায়ন্স ক্লাব, যশোর; সাধারণ সম্পাদক, রেডক্রস, যশোর; যশোর পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সাথে আমরণ জড়িত ছিলেন। স্কুলজীবনে স্কাউটিং
চাকরির বর্ণনাঃ
প্যাথলজিস্টঃ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ১৯৫১-৫৩
অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনঃ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ১৯৫৩-৫৫
এরপর চাকরি থেকে পদত্যাগ করে যশোরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস
হত্যাকারীর পরিচয়ঃ পাকিস্তান সেনাবাহিনী
নিহত/নিখোঁজ হওয়ার তারিখঃ ৫ এপ্রিল, ১৯৭১
মরদেহঃ পাওয়া যায়নি
স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ বি.এম.এ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ চিকিৎসক স্মৃতিফলকে নামাঙ্কিত আছে
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ পাননি
স্ত্রীর নামঃ নাজমা নেগার রশীদা বানু
বিয়েঃ ২ নভেম্বর, ১৯৫২
সন্তান-সন্ততিঃ এক পুত্র ও এক কন্যা
শিরীন সিদ্দিকী হাোসেনঃ বিএ, ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা। গৃহিণী
কাজী আতাউল হকঃ কনকৰ্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা; ম্যানেজার, স্কসিয়া ব্যাংক, কানাডা
তথ্য প্রদানকারী
শহীদ চিকিৎসক ভাই
এন-৮ (দ্বিতীয় তলা), আরিফাবাদ
হাউজিং সোসাইটি, মিরপুর-১১, ঢাকা
১৩৪ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
আমার স্বামী
শহীদ ডা. কাজী মো. ওবায়দুল হক
রশীদ বানু
ডাক্তার কাজী ওবায়দুল হক ১৯২৯ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল তৎকালীন সাতক্ষীরা মহকুমার সরুলিয়া গ্রামে। তার আব্বা আবদুল্লাহ সাহেব ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। ওবায়দুল হক সাহেবের জীবনের প্রথম ভাগ তার আব্বার বিভিন্ন কর্মস্থলে অতিবাহিত হয়। ১৯৪৪ সালে ডাক্তার সাহেব রংপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৩ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। পরে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৫১ সালে এমবিবিএস পাস করেন। ডাক্তারি পড়াকালীন তিনি দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে Merit scholarship অর্জন করেন।
ডাক্তার সাহেব ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাউস সার্জন হিসেবে কাজ করেন। এই সময় বিদেশে উচ্চশিক্ষা লাভের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও তিনি তা গ্রহণ করেননি। তার আব্বার ইচ্ছানুসারে তিনি নিজের গ্রামের চিকিৎসকের অভাব দূর করার জন্য সরুলিয়ায় বাস করার পরিকল্পনা করেছিলেন। পরে অবশ্য নানা দিক বিবেচনা করে তিনি যশোর শহরে প্র্যাকটিস শুরু করেন।
যশোর শহরে তার ষোলো বছরের চিকিৎসক জিবনে তিনি অনেক সেবামূলক কাজ করে গেছেন। মানুষের সেবা তার জীবনের লক্ষ্য ছিল। ষাট দশকে যশোর শহরে যেসব সেবামূলক সংস্থা ছিল তার প্রায় সব ক’টিতে ডাক্তার ওবায়দুল হক জড়িত ছিলেন। আরেকটি কাজ তিনি করতেন যার খবর তার ঘনিষ্ঠজনরা ছাড়া আর কেউ জানে না। দক্ষ চিকিৎসক হিসেবে তার সুনাম ছিল। ফলে দূর গ্রাম থেকে বহু রোগী তার কাছে আসত। এসব রোগীর অনেকেই টাকাপয়সা জোগার করতে পারতো না। ডাক্তার সাহেব ওষুধপত্র ও টাকা দিয়ে তাঁদের সাহায্য করতেন। তাঁরা এই নীরব সেবাকর্মের কথা বাইরে বলতে তিনি তার পরিজনদের মানা করতেন।
১৯৭১ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি চিকিৎসক হিসেবে যেখানেই দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন, তিনি তা করে গেছেন। এই উদার হৃদয় মানুষটির মনে দেশের সেবার জন্য আরো যেসব পরিকল্পনা ছিল তা তার অকাল মৃত্যুর জন্য রূপায়িত হওয়ার সুযোগ পেল না।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ১৩৫
শহীদ ডা. কাজী মো. ওবায়দুল হক সিদ্দিকী
১৩৬ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
শহীদ ডা. কাজী মো. ওবায়দুল হক সিদ্দিকী
ডাক্তার ওবায়দুল হক স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে যান। বিয়ের পর ডাক্তার সাহেবের উৎসাহে আমি উচ্চশিক্ষা লাভ করে বাংলাদেশের শিক্ষা বিভাগে কাজ করতাম। বেশ ক’বছর সেখানে কাজ করি। ‘বাংলাদেশ টেকস্ট বুক বোর্ডে’ কর্মরত অবস্থায় ১৯৭৪ সালে বিদেশে চলে যাই। এখন কানাডার টরেন্টো শহরে অবসর জীবনযাপন করছি। ছেলেমেয়েও টরেন্টো শহরে বাস করে। মেয়ে শিরীন হোসেন শিক্ষাজীবন শেষ করে মনট্রিল শহরে ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত। তাছাড়া সে তার স্বামী আশফাক হোসেনের সঙ্গে বিদেশে মুসলিম বাঙালি চেতনাধারাকে সত্যপথে ধরে রাখার জন্য নানা কাজকর্ম করেছে।
ছেলে কাজী আতাউল হক পড়াশোনা করেছে মন্ট্রিলের কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটিতে। একই সাথে সে টরেন্টে নোভাস্কোসিয়া ব্যাংকেও কর্মরত। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের প্রাণের টান এখনো অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে।
দৈনিক সংবাদ বিশেষ সংগ্রাহক সংখ্যা-৩
পরিকল্পনায়ঃ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। প্রকাশকালঃ সোমবার ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৮; পৃ. ২৮ থেকে সঙ্কলিত নিম্নলিখিত বর্ণনা।
শহীদ অধ্যক্ষ সুলতান উদ্দিনের বাসায়ই ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল দুপুরে হত্যা করা হয় ডাক্তার কাজী ওবায়দুল হককে। প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হলে তিনি সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন শহীদ অধ্যক্ষ সুলতান উদ্দিনের বাসায়। ৫ এপ্রিল দুপুরে অধ্যক্ষ সুলতান উদ্দিনকে ধরে ঘরের বাইরে বের করে নিয়ে এলে ডাক্তার কাজী ওবায়দুল হকও বেরিয়ে আসেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে প্রশ্ন করে, ‘জবান কি?’ জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বাঙালী।’ ইতোমধ্যে বাড়ির সবাইকে বাইরে এনে হাত উঁচু করে লাইনে দাঁড় করানো হয়। ডাক্তার কাজী ওবায়দুল হকসহ তিনজন পুরুষকে আলাদা লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ
ক. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা; তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; প্রকাশকালঃ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২।
খ. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা; বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যালয় বিএমএ ভবনে(তোপখানা রোড, ঢাকা) শোভিত স্মৃতিফলকে উৎকীর্ণ। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)
গ. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে, দলিলপত্র; সম্পাদনাঃ হাসান হাফিজুর রহমান; প্রকাশনাঃ তথ্য মন্ত্রণালয়, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; প্রকাশকালঃ আষাঢ় ১৩৯১; জুন ১৯৮৪; ৮ম খণ্ড; পৃ. ৭০৭ ।
ঘ. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারকগ্রন্থ; প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; ১ম পুনর্মুদ্রণ, প্রকাশকালঃ পৌষ ১৪০০, জানুয়ারী ১৯৯৪; পৃ. ১০১।
ঙ. শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ; সম্পাদনাঃ রশীদ হায়দার, প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী, প্রকাশকালঃ আগ্রহায়ণ ১৩৯২, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫; পৃ. ৪১ ।
চ. দৈনিক সংবাদ বিশেষ সংগ্রাহক সংখ্যা-৩, যেসব হত্যার বিচার হয়নি; পরিকল্পনায়ঃ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। প্রকাশকালঃ সোমবার ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৮; পৃ. ৯, ২৮, ৪৩।
ছ. মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস; সম্পাদনাঃ আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন; প্রকাশনাঃ সাহিত্য প্রকাশ; প্রথম খন্ড।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ১৩৭
Reference: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ