You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.06 | বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন কর্তৃক প্রত্যন্ত সীমান্ত ও মুক্ত এলাকায় অবস্থিত ধন-সম্পত্তির সংরক্ষন ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন কর্তৃক প্রত্যন্ত সীমান্ত ও মুক্ত এলাকায় অবস্থিত ধন-সম্পত্তির সংরক্ষন ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকার, বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প বোর্ড
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

বাংলাদেশ ওভারসীজ ট্রেড মিশন
২২৫-সি, লোয়ার সার্কুলার রোড, ৫ম তলা
কলকাতা-২০
ক্যাবলঃ বাংলাট্রেড
ফোনঃ ৪৪-৮৮০৬ (সৌজন্যমূলক)
ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মুজিবনগর,

প্রিয় মহোদয়,

আমি বিনীতভাবে এখানে সীমান্ত ও মুক্ত এলাকার অর্থনীতি ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদের গবেষণার সমন্বিত বিবরণ পেশ করতে চাই। এই বিবরণটি বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণে তাদের সাথে বৈঠক শেষে তৈরি করা হয়েছে।

এই বিবরণটি সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীতি নির্ধারণ এবং পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।

আপনার অসীম দয়া হবে যদি আপনি কলকাতায় বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন চালনার প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখেন যার মাধ্যমে বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সাথে যোগাযোগ করার কাজও আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা করা হবে। অতএব, এই মিশন যা বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার্থে আয়োজন করা হয়েছে তার জন্য আমাদের সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন।

ধন্যবাদান্তে
আপনার বিশ্বস্ত
(মুস্তফা সারওয়ার)
সদস্য
ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প বোর্ড
বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন
বাংলাদেশ সরকার

চরম গোপনীয় প্রেরকঃ মুস্তাফা সারোয়ার
সদস্যঃ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প বোর্ড, বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন, ২২৫/সি লোয়ার সার্কুলার রোড, কলকাতা-২০।

বিষয়ঃ বিএসএফ এর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে যার বিষয় বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদসমূহ যেসব কোন যথাযথ যত্ন ছাড়াই পড়ে আছে ও মানবিক দুর্যোগ ঘটাতে পারে এমন অননুমোদিত বাণিজ্য কার্যক্রম এবং মুনাফালোভীদের নিয়ন্ত্রণ করবার পরামর্শ সাথে বাণিজ্য, সরকারি আয় এবং প্রাদেশিক ব্যাংক।

বিএসএফ এর ঊচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আলাদা আলাদা নিমন্ত্রণের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ মোজাফফর আহমেদ, চেয়ারম্যান, পরিকল্পনা কমিশন এবং নিম্নসাক্ষরকারী তাদের অফিসে গিয়েছিলেন এবং সীমান্ত এলাকায় বেআইনি বাণিজ্য বিষয়ে মতামত আদানপ্রদান করেছেন। যেহেতু বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশ ও তার প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তাই নিম্নসাক্ষরকারী তথ্য উন্মোচন এবং সরকারের প্রয়োজনীয় নীতিসমূহ পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। বাংলাদেশে সৃষ্ট দুর্যোগ এবং বাংলাদেশের প্রতি তার প্রতিবেশি রাষ্ট্রের আন্তরিক ঔদার্যের সুযোগ নিয়ে যেসব মুনাফালোভীরা এবং কালোবাজারীরা অর্থের পাহাড় বানাবার অভ্যাস সৃষ্টি করেছেন তাদের নির্মূলের উদ্দেশ্যে নীতি প্রণয়ন করা উচিত।

সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ এর চলমান বাংলাদেশের পণ্যদ্রব্য দখলের অভিযান সম্পর্কে

প্রতিবেদন মোতাবেক দেখা গেছে যে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ অথবা শুল্ক বিভাগের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের মাধ্যমে আনীত পণ্যদ্রব্যের দখল নেয়া হচ্ছে। আরো জানা গেছে যে এইসব পণ্যদ্রব্যের উপর শুল্ক এবং কর সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিশাল পরিমাণ পণ্য এসব কারণে অপব্যবহারের স্বীকার হচ্ছে। পণ্যসমূহ বাংলাদেশের সরকারের নিকট বিমুক্ত করা উচিত।

প্রতিবেদন এবং পরামর্শ
(১) যেহেতু বাংলাদেশের বড় সংখ্যক জনগণ সীমান্তের এই প্রান্ত অতিক্রম করছে সুতরাং ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া উচিত যেন তারা যেন বাংলাদেশিদের যেকোন বাংলাদেশি পণ্যদ্রব্য যেমন পাট, চা, চামড়া ও চর্মজাত দ্রব্য, সবজি, তামাক, যন্ত্রপাতি, মাছ, চলচ্চিত্র, নিয়মিত ব্যবহার্য জিনিসপত্র, খাদ্য-শস্য, গবাদিপশু ইত্যাদি কোন ধরনের আপত্তি এবং অসুবিধা ছাড়া বহন করতে অনুমতি দেয়। এই বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা পারষ্পরিক বাণিজ্যের ওপর আয়োজিত বৈঠকের সময়েও নিশ্চিত করা হয়েছে।
(২) বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের বাণিজ্য বোর্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্যদ্রব্যের বিদ্যমান ব্যবসায়ীদের জন্য বৈধ নথি প্রণয়নের মাধ্যমে একটি আইনগত বৈধ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে যেন বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃত্ব মেনেই বাংলাদেশের সকল রপ্তানী পণ্যদ্রব্য আইনানুগভাবে রপ্তানী হতে পারে। এই ব্যাপারটি অনুমোদিত ব্যবসায়ীদের আলাদা করবে এবং অননুমোদিত ব্যবসায়ী ও গুপ্তচরদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।
গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত অননুমোদিত ডিলার এবং ব্যক্তিদের অপসারিত করতে সাহায্য করবে। (৩) বাংলাদেশ সরকারের লাইসেন্সধারীদের সম্নান দিতে এবং তাদের উক্ত সরবরাহ প্রদান, বাধা অথবা বাধা এবং বাধাহীনভাবে করমুক্তিতে whatsoever বি. এস. এফ কর্মকর্তাগণদের পরামর্শ দেওয়স হয়েছে। (৪) সীমান্ত বলয়ে শুধুমাত্র অনুমোদিত ডিলার যাদের বাংলাদেশ সরকার দ্বারা লাইসেন্স ইস্যুকৃত হবে তারা এম. বি./বি.এস.এফ এবং অন্যান্য সকল সম্পর্কযুক্ত প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যবসা চালানোর অনুমিত দেওয়া হবে। লাইসেন্সের নমুনা কপি প্রত্যেক সীমান্ত চেক পোস্টের সম্পর্কিত তথ্য ও পথ প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে। (৫) সেখানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক লেনদেনের লাইসেন্স এবং বৈধ কাগজপত্র প্রবর্তনের সাথে পণ্যের নিয়মতান্ত্রিক এবং বৈধ লেনদেন থাকবে শুধুমাত্র সেই মানুষজনের যারা সীমান্ত এলাকায় এমন লেনদেন কার্যক্রমে জড়িত আছে। এমন লাইসেন্স কঠোরভাবে বিশ্লেষণ করে এবং তদারকি করে স্থানীয় বাংলাদেশের ককর্মকর্তা, এমএনএ/এমপিএ অঅথবা জননেতাগণ যারা বি.এস.এফ এবং নিজনিজ সীমান্ত এলাকায় নিযুক্ত কর্তৃপক্ষের সাথে সংযুক্ত তাদের দ্বারা ইস্যু হবে। বিদ্যমান নেতা ব্যতীত অন্যান্য ব্যক্তি এমন বৈধ কাগজপত্র/লাইসেন্স দিয়ে ইস্যু হবেন না। প্রত্যেক সীমান্ত এলাকায় সকল বাংলাদেশী পণ্য এক জায়গায় রাখা হবে(যদি সহজলভ্য থাকে) এবং সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মী দ্বারা প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পর বাণিজ্যিক পণ্য যেমন পাট, খাদ্যশস্য, ওষুধ, তামাক, চামড়া হতে সামান্য কর রেখেবিন্যস্ত করা যেতে পারে। সীমান্ত এলাকায় সহজলভ্য এমএনএ/এমপিএ এবং কর্মীদের মধ্যে ২ ব্যক্তিকে উক্ত কাজ তদারকি করার জন্য নির্বাচিত করা যেতে পারে যারা কঠোরভাবে তত্ত্বাবধান করবে এবং সততা এবং নিষ্ঠার সাথে তাদের কাজ সম্পাদন করবে যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে লোকবলের রোল মডেল হবে। (৬) অস্বাভাবিক উপায়ে লাভ করা, সরবরাহ ধরে রাখা, কালোবাজারি এবং যেকোনো অন্য কার্যক্রম at the cost of বাংলাদেশ tragedy and due to sincere feelings over this side by any person or persons সরকার এবং জনগণ দ্বারা অপসারিত করতে হবে। রিপোর্ট করা হয়েছে যে কিছু পাচারকারী ভাল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে বিদেশী পেটেন্টের ওষুধ এবং অন্যান্য পণ্য নিয়ে আসতেছে। ভারতের অনেক অভ্যন্তরে যেমন মাদ্রাজ, মহারাষ্ট্র প্রভৃতিতে স্থানীয় পাচারকারী দ্বারা এসব পণ্যের সরবরাহ সম্পর্কে আরো রিপোর্ট রয়েছে যা ভারতের স্বার্থবিরোধী। প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য। সেখানে কে.তেল, ম্যাচ, চিনি, লবণ, ডাল, আটা, ময়দা, সাবান এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের অসাধারণ চাহিদা রয়েছে যা ভারতের সরবরাহকারীদের হতে আমদানি করার অনুমিত দেওয়া হবে। এই সরবরাহকারীরা কলকাতায় বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন থেকে বিস্তারিত ও বৈধ কাগজপত্র পাবে। সকল বাণিজ্যিক পণ্যের রপ্তানি যেমন পাট, চামড়া ও চামড়াজাত, খাদ্যশস্য(যদি থাকে), তামাক, চা, যন্ত্রপাতি & catties রপ্তানিতে বাংলাদেশ সরকার royalty অনুভব করেছে। বাংলাদেশ সরকার পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পণ্য আমদানিতে কর অথবা royalty ধার্য করতে পারে।
এরূপে প্রাপ্ত রয়্যালটি বা করের সবটুকুই বাংলাদেশের আওতায় আসবে। বর্তমানে বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্বার্থ ও অন্যান্য সকল সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনা করছে।

বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন এর প্রয়োজনীয়তা
ইউ.এস.এস. আর, রোমানিয়া প্রভৃতির মত
ভারত ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে দীর্ঘ বাণিজ্য সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে, এবং বিশেষভাবে জরুরি সময়ে এই ধরনের একটি মিশন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত স্বার্থ দেখাশোনা করার জন্য জরুরিভাবে প্রয়োজন হয় :
১/ যেহেতু আমাদের সরকার মুজিবনগর থেকে বৈদেশিক পক্ষগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে এবং কোনো বাণিজ্য চুক্তি বা ক্রয়-বিক্রয় চূড়ান্ত করতে যতক্ষণ না পর্যন্ত ওইসব দেশের সরকার কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত পারছে না, এই বাণিজ্য মিশন বিদেশে বাংলাদেশের ব্যবসা ও বাণিজ্যের বিষয়গুলো দেখভাল করতে পারে।
২/ যেহেতু ভারত সরকার পূর্ণ কূটনৈতিক মর্যাদার সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশ মিশনের কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন , এই বাণিজ্য মিশন ভারত এবং অন্যান্য সব বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে তাদের বাণিজ্যিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির জন্যও কাজ করতে পারে।
৩/ বাণিজ্যিক চিঠিপত্রের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে খোঁজখবর প্রাপ্তির জন্য । বিদেশে পাট, চা, তামাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যদ্রব্য, যন্ত্রপাতি বিক্রির জন্য প্রস্তাব প্রাপ্তির মাধ্যমে বিদেশে সরকারের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ দেখাশোনার জন্যে; যেখানে সমন্বয়, যোগাযোগ , সঠিক ব্যবহার ও দরদামের অভাবে এদের অনেকগুলোই সঠিক বাজার মূল্য পেতে পারত না ।
৪/ পাট এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য সম্পর্কে সময়ে সময়ে আগ্রহী দেশগুলোর কাছে তথ্য প্রদান যেহেতু এই ধরনের তথ্যের অভাবে তাদের কেউ কেউ আস্থা হারাচ্ছে। তাদের অনেকেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও উন্নয়ন সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছে। অন্যথায় এমন কোন প্রচার সম্ভব নয় যা জরুরি অবস্থায় রাজনৈতিক স্বীকৃতি পেতেও সহায়ক হতে পারে। যদি আমরা বিদেশী দেশগুলোর এই ধরনের আস্থা হারিয়ে ফেলি তবে স্বাধীনতার পর অর্থনীতি মারাত্মক সমস্যার মোকাবেলা করবে।
৫/ বিদ্যমান বাণিজ্য কার্যক্রম ও চাহিদার প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য কর্মসূচি চালু করতে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক কর্মসূচির পরিকল্পনা প্রণয়নে, যা আমাদের পরিকল্পনা সেলের কার্যক্রমে সাহায্য করবে। কারণ তারা এই বাণিজ্য মিশন কর্তৃক কৃত সুনির্দিষ্ট তারিখভিত্তিক সংগ্রহ লাভ করবে।
৬/ এই বাণিজ্য মিশন ঢাকা/কলকাতায় “ইউএসএসআর এবং রোমানিয়া , চেকোস্লোভাকিয়া ইত্যাদির বাণিজ্য চিত্র” এর মত অথবা ঢাকায় “যুগোস্লোভিয়ার আন্তঃ রপ্তানি” এর মত কাজ করতে পারে। এখানে আরো উল্লেখ করা যায় যে পূর্ব জার্মানি, চীন, কিউবা, উত্তর ভিয়েতনাম স্বীকৃতি ছাড়াই স্বীকৃতি লাভের জন্যে পরিচিতিদের মধ্যে নিজেদের অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক শুরু করে। বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদসমূহ যা ইতোমধ্যেই আমাদের দখলে রয়েছে|

বাংলাদেশের বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ সীমান্ত পার হয়ে এই পাশে চলে এসেছে। নীচে এদের কিছু অংশ তালিকাভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের এসকল সম্পদ সঠিক যত্ন এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক। কিন্তু সরকার থেকে কোনো দায়িত্ব বা উদ্বেগ নেই এইসব মূল্যবান সম্পদ সম্পর্কে। বাণিজ্য বোর্ডের কোনো প্রচেষ্টাই গ্রহণ করছে না, যদিও আমরা মন্ত্রণালয় দ্বারা এর দায়িত্বপ্রাপ্ত। এই নীতি বন্ধ করা অথবা অন্য কোন নীতি গ্রহণ করার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। অন্যথায় এসব সম্পদয়ের অনেক অংশই ক্ষতিগ্রস্ত, নষ্ট বা চুরির স্বীকার হবে। সমন্বয় এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভাবে এসব সম্পদ পরে আছে। এসব সম্পত্তির মূল্যমান প্রায় ৩ কোটি রূপি হবে। এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন।

মোটর গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন
বাংলাদেশের অনেক যানবাহন অযত্নে অলসভাবে পরে আছে। পরিবহন পুল সব অঞ্চল এবং সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের সকল যানবাহনের সমন্বিত তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা করতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিৎ বাংলাদেশের প্রতিটি যানবাহনের হিসাব রাখা কারণ সেসব বাংলাদেশ সরকারেরই সম্পত্তি। সকল যানবাহনের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ এবং তাদের সঠিক বীমার ব্যবস্থা করা উচিত। জানা যায় ৫০/৬০টি যানবাহন কৃষ্ণনগর এলাকায় পড়ে রয়েছে। সম্ভব হলে সরকারী আয় বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যিক যানবাহন বাংলাদেশ পরিবহন পুল কর্তৃক ভাড়ায় খাটানো যেতে পারে ।

কিছু সম্পত্তির বিবরণ
চুনাপাথর মেশিনারিজ প্ল্যান্ট, টাকেরঘাট: একটি বৃহৎ চুনাপাথর খনির মেশিনারি প্ল্যান্ট বিদেশী বংশোদ্ভুত খোলা বাক্সে এই পাশে এসেছে। এমন যন্ত্রপাতির তালিকা আলাদা আলাদাভাবে পাওয়া যায়।
সমগ্র প্ল্যান্ট এর মূল্যমান ২ কোটি রুপি এরও অধিক বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কর্মকর্তার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। যেহেতু প্ল্যান্টটি একটি মূল্যস্ফীতি বিহীন মুদ্রায়, অর্থাৎ ১১.৪০ রূপিতে ১ পাউন্ড হিসেবে আমদানি করা হয়েছিল অতএব এর স্থানীয় বাজার মূল্য এর থেকে অনেক বেশিই হবে।
ব্যারিস্টার মুন্তাকিম চৌধুরী, এম.এন.এ এবং জনাব শহীদ আলী খান, এম.পি.এ. বর্ণনামূলক তালিকার বিস্তারিত আদায় করতে ঘটনাস্থলে অনেক দিন ব্যয় করে খুবই উচুঁদরের কাজ করেছেন। অন্যথায় এতটা বিস্তারিত বিবরণ প্রাপ্তি অসম্ভব হত। ব্যারিস্টার চৌধুরী সেখানে খুবই প্রভাবশালী এবং বিএসএফের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। অতএব, ব্যারিস্টার চৌধুরী এবং জনাব খানের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা কাজে লাগানো যেতে পারে। এটা লক্ষনীয় যে অর্থমন্ত্রণালয় জনাব শহীদ আলী খানের কাজের ফলে উপকৃত হয়েছে যিনি হীরার সরঞ্জামের একটি বাক্স এবং এক প্রকার মেশিন, সাথে মেশিনারি প্ল্যান্টের বিস্তারিত বিবরণ সঙ্গে এনেছেন।

মন্তব্য: আমরা যদি এসব মেশিনারিজ এর সর্বোচ্চ মূল্য পেতে চাই তাহলে আমার মনে হয় আমাদের উচিৎ একটি প্রকৌশল কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করা। তারা এসব মেশিনারিজ মূল্যায়ন করে তাদের প্রকৃত মূল্য সম্পর্কে আমাদের অবহিত করবে। তারপরেই কেবল আমরা আগ্রহী দল/পক্ষগুলোর সঙ্গে দর কষাকষি শুরু করতে পারব। কিন্তু “যুদ্ধের গন্ধ” যেহেতু বিরাজমান তাই আমরা “যেমনভাবে যেখানে আছে” এটার উপর ভিত্তি করে অনতিবিলম্বে তাদের বিক্রি করে দিতে পারি। পরিস্থিতিও সেই একই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেবার আগে সর্বোচ্চ মূল্য পাবার আশায় প্রকৃত
আগ্রহী পক্ষগুলোর সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা যেতে পারে, যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী তেমনটাই মনে করেন।

যদি এখানে এইসব মেশিনারিজ আনা সম্ভব হয় বা পরিদর্শন দল পাঠানো যায় তবে তাদের যুক্তিসঙ্গত মূল্যায়ন করা সম্ভব। প্ল্যান্টের পণ্যসামগ্রীর তালিকা ১০ রুপীর বিনিময়ে বোর্ড কার্যালয়ে পাওয়া যাচ্ছে। জনাব জহিরুল কাইয়ুম এম.এন.এ, অধ্যক্ষ হামিদুর রহমান এম.পি.এ., ব্যারিস্টার এম চৌধুরী, এম.এন.এ., জনাব শহীদ আলী খান, এম.পি.এ. এবং জনাব আকরাম সিদ্দিকী প্রমুখ তাদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।

এপাশে নিয়ে আসা অন্যান্য জিনিসের বিস্তারিত তালিকাসমূহ
সাথে চুনাপাথর মাইনিং প্ল্যান্টের যন্ত্রপাতি

অন্যান্য বিবিধ ইস্পাতের উপকরণ যা ইতিমধ্যে সীমান্ত পাড় করে এই দিকে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের নীচে তালিকাভুক্ত করা হলো:

ক্রমিক নং                    পণ্যের নাম                       পণ্যের বিবরণ                                       পরিমাণ

১                     রেল                                  ৪০ পাউন্ড, ৩০ পাউন্ড, ২০ পাউন্ড, ১৫ পাউন্ড        ৫০,০০০ আর.এফ.টি.

২                           সিআই শিট                       নতুন ৮’ দৈর্ঘ্য                                                    ১,৫৪৩ আর.এফ.টি.

২২ গেজ ইউ.এস. মেইড                                   ১২৫০ আর.এফ.টি.

৩                          জিআই পাইপ                      ২.৫”, ১.৫”, ১” এবং০.৫”                                   ৬০০০ আর.এফ.টি.

৪                           সিলিং ফ্যান                         ৪৮” জিইসি                                                        ৮০টি

৫                           টেবিল ফ্যান                       ডিলাক্স                                                                   ১৬টি

৬                          আয়রন শিট                       গডরি এর তৈরী, মাঝারি আকারের                        ১টি

৭                             এমএস রড                          বিভিন্ন আকার এমএস রড                                         ১৭০ হতে ১৭৫ টন

(আনুমানিক)

ভালো দাম পাওয়া সম্ভব হবে যদি সব পণ্য একটি নামকরা পরিবহন ঠিকাদারের মাধ্যমে কলকাতায় এনে গুদামে মধ্যে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়। কিছু ক্রেতা এখানে পণ্যের প্রাপ্তিতে নগদ অর্থ পরিশোধের প্রস্তাব করেছেন।

টাকেরঘাটের চুনাপাথর খনি প্রকল্পের ট্রাক্টর ও যানবাহনের বিশদ তালিকা 

ক্রমিক নং                         পণ্যের নাম                          পণ্যের বিবরণ                                                    পরিমাণ

১                           ইস্যুজু                                     ৫ টনের ডিজেল ট্রাক, মডেল ডিএ            

৭২০, ৬ সিলিন্ডার, জাপানে তৈরি                 ২টি

২                           শেভ্রোলেট                               ৫ টনের ডিজেল ট্রাক , ৩ সিলিন্ডার,                                       

মডেল নং ৬০                                                  ১টি

৩                            টয়োটা                                    ৪ হুইল জীপ মডেল ৪০৩,

৬ সিলিন্ডার, ১৩৫ টাইপ                                ১টি

৪                           মসি ফার্গুসন                       ট্রাক্টর এফএফ ৩৫, মডেল এইচপি, এইচপি ৩৫,        —

৩ সিলিন্ডার।

ক্রমিক নং                         পণ্যের নাম                          পণ্যের বিবরণ                                                    পরিমাণ                              

৫                    সোলারাস                                 মডেল এমটি ৩.৫০, ৪ সিলিন্ডার,

ডিজেল এমপি ৫০, ১০০০ আরপিএম,

ইউ.এস.এস.আর. নির্মিত                           ৫টি

৬                    ট্র্যাক্টর ট্রেলার                         ডক্কি নির্মিত

৫ সিলিন্ডার, ডিজেল মডেল ১৫০০                      ১৩টি

৭                     ট্রাক                              যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত,                                               ৫টনের

(ইন্টারন্যাশনাল

ট্রাক)

৮                     ফোর্ড ট্রাক                    এফ ৬৮২, মডেল এইচপি ১০৪, ৬ সিলিন্ডার,

আরপিএম ২৫০০ ডিজেল, ইউ.এস.এ. নির্মিত       ১টি(৫টনের),

১টি(৩টনের)

বাংলাদেশ সরকারকে উপরে উল্লেখিত বিষয়াদির ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ড্রিলিং কাজের জন্য ব্যবহার্য ডায়মন্ড সরঞ্জাম

জনাব শহীদ আলী খান, এম.পি.এ. ডায়মন্ডের সরঞ্জামের একটি বাক্স এনেছেন যা এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে রক্ষিত আছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কর্মকর্তারা এই সরঞ্জামের মূল্যায়ন করেছেন ৩০/৪০,০০০ রুপী, যা নিচে বর্ণিত আছে। কিন্তু আমাদের এই পণ্যের মূল্য সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। এখন মন্ত্রণালয়ের সরবরাহকৃত নমুনা দ্বারা সঠিক মূল্য নির্ণয় করা হচ্ছে ।  

স্পিড বোট, ইঞ্জিন ও অন্যান্য উপকরণ যা প্রতিরক্ষা

বিভাগের প্রয়োজনীয় তবে এখন টাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের অধীনে আছে সেসবের তালিকা

ক্রমিক নং                         পণ্যের নাম                                      পণ্যের বিবরণ                                                    পরিমাণ              

১                      ওয়েস্ট বেন্ড আউটবোর্ড মোটর                        মডেল ২০ এইচ পি, ২ সিলিন্ডার                         ৮টি

২                     জনসন আউটবোর্ড মোটর                     মডেল ২০ এইচপি, ২ সিলিন্ডার                           ৬টি

মডেল-আইএস এইচপি                            ২টি

৩                    ইয়ামাহা আউটবোর্ড মোটর.(কে ওয়েল) মডেল ১৫ এইচ পি                                           ৪টি

৪                     উপরোক্ত যন্ত্রাদির যন্ত্রাংশ                                                                                                           —

৫                      রিমোট কন্ট্রোল এবং অন্যান্য জিনিসপত্র

সঙ্গে স্পিড বোট ফাইবার গ্লাস কাঠামো                                                                        ১টি

৬                    অ্যালুমিনিয়াম কাঠামো               বড় সাইজের                                         ১টি

৭                     অ্যালুমিনিয়াম কাঠামো               —–                                                       ২টি

৮                    ই পি আর ওয়্যারলেস সেট                   বড় আকার                                           ১টি

৯                      ই পি আর মোবাইল ওয়্যারলেস সেট    ছোট আকার                                         ৩টি

১০                  পুলিশ ওয়্যারলেস সেট               —                                                         ১টি

১১                  ওয়্যারলেস সেট                         ১০ ওয়াট, উপগ্রহ টাইপ

টিআরসি-১ এসএফ-২ ভিএইচএফ,

রেডিও সরঞ্জাম ৩৩৩৯, ১০০১,

১০০২, ১০০০, ১০৭৯, ১০৭৮, ১০৭৭,

১০৭০, ১০৭৫, ১০৭৪, ১০৭৩ এবং ১০৭২            ৬টি

দ্রষ্টব্য: এই সকল ওয়্যারলেস সেট এখন ভারতীয় সেনা বাহিনীর কাছে রয়েছে যেগুলো নিম্নলিখিত স্থান থেকে উদ্ধারকৃত হয়

(১) শোলা চৌকী, (২) চিড়াই চৌকী (৩) মারকুরি চৌকী, (৪) খালিয়াঝুড়িয়া চৌকী

১২                          সিমেন্ট                                                   এবিসি                                                                    ১০০ ব্যাগ

১৩                       টেলিভিশন সেট                                 ২৩ ইঞ্চি                                                                 ১টি

১৪                          রেফ্রিজারেটর                                                                                                                       ৬ সিএফটি

১৫                        বিষ্ফোরক সমূহ

বারুদ                                                                                                                                     ১৫৫ এমডিএস

জেলিগনেট                                                                                                                            ২,০০০ পাউন্ড

উপরে উল্লেখিত পণ্য সামগ্রীর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এটা দেখাশোনা করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। এটা জানা যায়নি যে এই বিষয়টি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোচরীভূত করা হয়েছে কিনা। তাহলে ব্যারিস্টার মুন্তাকিম চৌধুরী, এম এন এ এবং জনাব শহীদ আলী খান, এম পি এসব সম্পদ দেখাশোনার অনুমতি লাভ করতে পারেন যেহেতু তারা এসব ক্ষেত্রে অসাধারণ উপদেশ দিয়েছেন এবং এই বিষয় মোকাবেলায় তারাই উপযুক্ত ব্যক্তি বলে প্রতীয়মান হয়।

পাট                       (১) ১৯৭১-৭২ সালের বাংলাদেশী ফসল                                   ৫০/৫৫ লক্ষ বেল (আনুমানিক)

পরিসংখ্যান        (২) গতবছরের উদ্বৃত্ত                                                   ১৫লক্ষ বেল (আনুমানিক) 

………………………………………………………..

মোট =                 ৬৫লাখ বেল।

নভেম্বর, ১৯৭০-এর সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়

দরুণ অনেক রেল ওয়াগন এবং বিশেষ করে ভাণ্ডার

যশোর, কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী এবং

বগুড়া ইত্যাদির মত উত্তরবঙ্গের জেলা থেকে সরাতে

পারা যায় নি।

(৩) বাংলাদেশের মিলগুলোতে প্রয়োজন                                      আনুমানিক প্রায় ৩০ লক্ষ বেল

(৪) বাংলাদেশ হতে কাঁচা পাটের বিশ্ব বাজারের চাহিদা                  আনুমানিক প্রায় ৩৫ লক্ষ বেল

বাংলাদেশের পাটকল ও রপ্তানির বর্তমান অবস্থান

আমেরিকার অ্যাসোসিয়েট প্রেসের সংবাদদাতা মিস্টার আর্নল্ড জেইথিন যিনি ঢাকায় পাট বোর্ড পরিদর্শন করেছেন আমাকে যা জানান এবং আমাদের অফিসে তার যে নোট দেখান তা নিম্নরূপ-

সব মিলিয়ে ৬৪টি পাটকল বাংলাদেশে কাজ করছে। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে উৎপাদিত চালানের পরিমাণ…… ২৬,৩৪৭ টন যেখানে ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পরিমাণ ছিল … ৫২,৬২৭টন।

এ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের পাটকলগুলোতে এখন উৎপাদন প্রায় ৫০% কম হচ্ছে|

আমেরিকার ‘এসোসিয়েট প্রেস’ এর নিজস্ব প্রতিবেদকের কাছ থেকে কাঁচা পাট বিষয়ে নিচের পরিসংখ্যানটি পাওয়া যায়-

বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানি
সেপ্টেম্বর ১৯৭১ এ বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাটের চালান ১,৬৫,০৬৬ বেল
সেপ্টেম্বর ১৯৭০ এ বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাটের চালান ২,২৬,১৭৪ বেল

সামুদ্রিক জাহাজগুলোর ক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনী সমস্যা সৃষ্টি করার আগে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের চালান খারাপ ছিল না।

এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে আরো জানা যায় যে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক দুটি বিদেশি সমুদ্রগামী জাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তিনি যখন গত সপ্তাহে পাট বোর্ড, পি. জে. এ. এবং বাংলাদেশ পাট গবেষণা কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করেন তারা তখন উদ্বিগ্ন এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তারা ধারনা করেছিলেন চালানের এই ক্ষতির ফলে বৈদেশিক পাট শিল্পে মারাত্মক খারাপ প্রভাব পড়বে যার ফলে পাটজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠান কৃত্রিম আঁশ শিল্পের দিকে মোড় নিতে পারে। ইতোমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত হয়েও গেছে। আমি জেনেছি যে বাংলাদেশ অনেক বৈদেশিক অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেনি।

মুক্তাঞ্চল এবং সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসা কাঁচা পাটের আনুমানিক পরিমান

আমরা আশা করছি এই অংশে কমপক্ষে ৭/৮ লাখ বেল পাওয়া যাবে। এরমধ্যে থেকে যদি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ বেল রপ্তানি করা যায় তাহলে ভারত এবং বাংলাদেশ সরকার সর্বনিম্ন মূল্য মাত্রা বজায় রাখতে পারবে। তা না হলে মারাত্মক আশঙ্কা রয়েছে যে সর্বনিম্ন মূল্য আরও কমে যাবে এবং আন্তর্জাতিক পাট শিল্পগুলো কৃত্রিম আঁশ শিল্পে রূপান্তরিত হওয়াসহ নানাবিধ সমস্যা তৈরি হবে যা আলাদাভাবে উল্ল্যেখ করা হয়েছে।

ভারতের পাট রপ্তানি

ভারত সরকারের বিনিময় এবং লাইসেন্সের অধীনে রাশিয়ায় অল্প পরিমানে রপ্তানি করা ছাড়া আর কোন আন্তর্জাতিক বাজারে ভারত কাঁচা পাট রপ্তানি করেনা।

বাংলাদেশি পাটের উচ্চতর সাদা এবং তোশা গুনের জন্য ভারতও যথেষ্ট পরিমানে লাভবান হবে।

ভারত এমনকি ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময়ও ২-৩ লাখ বেল বাংলাদেশি পাট পেত।

ভারতের পরিমান
১৯৪৭ সালে ভারতের ফসল ১৬ লাখ বেল
১৯৭১ সালে ভারতের ফসল ৭০/৭৫ লাখ বেল

বিশ্ববাজারে কাঁচাপাটের চাহিদা ও যোগান

                প্রথম, পাটকলগুলোতে ভারতের উৎপাদন                                                                ৭০/৭৫ লাখ বেল, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাদ দিয়ে

দ্বিতীয়, বাংলাদেশ                                                                    ৩০ লাখ বেল

            তৃতীয়, ইউকে                                                                              লাখ বেল

            চতুর্থ, বেলজিয়াম                                                                    লাখ বেল

            পঞ্চম, ফ্রান্স                                                                                 লাখ বেল

            অন্যান্য দেশ                                                                                ৮০ লাখ বেল

 

বৈদেশিক চুক্তির ব্যাপারে দখল হওয়া দেশের অবস্থা

২৫শে মার্চের পরে বাংলাদেশের পাট রপ্তানিকারক ও মিলমালিকেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক পুরাতন চুক্তি এখনো অনিষ্পত্ত অবস্থায় রয়েছে এবং কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির আন্তর্জাতিক অঙ্গিকারনামা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। প্রায় সকল রপ্তানীমুখি পাটকল অনেকদিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সেনাবাহিনীর নির্দেশনায় বর্তমানে ৪০% থেকে ৫০% উৎপাদন ক্ষমতায় সেগুলো চালু করা হয়েছে। অধিকাংশ দক্ষ শ্রমিকেরা ছিল নোয়াখালী অঞ্চলের যাদের সংখ্যা এখন অতি নগন্য। উৎপাদন কমে যাওয়ায় সব রপ্তানীমুখি পাটকল ৫০%-৬০% লোকসানের মুখে পড়ে কারণ উৎপাদন খরচ হিসেব করা হয় তিন শিফটের উৎপাদন ও পণ্য বিক্রির উপর অতিরিক্ত অর্থ প্রদানকে একত্রে ধরে। এই অতিরিক্ত অর্থের ভাউচার বিদেশী ক্রেতাদের কাছ থেকে চালান এবং মূল্যপরিশোধের কেবল ৪৫ দিনের মধ্যেই পাওয়া যায়। তাই প্রায় ৪০% খরচ সর্বদা হিসেবের বাইরে খরচ হিসাবে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত রপ্তানিকারকেরা মূল্য পরিশোধের ও লভ্যাংশের রশিদ পাচ্ছেন। প্রায় ৫০% খরচ অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে এবং লভ্যাংশের রশিদ পাবার আগ পর্যন্ত তাদের মেটানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ পাটকলগুলো ব্যাংক থেকে মূলধন পাচ্ছে না। বেশিরভাগই ক্যাশ ক্রেডিট লিমিট কমানোর জন্য চাপের মধ্যে রয়েছে। একই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগের টাকা উঠানোর জন্য যে কোন মূল্যে তাদের মজুত মাল বিক্রি করে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কোন কাঁচা পাট রপ্তানিকারক বা মিলমালিক নতুন চুক্তি করতে সাহস করছে না। (ক) ব্যবস্থাপনা (খ) ব্যাংক মূলধন (গ) শ্রমিক (ঘ) উৎপাদন নেমে যাওয়া (ঙ) যোগাযোগ এবং (চ) কাঁচা পাটের অভাবে তারা কোন নতুন চুক্তিতে আগ্রহী হচ্ছে না।

বিদেশী ক্রেতারা পণ্যের চালানের পর আগ্রহ দেখায়। পণ্যের দাম ৪০%-৫০% বেড়ে যায় যখন পণ্য সামুদ্রিক মালবাহী জাহাজে থাকে। এসব অবস্থায় বিদেশী ক্রেতারা উদ্বেগের সাথে বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানির দিকে চেয়ে আছে। কিছু বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশের সাথে এমনকি ১/২ লক্ষ বেলের চুক্তির জন্যও প্রস্তুত। তার ইতোমধ্যে অধিকৃত দেশ থেকে আমদানি কমিয়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশি পাট আমদানীর জন্য যেকোনো সহায়তা দিতে আগ্রহী।

সীমান্তে পাটের বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাব

বিষয়টা সমাধানের জন্য অর্থ সচিব ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সরাসরি ক্রয়ের জন্য অর্থ সচিবকে একটি নতুন কর্মপরিকল্পনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা লেনদেনের ব্যাপারে আমরা জড়াতে চাচ্ছিলাম না বলে যতক্ষণ না রপ্তানির বিষয়ে পরিস্কার সিদ্ধান্ত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সরাসরি বাণিজ্যে আমরা আগ্রহী ছিলাম না। কিছু সত্যিকারের আন্তরিক পক্ষ ক্যাশ টাকা দিয়ে আমাদের পাট কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা এমনকি বাংলাদেশ সরকারকে সম্মানী হিসেবে লভ্যাংশ বা কমিশনও দিবে। তারা তাদের নিজস্ব চুক্তি, মূলধন, গুদামঘর, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি নিয়ে সীমান্তে তাদের ক্রয় শুরু করবে। বাংলাদেশের পাট আহরণের জন্য তারা শুধুমাত্র আমাদের সম্মানী পরিশোধ করবে। অনুমতি প্রাপ্তরা আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়কে জড়িত না করেই তাদের সরাসরি পাট বিক্রি করতে পারবে। পাটের এ বাণিজ্য সহজ করার লক্ষ্যে সীমান্ত এলাকাকে ৬/৭টি বিশেষ অঞ্চলে ভাগ করা যেতে পারে। সম্মানীর ভিত্তিতে তাদের ক্রয়কারী দালাল হিসেবে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানোর আগে অগ্রিম হিসেবে কিছু টাকা ব্যাংকে জমা রাখতে বলা যেতে পারে।

পাট রপ্তানির ব্যাপারে প্রস্তাবনা এবং জনাব ডি. পি. ধরের সাথে সাক্ষাৎ

ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বাণিজ্য মিশনের নামে ইংল্যান্ড ও জার্মানীতে আমরা প্রায় ৪,৫০,০০০ পাউন্ডের অফিসিয়াল চুক্তি করি যার ভবিষ্যৎ এখন কর্তৃপক্ষের অনুমতির উপর নির্ভরশীল। রপ্তানির জন্য ৫০/৭৫,০০০ বেল পাট বাংলাদেশ সরকারের জন্য সবসময়েই প্রাপ্য যা আসবে বর্তমানে কর্মরত দালালদের মাধ্যমে।

দিল্লিতে জনাব ডি. পি. ধরের সাথে সাক্ষাতে জনাব ধর বাণিজ্য পরিষদের সভাপতিকে জোর দিয়ে বলেন অতিদ্রুত ভারতের প্রাদেশিক বাণিজ্য সমিতির সাথে লভ্যাংশ বিনিময়ের ভিত্তিতে স্থানীয় ব্যবসা শুরু করতে। তিনি রপ্তানির জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে বলেন। ভবিষ্যতে উনাদের সরকার কর্তৃক কাচাঁ পাট রপ্তানির সম্ভাবনাও তিনি মাথায় রাখতে বলেন। জনাব ডি. পি. ধরের অনুরোধে আমরা জনাব স্বামিনাথান আই. সি. এস. এর সাথে দেখা করি যিনি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অর্থনৈতিক দিকে সহায়তা প্রদান করে থাকেন। জনাব স্বামিনাথান খুব সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কাচাঁ পাট রপ্তানির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সম্প্রতি ‘স্টেটসম্যান’ সহ কিছু ভারতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশ পায় – রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পাট আসছে। প্রায় ৬/৭ লক্ষ বেল পাট ভারতে চলে আসবে। ভারতীয় পাটকলগুলোর ৬ লক্ষ বেল উৎপাদনের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মোট পরিমানের শুধু মাত্র ১০% অথবা ৫০,০০০ বেলের একটি ছোট চালান রপ্তানির জন্য আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কে আশ্বস্ত করতে পারি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করতে আমাদের হাতে নিম্নে লিখিত রাজনৈতিক ও যুক্তিবাদী বিষয়গুলো আছে-

(ক) ভারতের মাধ্যমে পাট রপ্তানিতে ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে যে সমস্যা তা তারা ভেবে দেখবে যেহেতু ইতোমধ্যে তারা উদ্বাস্তুদের দ্বায়িত্ব নিয়েছে এবং সকল প্রকার বস্তুগত সহায়তা প্রদান করছে। বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের পত্থ থেকে সরকারী ভ্রমণসমূহও তাদের সাহায্যে পরচালিত হচ্ছে।

(খ) সঠিক মূল্য পেলে বাংলাদেশের পাট চাষিরা প্রচন্ড উৎসাহী হবে এদিকে আরো পাট আনতে। তারা একই সাথে পাকিস্তানী অর্থনীতিকে চালান দেয়া বন্ধ রাখবে।

(গ) বাংলাদেশের নামে পাট রপ্তানির মাধ্যমে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ সরকারের অস্তিত্ব এক স্বীকৃত বিষয় হবে।

(ঘ) কাচাঁ পাট রপ্তানির ফলে বিশ্বের পাট আমদানীকারকেরা পাকিস্তান থেকে আমদানি কমাতে পারবে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য বাণিজ্য সমঝোতায় এগিয়ে আসবে।

(ঙ) আমরা যদি সরবরাহের অভাবে এসব বড় প্রতিষ্ঠিত বাজার হারাই তবে বাংলাদেশ সরকার এমনকি স্বাধীনতার পরেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চরম সমস্যার সম্মুখীন হবে। এই বিশ্বাস অল্প পরিমাণ সরবরাহের মাধ্যমেই সৃষ্টি করা যাবে।

(চ) যতক্ষণ পর্যন্ত না কিছু বাংলাদেশের পাট রপ্তানি হচ্ছে ভারতের পাটকলগুলো পর্যাপ্ত যোগান ও কম উৎপাদনের জন্য পাটের সর্বনিম্ন দাম বজায় রাখতে পারবে না। এ বিষয়ে ভারতীয় দৈনিকগুলোর মন্তব্যসমূহ দ্রষ্টব্য।

(ছ) যখন ভালো মানের কাঁচা পাটের সরবরাহের অভাবে অন্যান্য দেশের পাটকলগুলো সমস্যায় পড়বে, উন্নতমানের কাঁচা পাটের অভাবে পাটজাত পণ্যের বিশ্ববাজারে মন্দা নামবে ।

(জ) পাট শিল্পগুলোর পরিবর্তিত হয়ে কৃত্রিম পণ্যমুখী হবার ঝোঁক সৃষ্টির মারাত্নক সম্ভবনা আছে যা ভারতসহ বিশ্বব্যাপী পাটশিল্পের জন্য সহায়ক হবে না ।

(ঝ) ভারতের আন্তরিকতা ও সততা পাকিস্তানসহ বিশ্বব্যাপি প্রতিষ্ঠিত হবে যে, সোনালি আঁশ হস্তগত করার কোনো ইচ্ছেই ভারতের নেই। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সম্মত করার জন্য আমাদের আলোচনা হবে উভয়পক্ষের স্বার্থ ও লাভের উদ্দেশ্যে।

বাতিলকৃত টাকাঃ সকল নোট বিক্রি করবার সুবিধাজনক সুযোগ

            ৭৫ ডলার বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্যে বাতিলকৃত সকল ‘১০০ রূপীর নোট’ বিক্রি করবার একটি সুবিধাজনক সুযোগ এসেছে যার ফলে প্রতি ১০০০ রূপীর আনুষ্ঠানিক হার দাঁড়ায় ৫৬২/৫০ রূপী (@৭.৫০ রূপী)  , যেখানে ভারতীয় বাজারে আমরা পাচ্ছি প্রতি ১০০ রূপীতে ৩৫/৪০ রূপী যা ভারতীয় মূদ্রায় ৩৫০/৪০০ রূপী দাঁড়ায় । ভারতীয় কর্তৃপক্ষের থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পরে অর্থ মন্ত্রণালয় তা বিশ্ববাজারে যাচাই করতে পারবে এবং সকল নিরীক্ষণ শেষে সম্মত হতে পারবে । এই চুক্তির ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বাংলাদেশ সরকার তা থেকে বড়মাত্রায় লাভবান হবে। যদি এই চুক্তির বিষয়ে আমরা সফল হতে পারি তাহলে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ আরেকটি বাধার সম্মুখীন হবে। আমি এই বিষয়ে তথ্য পেয়েছি যে কিছু বৈদেশিক ব্যাংক কিছু পুঁজিবাদী অথবা কুয়েতি শেখদের পক্ষ থেকে কল্পিত হিসাবের ঘোষণা দিয়েছে অথবা মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে পাকিস্তানের একটি লেনদেনের সম্ভবনা রয়েছে। সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যাংক বেচাকেনায়  আগ্রহী ।

ধানঃ

            শিলং এলাকায় আমাদের বোর্ড সদস্য ব্যারিস্টার জনাব মোনতাকিম চৌধুরী, এমএনএ জানিয়েছেন যে শিলং এলাকায় উন্নতমানের ধান আসছে এবং তা খুব সস্তা দামে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ টন পরিমান খাদ্যসংকট থাকায় ধান রপ্তানিতে আমরা সমর্থন দিতে পারি না। কিন্তু একান্তই বাধ্য অবস্থা হলে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের এক্ষেত্রে ন্যায্য দাম পাওয়া উচিত।

চাঃ

            চায়ের অত্যধিক চাহিদা রয়েছে। অনেকে নিয়মিত আমাদের অফিসে আসছেন এবং অবিলম্বে নগদ মূল্যে যেকোনো পরিমাণের চা কিনতে চাচ্ছেন। তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো সময় আমরা ভালো দামে যে কোনো পরিমাণের চা বিক্রি করতে পারি। চায়ের ভান্ডারের কী হয়েছে সে সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। আমাদের চায়ের সংগ্রহ আছে কি না সেই বিষয়ে জানার জন্য যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সাধারণভাবে জানা যায় যে বাংলাদেশ ৭০ মিলিয়ন পাউন্ড চা উৎপাদন করত। এখন চা উৎপাদন মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।  আরও বেশী পরিমানে চা নিয়ে আসার ভালো সম্ভবনা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে আরও গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। নিজেরা ৬০০০ মিলিয়ন পাউন্ড চা উৎপাদন করা সত্ত্বেও ভারতে চায়ের ভালো চাহিদা রয়েছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশের সুপরিচিত চা বাগান মালিক জনাব জহিরূল কাইয়ুম এমএনএ –কে তার পরামর্শ দানের জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে।

তামাকঃ

            এই অংশে কী পরিমাণে তামাক আসছে তা জানার জন্য যথাযথ কোনো ব্যবস্থা এখনো পর্যন্ত নেই। আমি জানি যে চাংড়াবান্ধায় ১০০০ মণ পরিমাণ উপস্থিত রয়েছে। তামাক উৎপাদনে পাটগ্রাম এগিয়ে রয়েছে এবং বিপুল পরিমান তামাক খুব ভালো দামে রপ্তানি করা যেতে পারে। একই কারণে আগ্রহী অনেকে অফিসে আসছেন। কিন্তু সমন্বয়ের অভাবে এই বিষয়ে এই এলাকায় আমাদের সরাসরি কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আমরা তাদেরকে আমাদের ভান্ডারের ব্যাপারে কোনো বিশদ খবর দিতে পারছি না। তামাক ব্যবসায় খুব ভালো সম্ভবনা রয়েছে ।

চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যঃ

            আমি ভারতীয় রাজ্য বাণিজ্য সংস্থার সাথে আলোচনা করেছি যারা ক্রয় করতে অত্যধিক আগ্রহী। আমি জানি বাংলাদেশের কেউ কেউ এই ব্যবসা শুরু করেছে। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ও তেতুলিয়ায় বিপুল পরিমানে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য আসছে। নিম্নস্বাক্ষরকারীর সাথে স্থানীয় এমএনএ এবং এমপিএ-দের আলোচনা হয়েছে যারা শুল্ক ও কর কিংবা ব্যবসায়ীদের থেকে রপ্তানি ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্য যেকোনো আয় আদায়ের ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। এইসকল দ্রব্যের জন্য লাইসেন্স ইস্যু করার মাধ্যমে আমরা এই ব্যাপারে আমাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারি ।

চলচ্চিত্রঃ

            এই বাণিজ্য মিশন লন্ডন থেকে একটি বৈদেশিক প্রস্তাব পেয়েছে যারা বৈদেশিক মুদ্রায় ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেবার প্রস্তাবসহ বাংলাদেশি চলচ্চিত্র জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ ক্রয় করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছে। বিদেশী দেশগুলোতে এই ব্যবসার ভালো সম্ভবনা রয়েছে। চলচ্চিত্র বিভাগের প্রধান জনাব এ খায়ের এমএনএ এর তত্ত্বাবধানে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বিভাগ চলচ্চিত্র তৈরী ও ব্যবসার ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু এই বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন বৈদেশিক দেশগুলোর সাথে দর কষাকষি করে সর্বোচ্চ দর পেতে পারে এবং বিদেশে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের বাণজ্যিক চাহিদার ব্যাপারটি দেখাশোনা করতে পারে যা জনাব এ খায়ের , এমএনএ – কে বাইরের দেশগুলোতে চলচ্চিত্র-বাণিজ্য চালাতে সাহায্য করবে। ভারতীয় অর্থায়নে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রামের ওপর একটি চলচ্চিত্র তৈরীর প্রস্তাবনা রয়েছে। এই প্রস্তাবনাগুলোকে গ্রহণ ও নিরীক্ষণ শেষে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পৌঁছাবার পথ করে দিতে হবে। যদি কোনো বাণিজ্য চুক্তির দরকার হয় তবে চলচ্চিত্র বিভাগ সে দায়িত্ব পালন করবে। বিদেশে চলচ্চিত্র ব্যবসার সাথে জড়িত হলে চলচ্চিত্র বিভাগের সুপারিশে বিদেশে চলচ্চিত্র বাণিজ্য চালাবার বৈধতার কাগজপত্র কিংবা লাইসেন্স বোর্ড থেকে ইস্যু করা যেতে পারে।  

            প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে আরও কিছু বাংলাদেশি চলচ্চিত্র আনা হয়েছে , যেগুলো চলচ্চিত্র বিভাগ সংগ্রহ করে জমা রাখবে এবং বাংলাদেশ বাণিজ্য মিশনের সহয়তায় বিদেশি দেশগুলোর সাথে সর্বোচ্চ দর কষাকষিতে অংশগ্রহণ করবে।

কর্পূরঃ 

            আমাদের মুক্তি বাহিনী সুন্দরবন এলাকায় শ্যামনগর পুলিশ স্টেশন থেকে আনুমানিক ৪০ প্যাকেট জাপানী কর্পূর এবং ১২ মণ ধূপ দখল করেছে। এসকল মালামালের মালিক জনাব উপেন্দ্র নাথ শিকদার বলেছেন, মালামালের মূল্য আনুমানিক ৩০/৩৫ হাজার রূপী।  বাংলাদেশ সরকারের উচিত একই দামে এই মালামাল বিক্রি করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, অন্যথায় সমস্ত মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে ।

ঔষধঃ

            বাংলাদেশে ঔষধ সামগ্রীর যথেষ্ট যাহিদা রয়েছে যেখানে আমরা সম্ভব হলে সম্মানীর বিনিময়ে ঔষধ আনার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের বৈধ লাইসেন্স ইস্যু করতে পারি।

মুদি পণ্যঃ

এই ট্রেড মিশনের মাধ্যমে বোর্ড কর্তৃক জারিকৃত লাইসেন্স দ্বারা সংশ্লিষ্ট বৈদেশিক রাষ্ট্রের বিধি নিষেধ মেনে রয়্যালটি ও কমিশন ভিত্তিক মুদি পণ্যের আমদানি ও রপ্তানির অনুমোদন প্রদান করা যেতে পারে।

চারু ও কারুকলাঃ 

বাংলাদেশ সরকার বিখ্যাত চিত্রশিল্পী জনাব কামরুল হাসানকে প্রধান করে একটি চারু ও নকশা বিভাগ চালু করেছে। তারা খুব ভাল কাজ করছে বিশেষ করে পোস্টার, নকশা ও মনোগ্রাম অঙ্কন ইত্যাদিতে।  বোঝা যায় যে, সরকারও তাদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে উৎসাহী। বাংলাদেশের চারু ও কলা হিসেবে তাদের কাজ বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিলে চিত্রশিল্পীরা উৎসাহিত হবে। বাংলাদেশ মিশনের প্রদর্শনী কক্ষে এসব শিল্পকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেতে পারে যা বিদেশীদের কাছে আকর্ষণীয় হিসেবে ধরা দেবে। বিক্রয়লদ্ধ অর্থ বাংলাদেশ সরকারের নিকট জমা দেয়া যেতে পারে। 

আলোকচিত্রঃ

বাংলাদেশের আলোকচিত্র গুলো তত্ত্বাবধানের জন্য দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দেয়া উচিৎ। কোন আলোকচিত্রী বা অন্য কেউ বাংলাদেশের কোন আলোকচিত্র বিক্রি করতে পারবে না। সরকার বা বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিৎ যেকোনো বাংলাদেশী আলোকচিত্র বিক্রয়ের ব্যপারে ওয়াকিবহাল থাকা। সারা দুনিয়াব্যপী এসব আলোকচিত্রের অভাবনীয় চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্য মিশন বাংলাদেশের সংবাদ ও তথ্য দপ্তরের পরিচালকের সাথে মিলে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে এগুলো বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে পারে এবং বিক্রয়লদ্ধ টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিতে পারে। সরকার ক্যামেরা কেনার অর্থ সাহায্য দিয়েছে। তাছাড়া আলোকচিত্রশিল্পীদের দেখাশোনাও সরকার করছে। সরকারি আয়ের জন্য প্রচেষ্টা নেয়া যেতে পারে।

সংবাদপত্রঃ 

জানা যায় যে, বহু সংবাদপত্র সরকারের অজান্তেই প্রকাশ করা হচ্ছে। এ ব্যপারে দেখাশোনার জন্য কাউকে দায়িত্ব অর্পণ করা যায়। আরও জানা গেছে যে, কিছু অসাধু ব্যক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নামে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া নিউজপ্রিন্ট দিয়ে ব্যবসা করছে। তথাকথিত সাময়িকী ও সাপ্তাহিক প্রকাশকদের এইসব অবৈধ ব্যবসা আমাদের জাতীয় মর্যাদার অপরিসীম ক্ষতি করছে।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকঃ 

যদি আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে বিলম্ব হয়, তবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি বিপুল সংখ্যক লেনদেন ও অন্যান্য আর্থিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত বিবেচনা করতে পারেন। তাছাড়া ভারত ও অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক স্বীকৃতি অর্জিত হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠনের প্রয়োজন হতে পারে। রাজনৈতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো স্থানীয় ব্যাংকের অনুমোদিত শাখাকে প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যারা নিরাপত্তা সহকারে আমাদের নগদ লেনদেন এবং আমানত জমা রাখার জন্য ব্যবস্থা করতে পারবে। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পুরো পৃথিবী জুড়ে অর্থ সংগ্রহ ও লেনদেন করার অপরিমেয় সুযোগ করে দিবে।

আমি ইংল্যান্ড ও অন্যান্য দেশে অবস্থানরত আমার অর্থনীতিবিদ বন্ধু ও বিশেষজ্ঞগণের কাছ থেকে পরামর্শ পেয়েছি যারা বাংলাদেশের সাথে তাদের সম্পর্কের কারনে রুপির বিপক্ষে সর্বোচ্চ পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আনতে সক্ষম। অসংখ্য সিলেটবাসি বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ রেখেছেন। প্রয়োজন হলে আমি এই পরিকল্পনার আরও বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করব। তাছাড়া সম্মুখ সাক্ষাতে আমি এ ব্যপারে আরও বিস্তারিত তথ্য দিব।

বিপুল স্থাপন ব্যয়!  

সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ সরকারের নিকট উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আর্থিক সম্পদ রয়েছে। তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহের গুরু দায়িত্ব নিয়েছে। সরকার বিশাল যুদ্ধ ব্যয়, কূটনৈতিক স্থাপনা বজায় রাখা, বেতার সম্প্রচার, সমগ্র বিশ্ব জুড়ে প্রচার প্রচারণা চালানো এবং বেসামরিক প্রশাসন চালানোর মত বিপুল ব্যয়ের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো গ্রহণ করেছে।

তবে সরকারের উচিৎ প্রশাসনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে জনশক্তির পুরোটা ব্যবহার করে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া। সেইসাথে বেসামরিক প্রশাসন চালানোর বিপুল ব্যয় যেখানে যতটুকু সম্ভব কমানো উচিৎ। জানা গিয়েছে যে, সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্য ভাল কর্মদক্ষতা জরুরি। আরও জানা গিয়েছে যে, শুধুমাত্র কৃষ্ণনগর এলাকায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ৭০,০০০ রুপী বেতন দেয়া হয়। অথচ এই খরচের ৩০% দিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক কর্মীদের ব্যয় নির্বাহ করা যেত। 

রাজনৈতিক কর্মীঃ   

লক্ষণীয় যে রাজনৈতিক কর্মীরা তাদের পরিচ্ছন্ন হৃদয় ও অতীতের সুদীর্ঘ দুঃখভোগ, কারাভোগ ও নির্যাতন ভোগের মাধ্যমে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক চেতনার কারণে স্বাধীনতা আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ; এবং তারাই পাক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু। তারা নিজেদের সর্বাপেক্ষা নিবেদিত প্রাণ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করেছে। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, তারা দেখছে যে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পাকিস্তান সময়ের মত এখনো তাদের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এই একই রকম ব্যবহার বজায় রাখার জন্য লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্ত প্রবাহিত হয়নি। রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি যথোপযুক্ত শ্রদ্ধা ও অগ্রাধিকার দান বিরল ঘটনা, যার ফলে ভুল বোঝাবুঝি, হতাশা ও অনাস্থা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।        

দর্শন পরিবর্তন হওয়া উচিৎঃ   

পুরনো দেশ পাকিস্তানের মৃত্যু হয়েছে। তাই, বাংলাদেশের প্রতিটি নরনারীর উচিৎ তাদের পুরনো দর্শনের পরিবর্তন করা। প্রত্যেক কর্মকর্তা, জননেতা, কর্মী প্রভৃতি সবার উচিৎ তাদের পুরনো অভ্যাসের পরিবর্তন করা। নতুন দেশ ও জাতির জন্য নতুন লক্ষ্য নির্ধারণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা জরুরি। স্বাধীনতার বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি নরনারীর উচিৎ এই জরুরী অবস্থায় সরকারের নেতৃত্বে সক্রিয়ভাবে ও সততার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করা।   

স্বল্পমেয়াদী চিন্তা ভাবনা পরিহার করা উচিৎঃ   

অনেক বাঙালী জনতা, শ্রমিক ও জননেতা ডিসেম্বর বা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরে যেতে বদ্ধপরিকর। তবে আমাদের মধ্যে কম সংখ্যকই বাড়ি ফিরে যাওয়ার চিন্তার পাশাপাশি বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ ও নতুন সমাজের ভবিষ্যৎ আর্থ-সামাজিক কাঠামো বিনির্মাণে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যপারে সচেতন, তাই দেশের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি পরিকল্পনা কমিশন গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে আরও সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ জয়ের জন্য সর্বাত্বক প্রচেষ্টা ও সহায়তা দেয়া এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেইসাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারী আয় অর্জনের জন্য আমাদের দিবারাত্রি কঠোর পরিশ্রম করা উচিৎ এবং একীভূত প্রচেষ্টা নেয়া উচিৎ যাতে আমরা এই নতুন সমাজকে দীর্ঘমেয়াদী নীতি এবং ভবিষ্যৎ অর্থনীতি এনে দিতে পারি যেখানে স্বাধীনতার পর ভয়াবহ সঙ্কট ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

অতএব, আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদী ও সমাজতান্ত্রিক দর্শন ও নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ অর্থনীতি পর্যন্ত বাণিজ্য কর্মকাণ্ড নির্ধারণে সরকারী যন্ত্র হিসেবে বাণিজ্য মিশনের স্থাপনা নিতান্তই প্রয়োজনীয়।     

তারিখঃ ৩০ নভেম্বর, ১৯৭১

(মুস্তাফা সারওয়ার)