You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সুত্র তারিখ
মুজিব ও ভূট্টোর সাথে ইয়াহিয়ার বৈঠক দৈনিক ‘পূর্বদেশ’      ২৩ মার্চ ১৯৭১

মুজিব ও ভূট্টোর সাথে ইয়াহিয়ার বৈঠকঃ
পরিষদ অধিবেশন আবার স্থগিত
(স্টাফ রিপোর্টার)
প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান আগামী ২৫ শে মার্চে আহূত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষতকালের জন্য স্থগিত ঘোষনা করেছেন।
গতকাল সোমবার ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবনে মুজিব-ভূট্টো-ইয়াহিয়া বৈঠক চলাক্লে প্রেসিডেন্টের জনসংযোগ অফিসার বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে প্রেসিডেন্টের উপরোক্ত ঘোষনা প্রকাশ করেন।
ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, দেশের উভয় অংশের নেতাদের সাথে পরামর্শ করে এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে সমঝোতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের সুবিধার জন্যে প্রেসিডেন্ট আগামী ২৫শে মার্চ আহূত জাত্য পরিষদের বৈঠক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ঘোষনায় আরও বলা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট অল্পদিনের মধ্যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দান করবেন।
ঘোষণার জাতীয় পরিষদের বৈঠকের পরব্ররতী তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়নি ।
উল্লেখযোগ্য যে, এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হলো। ইতিপূর্বে গত ১লা মার্চ ও ৩রা মার্চ আহূত অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছিলো।
যুক্ত বৈঠক
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি প্রধান জনাব জুলফিকার আলী ভূট্টোর সাথে প্রেসিডেন্ট জনেয়ারেল ইয়াহিয়া গতকাল সোমবার প্রায় সোয়া এক ঘন্টার বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।
এই আলাপ-আলোচনার পর শেখ মুজিব তাঁর বাসভবনে ফিরে এসে সাংবাদিকদের বলেন যে, তাঁর সাথে প্রেসিডেন্টের যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তা তিনি (প্রেসিডেন্ট) জনাব ভূট্টোকে জানিয়েছেন এবং ভূট্টোর সাথে আলাপ-আলোচনা করেছেন।
শেখ মুজিব আলোচনার উপর এর বেশী কিছু বলতে অস্বীকার করেন।
আলাপ-আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন, “যদি কোন অগ্রগতি না তোত, তাহলে আমি কেন আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”
সাংবাদিকদের কাছে শেখ মুজিব বলেন যে, তার সাথে আজ (সোমবার০ প্রেসিডেন্টের আলাপ-আলোচনা হবার কথা ছিল। তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখি যে, জনাব ভূট্টোও সেখানে উপস্থিত রয়েছেন।
বাংলাদেশের স্বধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড 777
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন যে, আমি অনেক আগেই দাবী করেছি যে, আমাদের দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা পরিষদের অধিবেশনে বসবো না। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি উল্লখ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন যে, আজ (মঙ্গলবার) অথবা আগামীকাল প্রেসিডেন্টের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। তিনি আরও বলেন যে, ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাগণ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের সাথে আলোচনা বৈঠকে মিলিত হবেন।
শেখ মুজিব অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন যে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশের গুরুতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জনগণের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
বেলা প্রায় ১১টার সময় সেনাবাহিনীর অভূতপূর্ব প্রহরার মধ্যে জনাব ভূট্টো তাঁর হোটেল থেকে প্রেসিডেন্ত ভবনে প্রবেশ করেন। এর প্রায় পাঁচ মিনিট পরে শেখ মুজিব তাঁর নির্ধারিত বৈঠকে যোগদানের জন্যে প্রেসিডেন্ত ভবনে উপস্থিত হন।
প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে উপস্থিত জনতা জনাব ভূট্টোর প্রতি বিদ্রুপ ধ্বনি করেন এবং শেখ মুজিবকে অভিনন্দন জানান। পরে তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে ভূট্টো-বিরোধী তুমুল বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন।
জনাব জুলফিকার আলী ভূট্টো গতকাল সকাল ১০-৫০ মিনিটে তিনিটি ট্রাক ও জীপ ভর্তি সৈন্যদের পাহারায় সামরিক বাহিনীর একটি কালো রং-এর শেভ্রোলেট ইম্পালা কারে করে প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। হোটেলে ফিরে আসেন ১টা পনের মিনিটে। বেলা একটা পর্যন্ত হোটেলের সামনে তুমুল বিক্ষোভ চলতে থাকায় পাকিস্তানি সৈন্যরা ভারী ও স্বয়ঙ্গক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র জনতার দিকে তাক করে রাখে। প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে থেকে জনতাকে অপসারণের জন্য সেনাবাহিনী ভূট্টো-বিরোধী ধ্বনি উচ্চারণরত জনতার কাছাকাছি গিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে।
জনাব ভূট্টো বেলা একটা পনের মিনিটে আর্টিলারির জনৈক লেঃ কর্নেলের পরিচালনায় সেনাবাহিনীর প্রহরায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রবেশ করে। ইউনিফর্মধারী সেনাবাহিনী ছাড়াও সাদা পোশাকে স্টেনগান্ধারী তিন ‘ব্যাক্তি’ তাঁর প্রহরায় ছিল।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কর্মচারীরা গতকালও বাংলাদেশের নতুন পতাকা এবং কালো ব্যাজ লাগিয়ে হটেলে কাজ করেন।

—————-
ক্ষমতা হস্তান্তরে কোন আইনি বাধা নেই- ব্রোহি
মার্শাল ল তুলে নেয়ায় এবং জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে কোন আইনি বাধা আছে কিনা- সে বিষয়ে জনাব এ এম ব্রোহি তার লিখিত মতামত দিয়েছেন; এই সত্য মাথায় রেখে যে, এখন সংবিধান প্রণীত হবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা যাদের এখনও কোন অস্তিত্ব নেই।

উপর্যুক্ত প্রশ্নের উত্তরে দেয়া জনাব ব্রোহির বিবৃতি নীচে উদ্ধৃত হল-

“আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল মার্শাল ল তুলে নেয়ায় এবং জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে কোন আইনি বাধা আছে কিনা। আইনি দৃষ্টিতে প্রশ্নটির উত্তর হচ্ছে, কোন বাধা নেই। প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খান, যিনি বর্তমানে দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করেন এবং যে বলে বর্তমান সংবিধান প্রশাসনকে বৈদেশিক বিষয়ে বিধান প্রদান করে, তিনি এই কাজ আর করবেন না ঘোষণা করার তার যোগ্যতা আছে।

ভারতীয় স্বাধীনতা আইনে এই বিষয়ের ঐতিহাসিক নজির আছে। এটা স্মরণ করা কঠিন কিছু নয় যে, স্বাধীনতা আইনের পূর্বে, ব্রিটিশরাই বৈদেশিক বিষয়ে প্রশাসনকে সাংবিধানিক নির্দেশ দিত। স্বাধীনতার অব্যবহিত পূর্বে ব্রিটিশরা স্বাধীনতা আইন প্রণয়ন করে ভারত এবং পাকিস্তান দুই অংশের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এবং সেই স্বাধীনতা আইনে এই নীতি ছিল যে, পরবর্তীতে দু’জন গভর্ণর জেনারেল এবং রাজ্যের আইনসভার দ্বারা দেশ পরিচালিত হবে।

যতদিন না নতুন সংবিধান প্রণীত হয়, ততদিন পর্যন্ত চালু আইন গুলো বহাল থাকবে এ বিষয়েও বিধান ছিল। আমরা যদি সেই আইনের দিকে তাকাই এবং ব্রিটিশ পাওয়ারকে মার্শাল ল পাওয়ার দ্বারা প্রতিস্থাপিত করি- তাহলে দেশে উদ্ভুত সমস্যা সম্পর্কে একটা ধারন পাব। যদি ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে, তবে মার্শাল ল শেষ হতে হবে এবং প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খান এই মর্মে একটা ফরমান জারি করতে পারেন যাতে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!