You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.20 | জয়দেবপুরে ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার প্রতিরোধের সংবাদ | সাপ্তাহিক “স্বরাজ” - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
জয়দেবপুরে ইষ্ট বেংগল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার প্রতিরোধের সংবাদ সাপ্তাহিক “স্বরাজ” ২০ মার্চ,১৯৭১

সিপাহী বিদ্রোহ
(স্বরাজ রিপোর্টার)
ইসলামাবাদ থেকে আগত ‘অতিথি’ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে শেখ মজিবুর রহমান যখন ঢাকায় বসে অধিকার আদায়ের প্রশ্নে বৈঠক করে চলেছেন, ঠিক তেমনি এ মুহূর্তে মুক্তি সংগ্রামের বর্তমান পর্যায়ে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় সংযোজিত হয়েছে।

রাজধানী শহর ঢাকা থেকে প্রায় পঁচিশ মেইল দূরে জয়দেবপুরের রাজবাড়ীতে অবস্থানরত ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়ন তাঁদের হাতিয়ার ছিনিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁদের অস্ত্র ফিরিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছিল কিন্তু সৈনিকরা তা অগ্রাহ্য করেছে। বারুদের মুখে দাঁড়িয়ে বিশেষ ট্রেনিং গ্রহণরত সৈনিকরা তা ওপরওয়ালার নির্দেশকে প্রতিরোধ করেছে।

এ সংবাদ দাবানলের মত আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার মানুষ শুনতে পেয়েছে রাজবাড়ীর ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোয়ানদের হাতের অস্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ এসেছিল। সৈনিকরা রা প্রত্যাখান করেছেন। মুল ছাউনিতে ফিরে যাবার হুকুম হয়েছিল, তা তামিল করেনি কেউ। কেড়ে নিতে এসেছিল, তাঁরা প্রতিরোধ করেছে।

গ্রামের পর গ্রাম থেকে মানুষ এসেছে গত দুইদিন ধরে। টঙ্গী-জয়দেবপুর রোদের মোড়ে জমায়েত হয়েছে। একটার পর একটা ব্যারিকেড গড়ে তুলেছে।

নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদের সদস্য শামসুল হকের নেতৃত্বে বিদ্রোহী ব্যাটালিয়ানকে রক্ষয়া করতে ওরা সমবেত হয়েছিল। সভা করেছে বিকেল পাঁচটায়, তারপর মিছিল গেছে জয়দেবপুরে। গত বৃহস্পতিবার আত থেকে দশ হাজার জঙ্গী মানুষ বিরুদ্ধবাদী কোন শক্তিকে প্রতিহত করার জন্যে টাঙ্গাইল রোদের চৌমাথায় এসে জমায়েত হয়।

বিক্ষুব্ধ এই জনতা অগ্নিমূর্তি ধারন করে। ঢাকার দিক থেকে যেন কোন বিরুদ্ধ শক্তি এসে এদের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যেতে না পারে তাঁর জন্য সারাদিন ধরে ব্যারিকেড তৈরী করে-একদিকে জয়দেবপুর রাজবাড়ী পর্যন্ত অন্যদিকে টঙ্গী শহরের কাছে।

ঢাকার দিক থেকে ময়মনসিংহ গামী কোন গাড়ী অপরাহ্ণ থেকে আর যেতে পারেনি। জয়দেবপুরের কাছ থেকে যে রাস্তাটা অস্ত্র নির্মাণ কারখানার দিকে এগিয়ে গেছে, সেখানেও বিরুদ্ধবাদীদের প্রতিহত করার জন্য ব্যারিকেড তৈরী করে।

তাছাড়া জয়দেবপুরের রেল লাইনে বাধার সৃষ্টি করে গাড়ী চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়েছে। এই অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সারাদিন ও অধিক রাত পর্যন্ত বিরোধী শক্তির পথ রোধ করে রাখা হয়।গতকালও উক্ত এলাকায় উত্তেজনা অব্যাহত থাকে এবং এই খবর লেখা পর্যন্ত বিরোধী শক্তিকে প্রতিরোধকারী ব্যাড়ানিয়নের অস্ত্র ছিনিয়ে নিতে দুঃসাহস করতে সুযোগ পায়নি।

কেউ কেউ আশঙ্কা করেছেন, বিরোধী শক্তি এই অবস্থা থেকে বাচার জন্যে ‘পোড়ামাটি নীতি’ অবলম্বন করতে পারে।

সার্বভৌম বাংলাদেশ হতে চলছে
(স্বরাজ রিপোর্টার)
সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, সেনাপতি ইয়াহিয়া বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের মুখে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। সব কিছু হারাবার পরিবর্তে শেষ পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পপতিদের বাণিজ্যিক-উপনিবেশ রক্ষার শেষ চেষ্টা করেছেন।
প্রকাশ, মুল লাহোর প্রাস্তাবের ভিক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা হতে চলেছে। আলোচনার বর্তমান পর্যায়ে বৈদেশিক ঋণের দায়০পরিশোধের বাটোয়ারা নিয়ে প্রচন্ড দর কষাকষি চলছে। শেখ ঋণ পরিশোধে নারাজ।