শেখ মুজিব কর্তৃক সেনাবাহিনীর হত্যাকান্ড সম্পর্কে তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখান
দ্যা ডন(The Dawn) , ১৯ মার্চ , ১৯৭১।
মুজিবের তদন্ত কমিটি মেনে নিতে অসম্মত জ্ঞাপন
কোনো কার্যকর উদ্দেশ্য সাধন করতে পারবে নাঃ সীমাবদ্ধ
১৮ই মার্চ, ১৯৭১ এর ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের লিখিত বিবৃতি
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান আজ সামরিক আইন প্রশাসক দ্বারা গঠিত তদন্ত কমিটি প্রত্যাখান করেন।জোন বি – “২রা মার্চ থেকে ৯ই মার্চ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে বেসামরিক শক্তির সাহায্যের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়- এ বিষয়ে যাওয়া ”।
জারীকৃত বিবৃতির মাধ্যমে আওয়ামীলীগ প্রধান ঘোষণা করেন যে, এরকম একটি কমিশনকে বাংলা দেশের মানুষ কোনোভাবেই কোনো ধরনের সাহায্য করবে না। তিনি আরও বলেন যে, কেউ এই ‘কমিশন” এর সদস্যের জন্য মনোনয়ন দিবে না বা সদস্য হিসেবে কাজ করবে না।
সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির মনোনয়ন অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্টের একজন বিচারক কমিশনটির নেতৃত্ব দিবেন।
নিম্নে সম্পূর্ণ বিবৃতি উপস্থাপন করা হলঃ
“আমি দুঃখের সাথে বলছি যে, ‘তদন্ত কমিশন’ যা ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে, বাংলা দেশের পক্ষে আমি যে দাবি করেছি তা পর্যাপ্তভাবে পূরণ করতে পারে নি । সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের জারীকৃত আদেশ ও বিধান অনুযায়ী কমিশনটিকে আবার সামরিক আইন কর্তৃপক্ষেরই কাছেই প্রতিবেদন জমা দিতে হবে যা অত্যন্ত আপত্তিকর। নির্দেশের শর্তাদিগুলো প্রাক-বিচারের সবচেয়ে মৌলিকবিষয়গুলোর উদ্দেশ্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং আসল বিষয়গুলোর ব্যাপারে তদন্ত বন্ধ করার অপপ্রয়াস চলছে”।
নির্দেশের একমাত্র শর্ত হলঃ
“২রা মার্চ থেকে ৯ই মার্চ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে বেসামরিক শক্তির সাহায্যের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়- এ বিষয়ে যাওয়া ”। মৌলিক ইস্যুটি এভাবেই আগে থেকে বিচার করা হয়েছে, আসলে এটা তদন্ত করতে হবে যে সেনাবাহিনীকে নিয়োজিত করা এবং বল প্রয়োগ করা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সাহায্যার্থে ছিল এবং বেসামরিক সরকারের সাহায্যার্থে ছিল না”। ‘কমিশনটিকে’ প্রকৃত নৃশংসতা, যেখানে বাংলা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে – সেখান থেকে দূরে রাখা হয়েছে। এর ফলে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা এবং কোন পরিস্থিতিতে বেসামরিক নিরস্ত্র নাগরিকদের গুলি করা হয়েছে- তা তদন্ত করা সম্ভব নয়।
“এরকম কমিশন কোন কার্যকর উদ্দেশ্য সাধন করতে পারবে না। প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের একটি তদন্ত প্রকৃত সত্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আসল তদন্ত হতে পারে না বরং এটি জনগণকে ভুল পথে চালিত করার একটি কৌশল”।
“তাই আমরা কোনোভাবেই এই রকমের একটি ‘কমিশন’কে গ্রহণ করতে পারি না। বাংলা দেশের মানুষ এই ধরনের ‘কমিশন’কে সহযোগীতা করবে না, কিংবা তার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে না”।
“জনগণের পক্ষে আমরা ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ চার দফা দাবি উত্থাপন করেছিলাম, যার মধ্যে একটি ছিল সঠিক দিকনির্দেশনা অনুযায়ী স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও প্রকাশ্য তদন্ত করা। ঐ দাবিগুলোর একটি নামানুযায়ী ও খন্ডে খন্ডে এবং উপরের বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী গ্রহণ করা না হলে, আমরা যে গভীর সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছি তার সমাধানে অংশ রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়”।
মুজিবের তদন্ত
এদিকে শেখ মুজিব ক্যাপ্টেন মনসুর আলী – পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের সংসদীয় দলের নেতা, খন্দকার মোশতাক আহমেদ- সহ-সভাপতি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ ও জনাব আবিদুর রেজা খান-জাতীয় পরিষদের সদস্য – কে চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক গোলাগুলি ও অন্যান্য ঘটনার ব্যাপারে ঘটনাস্থল তদন্তের জন্য সেখানে পাঠিয়েছেন।
তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মাওলানা ভাসানী এ ব্যাপারে শেখ মুজিবকে তারবার্তা পাঠিয়েছেন।