You dont have javascript enabled! Please enable it!

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকের উপর ঢাকার সংবাদ পত্রের প্রতিবেদন দি পিপলস ১৭ ই মার্চ, ১৯৭১

মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক পাকিস্তান থাকবে কি থাকবে নাঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা একটি “নিষ্পন্ন কার্য”
শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল এ,এম ইয়াহিয়া খানের সাথে ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবনে আড়াই ঘণ্টা ব্যাপি এক বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠক শেষে শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবনের বাহিরে এসে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সংগে গাড়ী থামিয়ে কথা বলেন।
শেখ মুজিবুর রহমান বলেন আমরা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি এবং আগামী কাল সকাল ১০:০০ ঘটিকায় পুনরায় আমরা মিলিত হব।
আপনাদের আলোচনা কি বন্ধুত্ব পূর্ণ ছিল? একজন বিদেশী সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, “ দয়া করে আর কোন প্রশ্ন করবেন না”। এটা কোন ২/৩ মিনিটের আলোচনার বিষয় নয়। আমি বলেছি আলোচনা চলতে থাকবে এবং আমরা পুনরায় আগামীকাল সকাল ১০ টায় মিলিত হব।
শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মধ্যে বহুল প্রতিক্ষিত বৈঠকটি সকাল ১১:০০ ঘটিকায় শুরু হয়ে দুপুর ১:৩০ পর্যন্ত চলে। দুপুর ১:৩০ ঘটিকার সময় শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবনের বাহিরে এসে সাংবাদিকদের সাথে মিলিত হন।
দেশী বিদেশী পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি, আলোকচিত্র সাংবাদিক, টিভি ক্যামেরাম্যান গন বৈঠক শুরুর পূর্ব থেকেই সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য অপেক্ষা করছিল।
কোন মধ্যস্থতা ছাড়াই অত্যন্ত গুরুত্ব পুর্ন আলোচনা চলছিল গন মানুষের নেতা এবং প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের মধ্যে।
প্রেসিডেন্ট ভবন ও এর আশে পাশের তিনটি রাস্তায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
আলোচনা শুরুর পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে এসে পৌছুলে সাংবাদিকগন পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর বেষ্টনী ভেঙ্গে গেইট পর্যন্ত চলে আসে।
আলোচনা শেষ করে শেখ মুজিবুর রহমান বাহির না হওয়া পর্যন্ত তাহারা সেখানে অপেক্ষা করতে থাকে।
শেখ মুজিবুর রহমানের গাড়ী যখন গেইটের কাছে আসতে লাগলো তখন সাংবাদিকেরা তাহার গাড়ী ঘিরে ধরলে শেখ মুজিব গাড়ী থেকে নেমে সাংবাদিকের সহিত কয়েক মিনিট কথা বলেন।
এই আলোচনা দেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ন ও তাৎপর্যপূর্ন হিসেবে বিবেচিত হবে।

পাকিস্তানের ইতিহাসে রাষ্ট্র প্রধান ও নির্বাচিত নেতাদের মধ্যে কোন আলোচনা কখনই ফলপ্রসু হয় নি।
স্মরণকরাযেতেপারেযেরোববারশেষশেখমুজিবুররহমানবলেছিলেনযে, তিনিদেখাকরারজন্যপ্রস্তুতআছেনযদিপ্রেসিডেন্টইয়াহিয়াপরেরবারবাংলাদেশেআসে।
প্রেসিডেন্টইয়াহিয়ারএইসফরঅনেককারনেইপ্রয়োজনছিল। কেউ কিছু চিন্তা করার পুর্বেই যেহেতু তিনি ১ লা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন যা ৩ রা মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল।
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে অফিসিয়াল হিসাব অনুযায়ী ১৭২ জনকে সেনাবাহিনী হত্যা করে এবং অনেককে আহত করে।
হতাশ ক্ষুব্দ মানুষ পরবর্তিতে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের দাবী উত্থাপন করে। ১৩০০ মাইল দূরে থাকা অগণতান্ত্রিক ও দমন মূলক ব্যবস্থা মেনে নেয়ার জন্য রাজী নয় তারা।
এয়ার মার্শাল আসগর আলী খান, নুর খান ও আরো অনেক শান্তীপ্রিয় নেতাই এই দুই নেতার আলোচনার দিকে তাকিয়ে ছিলেন এবং আশা করছিলেন যে প্রেসিডেন্ট অবশ্যই শেখ মুজিবুর রহমান এর সাথে মিলিত হবেন যে কিনা শুধু মাত্র পূর্ব পাকিস্তানের নেতাই নন তিনি দুই পাকিস্তানের শেষ সংযোগও বটে।
এই বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমান প্রমান করেছেন যে তিনি শুধু গণমানুষ ও জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাই নন তিনি একটি প্রদেশের একমাত্র ব্যাক্তি যে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় সকল সমস্যার সমাধান চান।
৭ ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষনে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষনা করেন “৪টি বিষয়ের” গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্যের উপর নির্ভর করবে জাতীয় পরিষদের পরবর্তি বৈঠক।
শেখ মুজিবুর রহমান দাবি করেন প্রায় সকল রাজনৈতিক নেতা সামরিক আইন তুলে নেয়ার পক্ষে একমত আছেন। সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সাম্প্রতিক সেনাবাহিনী দ্বারা সংগঠিত গণহত্যার বিষয়ে তদন্ত করা।
জাতির এই সময়ে জনগণ প্রেসিডেন্টের কাছে বাস্তব ও যুক্তিসংগত পদক্ষেপ আশা করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া যদি শেখ মুজিবুর রহমানের দাবি মেনে নিয়ে একটি ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স গঠন কল্পে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রনয়ন করেন তবে তিনি পাকিস্তানের ত্রান কর্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন। অন্যথায় পাকিস্তান ভাঙ্গন অনিবার্য। বাঙ্গালী স্বাধীনতা অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যাহা তাদের ডেডিকেটেড নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রায় একটি নিষ্পন্ন কার্য হিসেবে সম্পন্ন হয়ে আছে।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!