শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সচল রাখার ব্যাপারে আওয়ামীলীগের নির্দেশাবলী | দ্য ডন | ১১ মার্চ, ১৯৭১ |
বাংলাদেশের নামে পুরোপুরি অর্থনীতি সচল রাখুনঃ তাজউদ্দীন
বিবৃতি জারির তারিখ, ১১ই মার্চ, ১৯৭১
গত রাতে এক বিবৃতিতেপূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকজনাব তাজউদ্দীন আহমদবলেন, “জনগণের আন্দোলন দুর্বার গতিপ্রাপ্ত হয়েছে”।
এটা সম্ভব হয়েছে, কারন, “বাংলাদেশের জনগণের নামে জারি করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব নির্দেশনানিজ নিজ বলয়ের মধ্য থেকে পালন করা,দেশের প্রতিটি জনগন পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছে”।
জনাব তাজউদ্দীন যোগ করেন, “সর্বস্থরের জনগনের দ্বারা প্রদর্শিত সর্বোচ্চ চেতনাবোধই আসলে সকল প্রেরণার উৎস। সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, অর্থনীতি পুরোদমে সচল রাখার জন্য সর্বোচ্চ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে”।
“ক্ষুধার্ত জনগনের দুর্ভোগ এবং অর্থনীতি ধ্বংসের যে কায়েমী স্বার্থ ও গণবিরোধীষড়যন্ত্র তা বানচাল করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর তা করার জন্য, আমাদের জনগণকে সকল প্রকার উৎপাদনের জন্য তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে”।
“একই সময়ে তাদের কঠোর নীতিনিষ্ঠার অনুশীলন করতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত সকলের জনগনের কল্যানে বিজয়ের জন্য কঠোর শৃঙ্খলা প্রদর্শন করতে হবে”।
আরো অব্যাহতি
তিনি বলের উপরোল্লেখিত উদ্দেশ্যসমুহ পালনের জন্য নিন্মলিখিত অধিকতর অব্যাহতিসমূহ ও পরিষ্কার ব্যাখ্যা সমূহ জারি করা হলোঃ
ব্যাংকঃ পূর্বের সকল প্রকার অব্যাহতি ও ব্যাখ্যা সমুহ নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে ব্যাংক সংক্রান্ত আদেশ সমুহ নিচে দেওয়া হল,
১) সকল ব্যাংক সকল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। (স্বাভাবিক ছুটিকালীন সময় সহ)। কিন্তু শুক্র ও শনিবার ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সকাল ৯টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য দুপুর ১২.৩০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বুক ব্যালেন্সিং এবং সকল প্রকার স্বাভাবিক কর্মচর্চার অনুমোদিত লেনদেনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
২) যে কোন পরিমাণ আমানত গ্রহণ, যে কোন সীমা ছাড়া বাংলাদেশে আন্তঃব্যাংক ছাড়পত্র, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আন্তঃব্যাংক ট্রান্সফার(স্থানান্তর), পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে টি টি র মাধ্যমে উত্তোলন অথবা চিঠির মাধ্যমে ট্রান্সফার(স্থানান্তর) সহ ব্যাংক তাদের সকল প্রকার কার্যক্রম চালু রাখবেনিম্নলিখিত সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষে,
মজুরী এবং বেতন দেবার ক্ষেত্রে পে বিল যথাযথভাবে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে নতুবা চেকের সাথে মজুরি রেজিস্টার উপস্থাপন করতে হবে।
বৈধ ব্যাক্তিগত উত্তোলন সপ্তাহে ১০০০ রুপি তে রাখতে হবে।
শিল্পজাত কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে, যারমধ্যে চিনিকলের জন্য আঁখ, পাটকলের জন্য পাট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ভোক্তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সকল প্রকার জিনিসপত্র কেনা সহ প্রকৃত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১০,০০০ রুপি প্রদান। এই পরিমাণ অর্থ নগদ বা নগদ খসড়া দ্বারা উত্তোলন করা যাবে। কিন্তু অর্থ প্রদান করার আগে ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী উত্তোলনকারী প্রকৃত শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ী কিনা এবং গত এক বছরে এক সপ্তাহের মধ্যে তার স্বাভাবিক উত্তোলনের পরিমানের সাথে বর্তমানের উত্তোলনের পরিমান অস্বাভাবিক কিনা তা নিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে।
৩) ক্রসড চেক এবং ক্রসড ডিমান্ড ড্রাফ্ট বাংলাদেশের ভেতরে যে কোন একাউন্টে ইস্যু এবং জমা করা যেতে পারে।
৪) বাংলাদেশের ভেতরে ব্যাংকিং ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত টেলিপ্রিন্টার সেবা পুনরারম্ভ করতে হবে।
৫) ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান বাংলাদেশে তাদের সমস্ত ডিসকাউন্টিং কার্যক্রম চালু রাখবে যাতে অন্যান্য ব্যাংকগুলো তাদের চাহিদা পুরন করতে পারে।
৬) বিদেশি পর্যটকদের চেক যে কোনো অনুমোদিত ডিলারদের কাছে ভাঙ্গানোযেতে পারে।
৭) কূটনীতিকরা অবাধে তাদের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন এবং বিদেশী নাগরিকগন তাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন।
৮) লকারের কোন কার্যক্রম থাকবে না।
৯) স্টেট ব্যাংক অথবা অন্যকোন মাধ্যমে বাংলাদেশের বাহিরে কোন রেমিটেন্স যাবে না।
তিনি বলেন, উপরোল্লিখিত শর্তাবলীর মেনে অন্যান্য ব্যাংকের সময় অনুযায়ী স্টেট ব্যাংক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং খোলা থাকবে যাতে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যাবস্থা সুষ্ঠু ভাবে পালন সম্ভব হয়।
খামার কার্যক্রম
১) “পি” ফরম অনুমোদিত হতে পারে।
কৃষি কার্যক্রম: পাটের বীজ, ধান, সার ও কীটনাশকের সংগ্রহ, চলন এবং বন্টন চলমান রাখতে হবে এবং কৃষি খামার এবং ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট ও তার সকল প্রজেক্ট চালু থাকবে।
২) পাওয়ার পাম্প ও অন্যান্য কার্যকরী যন্ত্রচালিত সরঞ্জামাদি এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় তেল, জ্বালানী, টুলস ও প্লান্টের মুভমেন্ট, সরবরাহ, ফিল্ডিং এবং সকল কার্যকলাপ চলমান থাকবে।
৩) টিউবওয়েলের স্থাপন ও কার্যক্রম এবং খাল খনন সহ জলসেচ ব্যাবস্থা অব্যাহত থাকবে।
৪) পূর্ব পাকিস্তান কো-অপারেটিভ ব্যাংক, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক এবং তাদের অধিভুক্ত সংস্থা ও থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির কৃষিঋণ বিতরনকার্যক্রম অব্যাহত থাকিবে।
৫) পাকিস্তানকৃষি উন্নয়ন ব্যাংকও অন্যান্য ব্যাংক দ্বারা ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকায়কৃষকদের সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ এবং অন্যান্য অপরিহার্য উপাদান বিতরন কার্যকর করা হবে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং শহর রক্ষা:ইপিওয়াপদা এবং অন্যান্য সংস্থা কর্তৃক বন্যা নিয়ন্ত্রণ সঞ্চালন,শহর রক্ষা এবং পানি উন্নয়নের কাজ এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত অপারেশন ও ড্রেজার মেরামত এবং যান্ত্রিক সরঞ্জাম ও উপকরণেরমুভমেন্ট ও সংযুক্ত জরুরী কাজগুলো চলমান থাকবে।
অভ্যন্তরীণ পোর্ট সহ সকল পোর্ট, জাহাজ পরিচালন সহ সকল ক্ষেত্রের কর্তৃপক্ষঃসৈন্যবাহিনীর সৈন্যসমাবেশ অথবা উপকরন বাড়ানো, যা মানুষের বিরুদ্ধে দমন করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে এমন কিছু ব্যাতিত পোর্ট কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী জাহাজের মসৃণ পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা করবে।
ইপিআইডিসি কার্যাবলীঃ সকল ইপিআইডিসি কারখানা কার্যকরথাকবে এবং উৎপাদনের বাড়ানোর চেষ্টা করবে, কারখানা পরিচালনার জন্য যে সকল ইপিআইডিসি বিভাগ প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও কেনাকাটা করে থাকে, তারা চালু থাকবে।
ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু থাকবে, উন্নয়ন কর্মকান্ডে জড়িত দিনমজুরগন কাজ শেষ করার বিনিময়ে তাদের প্রাপ্ত পারিশ্রমিক পেতে থাকবেন।
মজুরী প্রদানঃকর্মচারী এবং সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান যাদের বেতন দৈনিক, সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক ভিত্তিতে দেওয়া হয় তাদের বেতন বকেয়া হবার সাথে সাথে পরিশোধ করতে হবে।
ইতোমধ্যে অনুমোদিত আগাম বন্যাত্রান ও সব সরকারি, আধা-সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে। বেতন প্রদানের জন্য সকল সরকারী ও আধা-সরকারি অফিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যকর থাকবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন সময়মত দিতে হবে, পূর্বে এবং বর্তমানে জারীকৃত অনুমোদিত লেনদেন সম্পন্নের জন্যঅফিসের প্রয়োজনীয় বিভাগে পে বিল ক্লিয়ারেন্সের জন্য কর্মী কাঠামো থাকবে। জেলার, জেল ওয়ার্ড এবং জেল অফিস খোলা থাকবে। আনসারগণ তাদের কাজ চালিয়ে যাবে। মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বিভাগ চালু থাকবে। সকল বীমা কোম্পানি চালু থাকবে।