You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সুত্র তারিখ
ভুট্টোর ভুমিকার সমালোচনায় ঢাকার সংবাদপত্র দি পিপল ১০ মার্চ, ১৯৭১

ভুট্টো বাঙ্গালীর রক্ত ঝরানোর জন্য দায়ী
আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তি করেতাদের জীবন গঠন করতে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনেবাংলাদেশের ৭.৫ কোটি মানুষের সর্বসম্মত রায়ের পর লারকানা ও ইসলামাবাদে বাতাস কোন দিকে বইছিল তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। দরকার হলে বন্দুকের নলের মাধ্যমে বাঙ্গালীর রক্ত চোষার ও সম্পদ লুটার সেই পুরোনো ষড়যন্ত্রে আইউবমনা আমলারা যে ভুট্টোর চারপাশে সক্রিয়, তা দিনের আলোর মত পরিষ্কার। প্রকৃতপক্ষে, নির্বাচনের পরপরই প্রেসিডেন্টের লারকানায় যাত্রা, লারকানার সামন্ত প্রভু কর্তৃক আপ্যায়নে, তার অভিযান নিয়ে অন্যান্যদের মধ্যে আলাদাভাবে অনেক এবং সত্যিকার সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। আশা ছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া স্বৈরশাসক আইয়ুবের “নস্ট সন্তানের” মন গলাতে পারবেন, এবং নির্বাচনের পর দেশের প্রাপ্ত অবস্থা তাকে মেনে নিতে বাধ্য করাবেন, যা দৃশ্যত, ছয় দফা বিষয়ে, পশ্চিম পাকিস্তানের কৌশলকে ভেস্তে দিয়েছে। সৎ ভাবে এটা স্বীকার করতে হবে যে শেখ মুজিব ছয়দফার উপর গনভোট ঘোষণা করেছেন, এটা সজ্ঞানে জেনেই ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও অন্যান্য দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। সেখানে কোন সময়েই কোনো মহল থেকে কোন প্রতিবাদ ছিলনা, সারাদেশে নির্বাচন অনেক স্বচ্ছ ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা কিনা ইন্দো-পাক উপমহাদেশে একটি বিরল উদাহরণ ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর ছয় দফার বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানে পিপিপি কর্তৃক শুধু মাত্র হৈচৈ আর চিৎকারই করা হয়নি, বাংলাদেশের মানুষকেও কঠিনতম পরীক্ষায় ঠেলে দেয়া হয়েছিল, প্রদেশে রক্ত ঝরানো হয়েছিল। কি লজ্জা!কি বিশ্বাসঘাতকতা!
এসব কিছু ঘটেছে কারন, প্রেসিডেন্ট হঠাত করে পূর্বঘোষিত ৩রা মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতুবী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অবশ্যই রক্ত চোষা স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্দনে। সুতরাং বিধিসম্মত প্রতিশ্রুতি, ১৯৬৯ সাল থেকে জনগণকে দেওয়া রাষ্ট্র প্রধানের ভরসাজনক অঙ্গীকারে পবিত্রতার অভাব পাওয়া গেল। এটা সুস্পষ্টভাবে, লারকানার সুবিধাবাদীদের পরিচালিত সংখ্যালঘুদেরগ্রুপ ক্লিক স্পেয়ার (CLIQUE spear) কে খুশি করানোর প্রেসিডেন্টের উদ্বেগের কারনে। প্রকৃতপক্ষে, ভুট্টোর নিজস্ব স্বীকৃতি অনুযায়ী, তিনি অ্যাংলো-স্যাক্সন হতে পারেন যখন তিনি বিপ্লবী হতে চান, যখন তিনি এটার জন্য ভালো সুযোগ খুজে পান, এবং অবশ্যই আইয়ুবের শাসনের ইতিহাসে প্রমাণিত হয়েছে যে দরকার হলে তিনি একনায়কের হাতের পুতুলও হতে পারেন। এ ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ডের একজন লোক গিরগিটির মত যেকোনো সময় বর্ণ পরিবর্তন করতে পারে, তাতে অবাক হবার কিছুই নেই। তিনি মূলত একজন সামন্ত প্রভু কিন্তু সমাজবাদী সাজতে চান।
সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার অনুমতি ছাড়া পূর্বঘোষিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ বাতিল করা, একটি খারাপ ধরনের একনায়কতন্ত্র, যা ১২০০ মাইল দূরের ব্যারাকের পেছন থেকে বলপূর্বক করা হয়েছে। একজন সৈন্য, যদি সাহসী হয় এবং তার লবনের প্রতি সত্য হয় তাহলে সে কখনো বেড়ার পেছনে থাকতে পারে না। সে সততার সাথে বাস্তবের সম্মুখীন হবে। এটা স্বীকার করতে হবে, ৩রা মার্চের অধিবেশন স্থগিতের সর্বোচ্চ আঘাত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।

এবং রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশে আসা উচিত ছিল এবং দেখা উচিত ছিল কারা নিরীহ মানুষ মারছে, স্বাধীনতা প্রেমী, নিরস্ত্র কিন্তু প্রতিজ্ঞায় অটল মানুষগুলো কিভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছে। কিন্তু এখন, রক্ত ঝরেছে, ভবিষ্যত এখনও গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন, জনগনের পেছনে ফেরার কোন উপায় নেই; মানুষের রায়ে কোন আপস হতে পারে না, ভুট্টো থাকুক আর নাই থাকুক!
শেখ মুজিব এর সর্বশেষ প্রস্তাব অনুযায়ী, যদি এটা নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে বিবেচনা করা হয়, তবে এই দুর্ভাগ্যজনক সঙ্কটের সমাধান সম্ভব হতেও পারে।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!