মওলানা ভাসানীর ১৪ দফা কর্মসূচি ঘোষনা
দৈনিক পাকিস্তান ১০ মার্চ, ১৯৭১
মওলানা ভাসানীর ১৪ দফা কর্মসূচি
গতকাল মঙ্গলবার পল্টন ময়দানের অনুষ্ঠিত ন্যাপের জনসভায় সংগ্রামের বর্তমান পর্যায়ে ১৪ দফা কর্মসূচি ঘোষনা করা হয় । প্রয়োজন মত এই কর্মসূচীর সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হবে বলেও ঘোষনা করা হয় ।
বিগত ৯ই জানুয়ারী সন্তোষ সন্মেলনে এবং ১০ই জানুয়ারী পল্টন ময়দানে জনসভায় ঘোষিত মুক্ত পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবীর প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন;
উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থার সামাজিকীরণ ও সুষম বন্টন এবং সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, উপনিবেশবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ ও একচেটিয়া পুঁজিবাদ বিরোধী কৃষক-শ্রমিক রাজ কায়েম এবং ধর্ম বর্ণ ও ভাষা নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা;
পূর্ব বাংলায় উৎপাদিত পণ্যোর বিকল্প সকল বিদেশী পণ্য বর্জন;
পূর্ব বাংলার সর্বস্তরে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন;
শেখ মুজিবর রহমান খাজনা, ট্যাক্স বন্ধের যে আহবান জানিয়েছেন তা যাতে সুষ্টুভাবে পালিত হয় সেই জন্য সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে লবণ শুল্ক, নগর শুল্ক, হাট-বাজারের তোলা, খাজনা, ইনকাম, ট্যাক্স, কৃষি ট্যাক্সসহ সমুদয় ট্যাক্স প্রদান সুসংগঠিত বন্ধ রাখা;
নিরস্ত্র নিরপরাধ জনগণকে গুলি করে হত্যা করার অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সামরিক সৈন্য, কর্মচারী ও সরকারী কর্মকারীদের নিকট নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি বন্ধ রাখা;
পূর্ব বাংলার বর্তমান খাদ্য ও অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে যাতে কোন দ্রব্যসামগ্রী সীমান্তের অপর পারে চোরাচালান না হতে পারে তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা ।
ত্রিশ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি পূরণের নিমিত্তি স্চ্ছোয় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পতিত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা;
পূর্ব বাংলায় অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তানী ব্যাংক সমূহ কোন টাকা জমা না রাখা;
দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্য কালোবাজারী ও আড়তদাররা যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মওজুত করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দেয়া; বাঙালী-অবাঙালী, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা বাধিয়ে গণসংযোগকে বিপথে পরিচালিত করার ষড়যন্ত্রকে প্রতিরোধ করা;
বাঙালী জাতীয় মুক্তির আন্দোলনের নামে টাউট ও প্রবঞ্চকরা যাতে চাঁদা তুলতে না পারে তার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা;
বিদেশী সৈন্য যাতে পূর্ব বাংলার মাটির অবতরণ করতে না পারে তার জন্য চট্টগ্রাম ও খুলনার সামুদ্রিক বন্দরগুলোর প্রতি সজাগ দুষ্টি রাখা;
গণবিরোধী শাসকচক্রের তমঘা, খেতাবসহ বিভিন্ন উপঢৌকন বর্জন করা ।
এ ছাড়া সভায় গৃহিত এক প্রস্তাবে নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালীর উপর গুলিবর্ষণের তীব্র প্রতিবাদ করা হয় এবং নিহত ও আহত স্বাধীনতার সৈনিকদের প্রতি গভীর সংগ্রামী সববেদনা জানানো হয় । প্রস্তাবে দেশের সর্বত্র গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠানের জন্যে জনসাধারনের প্রতি আহবান জানানো হয় ।