You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.30 | মুক্তাঞ্চলে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে মন্ত্রী পরিষদ সভার কার্যবিবরনী ও সিদ্ধান্ত | বাংলাদেশ সরকার, কেবিনেট ডিভিশন - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুক্তাঞ্চলে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে মন্ত্রী পরিষদ সভার কার্যবিবরনী ও সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকার, কেবিনেট ডিভিশন ৩০ নভেম্বর, ১৯৭১

গোপনীয়

মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত মুলতবি হওয়া মন্ত্রীসভার সভায় কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ

বিষয়সূচি নং. ২                                                                                                                                                                 বিবিধ

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যতীত প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভার সকল সদস্য উপস্থিত হয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রণে প্রতিরক্ষা সচিব উপস্থিত হয়েছেন। নভেম্বর 22,1971 তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় “বিমুক্ত বাংলাদেশে বেসামরিক প্রশাসনিক গঠন” বিষয়ে গৃহীত কার্যবিবরণী এবং সিদ্ধান্ত হৃষ্ট হয়ে নিশ্চিত করেছিল। এ ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে যে সাব-কমিটির সচিবগণের সাথে পরিকল্পনা কমিশনের দেওয়া কিছুসংখ্যক উল্লেখিত শর্তাবলীর অধিক্রমণ হয় এবং অত: পর দুইটির মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল। সেখানে দুটি বিকল্প সমাধান ছিল। হয় সচিবদের উপ কমিটি তাদের সুপারিশ প্রস্তুত করতে পারে এবং পরিকল্পনা সেলের সাথে পরামর্শ করে মন্ত্রীসভায় দাখিল করতে পারে অথবা দিটও অংশ(পরিকল্পনা সেল এবং সচিবদের উপ কমিটি) পৃথকভাবে তাদের তথ্য ও সুপারিশ উপস্থাপন করতে পারে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সচিবহণ,উপ কমিটি তাদের প্রতিবেদন সরাসরি মন্ত্রীসভায় উপস্থাপন করতে পারবে এবং পরিকল্পনা সেলও পৃথকভাবে একই কাজ করতে পারবে যাতে মন্ত্রীসভার নিকট প্রতিবেদন এবং সুপারিশের দুটি আলাদা সেট থাকে।

স্বাক্ষর

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি

৩০.১১.৭১

তারিখ ৩০ নভেম্বর, ১৯৭১।

স্মারকলিপি নং (৫)/মন্ত্রীসভা

প্রেরণ করা হবে:

১.জনাব এ.এফ.এম.এ. ফাতেহ,

২.সচিব, প্রতিরক্ষা,

৩.সচিব, স্বরাষ্ট্র,

৪.সচিব, অর্থ,

৫.সচিব, সাপ্র বিভাগ।

(এইচ.টি. ইমাম)

(মন্ত্রীসভা সচিব)

৩০.১১.৭

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ৭৫ লক্ষ মানুষের উদাত্ত আকাঙ্খার সার-সংক্ষিপ্ত রচনা করেছিল। এটি একটি অনন্য আন্দোলন এই অর্থে যে, এটি শুধুমাত্র উপনিবেশবাদই দূর করেনি, বরং এর লক্ষ্য ছিল এমন একটি সম্প্রদায় গঠন করা যেটি কিনা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক মুক্তি প্রদান করবে।

স্বাধীন অঞ্চলগুলোতে ন্যায়াধিকার পুনর্গঠন করা স্বয়ং মুক্তিযুদ্ধের এমনই একটি অংশ ছিল।

এই সময়ে সমগ্র জাতি সশস্ত্র-বাহিনীকে বিতাড়িত করার দুর্দান্ত প্রচেষ্টায় মগ্ন ছিল। প্রশাসনের অবিলম্বে কাজের একটি বিশেষ প্রকৃতি ছিল এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মোকাবিলা করা হত।

সামরিক দিক থেকে বাংলাদেশ তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিলঃ-

(১) যে সকল এলাকা স্বাধীন হয়েছে এবং মুক্তিবাহিনীর সক্রিয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে।

(২)যে সকল এলাকার স্বাধীনতা প্রক্রিয়াধীন।

(৩) অধিকৃত এলাকা।

() মুক্ত/ স্বাধীন এলাকাসমূহঃ

স্বাধীন এলাকাগুলোতে প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নে দেওয়া হলঃ-

১। আইন এবং শৃঙ্খলার রক্ষণাবেক্ষণ

২। বেসামরিক প্রতিরক্ষা

৩। উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণ

৪। প্রতিষেধকের উপর জোরপ্রদানপূর্বক স্বাস্থ্য

৫। প্রয়োজনীয় ভোক্তা সামগ্রী যেগুলো এই এলাকায় দুষ্প্রাপ্য , সেগুলোর আমদানি

৬। প্রয়োজনীয় কৃষি যোগান, যেমন- বীজ এবং সার

৭। যতদূর সম্ভব যোগাযোগ প্রক্রিয়ার পুনর্প্রচালন

৮। গণ-সম্পর্ক

উপরোক্ত অবস্থা বিবেচনায়, নিম্নে বর্ণিত কর্মকর্তাগণ স্বাধীন এলাকাগুলোর পদে নিযুক্ত হতে পারেনঃ-

উপাধি  দায়িত্ব
১। থানা ম্যাজিস্ট্রেট আইন এবং শৃঙ্খলা , বেসামরিক প্রতিরক্ষা ও প্রচার এবং সার্বিক সমন্বয়।

 

২। C.O. (Dev.) / বিশেষ

 ত্রাণ কর্মকর্তা

ত্রাণ।
৩। C.O. (Dev.) / থানা

খাদ্য কর্মকর্তা

ভোক্তা সামগ্রীর যোগান দেওয়া।
 

 

৪। ও.সি. আইন এবং শৃঙ্খলা।
৫। থানা উপদর্শক / সহকারী প্রকৌশলী যোগাযোগ পুনর্প্রচালন
৬।  থানা কৃষি কর্মকর্তা / T.S.O. / T.I. কৃষি সামগ্রীর যোগান দেওয়া।
৭। থানা চিকিৎসা কর্মকর্তা স্বাস্থ্য

ই কর্মকর্তা নির্বাচনে নিম্নোক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবেঃ-

১। স্বাধীনতা-কার্য প্রবর্তনের পূর্বেই যেসব কর্মকর্তাকে থানায় আসন দেওয়া হয়েছে, তারা কাজে অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সে আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক সহকর্মী হিসেবে ঘোষিত হচ্ছে।

২। যদি স্বাধীন এলাকাগুলোতে প্রশাসন কর্মীদের কোন উদ্বৃত্ত থাকে, তারা তাদের দায়িত্ব মুক্তিপূর্বক থানা ম্যাজিস্ট্রেটকে সহযোগীতা করবে।

৩। কোন থানায় কর্মীদের অভাব দেখা গেলে, কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত বাহিনী থেকে পাঠানো হবে।

আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক থানা পর্যায়ে কার্যক্রম চালিত হবে। আঞ্চলিক পরিষদ এর নিয়মাবলি নিম্নরূপঃ-

১। আইন এবং শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি গঠন কিন্তু এই কমিটিসমূহ উদ্বাস্তুদের সম্পত্তি বিষয়ক কোন মামলা গ্রহণ করবে না। উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনে নিরুৎসাহিত করা হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত পুরো দেশ স্বাধীন হবে।

২। নিপীড়িত মানুষদের অগ্রাধিকারের তালিকা, ত্রাণসামগ্রীর অনুমত পরিমাণ ধার্যকরণ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলোতে প্রকৃত বণ্টনের প্রস্তুতি।

৩। প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা মূল্যায়ন।

৪। কৃষি দ্রব্যসামগ্রীর আমদানি এবং যোগান।

৫। ত্রাণ এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের পরিক্ষা।

অপ্রধান পরিকল্পনাগুলো ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলোর দ্বারা নিষ্পন্ন হতে পারে কিন্তু মুখ্য পরিকল্পনাসমূহ আঞ্চলিক পরিষদের সভাপতির তত্ত্বাবধানে আঞ্চলিক প্রকৌশলীকেই গ্রহণ করতে হবে।

৬। প্রচারণা।

() যে অঞ্চলসমূহ স্বাধীনতা প্রক্রিয়াধীন রয়েছেঃ

এরকম এলাকাগুলোতে প্রধান কাজ ছিল সেনা কর্মকাণ্ডে বেসামরিক সহায়তা প্রদান। এই সময়ে এরকম একটি কাজ রাজনৈতিক নেতৃত্বাধীনে দায়িত্ব গ্রহণ করা সর্বোত্তম। তদুপরি, যুদ্ধের জরুরী অবস্থা জায়গা এবং সময়ভেদে পরিবর্তিত হতে থাকে। অতএব, আঞ্চলিক পরিষদকে অনুমোদিত করা হয়, এরকম অঞ্চলগুলোতে তাৎক্ষণিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার। তারা সকল সরকারী কর্মকর্তাদের সেবা কাজে লাগাবে যারা ইতোমধ্যে আঞ্চলিক প্রশাসনিক গঠনে নিযুক্ত।

U.O. নং ৪০৪ (৪), মন্ত্রীসভা, তারিখ ৩০-১১-৭১