You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.11 | বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল সমুহের বে-সামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে মন্ত্রীপরিষদ সভার কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত | বাংলাদেশ সরকার, কেবিনেট ডিভিশন - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সুত্র তারিখ।
বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল সমুহের বে-সামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে মন্ত্রীপরিষদ সভার কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ সরকার, কেবিনেট ডিভিশন ১১ নভেম্বর, ১৯৭১

 
সোমবার মন্ত্রীসভার অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত এবং কার্যবিবরণী সমুহ,
তারিখ নভেম্বর ১১, ১৯৭১ . .

স্বাধীন বাংলাদেশে বিবিধ জনপ্রশাসন স্থাপন।

অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পরিচালিত। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সকল সদস্যবৃন্দ এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব উপস্থিত ছিলেন। নিম্নের ব্যক্তিগণ বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেনঃ
১. সি-ইন-সি,
২. জনাব ফাতাহ,
৩. প্রতিরক্ষা সচিব।

মুক্তাঞ্চলে জনপ্রশাসন স্থাপনের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
নিম্নলিখিত পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে:
ক) ধাপে ধাপে সমস্যার সমাধান এক্ষেত্রে কোন ভাবে কার্যকর হবে না। এই সমস্যার মোকাবেলার চেষ্টা করার সময় আমাদের সমগ্র বেসামরিক প্রশাসনকে এক সুরে বেধে নিতে হবে।

খ) আইন-শৃঙ্খলা, পুনর্বাসন, খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ, আবাসন ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় সেবা যেমন: চিকিৎসা সুবিধা ইত্যাদি অপরিহার্য সেবাগুলি ধারণাতীত মাত্রার সমস্যা তৈরি করবে। . গ) পরিকল্পনা তৈরির আগে ন্যূনতম তথ্যের উপলব্ধ আমাদের থাকা উচিত।

ঘ) মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনার ভিত্তিতে একটি কারিগরি কার্যপ্রণালী সচিব দ্বারা প্রস্তুত করতে হবে, বেসামরিক প্রশাসনে যাদের কাজ করার সম্যকজ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের দ্বারা প্রস্তুত করা যেতে পারে। .

ঙ) আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দালালদের বাছাই করার প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠবে। এক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তির প্রস্তাবনা এই যে, ভয় দেখিয়ে দালালদের বেশীর ভাগকে নিজ-অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শত্রুসহযোগী হতে বাধ্য করা হয়েছে। বেশ কিছু সুত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যমতে জানা যায় যে, সরকারি কর্মকর্তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই অন্তর হতে বাংলাদেশের পক্ষে এবং লোকচক্ষুর আড়ালে এই সংগ্রামে তারা সাহায্য করেন বলেও প্রমাণিত।

চ) বেশ ব্যাপক আকারে সরকারি কর্মচারিদের ছাটাই একটি প্রশাসনিক কর্মী শুন্য অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে যা পূরণ করা কঠিন হতে পারে। এতে রাজনৈতিক সমস্যাও তৈরি হতে পারে।

ছ) এই সমস্ত সমস্যাগুলো শর্তেও যে ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্মী শুন্য অবস্থা অনিবার্য হবে সে ক্ষেত্রগুলোতে কিছু ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। রাজনৈতিক কর্মীদেরও এক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে।
জ) যতো সমস্যা-সংকুলতাই আসুক না কেন, দেশ গড়তে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে হবে।

সিদ্ধান্ত
সচিবদের দ্বারা গঠিত একটি উপকার্যনির্বাহী-পরিষদ, যারা হয় প্রত্যক্ষভাবে সমস্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অথবা তাদের প্রশাসনিক দক্ষতা আছে এদের দিয়ে সমস্যাবলী সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জনপ্রশাসন গঠন করতে হবে, যা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরিহার্য সরবরাহ ব্যবস্থা ও সেবা, খাদ্য ও সাময়িকভাবে গৃহহীন ব্যক্তিদের জন্য আবাসন, বাস্তুচ্যুতদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা, স্বাভাবিক অবস্থার পুনরূদ্ধার করা এবং একটি সুখ-সমৃদ্ধ অঞ্চল গড়ে তোলা যা শুধু দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারই নয় বরং ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্যেও, যা সরকার কতৃক গৃহীত নীতির অংশ। উপকার্যনির্বাহী-পরিষদ তাদের গৃহীত সুপারিশ এবং তথ্যাবলী সমৃদ্ধ একটি ব্যাপক প্রতিবেদন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পেশ করবে। এই উপকার্যনির্বাহী-পরিষদে জনাব এ.ফাতাহ নিম্নলিখিত সদস্যবৃন্দের সঙ্গে সভাপতি হিসেবে কাজ করবেন:
১. প্রতিরক্ষা সচিব,
২. স্বরাষ্ট্র সচিব,
৩. মন্ত্রিপরিষদ সচিব,
৪. অর্থ সচিব,
৫. জি.এ. সচিব।
প্রয়োজনে আরো সদস্য সংযুক্ত করা হবে। এছাড়াও সি-ইন-সি, পরিকল্পনা সেল এবং সরকারের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের এই উপকার্যনির্বাহী-পরিষদ এর কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
স্বাক্ষর / ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি .