চৌ-নিক্সন বৈঠকের উপর বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম নির্ভরশীল নয়
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ২০ জুলাই চৌ-নিক্সন প্রস্তাবিত সাক্ষাৎকার, কিসিঙ্গার ইয়াহিয়া বৈঠক কোন কিছুই বাঙলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির রদবদল করতে পারবে না। বাঙলাদেশ সম্পর্কে বিশেষ ওয়াকিবহাল মহল থেকে এ খবর জানা যায়। বাঙলাদেশের সর্বত্র ব্যাপক কার্যকরী গেরিলা লড়াই চলছে। মুক্তিযােদ্ধাদের আক্রমণে প্রচুর সংখ্যক দালাল নিহত হয়েছে। মুক্তিযােদ্ধারা এখন বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করার চেয়ে পাকফৌজের মনােবল ভেঙে দেবার জন্য অতর্কিত আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি করেছেন। মুক্তিযােদ্ধাদের কমান্ডারা এক বৈঠকে মিলিত হয়ে আরাে বেশী যুবককে প্রশিক্ষণ দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আক্রমণ তীবতর করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
ইউএনআই জানাচ্ছে, বাঙলাদেশের মুক্তিফৌজ পুনর্গঠিত হয়েছে। এর নতুন নামকরণ হয়েছে, “মুক্তিবাহিনী”। মুক্তিবাহিনী শীঘ্রই বিমান এবং নৌ-যানের অস্ত্রাদি পাবার চেষ্টা করবে।
ঐ সূত্র থেকে জানা যায়, পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা ক্রমশঃ হতাশ হয় পড়েছে। বিশেষ করে অফিসার পাওয়া তাদের পক্ষে একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফৌজের মধ্যে ক্রমাগত রদবদলও ওয়াকিবহাল মহল নজর রাখছেন।
সমন্বয় কমিটি কাগুজে ব্যাপার।
ঐ সূত্র থেকে জানা যায়, মৌলানা ভাসানির জাতীয় আওয়ামী দল, শিকদার গ্রুপ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ নয়টি দলের যে বাঙলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়েছে তার মধ্যে ছয়টি দলের কোন অস্তি তৃই নেই। পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মণি সিং ইতিপূর্বেই এই কমিটির সঙ্গে কোন যােগাযােগ নেই বলে জানিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের বক্তব্য
এখানে প্রাপ্ত পূর্ব পাকিস্তানের (বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র মুক্তিযুদ্ধ’র দ্বিতীয় সংখ্যার “ইয়াহিয়া চক্রের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করুন” এই সম্পাদকীয় শিরােনামায় বলা হয়েছে, আগামী দিনে মুক্তিযুদ্ধ যখন আরও দুর্বার হইয়া উঠিবে, মুক্তিফৌজের মারের চোটে হানাদার বাহিনী যখন পরাজয়ের পর পরাজয় বরণ করিবে, তখন ইয়াহিয়া চক্রের চক্রান্ত আরাে বৃদ্ধি পাইবে। তাহারা আরও তার স্বরে “ভারতের হস্তক্ষেপ” বলিয়া চিৎকার করিতে থাকিবে এবং সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য আরও বেশী করিয়া তৎপর হইবে। এমনও হইতে পারে যে, মুক্তিফৌজের ও জনগণের হাতে ভরাডুবি আসন্ন দেখিয়া দস্যু ইয়াহিয়া চক্র “ভারতের সশস্ত্র আক্রমণের এক মিথ্যা কাহিনী বানাইয়া পাক ভারত সংঘর্ষ বাধাইয়া গণমনে প্রবল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার প্রয়াসী হইতে পারে।
“আমরা মনে করি যে, পাক ভারত সংঘর্ষ বাধাইয়া বাঙলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিনষ্ট করার কুমতলব নিয়াই মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদী দস্যুরা তাহাদের সহযােগী ইয়াহিয়া চক্রকে এই সময়ে আবার প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দিতেছে।” সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, “আমরা বিশ্বাস করি যে, সাম্রাজ্য বাদের সহযােগী ইয়াহিয়া চক্র যত শয়তানীই করুক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙলাদেশের শ্রমিক-কৃষক-ছাত্রজনতা মুক্তিযুদ্ধে তাহাদের অটুট একতা রক্ষা করিবেন এবং দস্যুদলের সমস্ত চক্রান্ত ব্যর্থ করিয়া মুক্তিযুদ্ধকে জয়ী করিবেন।
সূত্র: কালান্তর, ২১.৭.১৯৭১