You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.09 | মুক্তি সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বানে মওলানা ভাসানী | মওলানা ভাসানী (প্রচার পত্র) - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুক্তি সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বানে মওলানা ভাসানী মওলানা ভাসানী (প্রচার পত্র) ৯ই মার্চ, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্থানের বঞ্চিত জনসাধারণের প্রতি মওলানা ভাসানীর আহ্বান
পূর্ব পাকিস্থানের আজাদী রক্ষা ও মুক্তি সংগ্রামে
ঝাঁপাইয়া পড়ুন

প্রিয় দেশবাসী,

আজ আমি সাত কোটি পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে এই জরুরী আহ্বান জানাইতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনারা দল, মত, ধর্ম ও শ্রেণী নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ একত্রে এবং একযোগে একটু সাধারণ কর্মসূচী গ্রহণ করুন, যার মূল লক্ষ্য হবে, ২৩ বৎসরের অমানুষিক এবং শোষণকারী শাসকগোষ্ঠীর করাল কবল থেকে পূর্ব বাংলাকে সম্পূর্ণ ও চূড়ান্তভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম করা।

১৯৪৭ সালের তথাকথিত স্বাধীনতা হস্তান্তরের ইতিবৃত্ত ও নির্গলিতার্থ এবং তার পরবর্তী অধ্যায়ে নবরূপ শোষণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে শতকরা ৯৮ জন দেশবাসী অবহিত আছেন এবং সে জন্যই আজ আমি আহ্বান জানাচ্ছি যে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট স্বাধীন-সুখী দেশ প্রতিষ্ঠা করার নামে সমঝোতার মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণীর দেশী শোষকদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে স্বাধীনতার যে প্রহসন সৃষ্টি করা হয়েছিলো, আসুন আজ আমরা একত্রিত হয়ে সেই কপট স্বাধীনতাকে সত্যিকারের স্বাধীনতায় রূপান্তরিত করি।

আসুন, আজ আমরা বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করি যে, পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের হাতে গণতান্ত্রিক পূর্ণ ক্ষমতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমরণ সংগ্রাম করে যাব।

আসুন, আমরা ঘোষণা করি যে, পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এর চেয়ে কম কিছু নয়। কারণ অন্য কোনও উপায়ে শোষিত কোটি কোটি পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নতি ও স্বয়ং সম্পূর্ণতা আসতে পারে না।

আসুন, এই আন্দোলনকে আমরা সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দ্বিতীয় ও শেষ পর্যায়ের মরণপথ সংগ্রামে পরিণত করি। সত্যিকারের জাতীয় মুক্তির আর কোনও পথ নেই।

আসুন, আমরা বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করি যে, জয় বাংলা’ রব তুলে নিপীড়িত কোটি কোটি বাঙালীর ভোট তথা সমর্থন নিয়ে সেই শক্তির বিনিময়ে পশ্চিম পাকিস্থানের শোষক ও সামরিক শাসকদের সাথে হাত মিলিয়ে যেনতেন প্রকারের একটা আপোস ও সমঝোতার সরকার গঠনপূর্বক শোষিত বাঙালীর আত্মনিয়ন্ত্রণের দ্বিধাহীন ও দুর্বার আকাঙ্খাকে পুনর্বার বানচাল করার যে চক্রান্ত মুষ্টিমেয় বাঙালী শোষক ও তাদের হোতারা করে চলেছে, সেই হীন ষড়যন্ত্রকে আমরা শতকরা ৯৫ জন শোষিত, নিপীড়িত বাঙালী একযোগে অংকুরেই প্রতিহত ও বিনষ্টকরব। আসুন, আমরা শেষ ও চূড়ান্ত বারের মত পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলনে একত্রিত হই এবং পশ্চিম পাকিস্থানী সাম্রাজ্যবাদী ও মুষ্টিমেয় বাঙালী শোষকের শত বাঁধা-বিপত্তি ও আক্রমণকে প্রতিহত করে জয়যাত্রা শুরু করি।

‘ঘরে ঘরে ডাক পাঠাই তইরি হও জোট বাঁধো-
মাঠে কিষান, কলে মজুর, নওজোয়ান জোট বাঁধো।
এই মিছিল সর্বহারার সব পাওয়ার এই মিছিল,
হও সামিল, হও সামিল, হও সামিল

৯ই মার্চ, ১৯৭১। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী