১৩ বৈশাখ ১৩৭৮ মঙ্গল বার ২৭ এপ্রিল ১৯৭১
সন্ধ্যাবেলা এক হাজারের ও বেশী প্রবাসী বাঙ্গালী লণ্ডনের মেফেয়ারে অবস্থিত ইংলিশ স্পীকিং ইউনিয়নের হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত এক রিসেপ শান ও যুক্ত রাজ্য সফরত পাকিস্তনী ক্রিকেট টিমের সদস্যদের যোগদান বাধা সৃষ্টি করেন স্টিয়ারিং কমিটি এই
বিক্ষোভের আয়োজন করে প্রায় ৫০ জন পুলিশম্যানের সহায়তায় ক্রিকেটারদের হলের ভিতর নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। ছাব্বিশজন বাঙ্গালী বিক্ষোভকারীদের এই উপলক্ষে গেপ্তার করা হয়।
–মেজর মীর শওকতের বাহিনীর সাথে রাঙ্গা মাটিতে মিজোদের লড়াই হয়। মহালছড়িতে পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধে ক্যাপ্টেন আফতাব আল কাদের বীরবিক্রম যুদ্ধে করে শহীদ হন।
–যুক্ত রাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা আবেদন জানায়।
–তেলিয়া পাড়ায় মুক্তিবাহিনীদের একটি ঘাঁটি তৈরি হয়। অপর দিকে মাধবপুর উপজেলা সদর থেকে ৯ মাইল দূরেই পাক হানাদারদের তাবু। পাকবাহিনী আজকে পতন ঘটায় মাধবপুরের। বাহিনী হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষণ বাড়িয়ার সীমানা নির্দ্ধারণকারী সোনাইনদী অতিক্রম করে পাইকারী হারে নির্যাতন শুরু করে বহু লোককে হত্যা করে।
–মনু নদীর তীরে কামালপুর ইউনিয়ন (মৌলিভীবাজার) পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর লড়াই হয়। পাকবাহিনী কামালপুর থেকে কন কপর পর্যন্ত দীর্ঘ দু মাইল পর্যন্ত রাস্তার উভয় পার্শ্বের ঘুরবাড়ি, গাছপালা পর্যন্ত অগ্নিসং যোগে ভস্মীভূত করে দেয় । পুরো এলাকা জুড়ে চলে নারকীয় হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসং যোগ। য শোহর জাহেলিয়াতের খেলা। কাজীরগা ,নাকা,পৈলাকরো চলে হিন্দুদের উপর অকথ্য নির্যাতন ও হত্যা।
–পাকবাহিনী ঝালকাঠি প্রবেশ করেই গণহত্যা শুরু করে।
–বিবিসি’র সাথে এক সাক্ষাৎ কারে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য জন স্টোনহাউজ বলে যে পূর্ব বাংলায় যে ভয়াভয় ঘটনা ঘটছে, তাঁর সাথে তুলনা করলে ভিয়েতনামার ঘটনাবলীর “টি- পার্টি বলে হয়। ২৫ শে মার্চ ঢাকা – বিশ্ব বিদ্যালয়ের কয়েকজন স্টাফ ও ছাত্রকে অত্যন্ত সুস্থ মস্তিস্কে হত্যা করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলকে বানচাল করার জন্য সামরিক জান্তা কঠোর দমন নীতি গ্রহণ করেছে ব্রিটেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এই ব্যাপারে উদাসিন থাকা উচিত নয়।
–মুক্তিযোদ্ধা দের সাথে পাকসেনাদের মহালছড়িতে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে তিনহাজার সৈন্যরা মিজো ব্রিগেড এবং পাকসেনারা একটি নিয়মিত কর্মাণ্ডো কোম্পানী অংশ নেয় । এই যুদ্ধে বীরের মত মৃত্যুবরণ করোছিলো ক্যাপ্টেন কাদের। (৯খঃ পৃঃ ১১৩)
–ইসলামাবাদের পাকিস্তান সরকারের জনৈক মুখপাত্র জানান, কলকাতায় ৫০ জন পূর্ব পাকিস্তানী কূটনৈতিক কতৃক তাঁদের দায়িত্ব ত্যাগ করে তথাকথিত বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্র হাই কমিশন গঠন এবং কলকাতায় দায়িত্ব নেয়ার জন্য একজন নতুন ডেপুটি হাই কমিশনার পাঠালে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভের পর থেকে ২৬ এপ্রিল থেকে কলকাতায় পাকিস্তানের মিশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে ঢাকাস্ত ভারতীয় মিশন বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
–পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র আরো বলেন নিউইয়র্কে পাকিস্তানে ভাইস কন্সাল মাহমুদ আলী তাঁর চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে যুক্ত রাষ্ট্র রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করার তাকে সাসপেণ্ড করা হয়েছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চীফ অব ষ্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান ও পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল রহীম খান সামরিক ইউনিট পরিদর্শনের জন্য ঢাকায় আসেন।
–অধিকৃত ঢাকার লেঃ জেনারেল টিক্কাখান গভর্ণর পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিয়ার) এর নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান বেসামরিক বাহিনী (ইপিসি এফ) নামকরণ করে।
-পাকিস্তান সেনাবাহিনী চট্টগ্রামের মহালছড়িতে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করে। প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে নোয়াখালী শা ন্তাহার সিরাগঞ্জ ও মৌলিভীবাজার পুনর্দখল করে ।
–ব্রিটিশ এম, পিজনে স্টোন হাউস লন্ডনে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পূর্ব বাংলায় মারত্মক ও ভয়ংকর সব ব্যাপার ঘটছে। ঢাকায় ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী যা করেছে তা নিঃ সন্দেহে গণহত্যা। নির্বাচনে শতকরা ৯৮ ভাগ ভোটার যে রায় দিয়েছেন , সামরিক জান্তা সেই গণ তান্ত্রিক রায়কে কেবল প্রত্যাখান করেনি তাকে ভেস্তে দেবার পরিকল্পনা এঁটেছেন। এ বিষয়টি কখনৈ উপেক্ষা করা যায় না। এ ব্যাপারে আমাদের কর্তব্য রয়েছে। আমাদের নিষ্ক্রিয় থাকা উচিত নয়।
–ম লানা মান্নান ছিলেন বাঙালীদের জন্য ত্রাসস্বরূপ। এপ্রিল ১৯৭১ সালে তাকে শান্তি ও কল্যাণ কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় পরিষদে কো – অপ্টকরা হয়। পাকবাহিনীর গন হত্যাকে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন তিনি বেশ কয়েকবার এর মধ্যে। ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকাশিত তাঁর বিবৃতির একটি অংশ এখানে উদ্ধৃত হল। “সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমূলে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক জনগন আজ জেহাদের জোশে আগাইয়া আসিয়াছে । জনসাধারণ সক্রিয় সহযোগিতা আমাদের সাহসি সশস্ত্র বাহিনী সকল অঞ্চলে দখল কায়েম করিয়া সুদৃঢ়ভাবে তাহাদের কর্তৃত্ব কায়েম করিয়াছে।” (একাত্তরের ঘাতক ও দালাল কে কোথায় পৃঃ৮৮)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী