You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.03 | ১৮ আষাঢ় ১৩৭৮ শনিবার, ৩ জুলাই, ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১৮ আষাঢ় ১৩৭৮ শনিবার, ৩ জুলাই, ১৯৭১

পূর্ব ইউরোপ সফর শেষে ভারতের মন্ত্রী ডঃ কিরন সিং দিল্লীতে বলেন, বাংলাদেশ সমস্যা সম্বন্ধে ঐসব দেশে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। (সংবাদপত্র) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং এদিন লোকসভায় সংসদ সদস্যদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, সঠিক সময়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হবে। এখনো স্বীকৃতি দেয়ার উপযুক্ত সময় আসেনি তবে বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।

 -লাক্ষ্মৌতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধি বলেন, বিশ্বের দেশগুলো এখনো বাংলাদেশ সমস্যা নিয়ে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলনে, বাংলাদেশ সমস্যা ভিয়েৎনাম সমস্যার মতো সাড়া বিশ্বে সাড়া জাগাবে।

পাকিস্তনের লন্ডনের ‘রয়েল কমনওয়েলথ সোসাইটি’র সঙ্গে সাময়িকভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গণহত্যার প্রতিকারের জন্য বিশ্ব বিবেকের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন।

যুগান্তর পত্রিকায় এদিন এক সম্পাদকীয় মন্তব্যে উল্লেখ্য করেঃ বর্তমান যুগটা শক্তির যুগ। যার বাহুতে আছে বল এবং মনে আছে সংকল্পের দৃঢ়টা তাকেই সেলাম জানাবে দুনিয়া।

নিজের পায়ে দাঁড়ান নয়াদিল্লী। স্বীকৃতি দিন স্বাধীন বাংলাদেশকে। দুর্বার করে তুলুন মুক্তিফৌজের সংগ্রাম। এ পথেই আসবে বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান এবং শরণার্থীদের  স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।’ (১৪ খঃ পৃঃ ৮৪২)

 বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব কামরুজ্জামান, জনাব আব্দুস সামাদ আজাদ এমএনএ, জনাব আব্দুল মুন্তাকিস চৌধুরী  এম এন এ ও পুলিশের আইজি জনাব আব্দুল খালেক এদিন টেকের হাট (সুনামগঞ্জ)

সেক্টর পরিদর্শন করেন। প্রশিক্ষনরত মুক্তি যোদ্ধাদের উদ্দেশে এক ভাষণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান বলেনঃ I want to inform you on behalf on my Government that the basis for the future army of the country will be you, those who shall excel in the freedom fight, those will prove themselves t be the finest fighters, they will give the leadership to our future army’’ ( ৩ খন্ড পৃঃ ৬৯) জেনারেল ফরমান আলী খান ব্রিটিশ সাংবাদিক মিস ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থের সংগে এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করে, বিগত সপ্তাহে (জুন মাসের শেষ সপ্তাহে) পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী টাংগাইল জেলার ছ’টি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে এই গ্রামগুলি ধ্বংস করা হয়েছে। (“দি ডেইলি টেলিগ্রাফ”, ৩ জুলাই, ১৯৭১)

  মার্কিন সাময়িক ‘নিউজ উইক’-এ এদিন ‘দ্য টেরিবল ব্লাড বাথ অব টিক্কা খান’ শিরনামে সংবাদদাতা টনি ক্লিফটনের বাংলাদেশে পাক-বর্বরতার একটি ভয়াবহ আংশিক চিত্র তুলে ধরেছেন। টনি ক্লিফটন তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন যে, আমেরিকার নিউজার্সির কংগ্রেস সদস্য মিঃ কর্নেলিয়াস গালাঘার আমাকে বলেছেন পাকবাহিনীর বর্বরতার খবর অতিরিক্ত বলে আমি প্রথমে মনে করেছিলাম এবং প্রকৃত সত্য যাচাইয়ের জন্যেই আমি শরণাথী শিবিরগুলো পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম, কিন্ত আমি যা দেখেছি তা আবর্ণনীয়। মিঃ গালাঘার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর একজন বিখ্যাত সামরিক অফিসার ছিলেন। তিনি বলেছেনঃ দ্বিতীয় বিশ্বমহাসমরের সময় ফ্রান্সের বিধ্বস্ত এলাকাগুলো আমি দেখেছি, মর্মান্তিক বধ্যভূমিগুলোও আমি দেখছি, কিন্তু আমি এমনটি কখনও দেখেনি। সেখানে ঐ বীভৎস বর্বরতার ঘটনার সঙ্গে পূর্ববাংলার ঘটনার কোন তুলনা হয় না।

ভারতের শিক্ষা ও দফতর বিহীনমন্ত্রী শ্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় কলকাতা আসেন। তিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আয়ত্বের আনার ব্যবস্থার কথা বলেন এবং বীরভূমে গত ছ’মাসে ৫০ জনের আততায়ীর হাতে মৃত্যু ঘটায় সশস্ত্র বাহিনী (সিআরপি) প্রেরণের ঘোষণা দেন। উল্লেখ্য, কলকাতায় সিআরপি’র তৎপরতা শুরু হয়। নক্সালপন্থীদের দমনে কেন্দ্রীয় সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। থাইল্যান্ডের ‘দৈনিক নিউজ’ পত্রিকায় সানডে টাইমস পত্রিকায় উদ্ধৃতি দিয়ে এক সম্পাদকীয়তে পাক-সরকারকে গণহত্যার জন্য তীব্র সমালোচনা করা হয়। উল্লেখ্য, সানডে টাইমস পত্রিকায় সাংবাদিক এন্থনি মাসুকারেনহাসের প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ ছাপা হয়।

Reference:

একাত্তরের দশ মাসরবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী