৩ শ্রাবণ, ১৩৭৮ মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ১৯৭১
-ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী শরণ সিং বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের তীব্রতার প্রেক্ষিতে ভারতকে পাকিস্তান আক্রমণ করলতে তাঁর জবাব দেয়া হবে। আমরা পূর্ব পাকিস্তানকে ধ্বংস করিনি, পাক সামরিক চক্রই অত্যাচার, নিপীড়ন ও ধ্বংস চালায়ে ঐ দেশটি ধ্বংস করেছে। (সংবাদপত্র)
-ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটারের নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল, এন কৃষ্ণ গণ (Vice- Admiral N krishan) অবরুদ্ধ বাঙ্গালদেশের হানাদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে নৌ আক্রমণের পরিকল্পনা প্রনয়ন করেন। ভারতের নৌ বাহিনীর প্রধান এ্যাডমিরাল নন্দ অপারেশন প্রস্তুতির জন্য পূর্বাঞ্চল জিও সি, লেঃ জেঃ জগজিৎ সিং আরোরা ও বিমান বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান এ্যায়ার ভাইস মার্শাল হরিষ দেওয়ানের সঙ্গে আলোচনা জন্য আর্দিষ্ট হন।
তাঁদের পরিকল্পনা কোর্স অব এ্যাকশন নিম্নরূপ ছিলঃ
- Attack from the sea on Chittagong harbour.
- Attack from the sea on Cox’s Bazar, Chalna, Khulna and Mongla
- Destruction of enemy shipping off the ports and on the seas
- Subsequent and similar offensive actions on opportunity targets.
- Diversionary on real amphibious landings.
(সূত্রঃ ‘No way but Surrender’ গ্রন্থ পৃঃ ২৮-২৯)
-পাঁচবিবি (বগুড়া থানায় পাঞ্জাবী পুলিশের ও বিহারীদের ক্যাম্প করা হয়। এ ক্যাম্প স্থানীয় মুক্তিকামি লোকদের উপর অত্যাচার কেন্দ্র গড়ে ওঠে। শান্তিকমিটি ও রাজাকার বাহিনী সকল বর্বরতার কাজে সহায়তা করে।
-পাকবাহিনী সরিয়াকান্দিতে (বগুড়া) অধিক সামরিক শক্তি সরঞ্জাম নিয়ে ঘাঁটি গড়ে তোলে। তারপর ভিবিন্ন গ্রামে রুটিন মোতাবেক নারী নির্যাতন, হত্যা শুরু করে।
-নায়েক সুবেদার আব্দুল মতিন পাটোয়ারী নেতৃত্ব একদল অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা মানিকনগর পাক ঘাঁটি আক্রমণ চালায়ে ৭০ জন খানসেনা খতম করে। এদিন ময়মনসিংহ সিলেট সেক্টর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
-ইসলামী সেক্রেটারিয়েটের মহাসচিব টুঙ্কু আবদুর রহমা প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে ইসলামাবাদে সাক্ষাৎ করেন।
-পাকিস্তান নৌ বাহিনীর প্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল মোজাফফর হাসান প্রদেশের নেভি ইউনিটগুলো পরিদর্শনের জন্য ঢাকায় আসেন।
-লাহোরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পিপলস পার্টি জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন পূর্ব পাকিস্তনের এখানে-সেখানে কিছু বিস্ফোরোণ ঘটছে কিংবা সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি চলছে যা মোটেই সহনীয় নয়। কিন্তু তাই বএল পুরোপুরি এসব ঘটনা ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্ব শর্থ হতে পারে। তাঁর দল ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আর তিন মাস ধৈর্য্য ধরবে এর বেশি নয়। (দৈঃ পাঃ)
-ভারতের পররাষ্ট্র সরদার শরণ সিং রাজ্যসভায় বক্তৃতাকালে বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান সাড়ে ৭ কোটি মানুষের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নেতা। তিনি বাংলাদেশের অবসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। একটি দেশের রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধানের বিচার করার অধিকার অপর কোন রাষ্ট্রের নেই।
-জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আমেরিকান বার এ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলন লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে যোগদানকারী সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ষ্টুডেন্টস এ্যাকশন কমিটি ইনগ্রেট ব্রিটেন একটি “ খোলাচিঠি” ২০ শে জুলাই “ দি গার্ডিয়ান” পত্রিকায় অর্ধ পৃষ্ঠাব্যাপী বিজ্ঞাপন হিসাবে প্রকাশের ব্যবস্থা করে। এই “খোলা চিঠি” তে এ্যাসোসিয়েশানের সদস্যদের লক্ষ্য করে বয়াল হয়, আইনজীবী হিসাবে আইন ভংগ করা সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। তা’ছাড়া আমেরিকান নাগরিক হিসাবে তাঁরা বাঙালীদের দুঃখ-দুর্দশা ও নির্যাতনের খবর সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে অবহিত করে এই অমানিশার অবসান ঘটাতে পারেন।
-পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বহির্বিশ্ব গণহত্যা শব্দটির কথা ভুলে গিয়েছে বলে মনে হয়। আইনজীবী হিসাবে এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা নিশ্চয় স্বীকার করবেন, পাকিস্তান জাতি সংঘের “ জেনোসাইড কনভেনশান” – এর দ্বিতীয় ধারার ক,খ এবং গ উপধারা ভঙ্গ করেছে।
উপসংহারে বলা হয়, এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা নিন্মে উল্লেখিত দাবিগুলি প্রতি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে বাঙালী ছাত্র-ছাত্রী ও তাঁদের সমর্থকরা আশা করেনঃ
১। আমেরিকা কর্তৃক পশ্চিম পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্যদান অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
২। বাংলাদেশ থেকে সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত অর্থনৈতিক সাহায্যদান বন্ধ রাখতে হবে।
৩। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত আমাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি হবে।
৪।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি হবে।
৫।পাকিস্তান কর্তৃক “জেনোসাইড কনভেনশান” ভঙ্গ এবং বিশ্ব শান্তি বিপন্ন করার জন্য সমগ্র ব্যাপারটি সিউকিউরিটি কাউন্সিল উত্থাপন করতে হবে।
বিজ্ঞাপনটির অর্ধেওক জায়গা জুড়ে বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের একটি হাস্যোজ্জল ছবি ছাপানো হয়।(স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবাসী বাঙালী পৃঃ ৯৩-৯৪)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী