২০ আষাঢ় ১৩৭৮, সোমবার,৫ জুলাই ১৯৭১
-ভারতে নিযুক্ত সোভিয়েত দূত মিঃ নিকোলাই পোপফ, পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহের সংবাদ অস্বীকার করেছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ হিসাবে এ খবর ছাপা হয়।
-শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের সংসদীয় সভায় বলেন, তার সরকার বাংলাদেশ সম্পর্কে ত্বড়িৎ সিদ্ধান্ত নেবে না। কেননা, তাতে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। (সংবাদপত্র)
-বাংলাদেশের তিনশ’জন এম এন এ ও এমপি এ এক অনুচ্চরিত স্থানে গোপন বৈঠক মিলিত হয়েছে। বৈঠকের ফলাফল সম্বন্ধে এদিন কিছু জানা যায়নি। উল্লেখ্য, এসময়ে সর্বজনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী ও কে এম ওবায়দুর রহমান আওয়ামী লীগের সাংঠনিক তৎপরতা চালিয়েছেন। কলকাতাস্থ কার্ণানী ম্যানশনে আওয়ামী লীগ অফিস খোলা হয়েছিল।
-আব্দুল মালেক উকিল এমএন ও নোয়াখালী বাসগৃহ পাকবাহিনী পুড়িয়ে দেয়। পরিবার পরিজন পাক-বাহিনী দ্বারা অত্যাচারিত হয়। পরে আ.স.ম, আব্দুর রবের একান্ত চেষ্টায় পরিবারের সদস্যদের বেলানিয়া নিয়ে আসা হয়।
-ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী শরণ সিং এদিন লোক সভায় বলেন, জাতিসংঘে, বাংলাদেশে পাকসেনাদের গণহত্যা ও অন্যান্য বিষয়াদি সম্বন্ধে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালান হয়েছে।
-কিশোরগঞ্জের গাঙ্গাকিয়া গ্রামের বিশিষ্ট পরোপকারী জমিদার বৃদ্ধ ভূ-পতিবাবুকে পাক বাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় নির্মমভাবে হত্যা করে। স্থানীয় দালালদের সহায়তায় শতাধিক যুবতী ধর্ষণ করে পাকবাহিনী। রাজাকার ও স্থানীয় মুসলীম লীগের দালালদের অত্যাচার গ্রামবাসী অতীষ্ঠ হয়ে পড়ে। (সংগ্রহ)
-প্যারিসস্থ পাকিস্তান দূতাবাসের দু’জন বাঙালী কর্মচারী সর্বজনাব মোশাররফ হোসেন ও শওকত আলী এদিন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।
-চট্টগ্রাম বিশিষ্ট, ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মুসলিম লীগের বিশিষ্ট নেতা জহিরুদ্দিন আহমদের দ্বিতীয় পুত্র নিযামুদ্দিন আহমদকে ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই ফকা চৌধুরীর গুণ্ডাবাহিনী আন্দরকিল্লা বাসষ্ট্যান্ড থেকে ধরে নিয়ে যায়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্ব ফকা চৌধুরীর গুন্ডাবাহিনী তার ওপর ৮ দিন ধরে নির্মম নির্যাতন চালায়। (বিশিষ্ট সাংবাদিক সাহিত্যিক মাহবুব-উল-আলমের ‘বাঙালীর মুক্তি যুদ্ধের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে বিঃদ্রঃ) এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এক প্রতিবেদন বলা হয়ঃ “Throughout East Pakistan the Army is training new para-military home guards or simple arming ‘loyal’ civilians, some of whom are formed into Peace Committees. The recruits include the small minority of Bangali Moslims who have long supported the army-adherents of the right-wing religious parties such as the moslem League and Jamat-e-Islami. In the election last December (1970) those parties failed to win a single seat for East Pakistan in the National Assembly; (BD-1p.414-15)
এ প্রসঙ্গে জুলাই ২৭ তারিখে ‘দি ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নাল’ পত্রিকায় লিখা হয় যে, শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে মুসলিম লীগ ও জামাতে ইসলামী দলগুলো আদর্শগত উদ্দীপনা ছাড়াও নিয়মিত ভাতা, রেশন, স্থানীয় ক্ষমতার ব্যবহার এবং সর্বোপরি হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগ সদস্যদের ঘরবাড়ী ও বিষয়-সম্পত্তি অবাধে লুটপাটসহ ভোগদখল করার সু্যোগ ছিল যোগদানকারীদের জন্য বিরাট আকর্ষণ। The peace committees serve as the agent of the army, informing no civil adminestivation as well as on general populace. They are also in charge of
Confiscating and redistribution of shops and lands from Hindu and pro-independence Bengalis”
-জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের বর্তমান সংকট অতিক্রমের জন্য এখন প্রয়োজন জনপ্রিয় নেতৃত্ব ও সত্যিকার রাজনৈতিক পদক্ষেপ।
-ভারতের কৃষিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ফখরুদ্দিন আলী আহমদ সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর শেষে কায়রোর পৌঁছান এবং প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সাথে আলোচনা করেন। তিনি শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে ভারত সরকারের মনোভাব ব্যাখ্যা করেন।
-পাকিস্তান সরকার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আলেক ডগলাস হিউম প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধান অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে এবং সে সমাধান অবশ্যই বাঙালীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
-সামরিক প্রশাসক লেঃ জেনারেল টিক্কা খান রাজশাহী, চূয়াডাঙ্গা ও নাটরের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যারকসমূহ পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেন।
-দুই সদস্যের একটি পশ্চিম জার্মান পার্লামেন্টারী প্রতিনিধিদল করাচী থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছান এদিন। সন্ধ্যায় তারা জেনারেল টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
-ভারতের জনসাধারণ ও রাজনৈতিক মহল বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান সম্পর্কে আস্থা হাড়িয়ে ফেলেছে। “গান্ধী পীস ফাউন্ডেশান” এর প্রতিষ্ঠাতা জয়প্রকাশ নারায়ণ (৪ জুলাই তারিখে দিল্লীতে) প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন; কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এসেছে মুক্তি বাহিনীর জন্য আমাদের ভারি অস্ত্র-শস্ত্র, বন্দুক, ট্যাংক-ধ্বংসী অস্ত্র, মেশিন গান ও বিস্ফোরক সরবরাহ করতে হবে।’ (দি টাইমস ৫ জুলাই’৭১)
-এ দিন পাকিস্তান তৃতীয়বারের মত ব্রিটিশ সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানান। প্রথম প্রতিবাদ ছিল ২৯ জুন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে স্যার অ্যালেকডগলাস হোমের বিবৃতির বিরুদ্ধে। স্যারআলেকেরবক্তব্যছিলঃ Britain would withhold further aid to Pakistan until progress was made towards a political settlement in East Pakistan.
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী