You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.29. | ১৪ বৈশাখ ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার ২৯ এপ্রিল ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১৪ বৈশাখ ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার ২৯ এপ্রিল ১৯৭১

-মৌলভীবাজার তীব্র প্রতিরোধের মুখে পাকবাহিনীর হস্তাগত হয়।

–কোহিমা থেকে প্রধান মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ প্রতিবেশী। রাষ্ট্রগুলোর কাছে গনপ্রজানন্ত্রী বাংলাদেশকে স্কীকৃতিদানের আহবান জানান। তিনি বলেন রংপুর দিনাজপুর, ফরিদপুর, বগুড়া, ময়মনসিংহ দখলদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্তকরার সংগ্রাম চলছে। বিদেশে অবস্থানরত বাঙালীদের সাহায্য ও সহযোগীতায় এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান— আকাশবাণি বলেঃ পাকিস্তানী বাহিনী গানবোট নিয়ে  বরিশাল আক্রমণ করেছে। মুক্তিবাহিনী একটি গানবোট ডুবিয়ে দিয়েছে।

                              

 –সিলেট সেক্টরের তেলিয়াপাড়ার অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের গত ছ’দিন ধরে লড়াই চালু রয়েছে। নেতৃত্ব রয়েছেন ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন এস এস এ  ভূঁইয়া , ক্যাপ্টেন মতিন ও মুজাহিদ বাহিনীর বীরযোদ্ধাগণ।

–রংপুর ক্যান্টনমেন্টের নিকট ঘাঘট নদীর তীরে ১৫২ জন বাঙ্গালী ইপি আর কে পাকসেনারা হত্যা করে।

–পাকবাহিনী তেলিয়া পাড়ার সিলেট সুরমা চা বাগানের অসংখ্য শ্রমিকদের হত্যা করে।

–হবিগঞ্জের আওয়ামীলীগ নেতা ডাঃ সালেহ আহমদে ও হীরেন্দ্র কুমার রায় পাকবাহিনী হাতে নিহত হয়।

–মীর শওক তের বাহিনী রামগড়ে অবস্থান গ্রহণ করে।

–আওয়মীলীগ নেতা নূরল ইসলাম মঞ্জুর , মহিউদ্দিন আহমেদ ৩ টি বড় লঞ্চে বহু পরিবার সহ (৩০০) সুন্দরবন হয়ে দু’দিন পর আজ হাসনাবাজ পৌছান। বিশ্রাম সিংহ বি , এস এর প্রধান তাঁদের সাদরে গ্রহণ করেন।

(৯ খঃ পৃ ৫১৫)

–মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের হিয়াকুব (রামগড়) কাছে যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আকস্মিক হামলায় পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বহু হতাহত হয়। পরে পাকসেনাদের প্রচণ্ড আক্রমনে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে এবং হিয়াকুর পাকসেনার হাতে পতন হয়।

–রেডিও পাকিস্তান থেকে ভারতের প্রদত্ত প্রতিবাদ লিপির সারমর্মকে অসত্য ও ভীত্তিহীন বলে অভিহিত করে। (কে,সি,এ পৃঃ ২৪৬৮৯) ভারতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রবেশ ঘটাচ্ছে মর্মে পাল্টা অভিযোগ উত্থাপন করে।

–বিকেল ৪টায় পাক বাহিনী ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় বিমান থেকে দেড় –দু ঘন্টা ধরে বোমাবর্ষণ করে। একজন বেঙ্গল রেজিমেন্ট সৈন্য শহীদ হন ।(৯খঃ পৃঃ১৯১)

–বাঙ্গালী প্রতিরোধের মেরুভাঙ্গতে জেনারেল নিয়াজীর বেশী সময় লাগবে না। এপ্রিলের শেষাশেষি তিনি প্রধান শহর গুলোর দখল কার্য সম্পূর্ণ করেন। এসময় যারা এগিয়ে আসেন তাঁরা ছিলেন দক্ষিণ পন্থী। যেমন কাউন্সিল মুসলিম লীগের খাজা খয়েব উদ্দিন, কনভনেশন মুসলীম লীগের ফজলুল কাদের চৌধুরী, কাইয়ুম মুসলীমলীগের খান এ সবুর খান, জমায়েতে ইসলামী অধ্যাপক গোলাম আযম ও নেজামে ইসলাম পার্টির মৌলভী ফরিদ আহম্মদ। (সিদ্দিক সালিক ঐ পৃঃ ১০৪) উল্লেখ্য এ সময় যেসব শহর পাকবাহিনীর দখলে আসে সেগুলো হকঃ পাকশী ১০ এপ্রিল, পাবনা ১০ এপ্রিল , ঈশ্বরদী ১১ এপ্রিল , নরসিংদী ১২ এপ্রিল, চন্দ্রঘোনার ১৩ এপ্রিল, রাজশাহী ১৫ এপ্রিল, ঠাকুরগাঁও এপ্রিল, কুষ্টিয়া ১৬ এপ্রিল , চুয়াডাঙ্গা ১৭ এপ্রিল , ব্রাক্ষন বাড়িয়া ১৭ এপ্রিল, দর্শনা ১৯ এপ্রিল, হিলি ২১ এপ্রিল, সাতক্ষীরা ২১ এপ্রিল , গোয়াললন্দ ২১ এপ্রিল, দোহারজারী ২২ এপ্রিল, বগুড়া ২৩ এপ্রিল, রংপুর ২৬ এপ্রিল, নোয়াখালী ২৭ এপ্রিল, শান্তাহার ২৭ এপ্রিল, সিরাজগঞ্জ ২৭ এপ্রিল, মৌলভীবাজার ২৭ এপ্রিল,

এপ্রিল মাসের শেষ দিকেই ভারতী প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামনে ভারত সরকার বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের কয়েকটা দিক তুলে ধরছিলেন। বলেছিলনঃ

(এক) বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম চালাবে মূলত বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী

 

(দুই) ভারতীয় সেনাবাহিনী ট্রেনিং এবং অস্ত্র শস্ত্র দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করবে।

(তিন) মুক্তি বাহিনীকে  ভারত সরকার সাহায্য দিচ্ছে বলে পাক বাহিনী যদি ভারতের উপর হামলা করে তাহলে ভারতীয় সেনাবাহিনী কে সেই আক্রমণের জবাব দিতে হবে।

এই নির্দ্দেশের উপর ভিত্তি করেই ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী দু’ ভাবে তাঁদের পরিকল্পনা রচনা করে প্রস্তুতি গড়ে তুলল।

(এক) মুক্তিবাহিনীকে ট্রেনিং দেওয়া এবং তাঁদের অস্ত্র সরবরাহ করা ।

(দুই) বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম চূড়ান্ত পর্যায়ের লড়াইয়ের জন্য পরিকল্পনা রচনা এবং তাঁর প্রস্তুতি গড়ে তোলা। (১০:৭-৬৮)

Reference:

একাত্তরের দশ মাসরবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী