১ শ্রাবণ ১৩৭৮ রবিবার, ১৮ জুলাই ১৯৭১
পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেছেন, ‘এবার পাক ভারতের বাঁধলে পাকিস্তান একা থাকবে না। শীঘ্রই সামরিক আদালতে শেখ মুজিবের গোপন বিচার অনুষ্ঠিত হবে। (ফাইনান্সিয়াল টাইম)
-আজ পহেলা শ্রাবণ। কবি সুফিয়া কামালের ভাষায়ঃ কেতকীগন্ধা শ্রাবণ আজ নয়, শোণিত গন্ধা শ্রাবণ। আমার শত সন্তান-হীন-শানিত গন্ধা শ্রাবণ। তবু শ্রাবণ এল। …। কাল ও আজ বোমারু বিমানগুলো উড়ছে না। (একাত্তরের ডাইরী পৃঃ৬৯)
-ঢাকা নগরীর আতঙ্ক ‘মায়া ক্র্যাক প্লাটুন ও মুক্তিবাহিনীর ‘সুইসাইড’ স্কোয়াডঃ’ গ্যানিস’ দোকানে ফরফরাস বোমা মেরে ৪ জন পশ্চিমপাকিস্তানী পুলিশকে নিহত করে। মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে ঢাকাবাসী উৎসাহ বোধ করে। পক্ষান্তরে, বিহারী, মুজাহিদ, আল-বদর ও পাকসেনারা ঢাকা শহরে তৎপর হয়ে ওঠে।
-জাতিসংঘ উদ্বাস্তু হাই কমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগাখান জেনেভায় বলেন, ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য আরো বিপুল পরিমাণ সাহায্য প্রয়োজন শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন হবে এ সমস্যার সর্বোৎকৃষ্ট সমাধান। (সংবাদপত্র)
-মুসলিম নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী লাহোরে রাজনৈতিক দলের নেতাদের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানে প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন যে, ভারতীয় এজেন্টদের দ্বারা পরিচালিত তথাকথিত বাংলাদেশ বেতার থেকে দিনরাত তাঁর ও অন্যান্য মুসলিম লীগ নেতার মৃত্যুদণ্ডের কথা তাঁর স্বরে ঘোষণা করা হচ্ছে। (দৈঃ পাঃ)
-পূর্ব পাকিস্তানের দু’নেতা হামিদুল হক চৌধুরী ও মাহমুদ নিউইর্য়কে এক সংবাদ সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্টেকে ‘ভয়ংকর অতিরঞ্জিত’ বলে অভিহিত করে বলেন, এ রিপোর্ট লোকমুখে শোনা কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে রচিত। তাঁরা বলেন, পূর্ব পাকিস্তানী হানাদারদের (মুক্তিবাহিনী) আশ্রয় দেয়াড় ভারতীয় নীতি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টির ইন্ধন হিসেবে কাজ করবে।
-বিপ্লবী বাংলাদেশের মন্ত্রীসভায় এদিন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবাহানকে বিশেষ দূতের পদমর্যাদায় এবং জনাব এস.আর. সিদ্দিকী এমএনএক ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। (৩খঃ পৃঃ ৭১)
-ফরিদপুরে পাকসেনাদের অত্যাচার নৃশংসতার বর্ণনা দিতে গিয়ে সাংবাদিক Syaney H Schanberg লিখেছেনঃ….. Compared with some towns in East Pakistan, Faidpur, which sits in teh central part of the province. Suffered only moderate physical damage when the army struck here in April….. Though a number of shops, most of them belonging to Hindus have been razed in Faridpur, most of it is physically intact… An undetermined number of Faridpur’s 10000 (ten Thousand) Hindus have been killed and others have fled across the border to predominantly Hindu India…. (বি ডি- ১, পৃঃ ৫৭৮) উল্লেখ্য, বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় পাকসেনা, দালাল শান্তিকমিটি, রাজাকার বাহিনী অত্যাচার নৃশংসতা অনেকক্ষেত্রে নাৎসিদের হার মানিয়েছে। ভাঙার অদূর নুরপরে টনিক সেনের পরিবারে ২১ জন পুরুষ সদস্য নিহত হয়। ঈশান গোপালপুর, কানাইপুর ভাঙ্গি ইউনিয়ন, নগরকান্দা, মাদারিপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ি, প্রত্যন্ত অঞ্চলে দু’দশক পরেও খোজ নিলে জানা যায় সেসব বীভৎস নারকীয় ঘটনা। এইসব পরিবারে রাজনীতির সাথে ছিলা কোন যোগাযোগ। ৭০ সালের ডিসেম্বর মাসের সাধারণ নির্বচাওনে আওয়ামী লীগকে ভোট দান ও সাধিকার অর্জনের আশা পোষণ করাই ছিল এদের বড় অপরাধ।
-ঘিওর থানার তেরশ্রীর জমিদার শ্রী সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরী হানাদার বাহিনীর দোসররা জীবন্ত পুড়িয়ে মারে।
-মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল (পরে জেনারেল) মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী এক সাক্ষাৎকার এ সময়ের যুদ্ধ পরিচালনা সম্বন্ধে বলেছেন, এপ্রিল মাসের শেষের দিকে এটাও আমার কাছে পরিষ্কার ছিল যে আমাদের একটা নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। ছোট ছোট ইউনিট অর্থাৎ কোম্পানি বা প্লাটুন দিয়ে শত্রুকে আঘাত করতে হবে এবং বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্যে ওদেরকে বাধ্য করতে হবে। এই বিচ্ছিন্নতার ফলে সংখ্যা গরিষ্ঠজনিত শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তখন গেরিলা পদ্ধতিতে যোগাযোগের রাস্তা, সংযোগ রাস্তা ধ্বংস করে তাকে ছোট ছোট পকেটে আইসোলেট বা বিচ্ছিন্ন করা হবে। এ জন্যে আমার অঙ্কে নিয়মিত বাহিনীও প্রয়োজন ছিল। এই প্রয়োজনের কথা আমি মে মাসের শুরুতে সরকারকে লিখিতভাবে জানাই এবং এই ভিত্তিতে মিত্রদের কাছ থেকে সাহায্যও চাই। আমার উদ্দেশ্য ছল (ক) কমপক্ষে ৬০ থেকে ৮০ হাজার গেরিলা সমন্বিত বাহিনী ও (খ) ২৫ হাজারের মতো নিয়মিত বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। এই বাহিনী সত্ত্বর গড়ে নৌবাহিনীর বহু অফিসার, ওয়ারেন্ট অফিসারো নাবিক আসেন। ফ্রান্সের মতো জায়গা থেকে কয়েকজন পাকিস্তানের ডুবো জাহাজ ছেড়ে আমাদের সঙ্গে যোগদান করে। আমি তাঁদেরকে ভিতি কএ এবং আমাদের বড় শক্তি যুবশক্তিকে ব্যবহার করে নৌ কম্যান্ডো গঠন করি। এই নৌ কম্যান্ডো জলপথের শত্রুর চলাচল ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। (দৈঃ বাঃ ৩/১২/৭২)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী