২২ চৈত্র ১৩৭৭ সোমবার, ৫ এপ্রিল ১৯৭১
যশোর ক্যান্টনমেন্ট অবরুদ্ধ পাকবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য পাকবাহিনীর একদল সেনা নগরবাড়ী, পাবনা, কুষ্টিয়ার পথ ধরে যশোরের দিকে এগুতে থাকে।
মেজর এম আবু ওসমান চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিফৌজ বিশাখালীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয়। জনতা ঝিনাইদহ গাড়াগঞ্জ ব্রীজের মুখে বিশফুট প্রশস্ত ‘ ববিট্রাপ’ তৈরি করে। গভীর রাতে কনভয়ের দশটি ট্রাক ‘ববিট্রাপে’ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৪০ জন পাকবাহিনী নিহত হয়। পাক বাহিনীর লেঃ আতাউল্লা শাহ আহত অবস্থায় ভারত সীমান্তে বন্দী করে নিয়ে যান মুক্তিফৌজ। এ ঘটনা থেকে যশোরে হৈবতপুর, বিষয়খালী, প্রতিরোধ সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে।
–পি ডি পী নেতা নরুল আমীন ও মোলভী ফরিদ আহমদ রেডিও পাকিস্তান , ঢাকা থেকে বিবৃত দিয়েছেনঃ পূর্ব বাংলার গণহত্যাকে পাকিস্তানের ঘরোয়া ব্যাপার , এতে ভারতের হস্তক্ষেপ দেশের স্বাধীন বিপন্ন করবে নূরল আমিন তাঁর বিবৃতিতে বললেন।
–চট্টগ্রামে রেলওয়ের উদ্ধর্তন কর্মকর্তা সহ বহু শহরবাসীকে পাকবাহিনী হত্যা করে
–সীমান্ত জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের বহু সি এসি পি , ই পি সে এস, পুলিশ কর্মকর্তা ভারতে আশ্রয় লাভ ও স্বাধীনতা যুদ্ধ অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
–মার্কিন সিনেটের এডওয়ার্ড কেনডী বললেনঃ সারা পূর্ব বাংলা জুড়ে নির্বিচারে হত্যা চলছে। শস্যেরগোলা পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সেখানে দুর্ভিক্ষ আসন্ন । আর সেই সময় নিক্সন এডমিনিষ্ট্রেশন কুম্ভকর্ণের নিদ্রা যাচ্ছেন। কেনেডী আহবান জানালেন সারা মার্কিন জাতির কাছে পূর্ব বাংলার দূর্গত মানবতাকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে। (সংবাদপত্র)
–কলকাতার যুগান্তর লিখেছেঃ যুদ্ধের সর্বশেষে যে সংবাদ পাওয়া গেছে তাতে বলা হয়েছে যে, স্থলপথে যাতায়াতের সমস্ত সংযোগস্থান মুক্তিফৌজের দখলে রয়েছে। এক ডিভিশনের ও বেশী সৈন্য ঢাকা নিযুক্ত করা হয়েছে এবং অবশিষ্টদের কুমিল্লা এবং যশোরের ক্যান্টনমেন্ট শহরের রাখা হয়েছে।
আগারতলা থেকে সর্বজনাব এম আর সিদ্দিকী, ডঃ আনিসুর রহমানও অধ্যাপক রহমান সোবাহান পরিচিতি গোপন করে দিল্লী যান। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা হয়। মিঃ ত্রিগনা সেনের কাছে প্রতিনিধিদল জানতে পারে যে আওয়ামী লীগ নেতা জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ও ব্যারিষ্টার আমীরুল ইসলাম কলকাতা থেকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনার জন্য দিল্লী পৌছেছেন (৯:১৮৫)
জেনারেরল ইয়াহিয়া খান সোভিয়েত নেতার পত্রোত্তরে ভারতকে নিরস্ত্র করার অনুরোধ জানানও কিসিং কন্টোপরারী আরকাইবাভ লিখেছেঃ In his reply yo the Soviet president on April 5, president Yahya khan reaffirmed Pakistan’s determination not to allow any country to interfere in her internal affairs, Inconclusion, president Yahya khan called upon the soviet union “ to use her undoubled influence with India to prevent her from madding in pakistan’s internal affairs” ( KCA, pp 24600)
৫ এপ্রিল মার্কিন আপ্তাহিক পত্রিকা ‘নিউজউইক’ সংখার দু’পৃষ্ঠাব্যাপী রিপোর্টে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ তারিখে প্রদত্ত বত্তৃতা উদ্ধৃতি দেওয়া হয় । এই রিপোর্টে দৃঢ়চেতা ও সংগ্রামী নেতা শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবন ব্যাখা প্রসঙ্গে তাঁকে “ পোয়েট অব পলিটিক্স “ (রাজনৈতিক কবি) বলে উল্লেখ করা হয়। “ Even when you are alone with him,” says a diplomat, “he talks like he’s addressing 60000 people, Eloquent in Urdu , Bengali and English three language of pakistan . Mujib does not pretend to be an original thinker. He is a poet of politics not an engineer, but the Bengalese ten to be more artistic than technical, anyhow, and so his style may be just what was needed to unite all the classes and ideologies of the region. (Newsweek , 5 April 1971)
একইদিন মার্কিন সাপ্তাহিক টাইম প্রত্রিকায়ও বাংলাদেশ আন্দোলন সম্পর্কে মোটামুটিভাবে সহানুভূতিমূলক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্টটে শেখ মুজিবকে “ পলিটিক্যাল মডারেট ” বলে উল্লেখ করা হয়।
–কলকাতা থেকে প্রেরিত এক সংবাদে বলা হয়, পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগনা জেলা থেকে মাওয়াপন্থীরা পূর্ববঙ্গে গিয়ে মোহাম্মদ তোয়াহার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। জনৈক উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার একথা অস্বীকার করেছে। এই সংবাদে এও বলা , পশ্চিম বঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলায় নকশাল পন্থীরা প্রকাশ্যে শেখ মুজিবকে আমেরিকার দালাল ও সোভিয়ত সংস্কারবাদীদের ক্রীড়নক অলে প্রচার করেছে । (পিটার হ্যাজেলহাষ্ট , “দি টাইমস” ৫ এপ্রিল)
–বিশ্ববিখ্যাত আয়ুরবেদক প্রতিষ্ঠান “সাধনা ঔষধালয়ের ” প্রতিষ্ঠার ও বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র ঘোষ এম এ, এফসি এস (লণ্ডন) এফ সি এস (আমেরিকা) কে তাঁর ৭১ দীন নাথ সেন রোড, গেণ্ডারিয়া ঢাকাস্ত বাসভবন থেকে পাক হানাদার বাহিনী সেনারা নির্মম ভাবে হত্যা করে। অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র ঘোষ মহাশয়ের বয়স তখন ৯০। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সাধনা ঔষধালয়—ঢাকা তিনি জগন্নাত কলেজের রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক জীবন থেকে করেছিলেন । সারাদেশ শতাধিক ব্রাঞ্চ রয়েছে। বাংলার মানুশের সেবাই ছিল তাঁর বড় সাধনা (বাংলাদেশ অবজারভার জানু ৭২। কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুট করে পাক সেনারা অধ্যক্ষ ঘোষের বাসভবন থেকে। উল্লেখ্য অধ্যক্ষ ঘোষের লাশ খুঁজে পাওয়া যায় নি । —পাক সেনাবাহিনীর এম পি মেজর মুজিবউদ্দিন ও তাঁর পুত্র গনপূর্ত বিভাগের সহকারী ইঞ্জিনিয়র শফিউদ্দিনকে রাজশাহীতে পাকসেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে। (বাঃঅঃ ২৪/১/৭২)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী