৩০ আষাঢ়, ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ১৯৭১
-ইসলামাবাদে জনৈক সরকারী মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তান সরকারের কমনওয়েলথের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রশ্নটি বর্তমানে বিবেচনা করছেন।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী ও পিডিপি নেতা মাহমুদ আলী জাতিসংঘ মহাসচিব উথান্টের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
-বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণদানকালে ঘোষণা করে সামরিক বিজয়ই বাংলাদেশ সমস্যার একমাত্র সমাধান। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় দেশকে শত্রুমুক্ত করা। বৈঠকে পরিষদ সদস্যরা বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার শপথ গ্রহণ করেন। বৈঠকে মুক্তিবাহিনী নৌ ও বিমান শাকা গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত ১১ জন সেক্টর প্রধান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কাছে আনুগত্য ও শপথ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদও প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম.এ.জি. ওসমানী উপস্থিত ছিলেন। (১০ খৃঃ পৃঃ ৯)
-পাকিস্তান অবজারভার’এ বিশ্বব্যাংক রিপোর্টের সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক অন্ততঃ পক্ষে আগামী এক বোছোড় উন্নয়ন খাতে পাকিস্তানকে টাকা দেয়াড় সুপারিষ করেছে। ম্যাকনামারা তা অনুমোদন করেছেন।
-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক সমাধানের পৌঁছার অনুরোধ জানিয়েছে বলে এদিন জানা যায়। অন্য এক সংবাদের বলা হয় In a dramatic television broadcast on July 25, described by him as a major development in our efforts to build a lasting peace in the world” President Nixon announced his acceptance of an invitation to visit the people’s Republic of China, মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিঃ রিচার্ড নিক্সন টেলিভিশনে নাটকীয়ভাবে ঘোষণা দেন যে তিনি প্রজাতন্ত্রী চীন সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা ব্যাপক উন্নয়নী পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। তিনি আরও বলেন, “In pursuance of that goal, I sent Dr. Kissinger, my assistant for National Security Affairs, to Peking during his recent world tour for the purpose of having talks with Premier Chou EN-lai ”তারপর তিনি চীন আমেরিকার যুক্ত ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। যা যুগপৎভাবে উভয় দেশ থেকে প্রচারিত হয়। উল্লেখ্য, পরবর্তীতে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মিঃ রজারস চীনকে জাতিসংঘ সদস্যপদের জন্য জোর সমর্থন জানাবেন বলে ২ আগষ্ট সম্মেলনে উল্লখে করেন।
-জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে ১৮টি দেশের তরফ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে জাতিসংঘ একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানান হয় এবং ফরমোজাকেও বহিষ্কার করার দাবি জানান। এসব দেশগুলো হলঃ আলবানিয়া, আলজিরিয়া, কিউবা, গিনি, ইরাক, মালি, মৌরিতানিয়া, পাকিস্তান, দক্ষিণ ইয়ামেন, প্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, রুমানিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, তাঞ্জানিয়া, ইয়ামেন, যুগশ্লোভিকিয়া, এবং জাম্বিয়া। (কে সিএ, পৃঃ ২৪৭৬৬)
-ডাঃ এ এম মালিক এদিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বিশেষ উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়েছেন। পূর্ব বাংলায় তার দফতর থাকব। শরণার্থীদের পুনর্বাসন হবে তার দফতরের কাজ এবং তিনি স্থানীয়ভাবে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন। উল্লেখ্য, ডাঃ মালিক পাকিস্তান হাসিলের প্রথম দশকে সংখ্যালঘু সমস্যার মত এধরনের কাজের সাথে পরিচিত ছিলেন। নেহেরু-লিয়াকত চুক্তির প্রেক্ষাপট কাজ করার অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। তিনি প্রাক্তন কংগ্রেস ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী ও দক্ষ প্রশাসক জানা যায়।
-ঢাকায় এখন দিনে দুপুরে বোমা ফাটছে আজ এস এস সেই পরীক্ষার প্রথমদিন থাকার বোমা বিস্ফোরণের প্রাবল্যখুব বেশি। পরীক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে সরকারের উদ্দেশ্য স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে বিশ্ববাসীকে বোঝানো। পরীক্ষা কোথায়ও সুষ্ঠভাবে হয়নি। শতকরা দু’ভাগ পরীক্ষার্থীও পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হয় নি।
-শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চ বোঝাই পাকবাহিনী টহল দিত। আজ পাকসেনারা জামালপুরে নেমে হিন্দু মহিলাদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। স্থানীয় চেয়ারম্যান খানসেনাদের মুরগী ও আনসর উপহার দেয়। (আত্মস্মৃতি পৃঃ- ২৭১)
-পাকবাহিনী অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে পরশুরাম (নোয়াখালী) থানার মনিপুর গ্রামের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এবং আক্রমণের জবাব দেয়। মুক্তিবাহিনী ব্যর্থ হয়ে সীমান্তের শিবির রাজনগরে ফিরে যায়। পরিণতিতে পাকবাহিনী গ্রামের নারীদের ওপর ৫ ঘন্টা যাবৎ বর্বর অত্যাচার চালায় এবং পরশুরাম ফিরে যায়। উল্লেখ্য, ঐদিন রাতে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মির্জানগরে পাকবাহিনী তুমুল লড়াই হয়। পাকবাহিনী শিবির ছেড়ে পরশুরাম পালিয়ে যায়। প্রত্যেক শিবির থেকে জ্ঞানহীন অবস্থায় লাঞ্ছিতা মহিলাদের মুক্তিযোদ্ধারা উদ্ধার করে।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী