You dont have javascript enabled! Please enable it! 31.03.1971 | ১৭ চৈত্র ১৩৭৭, ৩১ মার্চ ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১৭ চৈত্র ১৩৭৭, ৩১ মার্চ ১৯৭১

 

-ভারতের লোকসভা ও রাজ্য সভায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করেন। লোক সভায় এক সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে পূর্ব বাংলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রস্তাবে পূর্ব বাংলার সাড়ে সাতকোটি জনতার সংগ্রামের প্রতি সহমর্মীতা ও সহায়তা দানের ঐক্যমত প্রকাশ করা হয়। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী লোক সভায় রেজুলেশ উত্থাপন করেন এবং ঘোষণা করলেনঃ

Resolution in Parliament

This House EXPRESSES its deep anguish and grave concern at the recent developments in East Bengal. A massive attack by armed forces, dispatched from West Pakistan, has been unleashed against the entire people of East Bengal with a view to suppressing their urges and aspirations.

Instead of respecting the will of the people so unmistakably expressed through the election in Pakistan in December 1970, the government of Pakistan has chosen to flout the mandate of the people.

The government of Pakistan has not only refused to transfer power to legally elected representatives but has arbitrarily prevented the National Assembly from assuming its rightful and sovereign role. The people of East Bengal are being sought to be suppressed by the naked use of force, by bayonets, machine guns, tanks, artillery and aircraft.

The government and people of India have always desired and worked for peafceful, normal and fraternal relations with Pakistan. However, situated as India is and bound as the peoples of sub continent are by centuries old ties of history, culture and tradition, this House cannot remain indifferent to the macabre tragedy being enacted so close to our border. Throughout the length and breadth of our land, our people have condemned, in unmistakable terms, the atrocities now being pretreated on an unprecedented scale upon an unarmed and in people.

This House expresses its profound sympathy for and solidarity the people of East Bengal in their struggle for a democratic way.

Bearing in mind the permanent interests which India has in and committed as we are to uphold and defend human rights, this House demands immediate cessation of the use of force and the massacre of defenseless people. This House calls upon all peoples and Governments of world to take urgent and constructive steps to prevail upon the government of Pakistan to put an end immediately to the systematic decimation of people which amounts to genocide.

This House records its profound conviction that historic upsurge of the 75 million of people of East Bengal will triumph, the House wishes to assure them that their struggle and sacrifices will receive the wholehearted sympathy and support of the people of India.

-এক কিলোওয়াট শক্তি সম্পন্ন ট্রান্সমিটার আগরতলা আনা হয় সেখান থেকে বিক্ষিপ্তভাবে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রচার অব্যাহত রাখা হয়।

-অবরুদ্ধ বাংলাদেশের নারকীয় ঘটনা ও পাকবাহিনী গণহতয়ার বীভৎসতার সচিত্র প্রতিবেদন বিশ্বের গণমাধ্যমে প্রচার হতে থাকে।

-নড়াইল থেকে জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রাজবন্দীদের মুক্ত করে আনে।

-ঢাকার নারিন্দা গৌড়ীয় মঠ আক্রান্ত হয়। মৃতের সংখ্যা ৫জন তারপর লুট করতে নামলো মৌলবাদীদের দোশর গুণ্ডাবাহিনী।

-ঢাকার আজ চারটি দৈনিক প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিক পাকিস্তান, পূর্বদেশ, দি পাকিস্তান অবজারভার এবং দি মর্নিং নিউজ। সবকটি পত্রিকায় দেশের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার পথে পূর্বদেশ লিখেছেঃ শান্তিপ্রিয় বেসামরিক নাগরিকদের যেসব সশত্র দুষ্কৃতিকারী হয়রানি করছিল, তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তা সাফল্যের সাথে সমাপ্ত হয়েছে। -দি মর্নিং নিউজ এর শিরোনামঃ ‘ইয়াহিয়াজ স্ট্যাণ্ড টু সেভ পাকিস্তান প্রেইজড।’ ‘ইয়াহিয়া লডেড ফর রাইত স্টেপস টু সেভ কান্ট্রি।’ -সংখ্যালঘুদের বাড়ী চিহ্নিত করার কাজ শুরু হল। এবার স্থানীয় মৌলবাদীর দোসর পাকবাহিনীর ইসলাম বাঁচানো অপারেশনে তাঁতি বাজার, ডেম্রয়া, কাঠেরপুল সাধনা ঔষধালয় থেকে শুরু করে সর্বত্র হিন্দু আর আওয়ামীলীগের খোজ খবর রাখতে লাগলো- এরপর অপারেশন সার্চলাইট ২ চালু হল। শাঁখারী বাজারে অত্যাচার ও স্তূপীকৃত মৃতদেহ অশরীরী হালাকু, চেঙ্গিস খানেরও বিস্মিত হবে।

-কেন্দ্রীয় সরকারের আঞ্চলিক তথ্য অফিস ঢাকা থেকে কড়া সেন্সরশীপ জারী করা হয়। সংবাদপত্রে সকল সংবাদ সেন্সর করা হয়। সামরিক বিধি ৭৭ কড়াকড়িভাবে মেনে চলা হল। রংপুর উইং হেড কোয়ার্টার থেকে বের হয়ে আসা দশজনের ইপিআর সদস্য সুবেদার সৈয়দ আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে হারাগাছার কাছে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করে। যুদ্ধে সুবেদার সহ সকলেই ধরা পরে। পাকবাহিনী এক কাতারে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে এই বীর বাঙ্গালী দেশ প্রেমিক সন্তানদের।

-দৈনিক পাকিস্তান ২৫ মার্চের পর আজ প্রকাশিত হল। পূর্বদেশ লিখেছেঃ পূর্ব পাকিস্তানে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়ে আসছে। শান্তিপ্রিয় বেসামরিক নাগরিকদের যেসব সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারী হয়রানি করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল, তা সাফল্যের সাথে সমাপ্ত হয়েছে।

-আনন্দবাজার পত্রিকায় দিল্লীর প্রতিরক্ষা অনুশীলন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা সমগ্র রণাঙ্গনের চিত্রটি এভাবে এঁকেছেনঃ

‘পূর্ব রণাঙ্গনঃ কুমিল্লা থেকে শ্রীহট্ট পর্যন্ত বিস্তৃত পূর্ব রণাঙ্গনে মুক্তিফৌজ সীমান্তবর্তী সব কয়টি ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে। এই রণাঙ্গনেরই অন্তর্ভূক্ত আখাউড়ার মঙ্গলবার সকালে পাকবিমান প্রচণ্ডভাবে বোমাবর্ষণ করেছে। মঙ্গলবার সব চাইতে ন্ররশংস সংগ্রাম চলেছে চট্টগ্রামে। পাকিস্তানী বিমান বন্দর এলাকায় বোমাবর্ষণ করছে, যুদ্ধ জাহাজ গোলা ছুঁড়েছে। চট্টগ্রাম জ্বলছে। উত্তর মধ্য রণাঙ্গনঃ উত্তর মধ্য রণাঙ্গনে ময়মনসিংহ মুক্তিফৌজের হাতে এসেছে। যশোর ক্যান্টনমেন্ট দখলের জন্য সোমবার প্রচণ্ড লড়াই হয়ে গিয়েছে। সম্ভবত উভয় পক্ষই আগামীদিনে তীব্রতর দীর্ঘ স্থায়ী সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। দূর বিস্তৃত চারটি রণাঙ্গনের সর্বত্র আক্রমনোদ্যোগ এখন মুক্তি ফৌজের হাতে, পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনী সর্বত্র আত্মরক্ষা করে চলেছে। -আগরতলায় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লার এম, এন, এ এম পি এ গণ উপস্থিত হন। জনাব এম আর সিদ্দিকীকে বিপ্লবী সরকার গঠনের আবেদন জানান। জনাব সিদ্দিকী তা করতে অস্বীকার জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবর্তমানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খোন্দকার মোশতাক আহমদ, তাজউদ্দীন আহমদ, মুনসুর আলী, কামরুজ্জামানের মত উর্দ্ধতন নেতৃত্বে এ ধরণের ঘোষণা দিতে পারেন। সে কারণে আলোচনায় জনাব সিদ্দিকীর দিল্লী যাত্রার প্রশ্ন বিবেচিত হয়।

-A Further Statement by the Matinal law Authorities in Dacca on March 31 Spoke of the progressive restoration of peaceful conditions in Dacca and other centers, It also said that complete calm prevails and life is gradually returning to normal in Chittagong, where all port facilities were intact. [KCA, pp 24567]

-বিকেল চারটায় কুমিল্লা সেনানিবাসে অবস্থিত চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৭০/৮০ জন সৈনিকের উপর পাকসেনারা চারদিক থেকে হামলা করে এবং বাঙালী সেনারা ছয়ঘন্টা যুদ্ধের পর চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে ইউনিট দখল করে।এই যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানীদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। চতুর্থ বেঙ্গলের ৮/১০ জন জোয়ান শহীদ হন এই যুদ্ধে নায়েক সুবেদার এম এ সালাম অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন। (৯ঃ১৮৫) -আখাউড়ায় ইপি আর (বর্তমান বিডিআর) নায়েক সুবেদার গোলাম আম্বিয়া ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন আইন উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করেন। তারপর সারাদিন ঘেরাও করে রাখা পাঞ্জাবী সেনাদের সাথে গোলাবিনিময় হয়। ক’জন পাঞ্জাবী সৈন্য মারা যায় ও তিনজন পাঞ্জাবী অফিসার লেঃকঃ খিজির হায়াত খান, মেজর সাদেক নেওয়াজ ও লেঃ আমজাদ সাঈদ ধরা পরে। গ্রামের পথে যেসব পাঞ্জাবী পালানো চেষ্টা করে তাদেরকে গ্রামবাসী মেরে ফেলে। ধৃত অফিসারদের সীমান্তে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। (৯ঃ ১৯১)

“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” জয়বাংলা

Reference:

একাত্তরের দশ মাসরবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী