You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পরিকল্পনা সেল কতৃক, ‘কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্প’ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকার, পরিকল্পনা সেল ১৮ নভেম্বর, ১৯৯৭১

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা সেলের সরকারি অফিস

মেমো নং ১০৮ / পিসি / ৭১ তারিখ, নভেম্বর ১৮, ১৯৭১
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের বিজ্ঞাপনের জন্য একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন পাঠাচ্ছি। এটি একাউন্টে সমগ্র বাংলাদেশের কথা মাথায় রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। এটা যেমন একটি থানা (অর্থাৎ একটি থানা আবৃত এলাকা) অথবা একটি ইউনিয়ন বোর্ড হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার মাপ কাটা যাবে (অর্থাৎ বিদ্যমান পরিষদের আকার) অথবা একটি গ্রাম, যখন এমন একটি এলাকা গণ্য করা হয় তার অ্যাপ্লিকেশনের জন্য এটি উপযুক্ত। প্রাসঙ্গিক মন্ত্রণালয় এটা করতে পারেন যাতে পরিকল্পনা সেলকে না করতে বলা হয়। প্রতিবেদন
১৬.১১.৭১ অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা সেলের একটি সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পরিকল্পনা সেল রেকর্ডে এটি যুক্ত হতে পারে যে এই পরিকল্পনা সামগ্রিক অর্থনৈতিক নীতি, যা সরকার যদি যথাসময়ে অবলম্বন করতে পারেন সেটা হবে উত্তম।

আপনার বিনীত, (মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী)
চেয়ারম্যান পরিকল্পনা সেল

জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ
প্রধানমন্ত্রী,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, কলকাতা. …………….

সমষ্টি উন্নয়ন কর্মসুচি
আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। “একটি বাস্তব জীবন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, যা মানুষের স্বাধীনতা এবং মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকবে, এবং যা ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে প্রাধান্য পাবে” তাই আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টো চালাবে। আওয়ামী লীগ সকল নাগরিকের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করতে এবং অভেদ্য সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য শপথ নেয়। “একটি বাস্তব জীবন্ত গণতন্ত্র” প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব একটি সংখ্যা ম্যানিফেস্টো মধ্যে মূর্ত হয়। এর মধ্যে রয়েছে: সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের, সরাসরি এবং অবাধ নির্বাচন, আইনের দৃষ্টিতে সমতা, আইনের শাসন, বিচার বিভাগ, মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক শৃঙ্খলা, সংখ্যালঘুদের জন্য নাগরিকত্ব অধিকার পূর্ণ, সংসদীয় সরকার যা সর্বোচ্চ আইনসভা সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদিত হতে হবে এবং যা করতে
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা , মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা ,ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক ব্যবস্থা , সংখ্যালঘুদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার প্রদান , আইনসভার প্রাধান্য সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা যেখানে শাসনকার্য পরিচালক দায়বদ্ধ থাকবেন। রাজনৈতিক তল থেকে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাস্তবে দুটো মৌলিক গণতান্ত্রিক মূল্যায়ন ঘটবে-স্বাধীনতা এবং সাম্যের।

আওয়ামীলীগ সরকার জানে এবং বিশ্বাস করে , অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং সাম্য প্রতিষ্ঠিত না হলে রাজনৈতিক ভাবে গণতন্ত্রে স্বাধীনতা এবং সাম্য হবে ফাঁপা বুলি। মুক্তির বাস্তবিক অর্থ আলোচনায় , অভাব , দারিদ্র এবং ক্ষুধার অর্থনৈতিক অবরোধ থেকে মুক্তির প্রতি ইঙ্গিত আসে ,এটি স্বৈরতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্রের মতো রাজনৈতিক অবরোধের মতোই মৌলিক। অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সাধারণ মানুষের অভাব মুক্তির জন্য আওয়ামীলীগ একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গ্রহণ করেছে। আওয়ামীলীগের ইস্তেহারে যেমনটা বলা হয়েছে , “অর্থনৈতিক কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো ন্যায়পরায়ণ ও সমঅধিকার ভিত্তিক শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার। সমাজতন্ত্রি এই নীতির ভবিষ্যৎ দর্শন অনুসারে , অর্থনৈতিক অবিচার ঘুচে যাবে , অর্থনৈতিক দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটবে এবং এই প্রবৃদ্ধির ফল সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত থাকবে।“ এই উদ্দেশ্যগুলোর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইস্তেহারে আরো কিছু বিশেষ প্রস্তাবনা প্রবেশ করানো হয়েছে। এগুলো হলোঃ অর্থনৈতিক মূলচালিকাস্বরূপ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো , ব্যক্তিগত মুনাফার প্রবৃদ্ধি ঘটানোর মাধ্যমে কয়েকজনের হাতে সব সম্পদ কুক্ষিগত করা যাদের উদ্দেশ্য , যেগুলো সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যের অন্তরায় – তাদের সরকারীকরণের মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত করা হবে।

এভাবে আওয়ামীলীগ সরকার এক সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করবে যা গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে গঠিত হবে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লব।

৬৫,০০০ এর বেশি গ্রামগুলো হতে পারে এসব রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক এবং সামাজিক লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশ মূলতঃ এক গ্রামীণ ও কৃষিভিত্তিক সমাজ , অস্তিত্বরক্ষা , কর্মসংস্থান এবং রপ্তানির জন্য যাকে কৃষিকাজের উপর নির্ভর করতে হয়। জাতীয় আয়ের প্রায় ৬৫ শতাংশ কৃষিকাজ থেকে আসে , যেখানে শিল্প ও বাণিজ্য মাত্র দশ শতাংশ জাতীয় আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচ্য। ১৯৬১ সালের আদমশুমারি অনুসারে মাত্র ৫.৯ শতাংশ জনগণ শহরে বসবাস করেন , ৯৪.৮ শতাংশ বাস করেন গ্রামাঞ্চলে। অন্যতম সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ঘনত্ব আমাদের রয়েছে , প্রতি বর্গমাইলে ৯২২ জন। মাথাপিছু আয় মাত্র ৫.৫৬ ডলার (ড\ এইচ. হকের মত অনুযায়ী ) । দেশটির শিল্পায়ন অপূর্ণ , অর্থসম্পদ সামান্য এবং এর অর্থনৈতিক অবকাঠামো অপর্যাপ্ত। সর্বোপরি , ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর এখানে খাদ্যঘাটতি রয়েছে , এবং সেইসঙ্গে ইদানিংকালে ব্যাপকহারে চালানো হত্যাকাণ্ডের বিভীষিকা এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের লেলিয়ে দেওয়া নির্মমতা বর্তমান।

প্রকৃত বাংলাদেশ এই গ্রামগুলোর মধ্যেই ছড়িয়ে আছে , ৬৫হাজারের বেশি গ্রাম। আমাদের জনগণ অভাবনীয় দারিদ্র্যের শিকার , বিগত সরকারের কৃষিবিমুখতা এবং মাত্র ২২টি পরিবারের দাপটে প্রভাবিত ক্ষমতা এর পেছনে দায়ী। আমাদের ভূমি পৃথিবীর অনেক স্থানের চেয়ে উর্বর এবং তারপরও আমাদের জনগণ দরিদ্রতম। তবে স্বাধীনতার জন্য যে যুদ্ধ এই জাতি করেছে তাতে সামাজিক বিপ্লবও ঘটেছে , জনগণের জাগরণ অভূতপূর্ব।

জনতা আজ জাগ্রত। তারা আর পরোক্ষ কোনো বস্তু নয় মূল চালিকাশক্তি। উদ্বেগ তোলার মতো একটি প্রশ্ন, “গরীব কারা?” থেকে অনুসন্ধান করে আসে আরেকটি প্রশ্ন “কেন তারা গরিব?” মৌলিক প্রশ্ন সমূহের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। দারিদ্র কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের একার নয় বরং এটি অর্থনৈতিক, শিল্পনীতি ও সংগঠনের সমস্যা। এই সমস্যাটিকে প্রথমেই একেবারে মূলে গিয়ে সমাধান করতে জবে এবং সমস্যাটি বিকাশের পর তার মোকাবেলা হবে দ্বিতীয় ধাপ।

গ্রামগুলো আগেই যেমমটা বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে সমাজতান্ত্রিক রীতি গঠনে এরাই যথার্থ কেন্দ্র। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিপ্লবকে গণতান্ত্রিক ধারায় নিয়ে আসতে চাইলে কাজটি গ্রাম থেকে শুরু করতে হবে, যেখানে ৯৪.৮ শতাংশ জনতার বাস। কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এবং জাতীয় সম্প্রসারণ সেবাগুলো এই গ্রামীণ সমাজের পরিবর্তন আনার জন্য কার্যকরী। এজন্য আমাদের জাতীয় জীবনের যে শাখাগুলি গ্রামীণ জনসংখ্যার উন্নতিতে প্রভাব রাখে তারা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে অন্যতম প্রধান তাৎপর্য রাখবে।

কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের তিনটি প্রধান ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথমতঃ কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এবং জাতীয় সম্প্রসারণ সেবা হবে প্রবল প্রচেষ্টার জায়গা, সরকারের উন্নয়নশীল সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে এই প্রকল্পে কাজ করবে। এসব প্রকল্পের পরিকল্পায়ন পূর্বেই গৃহীত। এসব কার্যক্রম সামাজিক উন্নয়ন ও জাতীয় সম্প্রসারণ সেবাগুলো গ্রামীণ জীবনে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে প্রকল্পের অখণ্ড অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। দ্বিতীয়তঃ এই প্রকল্পের সারাংশ হলো গ্রামবাসীদের মধ্যে যারা নিজেদের দূর্ভোগ সম্পর্কে সচেতন তাদের এগিয়ে এসে সামাজিক পরিবর্তন আনতে উদ্বুদ্ধ করা। এটা করা যেতে পারে নিজেদের জন্য নতুন একটি জীবন গঠন করার মাধ্যমে তারা সচেতনতা ও দায়িত্ব গড়ে তোলার কাজও করতে পারেন। যে প্রকল্পটি তাদের ভাল থাকার জন্য গঠিত, তাতে এর প্রয়োগ তারা করতে পারেন। প্রকল্পটি তাদের নতুন সুযোগ সুবিধা এনে দিচ্ছে, তার বদলে পরিকল্পায়ন ও বাস্তবায়নে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এনে দিতে পারে স্বাতন্ত্রসূচক মান।এর ফলে তাদের পরিধি ও প্রভাব বিস্তৃত হবে। আত্মসহযোগিতা এবং অন্যকে সহযোগিতা যেকোন আন্দোলনের মৌলিক উপাদান। এর ফলে নিজেদের মধ্য থেকে নেত্বৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এককথায় এই আন্দোলনটি সামাজিক উন্নয়অনের আন্দোলন, এবং এই গ্রামীণ সমাজের প্রতিটি শাখায় প্রসারিত হবে। তৃতীয়ত আন্দোলনটি গোটা গ্রাম সমাজকেই এর অধীনে নিয়ে আসবে এবং অধিবাসীদের সহযোগিতামূলক আন্দোলনে অংশ নিতে এবং নিজেদের অধিকারের অন্যন্য ক্ষেত্রে কাজ করতে শেখাবে। এতে উদ্যোগটা এগিয়ে যাবে এবং আমাদের জনগনের উদ্ভাবনশক্তির উন্নয়ন ঘটবে। সব মিলিয়ে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট হলো গণতন্ত্রের ভিত্তিতে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গঠনের সহজাত নমুনা।

সমাজ উন্নয়ন বলতে গ্রামবাসীর ভলেন্টারি আত্মসহযোগিতাকেই বোঝায়। এর মূল উদ্দেশ্য গ্রামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের পরিবর্তন। এই প্রকল্পে সুপ্ত আদর্শ গ্রামবাসীর জন্য আলোড়ন উদ্দীপক হবে না যদি না তারা নিজেরা এর প্রয়োজন অনুভব করে এবং তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ না করে। মূল সমস্যাগুলোকে গ্রামবাসীদের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।
সরকারি এজেন্সিগুলো গ্রাম্য কমিউনিটিকে সন্তুষ্ট করবে তাদের প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যমে, যেমন তাদের নতুন স্কিল শিখিয়ে, বিদ্যমান স্কিলগুলোকে প্রয়োজনের সময় আরও উন্নত করিয়ে, গ্রামের প্রয়োজন মেটাবার মতো উন্নদ প্রযুক্তি জ্ঞান এনে এবং সরকারি তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা সংগ্রহ করে স্বেচ্ছাসেবী কমিউনিটি প্রচেষ্টাকে সহায়তা ও উদ্দীপ্ত করা। নেতৃত্ব আসতে হবে জনতার মাঝ থেকেই। এটি এমন একটি আন্দোলনের অংশ যেখানে গ্রামবাসীরাই থাকছে কতৃত্বে, সরকারি এজেন্সিগুলো অধীনস্ত ভূমিকায়।
স্বেচ্ছাসেবী কমিউনিটি প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার জন্যই কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্পের ছক কাঁটা হয়েছে। বেশ কটি পরিকল্পনা নিয়ে এটি করা হয়েছে, যারা প্রতিটিই গ্রামীণ কমিউনিটি জীবনের নিম্নলিখিত বিভিন্ন দিকের মধ্যে পড়ে:
১. কৃষি
ক. প্রাণী ব্যবস্থাপনা
খ. সেচ
গ. পুনরুদ্ধার
ঘ. উন্নত বীজ
ঙ. সার
চ. অন্যান্য সরবরাহ

২. স্বাস্থ্য ও গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
ক. মেডিকেল সুযোগ-সুবিধাসমূহ
খ. ডাক্তার
গ. নিরাপদ পানীয় জল
ঘ. পরিবেশ পরিছন্নতা

৩. শিক্ষা
ক. বয়ষ্ক শিক্ষা
খ. সামাজিক শিক্ষা

৪. যোগাযোগ
ক. রাস্তাঘাট
খ. সেতু ও কালভার্ট

৫. গ্রামীণ চারু ও কারুশিল্প

৬. আবাসন

গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থা রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রামবাসীদের কাছ থেকেই আসতে হবে। এই আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হলো আত্মসচেতনতা, আত্মপরীক্ষা ও আত্মসহায়তা। এটা পুরোপুরিই নির্ভর করে মানুষের ইচ্ছাশক্তি, স্বেচ্ছাশ্রম আর উদ্যমী অংশগ্রহের ওপর। এই আন্দোলনের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য এই আদর্শে উদ্ধুদ্ধ এক দল স্বেচ্ছাসেবী প্রয়োজন। অনেক তরুণ আছে, যারা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী, কিন্তু মুক্তিবাহিনীতে তাদের নেওয়া হচ্ছে না।
এখানে এরকম অনেক তরুন আছে যারা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছে, কিন্তু তাদের সকলকে মুক্তিবাহিনীতে নেওয়া হবে না। এই আন্দোলনের জন্য দলবদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক দরকার যাদেরকে এসব তরুনদের মধ্যে থেকে নিয়োগ করা যায়। তাদের এ কাজের জন্য তাদেরকে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় এ আন্দোলনের দর্শন (সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে) সম্বন্ধে। এর ভিত্তিতে তারা আমাদের জনগণদের প্রেরণা প্রদাণ করার মতো অবস্থায় উপনিত হবে। তাদের প্রধান কাজ হবে একটি আন্দোলন গড়ে তোলা যা সব শ্রেনীর গ্রামবাসী দ্বারা গৃহীত হবে এবং শর্ত আরোপ করা যেন আন্দোলনটি বজায় থাকে এবং আন্দোলনটির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতার মাধ্যমে গ্রামবাসীদের মধ্যে এটা বাহিত হয়।
সত্যিকার অর্থে অতীতে দেশের কোন স্তরেই কোন গনতন্ত্র ছিল না। স্বৈরাচারী এবং উৎপীড়নমূলক কেন্দ্র রেখে সেই পরিসীমার মধ্যে কখনো গনতন্ত্র থাকতে পারে না। এটাই আশা করা হয় যে ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় এবং সামগ্রীকভাবেই গনতন্ত্র বজায় থাকবে। এই একটা জিনিসই আন্দোলনে জনগনের কার্যকর ও অর্থবহ অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে পারে। এটা অবশ্যই একটা আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হতে হবে যাতে করে এতা জনগনকে আকৃষ্ট করতে পারে।

সামাজিক কর্মীদের সঠিক সংখ্যা নির্ভর করে এলাকা, জনসংখ্যা ও কর্মী লভ্যতার উপর। কর্মীদের অবশ্যই একনিষ্ঠ ও উদ্যমী হতে হবে। তাদের অবশ্যই সাধারণ মানুষের মাঝে যেতে হবে এবং গ্রামবাসীদের সাথে এক প্রাণবন্ত হৃদ্যতা গড়ে তুলতে হবে। তাদের আচার-আচরণ, চরিত্র ও মনোভাবের মাধ্যমে তাদের অবশ্যই নিজেদের এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন তারা গ্রামীণ সমাজের স্বাভাবিক ও সহজাত অবিচ্ছেদ্য অংশ। সম্পূর্ণ দাম্ভিকতা বিবর্জিত এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের মাধ্যমে তারা জনগণকে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। সামাজিক কর্মীদের অবশ্যই এটা অনুধাবণ করতে হবে যে তাদের উপর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এজন্য রাজনৈতিক নেতাদের সৃজনী এবং কার্যকর সমর্থন প্রয়োজন, যারা রাজনীতিকে মানবসেবার মহৎ পথ হিসেবে গণ্য করে।

দলীয় উন্নয়ন এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন:
স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত Body-village পঞ্চায়েৎ, ইউনিয়ন সভা উন্নয়ন বিভাগ, জেলা সভাকে সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচির সাথে একত্রিত করতে হবে। এই স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত দল/গোষ্ঠিকে এই উদ্দেশ্যের জন্য উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা হয়। বিস্তারিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে।
স্থানীয় সরকারের সম্পূর্ণ ভিত্তির মৌলিক ধারণাটি হচ্ছে যে স্বশাসনের জন্য ভালো সরকারের কোন বিকল্প নেই। এর শুরু হয় সব সমস্যার ব্যপ্তি তাদের কেন্দ্র নয়, এবং সেসব সমস্যার সিদ্ধান্তের ভার কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া যেসব সমস্যা সম্প্রদায়ের একটি অংশকে প্রভাবিত করে এবং শুধুমাত্র প্রভাবিত অংশের দায়িত্বানুভূতির এবং উদ্ভাবনের অভ্যাস ধ্বংস হয়, সেটা মেনে নেওয়ার মাধ্যমে। একটি নির্দিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের অন্ততপক্ষে জানা প্রয়োজন তাদের সাধারণ উদ্দেশ্য, একটি পারিপ্বার্শিক সমাজের প্রয়োজনীয়তা। এছাড়া তারা তাদের সন্তুষ্ট করার ক্ষমতা খুঁজে পাবে যা তাদের জীবনীশক্তির গুণমান বৃদ্ধি করবে যদি না তাদের সন্তুষ্টি সর্বদা নিয়ন্ত্রিত হয়। কারণ, স্থানীয় মতামতের প্রতি সংবেদনশীল সজীব করার ক্ষমতা সম্পন্ন প্রশাসন ব্যবস্থা না হলে এটি ধারণার অবহেলিত অবস্থা ও অভিব্যক্তির সঠিক অবস্থা প্রকাশে সক্ষম নয় যা একটি সফল সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোন স্থানের সহজাত ক্ষমতার অভাব বোধ করায়। এটি যারা শাসন করে তাদের প্রতি মৌলিক সমর্থনের প্রকাশ করে না। এটি স্বাধীন ইচ্ছাশূণ্যের একরূপতা যা বিভিন্ন জিনিসের জন্য অভিন্ন নিয়ম প্রয়োগের প্রচেষ্টার ফলে গড়ে উঠে। এটা খুবই ক্ষীণ যে দূর থেকে এরকম প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের থেকে আগ্রহ জাগানোর কাজ সম্পন্ন করা যাবে। স্থানীয় বিষয়াবলির কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা হয়তো ধিক্কার জানাতে পারে এবং এটি কখনোই স্থানীয় স্বসরকার ব্যবস্থা ও সমাজ উন্নয়নের গঠন নীতির মৌলিক সমর্থনের প্রকাশ হবে না।

কিছু সমস্যাঃ
১. এলাকা- স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের এলাকা যথাসম্ভব ক্ষুদ্র হওয়া বাঞ্চনীয়।
২. গ্রাম ও জেলা পর্যায়ে স্থানীয় গোষ্ঠীর সংবিধান-
ক) (১) গ্রাম্য পঞ্চায়েৎ- ঐ গ্রাম থেকে ইউনিয়ন সভায় নির্বাচিত সদস্য দ্বারা পরিচালিত এবং গ্রাম্য পর্যায়ের সকল উন্নয়ন ও প্রশাসনিক ক্রিয়াকলাপের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।

(২) তৃণমূল পর্যায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা তাদের নিজস্ব গ্রামে স্থানীয় ভাবে আয়োজিত পল্লী উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশ নিবে।
খ) ইউনিয়ন সভা- ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য দ্বারা গঠিত যারা সরাসরি ‘সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার’ এর ভিত্তিতে গণ্য জনগণের দ্বারা নির্বাচিত।
গ) উন্নয়ন বিভাগ- ইউনিয়ন সভার চেয়ারম্যানদের দ্বারা গঠিত থানা পর্যায়ের সমন্বয়। তারা সেই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত ও সহায়তা প্রাপ্ত হবেন।
ঘ) জেলাসভা- সদস্যদের দ্বারা গঠিত যেখানে সদস্যসংখ্যা নির্ভর করবে প্রতিটি জেলার জনসংখ্যার উপর। তারা ‘সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার’ এর ভিত্তিতে গণ্য জনগনের দ্বারা সরাসরি বির্বাচিত।
(১) জেলাসভার চেয়ারম্যান সেই জেলার প্রথম নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তার পদমর্যাদা হবে ডেপুটি মিনিস্টার।

৩. কার্যাবলীঃ
ক) বিধিবদ্ধ এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম।
খ) উন্নয়ন কর্মকান্ড- সামাজিক উন্নয়ন।
৪. কমিটি ব্যবস্থা।
৫. আর্থিক সংস্থান-
ক)স্থানীয় কর ব্যবস্থা।
খ) সরকারি অনুদান।
গ) উন্নয়ন অনুদান।

৬. কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সম্পর্ক।

৭. স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত বেসামরিক সেবা।
ক) নিয়োগ।
খ) স্থানীয় গোষ্ঠীর কাছে তাদের অধীনে কার্যালয়ের উপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকা।
(গ) চাকুরির বেতন ও অন্যান্য শর্তাদি।
৮. সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গীকৃত সুশৃঙ্খল পুনর্গঠনকারী কর্মীবাহিনী।
বিঃদ্রঃ জেলা ও থানা পর্যায়ে গ্রামীন উন্নয়নের লক্ষ্যে এজটি বিস্তারিত পরিকল্পনা সাধারণ প্রশাসনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে।

সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রশাসনিক কাঠামো

ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ একটি ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা। সামাজিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রতিটি থানা বা পুলিশ ষ্টেশনকে উন্নয়ন ব্লক হিসেবে বিবেচনা করা হবে (এক্ষণে থানাকে উন্নয়ন ব্লক হিসেবে অভিহিত করা হবে)। গড়ে প্রতিটি উন্নয়ন ব্লকে ১৫৮টি গ্রাম থাকবে যার মধ্যে ছোটখাটো পার্থক্য পরিলক্ষিত হবে। প্রতি থানায় ১০ থেকে ১২টি ইউনিয়ন কাউন্সিল এবং ইউনিয়ন কাউন্সিলকে ইউনিয়ন বোর্ড হিসেবে পুনরায় নামকরণ করা হবে। প্রত্যেক বোর্ডে ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম থাকবে।
প্রত্যেক উন্নয়ন ব্লকের জন্য একজন করে উন্নয়ন কর্মকর্তা থাকবেন। নিম্নোক্ত বিষয়ে একজন করে মোট আটজন সম্প্রসারণ কর্মকর্তা থাকবেন।
১. কৃষি
২. পশুসম্পদ
৩. পল্লী উন্নয়ন
৪. সামাজিক শিক্ষা
৫. নারী ও শিশু বিষয়ক কার্যক্রম
৬. সমবায়
৭. গ্রামীন শিল্প
৮. গ্রাম পঞ্চায়েত বা ইউনিয়ন বোর্ড

এতদ্ব্যতীত প্রত্যেক ইউনিয়ন বোর্ডের জন্য গ্রাম পর্যায়ে দশজন কর্মী এবং দুইজন মহিলা কর্মী থাকবে।

সহায়ক জনবলসহ একজন করে ডাক্তার থাকবে। প্রতি ব্লকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থাকবে। পর্যায়ক্রমে প্রতি ইউনিয়ন বোর্ডে স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হবে এবং কালক্রমে প্রতি গ্রামে। অন্যান্য বিষয়াদি অপরিবর্তিত থাকলে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে প্রতি গ্রামে একটি করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকবে।

সমগ্র বাংলাদেশের প্রয়োজনে প্রত্যেক ক্যাটাগরির নিম্নোক্ত সংখ্যক কর্মকর্তা প্রয়োজন হবে।

১. ব্লক উন্নয়ন কর্মকর্তা — ৪১১
২. সম্প্রসারণ কর্মকর্তা — ৩২৮৮
৩. কৃষি সহকারী — ৪০৪৬
৪. গ্রাম পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবক কর্মী — ৪০৪৬০
৫. গ্রাম পর্যায়ের মহিলা কর্মী — ৯০৯২
————————–
মোট ৮৬,২৯৭

ব্লক উন্নয়ন কর্মকর্তা সরকারের বর্তমান বা পুনর্গঠিত ক্যাডার কর্মকর্তা হবে। এইসকল ব্লক উন্নয়ন কর্মকর্তা পল্লীজীবনের সকল বিষয়ে সম্যকভাবে পরিচিত থাকবেন। তাদের কর্ম ও আচরণের মাধ্যমে তারা নিজেদের এমন একটি অবস্থানে চলে যাবেন যাতে তারা গ্রামের মানুষের সাথে একটি জীবনালাপ স্থাপন করতে হবে। তাদের মধ্যে থাকবে পরিপক্কতা, উদ্যম ও উৎসাহ। তাদের বেতন ও সম্মানী সরকার বহন করবে।
ব্লক উন্নয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব নিম্নরূপঃ

(১) সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের লক্ষ্য, পদ্ধতি ও বিষয়াদি যাতে গ্রামের জনগণ বুঝতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা ও উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ।
(২) প্রতি ব্লকের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ।
(৩) ব্লকের কর্মীদের কার্যক্রম বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান ও তত্ত্বাবধান।
(৪) তহবিলের সঠিক ব্যবহার এবং হিসাব ও নথিপত্র ব্যবস্থাপনা।
(৫) গ্রামের মানুষের উদ্যমী কাজ পর্যবেক্ষণ করা।
(৬) সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম চালনার প্রয়োজনীয় উপকরণের মজুদ গড়ে তোলা এবং পরিকল্পনার সঠিক সম্পাদনের জন্য সরবরাহ ব্যবস্থা চালু ও নিয়ন্ত্রণ করা।
(৭) আলোচনার জন্য কর্মীসভার আয়োজন।
(৮) নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনে ব্লকের বিভিন্ন অঞ্চল পরিক্রমণ।
প্রশিক্ষণঃ নিয়োগের সময় এসকল কর্মকর্তাকে একমাসের পরিচিতিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে এবং তারা নিজেরা দুইমাসের আরো দুইমাসের চাকুরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন।
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে যথোপযুক্ত পরিমাণে পাঠকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নিম্নরূপঃ
(১) তাদের বিশেষ কার্যক্রম সম্পর্কে ব্লক উন্নয়ন কর্মকর্তাকে অবহিতকরণ
(২) সর্বস্তরের জনগণের প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞান ও তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ
(৩) কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে গ্রামের জনগণের উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর প্রদান।
(৪) সকল উন্নয়ন পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও গ্রামের জনগণকে সরবরাহের ব্যবস্থা করা এবং সকল আনুষঙ্গিক সহযোগিতা প্রদান করা।
(৫) সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগের উন্নয়ন নীতির সাথে যোগাযোগ স্থাপন।
(৬) গ্রাম পর্যায়ের কর্মীদের কারিগরি সহায়তা প্রদান।

প্রত্যেক সম্প্রসারণ কর্মকর্তার সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কার্যাবলী রয়েছে যা নিম্নরূপঃ

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা
(ক) বিভিন্ন কৃষি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ।
(খ) ব্লকের অধীন সকল জমির উন্নয়নের জন্য নির্ধারিত ব্যবস্থা সম্পর্কে গ্রামবাসীদের অবহিতকরণ। কর্মকর্তাকে নিজে উপস্থিত হয়ে গ্রামবাসীদের সাথে সপ্তাহে কয়েক ঘন্টা মাঠে কাজ করতে হবে।
(গ) গ্রাম পপর্যায়ের ককর্মীদের সসহযোগিতায় ইউনিয়ন বোর্ড এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে প্রদর্শনী আয়োজন করতে হবে এবং তালিকা বা কৃষি প্রোগ্রামের অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ গচ্ছিত রাখতে হবে।
(ঘ) কৃষক, নিবন্ধিত বীজ উৎপাদনকারী এবং অন্যান্য গ্রাম্য নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ।

(২) পশুসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা
(ক) ভেটেরিনারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন, গ্রামের মানুষদের পশুপালন বিষয়ে শিক্ষাদান এবং গবাদিপশুর সঠিক উন্নয়ন সাধন ও ব্যবহার নিশ্চিত করণ।
(খ) দুগ্ধ ও অঅন্যান্য পপশুজাত পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সমবায় ব্যবস্থাকে উৎসাহিতকরণ।
(গ) ঘাস ও খড় চাষের জমি উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মৎস্যচাষে উন্নয়ন ঘটানো।

(৩) পল্লী প্রকৌশল সম্প্রসারণ কর্মকর্তাঃ (তত্ত্বাবধারক)
(ক) নির্মাণকাজ বিষয়ে প্রাক্কলন প্রস্তুতকরণ এবং পরিকল্পনা গ্রহণ।
(খ) সকল নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধান এবং অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা।

(৪) সামাজিক শিক্ষা কর্মকর্তাঃ
(ক) বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ ও আনুষঙ্গিক কাজ করা (যেমন সংবাদপত্র, পুস্তিকা ও ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা করা)
(খ) গ্রামের যুবকদের দল বা ক্লাবে সংগঠিত করা, তাদের পরামর্শ প্রদান করা যাতে তারা সাংষ্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও আয়োজন করতে পারে।

(৫) নারী ও শিশু বিষয়ক সম্প্রসারণ কর্মকর্তাঃ
ক) গ্রামের নারীদের সমিতি সংঘটিত করা।

খ) যেখানে সম্ভব মহিলা সমিতি সংঘটিত করা এবং তাদের কল্যানার্থে উপযুক্ত প্রকল্প প্রস্তাবনা করা।

গ) তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকদের উৎসাহিত করা, জনসাধারনের মধ্যে পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস উন্মিত করা এবং গ্রামের লোকদের স্কুল শুরু করতে বিশেষভাবে মেয়েদের উৎসাহিত করা।

(৬) সহযোগিতার জন্য এক্সটেনশন অফিসারঃ
ক) ব্লকের কোন না কোন সমবায় সমিতির অন্তর্ভূত হতে উৎসাহিত করা।
[সেখানে সমবায় দুই ধরনের হতে পারে। (১) কৃষি সমবায়, (২) ভোক্তা সমবায়]

খ) নতুন সমবায় সমিতি সংগঠিত করতে সাহায্য করা।

গ) নিয়মিত সব সমবায় সমিতি পরিদর্শন করা। এবং

ঘ) সমবায় সম্পত্তিগুলোর কোনরকম বিলম্ব ছাড়াই আর্থিক সহায়তা ও সরবরাহ নিশ্চিত করা।

(৭) শিল্পক্ষেত্রে এক্সটেনশন অফিসারঃ
ক) প্রত্যেক কারিগর এবং তাদের সমবায় সমিতিকে সরঞ্জাম সরবরাহ এবং পণ্য বাজারজাত করণে সহায়তা করা।

খ) গ্রামীণ শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিদর্শন এবং তদারকি করা।

গ) বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ শিল্পে জনসাধারণকে সহায়তা দান করা। কাঠের কাজ, ইট তৈরি, সেলাই, লোহার কাজ, বয়নশিল্প, মৃৎশিল্প, মৌমাছি পালন, মাছধরা ইত্যাদি।

(৮) গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য এক্সটেনশন অফিসারঃ
ক) মৃতপ্রায় গ্রাম পঞ্চায়েতকে পূনরুজ্জিবিত করতে গ্রামবাসীকে উৎসাহিত করা।

খ) জনসাধারনের কাছে এক্সটেনশন অফিসারদের উদ্দেশ্য, প্রতিষ্ঠান ও নিয়োগ ব্যাখ্যা করা।

এই মুহুর্তে যারা এই লেভেলের অফিসার তাদের সংখ্যা সঠিক এবং সুনির্দিষ্টভাবে নিরূপণ করা সম্ভব নয়। (অথবা মূল অনুষদ থেকে ডিগ্রী প্রাপ্তদের) বিভিন্ন কলেজ থেকে পোস্টটির জন্য ডিগ্রীপ্রাপ্ত সরাসরি নিয়োগ দেয়া যেতে পারে, অথবা সুযোগ্য শিক্ষিত যুবক সমাজ যারা বিভিন্ন যুব ক্ষেত্রে অবস্থান করছে কিন্তু মুক্তিবাহিনীতে নেয়া হয়নি, অথবা গ্রাম পর্যায়ের কর্মীদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যাখ্যা করতে হবে।

গ্রাম পর্যায়ের নারীকর্মীঃ
প্রতিটি ইউনিয়ন বোর্ডের জন্য দুইজন করে গ্রাম পর্যায়ের নারী কর্মি থাকবে। গ্রাম পর্যায়ে মহিলাদেরকে কর্মি হিসেবে নিয়োজিত হতে উৎসাহ দিয়ে সব কাজ করা হবে।
তবে গ্রাম পর্যায়ে এতো বিশালসংখ্যক নারীকর্মী পাওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুরুষ কর্মীদের দায়িত্ব দিতে হবে।
গ্রামকর্মীদের কর্তব্য:
দেশজুড়ে যে সামাজিক সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ চলছে গ্রামকর্মীরা সে কাজগুলোই গ্রাম পর্যায়ে চালিয়ে যাবে। তাদের নির্দিষ্ট কাজগুলোকে সাত ভাগে ভাগ করা যায়:

১. শিক্ষা ও তথ্য প্রদান
– উন্নত বীজ, সার, গোবর ও সরঞ্জাম কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা দেখানো।
– সার ও কৃত্রিম প্রজননের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রচারণা চালানো।
– কিভাবে কম্পোস্ট সার তৈরির গর্ত খুঁড়তে হয়, গবাদি পশুর জন্য সুষম খাদ্য তৈরি করতে হয়, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের নালা তৈরি করতে হয়, পানিতে ক্লোরিন ব্যবহার করতে হয় আর গ্রামাঞ্চলে বাড়ি তৈরি করতে হয়ে সে প্রসঙ্গে তথ্য সরবরাহ করা।
– গ্রামাঞ্চলে মেলা বা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা, যেখানে পোস্টার, ফিল্ম, প্যামফ্লেট, লিফলেট এবং অন্যান্য মাধ্যমে গ্রামবাসীদের তথ্য প্রদান করা হবে।

২. উন্নয়নমূলক
– ছোটখাটো জখম বা কাটাছেঁড়ার জন্য ফার্স্ট এইড কিট ব্যবহার করা।
– ঔষধ বিতরণ করা।
– গবাদি পশুদের ছোটখাটো জখমের ক্ষেত্রে ফার্স্ট এইড কিট ব্যবহার করা বা প্রয়োজনে মানুষ ও গবাদি পশুদের
টিকাদান করা।

৩. সরবরাহ ও সেবা
– উন্নত বীজ, সার, সরঞ্জাম, গোবর ও সার সরবরাহ করা এবং পানি ও মাটির ওপর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা।

৪. নির্মাণকাজ
– গ্রামে কী ধরনের স্থাপনা প্রয়োজন এবং তা তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিভাবে সংগ্রহ করা যেতে পারে তা যাচাই করা।
– ব্যয়ের রশিদ তৈরিতে সাহায্য করা।
– প্রশাসনিকভাবে কাজের অনুমতি সংগ্রহ করা আর নির্মাণকাজের পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করা।
– জনগণের অনুদান সংগ্রহ করা।
৫. উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গ্রাম সংগঠিত করা
– ফসল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা
– পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণ ও ব্যবহার বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রচারণা করা
– যুবসংঘ গঠন করা
৬.পরিসংখ্যানসংক্রান্ত তথ্য জোগাড় করা
– বিভিন্ন জরীপ সম্পাদন করা
– আদমশুমারীতে সাহায্য করা
৭. প্রশাসনিক
– ঋণের রশিদ সংগ্রহ করা এবং উপযুক্ত ঋণ গ্রহীতার নামে সুপারিশ করা
– অফিসের কাজকর্মের রেকর্ড রাখা
– প্রয়োজনীয় প্রগ্রেস রিপোর্ট, চার্ট, মানচিত্র আর বিবৃতি তৈরি করা
– সরঞ্জাম ও অন্যান্য স্টোরের রক্ষণাবেক্ষণ করা
– মাসিক, পাক্ষিক বা জরুরি মিটিং-এ উপস্থিত থাকা
– অতিথিদের ঘুরিয়ে দেখানো

গ্রামকর্মীদের প্রধান কাজ হচ্ছে বিভিন্নভাবে শিক্ষা ও তথ্য বিস্তার করে গ্রামবাসীর জীবনব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা। এছাড়াও কিছু সময়ের জন্য তাদের কৃষকদের সাথে শস্যক্ষেত্রে কাজ করতে হবে।

প্রশিক্ষণ

প্রতি গ্রামকর্মীকে এক্সটেনশন ট্রেইনিং সেন্টার থেকে দুই বছরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
১. প্রতি ব্লকে বিডিও কর্তৃক আয়োজিত লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে গ্রামকর্মী নির্বাচন করা হবে।
২. পরবর্তীতে তাদের আরও কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে, যেমন—বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা, কর্মক্ষমতার পরীক্ষা, কায়িক শ্রমক্ষমতার পরীক্ষা, কৃষিবিদ্যাজনিত পরীক্ষা, প্রকাশ্যে বক্তব্য প্রদান পরীক্ষা আর ক্রীড়াজনিত পরীক্ষা।
৩. প্রশিক্ষণকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
– শ্রেণীকক্ষে প্রদত্ত লেকচার
– ব্যবহারিক শিক্ষা
– সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলো হচ্ছে:
– কৃষিবিদ্যা, প্রকৌশলশাস্ত্র, মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা, উদ্ভিদের রক্ষণাবেক্ষণ, কৃষি অর্থনীতি, গবাদি পশু পালন, গণস্বাস্থ্য, সামাজিক শিক্ষা, গ্রাম ও কুটিরশিল্প
– প্রশিক্ষণরত গ্রামকর্মীরা ব্যারাকে ঘুমাবে এবং কমন ডাইনিং হলে একসাথে খাবে।

গ্রামে আসার পর গ্রামকর্মীদের করনীয়:

১. গ্রামাঞ্চলে উন্নয়নের যে লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে হবে তা ব্যাখ্যা করা।
২. গ্রামবাসীদের মধ্যে কোন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজে উৎসাহ আছে তা নির্ধারণ করা।
৩. গ্রামবাসী যাদের নেতৃস্থানীয় মনে করে তাদের চিহ্নিত করা।
৪. গ্রামবাসীদের মতে তাদের মূখ্য সমস্যাগুলো কি, সেসব জানার চেষ্টা করা এবং সমস্যা সমাধানে তারা কতটা আগ্রহী।

সংযমী ও বিচক্ষণ হতে ওদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ধীরে ধরে গ্রামে ওরা বন্ধু হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। গ্রামকে সক্রিয় করে তুলতে ওরা ভীষণ সতর্কতার সঙ্গে শুরু করে। এটা করে ওরা মূলত গ্রামীণ নেতৃত্বের মাধ্যমে কাজ করে। গ্রামীণ নেতারা, হোক বন্ধুসুলভ বা বৈরি, প্রগতিশীল কিংবা রক্ষণশীল, তারাই গ্রামের ভাবনা ও কার্যক্রমের নির্দেশনা দেয়। গ্রামীণ পর্যায়ের কর্মিকে গ্রামে কাজ করার সময় অবশ্যই জবরদস্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

উন্নয়নে সহায়তা

১. কমিউনিটি উন্নয়নের প্রযুক্তিগত সহায়তা আসে ব্লক ও গবেষণা স্টেশন কিংবা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ব্যক্তিবর্গের দ্বিমুখি যোগাোযাগের মাধ্যমে। এতে গ্রামের লোকদের কাছে গ্রামীণ কার্যক্রম সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক তথ্য সরাসরি দেওয়া হয় প্রশিক্ষিত লোকের মাধ্যমে, যারা পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে তাদেরকে তথ্যগুলোর ব্যখ্যা দিতে পারে। এর মাধ্যমে গবেষণা স্টেশন ও বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট গ্রামীণ সমস্যাগুলো সম্পর্কেও জানতে পারে যাতে সমাধান করা যায়।

২. কমিউনিটি উন্নয়নের আর্থিক সহায়তা আসে বিভিন্ন অনুদান থেকে; কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঋণ ও ভর্তুকিও কাজে লাগানো হয়। এই সহায়তার স্বাতন্ত্র হলো গ্রামে আত্ম-সহায়তায় উৎসাহী হতে চেষ্টা করা, যাতে ঋণ দেওয়ার আগেই একটি সুনির্দিষ্ট অনুপাতে লোকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। এই অংশগ্রহণ হতে পারে নগদ অর্থ, শ্রম বা উপকরণের মাধ্যমে। নগদ অর্থ আসতে পারে ইউনিয়ন বোর্ড ও পঞ্চায়েতের আদায়কৃত কর ও ব্যক্তিগত দান থেকে। গ্রামবাসীদের যারা কোনো সুনির্দিষ্ট কাজে শ্রম দিচ্ছে, তারাও ওই শ্রমের সমমূল্যের অবদান রাখছে। এই শ্রমের মূল্য নির্ধারিত হচ্ছে জনশক্তির ভিত্তিতে পাবলিক ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের অনুমিত কর্মভারে এবং রূপিতে এর মূল্য নির্ধারিত হয়েছে আঞ্চলিক জেলার বিদ্যমান মজুরি হার অনুযায়ী। উপকরণ দিয়ে অবদানের মূল্যও নির্ধারিত হয়েছে বিদ্যমান বাজার দর অনুযায়ী।

অনুদান: এমবের অভিপ্রায় হলো বৃহত্তর কমিউনিটির কাজে লাগানো। কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এই অনুদানগুলো মঞ্জুর হয় মূলত পানীয় জলের কূপ, রাস্তাঘাট, কালভার্ট, স্কুল, ঔষধালয় ও কমিউনিটি সেন্টার গড়া বা মেরামতের কাজে।

ঋণ: ঋণ মঞ্জুর হয় মূলত সুনির্দিষ্ট আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে, এমন কার্যক্রমের জন্য এবং যেগুলো ফলপ্রসূ হওয়ার যৌক্তিক সম্ভাবনা আছে। যেমন, সেচ কার্যে ঋণ দেওয়া বেশ সাধারণ।

ভর্তুকি: যখন কোনো প্রকল্প নতুন এবং এই উপকারিতা এখনও প্রতিপাদন করা হয়নি, সেটি গ্রহণের প্রনোদনা দেওয়ার জন্য ভর্তুকি দেওয়া হয়।

সব ক্যাটেগরির কর্মকর্তা, বি.ডি.ও., সম্প্রসারিত কর্মকর্তা ও গ্রাম পর্যায়ের কর্মী:

১. ব্যপক সফর

২. মানুষের সঙ্গে সরাসরি, প্রায়শ এবং অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ।

৩. বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, বিশেষ করে কৃষকদের সঙ্গে মাঠে কৃষি কার্যক্রম।

গ্রাম পঞ্চায়েত:

প্রতিটি গ্রামে গ্রাম পঞ্চায়েত থাকবে। গ্রাম থেকে যে ব্যক্তি ইউনিয়ন বোর্ডে নির্বাচিত হয়েছে, তিনিই হবে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান (অবশ্যই ওই গ্রামের)।

গ্রামের সব ধরণের কাজের দায়িত্ব থাকবে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের, যেমন কৃষি, পশুপালন, সেচ, সামাজিক শিক্ষা, যোগাযোগ, গ্রামীণ চারু ও কারু শিল্প, শিল্প কারখানা ও আবাসন। তার দায়িত্ব হবে এই কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করা। গ্রাম থেকে নেওয়া ১০ জন স্বেচ্ছাসেবী তাকে সহায়তা করবে। ওই গ্রামের জন্য নেওয়া নির্দিষ্ট প্রকল্পগুলো ওই পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা প্রনয়ণ করবে পঞ্চায়েত। ওই পরিকল্পনা ইউনিয়ন বোর্ডে দাখিল করা হবে এবং ইউনিয়ন বোর্ডের পরিকল্পনার অংশভুক্ত হবে। এরপর সেটা যাবে উন্নয়ন ব্লকে এবং উন্নয়ন ব্লকের পরিকল্পনার অংশভুক্ত হবে, যেটি থানায়। এরপর সেটা যাবে জেলা বোর্ডে, সেখান থেকে যাবে কেন্দ্রে কমিউনিটি উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকারে।

গ্রাম পর্যায়ে পরিকল্পনা সম্পাদন

গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তার গ্রামে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবেন। তকে সহায়তা করবে তার গ্রামের অধিবাসী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। তার নির্দেশনায় এই স্বেচ্ছাসেবীরা পরিকল্পনার সত্যিকার ববিস্তবায়নে অংশ নেবে। মাঠ পর্যায়ে ও অন্যান্য কাজে তারা গ্রামবাসীদের সঙ্গে কাজ করবে। ইউনিয়ন বোর্ডের গ্রাম পর্যায়ের কর্মীদের কাছ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা পাবে তারা। গ্রামীণ কৃষি সমবয়গুলো থেকে তারা বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরবরাহের ব্যবস্থা করবে।

মূল পরিকল্পনা হলো, গ্রামের সব সামর্থ্যবান পুরুষ ও নারীকে তাদের রুটি-রুজি নিজের কাজ দিয়েই উপার্জন করতে হবে। যে কাজ করবে না, সে খেতে পারবে না। ভিক্ষুকদের হাত রূপান্তরিত করতে হবে কর্মক্ষম হাতে। স্বেচ্ছাসেবীদের হতে হবে গ্রামেরই, থাকবে ও কাজ করবে গ্রামবাসীদের সঙ্গে।

প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১০ জন করে স্বেচ্ছাসেবী ধরলে স্বেচ্ছাসেবীদের মোট সংখ্যা হবে ৬ লাখ ৫০ হাজার। কোনো গ্রামে যদি ও কখনও স্বেচ্ছাসেবী দ্রুত না পাওয়া যায়, তাহলে যুব শিবিরে অপেক্ষমান তরুণদের বয়স ও যোগ্যতা অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। তিন সপ্তাহের একটি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্স করতে হবে তাদের। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবে গ্রামবাসীরা। তাদের প্রতীকি কিছু হাতখরচ দেওয়া যেতে পারে।

গ্রাম পর্যায়ের কর্মীরা এই স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দেবে। কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্পের সর্বক্ষেত্রে গ্রাম পর্যায়ের কর্মীরা প্রতিটি পঞ্চায়েতের স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তা করবে।

মন্ত্রীবর্গ, রাজনীতিবিদগণ ও জাতীয় সংসদের সদস্যরা নিয়মিত বিতিতে গ্রাম পরিদর্শন করবেন। কমিউনিটি উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার, অন্যান্য সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়ন ও বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ-সচিব, যুগ্মসচিব ও উপসচিবদের বছরের অন্তত দু মাস কোনো একটি উন্নয়ন ব্লকে কাটাতে হবে। বিভিন্ন সার্ভিসের তরুণ ও নতুন সদস্যদের প্রতিটি উন্নয়ন ব্লকে অবশ্যই কাটাতে হবে অন্তত তিন মাস।

(মোজাফফর আহমেদ চৌধুরি)
চেয়ারম্যান, পরিকল্পনা সেল,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং বিভাগসমূহের সচিবের প্রতি বছরে অন্তত দুই মাস কোন একটি উন্নয়ন ব্লকে ব্যয় করতে হবে। বিভিন্ন পেশায় যোগদান করা নতুন রিক্রুটদের অবশ্যই প্রতিটি উন্নয়ন ব্লকে অন্তত তিন মাস ব্যয় করতে হবে।

মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী

চেয়ারম্যান, পরিকল্পনা শাখা

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

সামাজিক উন্নয়নের জন্যে পরিচালনা কঠামো

জেলা সমিতি

নির্বাচিত সভাপতি

এবং

৭৫,০০০ জন্যের জন্য একজন প্রতিনিধি

সামাজিক উন্নয়ন বিভাগ

(থানা পর্যায়)

অঞ্চল ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকর্তা

সম্প্রসারন কর্মকর্তা সম্প্রসারন কম

ইউনিয়ন সমিতি

(১০-১৫জন নির্বাচিত প্রতিনিধি)

১০জন গ্রাম ২ জন ১ জন

পর্যায়ের প্রতিনিধি মহিলা কর্মী সহযোগী

গ্রাম পঞ্চায়েত

প্রধান

(ইউনিয়নের নির্বাচিত প্রতিনিধি)

১০ জন গ্রাম স্বেচ্ছাসেবক

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সাধারণ প্রশাসনিক অধিদপ্তর

মেমো নং: জিএ/২০০৯ তাং: ১৯শে নভেম্বর, ১৯৭১

বরাবর
সচিব
প্রতিরক্ষা বিভাগ

বিষয়: জোনাল চেয়ারম্যান / জোনাল প্রশাসনিক অফিসার সংক্রান্ত তথ্য

১৮/১১/৭১ তারিখে আপনার প্রেরিত মেমো’র প্রেক্ষিতে জোনাল চেয়ারম্যান ও জোনাল প্রশাসনিক অফিসার সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত একটি দলিল এ পত্রের সাথে প্রেরণ করা হইলো। দেখিয়া এবং যথাযথ ব্যবহার করিয়া বাধিত করিবেন।

সংযুক্ত: ১ (এক)

(ওয়ালিউল ইসলাম)
সহ-সচিব
সাধারণ সেবা
সাধারণ প্রশাসনিক অধিদপ্তর

জোনের নাম

এলাকা জোনাল পরিষদ চেয়ারম্যানের নাম, ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তার নাম, ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর

দক্ষিণ-পূর্ব জোন-১
(সাবরুম) ১. চট্টগ্রাম
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম
৩. ফেণী—নোয়াখালী জেলার অন্তর্ভূক্ত জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরী, বরাবর পোস্টমাস্টার, শান্তির বাজার, জেলা: দক্ষিণ ত্রিপুরা, সাবরুম জনাব এস. এ. সামাদ, বরাবর পোস্টমাস্টার,শান্তির বাজার, জেলা: দক্ষিণ ত্রিপুরা, সাবরুম

দক্ষিণ-পূর্ব জোন-২
(আগরতলা) ১. ঢাকা
২. কুমিল্লা
৩. ফেণী ব্যতিত নোয়াখালী এলাকা জনাব জহুর আহমেদ চৌধুরী, বরাবর শ্রী কেপি দত্ত, ৫/১১, কুঞ্জবন পৌরসভা, আগরতলা, ত্রিপুরা জনাব কে. আর. আহমেদ, বরাবর শ্রী কেপি দত্ত, ৫/১১, কুঞ্জবন পৌরসভা, আগরতলা, ত্রিপুরা

পূর্ব জোন-১

(ধারাইনগর) ১. হবিগঞ্জ
২. মৌলভীবাজার—সিলেট জেলার অন্তর্ভূক্ত
কর্নেল এম. এ. রব, সিও/ওসি, ধর্মনগর থানা, ত্রিপুরা ড. কে. এ. হাসান, সিও/ওসি, ধর্মনগর থানা, ত্রিপুরা

উত্তর-পূর্ব জোন-১
(ডাউকি) ১. সদর
২. সুনামগঞ্জ—সিলেট জেলার অন্তর্ভূক্ত জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজী, নেউক কটেজ, কিটিং রোড, শিলং-১ জনাব এস. এইচ. চৌধুরী, নেউক কটেজ, কিটিং রোড, শিলং-১

উত্তর-পূর্ব জোন-২
(তুরা) ১. ময়মনসিংহ
২. টাঙ্গাইল জনাব শামসুর রহমান খান, বরাবর সেরিকালচার রেস্ট হাউস, গাড়ো পাহাড়, তুরা, মেঘালয় জনাব লুৎফুর রহমান, বরাবর সেরিকালচার রেস্ট হাউস, গাড়ো পাহাড়, তুরা, মেঘালয়

উত্তর জোন

(কুচবিহার) ১. রংপুর জনাব মতিউর রহমান, নরন রঞ্জন রোড, ডাক বাংলো সংলগ্ন, কুচবেহাই জনাব ফয়েজউদ্দিন আহমেদ, নরন রঞ্জন রোড, ডাক বাংলো সংলগ্ন, কুচবেহাই

জোনের নাম অঞ্চল জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের নাম জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তার নাম

ও টেলিফোন নম্বরসহ ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বরসহ ঠিকানা

৭. পঞ্চিম জোন-১ (১) দিনাজপুর জনাব আব্দুর রহিম জনাব এ কাশেম খান

(বালুরঘাট) (২) বগুড়া গঙ্গারামপুর, ডাকবাংলো, গঙ্গারামপুর, ডাকবাংলো,

পো: গঙ্গারামপুর পো: গঙ্গারামপুর

পশ্চিম দিনাজপুর। পশ্চিম দিনাজপুর

৮. পশ্চিম জোন-২ (১)রাজশাহী জনাব আশরাফুল ইসলাম জনাব জে.আই. ভুইয়া

(মালদা ) প্রযত্নে: শ্রী রাম শঙ্কর প্রযত্নে: শ্রী রাম শঙ্কর

স্টেশন, উত্তর বালুচার, স্টেশন, উত্তর বালুচার,

পো: ও জেলা: মালদা। পো: ও জেলা: মালদা।

৯. দক্ষিণ পঞ্চিম জোন-১ (১)পাবনা জনাব এম.এ. রউফ চৌধুরি জনাব শামসুল হক

(কৃষ্ণনগর) (২)কুষ্টিয়া ১০, এইচসি সরকার রোড ১০, এইচসি সরকার রোড

নাদিয়াপাড়া, কৃষ্ণনগর। নাদিয়াপাড়া, কৃষ্ণনগর।

১০. দক্ষিণ পশ্চিম জোন-২ (১)যশোর জনাব ফনি ভূষন মজুমদার জনাব বি.বি. বিশ্বাস

(বনগাঁ ) (২) ফরিদপুর প্রযত্নে: ডিকে বাগচি, প্রযত্নে ডিকে বাগচি,

পূর্বপাড়া রোড, বনগাঁ রেল পূর্ব পাড়া রোড, বনগাঁ

বাজার, পো: বনগাঁ রেল বাজার, পো: বনগাঁ

জেলা: ২৪ পরগণা জেলা ২৪ পরগণা

১১. দক্ষিণ জোন (১) বরিশাল এখনও নির্বাচিত হন নি জনাব এ মোমেন

(বারাসাত) (২) পটুয়াখালি প্রযত্নে: গোবিন্দ বরাক,

(৩) খুলনা বারাসাত, ২৪ পরগণা।

শিরোনাম সূত্র তারিখ

বিভিন্ন সেক্টরে রণ সাংবাদিক নিয়োগের নির্দেশ বাংলাদেশ সরকার

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২১ নভেম্বর, ১৯৭১

নিম্নলিলিক রণ সাংবাদিকগণকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে:

(১) সেক্টর-১

জনাব আব্দুল মঞ্জুর

(২) সেক্টর –২ ও -৩ (আগরতলায়)

জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরি

(৩) সেক্টর-৪

জনাব হারুন-উর-রশিদ

(৪) সেক্টর-৫

জনাব জালালউদ্দিন আহমেদ

(৫) সেক্টর-৬

জনাব আব্দুল্লাহ আল ফারুক

(৬) সেক্টর-৭

জনাব এস.এ. নবি

(৭) সেক্টর-৮ ও ৯

এখানকার স্টাফদের দিয়ে কাভার করাতে হবে।

৭ নম্বর সেক্টর ছাড়া বাকি সব প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই যোগ দিয়েছে।

সি-ইন-সি জানার জন্য দেখে নিতে পারেন।

(এ সামাদ)

প্রতিরক্ষা সচিব

শিরোণাম সূত্র তারিখ

দেশবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ-এর ভাষণ বাংলাদেশ সরকার ২৩ নভেম্বর, ১৯৭১

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তাজউদ্দিন আহমেদ,

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, প্রচারিত: ২৩ নভেম্বর, ১৯৭১

আমার প্রিয় দেশবাসী ও কমরেডগণ,

সেপ্টেম্বরে আপনাদের উদ্দেশ্যে আমার ভাষণের পর এখনও পর্যন্ত মুক্তির সংগ্রাম আরও অনেক সাফল্য পেয়েছে। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধের বলিষ্ঠতা ও প্রবলতা আজ আমাদের শত্রু-মিত্র সবাই একইভবে স্বীকার করছে। মুক্তি বাহিনী আজ যে কোনো সময় শত্রুর ওপর আঘাত হানতে পারে এবং তাদের নিরাপত্তার প্রাণকেন্দ্রকে চমকে দিতে পারে। জল, স্থল ও আকাশে মুক্তি বাহিনী দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করেছে এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে অকার্যকর করে দিয়েছে। বাংলাদেশের জেলার পর জেলায় শত্রুর পদচিহ্নকে মুছে দিয়েছে। যত বেশি অঞ্চল কার্যকরভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধীন আসছে, জন-মাল ও মনোবল হারিয়ে শুত্রু ক্রমেই হতাশায় উন্মাদ হয়ে উঠছে।

যুদ্ধের ময়দানে একের পর এক বিপর্যয়ে এবং বাংলাদেশর পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়তে থাকায় ইসলামাবাদের শয়তানেরা আজ হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার শঙ্কা ও ভয়ে আজ তারা শঙ্কুচিত। তরা শুধু বাংলাদেশর মানুষের অপরিমেয় ভোগান্তিই বয়ে আনেনি, পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতক ধ্বংস ও রাঝ=জণেতিক বিভাজনও ডেকে এনেছে। তারা এখণ চেষ্টা করছে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বলে চালিয়ে এটাকে আন্তর্জাতিক সঙ্কটে রূপ দেওয়ার। এটার মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য হলো, একদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কঠিন লড়াই থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া ও মুক্তি বাহিনীর হাতে তাদের বিপর্যয়ের কথা গোপন করা এবং, অনদিকে তাদের রক্ষকদের হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করা। তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হবে না, বরং তাদের নির্বুদ্ধিতা ও অপরাধগুলো আর নির্বুদ্ধিতা ও অপরাধের দিকে টেনে নেবে এবং চূড়ান্ত আত্ন-ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।

আত্ম-ধ্বংসের জন্য ক্ষমতাশীন জান্তার পরিকল্পনা যেটাই হোক বা উপমহাদেশে শক্তি প্রদর্শনের যত আয়োজনই করা হোক, বাংলাদেশের মানুষের কাছে একমাত্র মানানসই আয়োজন স্বাধীনতা। আমাদের মুক্তির ইচ্ছা ও এটাকে সংহত ও চিরস্থায়ী করার সামর্থ্যের পরীক্ষা প্রতিদিনই দিতে হচ্চে ইতিহাসের নির্মম যুদ্ধে। হানাদার বাহিনীর ধ্বংস ও বাংলাদেশ থেকে তাদের বিতারিত করে মুক্তির পরিকল্পনাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। মানব সম্প্রদায়ের জন্য ইতিহাসের শিক্ষা যদি কিছ থেকে থকে, সেটি হলো গণমানুষের ইচ্ছাকে কখনোই হেলাফেলা করা যায় না এবং স্বাধীনতার সংগ্রামকে এমনকি বৈশ্বিক দৈত্যের শক্তিও ছাড়িয়ে যেতে পারে না।

যথন কিছু পশ্চিমা জাতি এশিয়ায় গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি করতে পারেনি এবং যথন তারা মানুষ হিসেবে মানুষের মর্যাদার চেয়ে স্থায়িত্বের ধারণার প্রতি বেশি অনরাগী, তখন সেটি যথেষ্টই বাজে। কিন্তু যখন তাদের একজন প্রস্তাব দিল যে ভারতের উচিত বাংলাদেশর উস্বাস্তদের অর্থের বিনিময়ে গ্রহণ করা, আমরা আতঙ্কিত ও অপমানিত হয়েছি। এই প্রস্তাবই গণহত্যার প্রভাব ও জঘন্য অন্যায়ের পরিস্থিতিকে ঠান্ডা করার পায়তারা পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দেয় এবং ভবিষ্যত গণহত্যা ও বড় আকারের অভিগমণকে আগাম উৎসাহ দেয়।

পাকিস্তানিদের নির্যাতনে উৎপাটিত ক্ষতিগ্রস্তদের সমস্যা টাকা পয়সা দিয়ে নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয় । নিজের দেশে সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে ফিরে আসা তাদের জন্মগত অধিকার এবং তারা অবশ্যই অদূর ভবিষ্যৎএ ফিরবেন ।

আর রাষ্ট্রপতি নিক্সন এর হটাত উপমহাদেশে সত্য উদঘাটন মিশন পাঠানোর উদ্দেশ্য কি ? উনি এমন কি জানতে চান যা ওনার দেশের কুটনৈতিক ও আইনপ্রনেতারা এখনো ভালমত জানে না ? যে প্রশাসন এর তিনি প্রধান সেটি তার সময়ের সবচেয়ে নৃশংস অপরাধ এর ভয়াবহতা ব্যক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে যেমন প্রায় দশ লক্ষ বাংগালীকে তাদের ঘর থেকে পরিকল্পিতভাবে সমূলে উৎপাটন। এই পদক্ষেপ এর মাধ্যমে U.S সরকার যাই অর্জন করার চেষ্টা করুক না কেন , দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং আমাদের মনমত সমাজ তৈরীর দৃঢ়সংকল্পে তা কোন পার্থক্য গড়ে দেবে না ।

রক্ত এবং অশ্রু ত্যাগ করে আমরা যে সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম তা কাছে চলে এসেছে । কিন্তু আমাদের সামনের ত্যাগ, মৃত্য এবং কষ্টের কথা মনে রাখতে হবে । যেহেতু স্বাধীনতা একটি অব্যয় ধারনা এবং আমরা জানি না যুদ্ধের সময় এবং শান্তির সময় এর ব্যবহার কেমন । তাই শত্রুকে পুরোপুরি শেষ করার সাথে সাথে আমাদের এমন শপথও নিতে হবে যে আমরা এমন একটা সুন্দর সমাজ তৈরী করব যার আমাদের শহীদরা রক্ত ঝরিয়েছেন । যে যুবকেরা শহর এবং গ্রামে বৈদেশিক দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর জন্য লড়ছে তাদের লড়াই কিন্তু অন্যায় এবং অবিচার এর বিরুদ্ধেও । বর্তমান সংগ্রাম শেষ হবে যখন আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিশ্রুত ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক-সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরী করতে সক্ষম হব । রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের সকল অংশ যেখানে নাগরিকদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় এমন এক বাংলাদেশের সপ্ন দেখছে আজ সবাই ।নাগরিকরা যে স্বপ্নে নিজ দায়িত্বে যোগ দেবেন এবং এই স্বাধীনতাকে পরিপূর্ণ করবেন ।

বঙ্গবন্ধু , বাঙ্গালীদের নেতা এখনো পাকিস্তানি জেনারেলদের হাতে বন্দী । আমরা বিশ্বাস করি সামরিক জান্তা তাকে তখনই ছাড়বে যখন তাদের বাহিনীর এ দেশ থেকে পালানোর সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে ।আমরা এখন এটাই করতে পারি এবং আমাদের পরিকল্পনাও এটাই । আমরা শত্রুকে মাটি ,পানি এবং আকাশে আক্রমণ করে জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে সত্য স্বীকার করতে বাধ্য করব ।

আমি বাংলাদেশ এর মানুষকে এই স্বাধীনতা যুদ্ধকে দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি । সকল কর্মকর্তা ,রাজাকার , পুলিশ যারা বিবেক এর বিরুদ্ধে গিয়ে পাকিস্তানিদের সাহায্য করেছেন তাদের প্রথম সু্যোগেই বিদ্রোহ করার আহ্বান জানাচ্ছি । আর যারা দেশের সাথে বিশ্ব্বাসঘাতকতা করে ওদের সাহায্য করেছে তাদের শেষবারের মত এই কাজ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি ।

এই মুহূর্তে হাজার হাজার গেরিলা আমাদের শত্রুকে ঘিরে রেখেছে এবং শত্রুদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে । বাঙ্গলাদেশের সকল লাগরিককে মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দিতে হবে যাতে তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে শোষনকারীদের উপর চূড়ান্ত আঘাত হানা যায় । আমি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা , আমাদের মুক্তিবাহিনী এবং বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই কারন তারাই আমাদের এই সাফল্য এনে দিয়েছেন ।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!