You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ সরকারের পয়াকিস্তানের সাথে রাজনৈতিক স্মঝোতা বিরোধীতা সংক্রান্ত সংবাদ বাংলাদেশ সরকার, বহির্বিশ্ব প্রচার বিভাগ ১৭ নভেম্বর, ১৯৭১

 
রাষ্ট্রপতির চার দফা বাতিলের সতর্কবার্তা

বীর মুক্তিবাহিনীর নিশ্চিত বিজয়ের প্রাক্কালে যে পাকিস্তানের বন্ধুরাষ্ট্রের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা করা হবে, এই বিষয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে তেমন কোন সন্দেহ নেই। কিছু নির্দিষ্ট পশ্চিমা দেশের তথাকথিত সতর্কবার্তার কারণে এসব অপচেষ্টা প্রায় অনিবার্য।

বাংলাদেশী নেতৃবৃন্দ জুনের শুরুর দিকেই এমন একটি অপচেষ্টার কথা নির্ভুল ধারণা করতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পরিষ্কার করেই জানিয়েছেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে সমঝোতার কথা তখনই চিন্তা করা হবে যদি তার দেয়া নিম্নবর্ণিত প্রাক-শর্তগুলো মেনে নেয়া হয়।

আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ এবং পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জন্তার মাঝে রাজনৈতিক সমঝোতা সৃষ্টির জন্যে পাকিস্তানের বন্ধুরাষ্ট্রগুলো নতুন নতুন সতর্কবার্তা পাঠিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির চারটি প্রাক-শর্তই এসব হুঁশিয়ারি প্রতিহত করার জন্যে এবং ঐসব অভিলাষী চিন্তাবিদদের জবাব দেয়ার জন্যে যথেষ্ট।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত খুব পরিষ্কার। অনেকবার বলা হয়েছে যে, পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া আর কিছুই আমাদের লক্ষ্য নয়। স্বাধীনতা ভিন্ন অন্য যেকোনো প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দ্রুত বাতিল করে দেয়া হবে।

১৯৭১ এর ১৪ই নভেম্বর বাংলাদেশ সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রসমূহ জানিয়েছে যে, ইয়াহিয়া খানের সাথে সংলাপের ব্যাপারে বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছে যে, এ বিষয়ে কোন প্রান্ত থেকেই রাজনৈতিক সতর্কবার্তার কোন প্রয়োজন কিংবা সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সরকার অথবা নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের কোন অংশের সাথেই সাক্ষাতের জন্য কোন বিদেশী উৎসের সংস্পর্শে নেই।

এ ধরণের খবর শুধুমাত্র ব্যবহার করা হচ্ছে শুধুমাত্র বর্বর পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধরত মানুষদের মনোযোগ সরানো এবং বিভ্রান্ত করার জন্যে। বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্বজুড়ে তাদের সকল সমর্থকদের এসব বিভ্রান্তিমূলক খবরে গুরুত্ব না দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে সমঝোতার ব্যাপারে চারটি প্রাক-শর্ত ইতোমধ্যেই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঘোষণা করেছেন। শর্তগুলো হচ্ছেঃ
১) বাংলাদেশকে স্বাধীন এবং সর্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া,
২) বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী বাহিনী অপসারণ,
৩) শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি এবং
৪) বাংলাদেশে সামরিক নৃশংসতার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ এবং ২৫শে মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত চলা বিদ্যমান অসমতার ক্ষতিপূরণ।

বীর মুক্তিবাহিনী ইয়াহিয়াকে অস্ত্রের ভাষায় প্রত্যুত্তর দিয়ে যাচ্ছে, যা সে ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চ শুরু করেছিল এবং তারা এমনটা চালিয়ে যাবে যতদিন বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন না হবে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!