You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সুত্র তারিখ
ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে মুক্তিফৌজের জন্য ত্রাণ ও চিকিৎসা সাহায্য সংক্রান্ত আলোচনা রিপোর্ট। বাংলাদেশ সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১৩ নভেম্বর, ১৯৭১ . .

 
কর্নেল. লুথরার সঙ্গে চিকিৎসা ও ত্রাণ সামগ্রী পুনরায় সরবরাহ সংক্রান্ত আলোচনা

আজ সকালে কর্নেল লুথরার সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয় এবং নিম্নলিখিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন:
১। মুক্তিবাহিনীর নিকট অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ।
২। মুক্তিবাহিনী ও মুক্ত এলাকায় ঔষধাদি সরবরাহ।
৩। আরোগ্যালয়ের জন্য আবাসন।
৪। মন্ত্রিপরিষদ অর্পিত গোপন কার্যক্রম।

১। মুক্তিবাহিনীর নিকট অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ:
উনিশটি অ্যাম্বুলেন্স এপর্যন্ত আহৃত হয়েছে এবং বিভিন্ন সেক্টরে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এইসব অ্যাম্বুলেন্সের আগমন এবং বহির্গমন সঠিক ও নির্দিষ্ট অবস্থান আর তার মেরামতকারী ও ব্যাবহার কারিদের তথ্য যা আগামীকাল আমরা জানবো। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে কর্নেল লুথরার সাথে আগেই স্বাগতিক এবং আমাদের সেক্টর কমান্ডারগন মিলিত হয়েছিলেন তুরা ও শিলংয়ে। আলোচনায় উভয় সেক্টর কমান্ডারগণ একমত হন যে যদি ২টি করে অ্যাম্বুলেন্স প্রতিটি স্থানে দেয়া হয়, তাহলে তারা জরুরী অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে. এই ৪টি অ্যাম্বুলেন্স ইতিমধ্যে ২টি তুরা ও ২টি শিলংয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছেছে– কর্নেল লুথরা এবং সেক্টর কমান্ডারদের নির্দেশনা অনুযায়ী। সেগুলো আসলে আমাদের হেড কোয়ার্টার থেকে প্রেরিত হয়, আমাদের সেক্টর কমান্ডারদের কাছে ওষুধ বহনের জন্য।

শিলং থেকে ইতিমধ্যে একটি প্রাপ্তি রসিদ নিয়ে এক ব্যক্তি ফিরে এসেছে এবং অন্য ব্যক্তি এইমাত্র শিলিগুড়ি থেকে ফিরে এসেছে আমাদের ৬নং সেক্টর কমান্ডার ওষুধ পৌঁছে দিয়ে, আমি অ্যাম্বুলেন্সের সংবাদ জানা মাত্রই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব কর্তৃপক্ষকে সে সম্পর্কে অবহিত করবো।

২। ঔষধ:
কর্নেল লুথরা কর্তৃক শিলিগুড়ি, গৌহাটি, শিলং এবং আগরতলায় অবস্থিত তাদের আঞ্চলিক স্টোর থেকে ঔষধাদী সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যা আমাদের সেক্টর কমাডারগণ তাদের সেক্টর মেডিকেল অফিসারের চাহিদানুযায়ী মাসিক ভিত্তিতে পাবেন। যদি কোনো অসুবিধা হয়, তিনি এই বিষয়টি আমার কাছে রিপোর্ট করে সরবরাহ সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিবেন।

যেমন রৌমারী হাসপাতালের ডিসপেনসারিটি-তে একটি অতীব-জরুরী সরবরাহ ব্যবস্থা দিয়ে শুরু করা হয়েছিলো, এই ঔষধাদি এক সপ্তাহের মধ্যে উপলব্ধ করা হয়েছে, যা সেখানকার স্থানীয় এম.এন.এ. জনাব সাদাকাত হোসেন এর উপস্থিতিতে সম্পন্ন করা হয়।

অন্যান্য মুক্তাঞ্চলের ক্ষেত্রে, আমাদের রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের সব মুক্তাঞ্চল গুলোতে একটি ডিসপেনসারি ২৫,০০০ জনগোষ্ঠীকে ঔষধ সরবরাহের জন্য ভিত্তিকরে তৈরী করা হয়েছে। এসব ঔষধাদি আমাদের নিয়োজিত ডাক্তারদের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা হবে।

৩। আরোগ্যালয়ের জন্য আবাসন:

আমি কর্নেল লুথরাকে অনুরোধ করেছি যে পশ্চিমবঙ্গের যেকোন কোথাও মুক্তিবাহিনীর আহত রোগীদের আরোগ্যলাভের জন্য উপযুক্ত আবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য, এক স্থানে হউক বা বিভিন্ন স্থানে, যেখানে ৩০০ রোগী ধারন করতে পারে। এর সম্পূর্ণ খরচ হরিয়ানা-বাংলাদেশ দ্বারা বহন করা হবে

জনাব গুলজারী লাই নন্দ সভাপতিত্বে গঠিত মুক্তি সহায়ক সমিতির কোষাধ্যক্ষ এম.কে. ভিমানীর মাধ্যমে।

৪। মন্ত্রিপরিষদের অর্পিত গোপন কার্যক্রম:
আমি কর্নেল লুথরার সাহায্যে কাজ করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে থেকে গোপন নির্দেশ পেয়েছি। তিনি আমাকে নির্দেশ দেন সামাজিকর্মীদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের একটি স্থানে সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে। আমি তাকে অনুরোধ করেছি এ জন্য তহবিল ও পরিবহন আমার অধিনে দিতে যাতে বিভিন্ন ক্যাম্পে সামাজিককর্মীদের পাঠানো যায়। তিনি মেডিকেল রিলিফ এর জন্য তার পরিচালক কে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এ ব্যাপারটির পিছনে লেগে থাকবো। আমি চিকিৎসাদির জন্য স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা করেছি।

অবশেষে কর্নেল লুথরা ৫নভেম্বর থেকে ইস্টার্ন সেক্টরের সীমান্তে যাচ্ছেন। আমি প্রস্তাব করেছি যে আমাকে তাদের উপহারকৃত ঔষধাদির উৎসের প্রকৃত সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তার সঙ্গে যেতে হবে।
(ডাঃ টি. হোসেন)
সচিব,
জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ

নথি নং এইচএস /৩৪৮(১২), তাং. ১৩.১১.৭১. . .
প্রতিলিপি প্রেরণ:
১। পি এস ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির নিকট,
২। পি এস প্রধানমন্ত্রীর নিকট,
৩। পি এস পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নিকট,
৪। পি এস অর্থমন্ত্রীর নিকট,
৫। পি এস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট,
৬। সি-ইন-সি,
৭। কর্নেল লুথরা,
৮। মন্ত্রিপরিষদ সচিব,
৯। পররাষ্ট্র সচিব,
১০। প্রতিরক্ষা সচিব,
১১। সাধারণ প্রশাসন সচিব,
১২। অর্থসচিব।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ

বাংলাদেশ সরকারের অক্টবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ব্যয় বরাদ্দের হিসাব সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশ সরকার কেবিনেট ডিভিশন ১৪ নভেম্বর ১৯৭১

গোপনীয় সবচেয়ে জরুরী

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
(মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ)

মেমো নং…../ক্যাব তারিখ, ১৪ নভেম্বর, ১৯৭১।

বরাবর
জনাব ক. আ. জামান,
সচিব,
অর্থ মন্ত্রণালয়।

বিষয়ঃ অক্টোবর, ১৯৭১ থেকে নভেম্বর, ১৯৭১ সময়কালের বাজেট।

রেফঃ আপনার মেমো নং FIN/39/71/430 তারিখ ১৩.১১.৭১

সোমবার(১৫ নভেম্বর, ১৯৭১) অনুষ্ঠেয় মন্ত্রীসভার মিটিংয়ের আলোচ্যসূচিতে বাজেটকে অন্তর্ভুক্তির সময়, প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন যে, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির কাছে বাজেটের কাগজপত্র পেশ করার আগে, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীবর্গ, আমাদের নিশ্চিত করা উচিত যে সরকারের সব মন্ত্রনালয়, বিভাগ ও সংস্থার দাবি বাজেটে প্রতিফলিত হয়। বাজেটের সারাংস বিবেচনা করলে দেখা যায় যে মন্ত্রনালয়, সংস্থাগুলোর বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রীসভা ও প্রধানমন্ত্রীর করা আগের কিছু বরাদ্দ ও অনুমোদন বাজেটে উল্লেখ করা হয়নি। আমার মনে হয় অক্টোবর ১ থেকে শুরু হওয়া সময়সীমার মধ্যে আগের অপরিকল্পিত অনুমোদন গুলোও বাজেটে তুলে ধরা উচিত। আমি নিম্নক্ত ঘটনা গুলো উল্লেখ করতে পারিঃ

(ক) ৭ অক্টোবর, ১৯৭১ অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে তারা ডিফেন্স মেডিকেল সার্ভিসের(স্বাস্থ্য) জন্য ১০০০০০/০০(দশ লাখ) টাকার বরাদ্দ অনুমোদন দেন (সারাংস অফিস মেমো নং 246(6)/ Cab. তাং অক্টোবর ২৫, ১৯৭১ এর মাধ্যমে আপনার কাছে পাঠানো হয়েছে)।

(খ) একই বৈঠকে মন্ত্রীসভা সিভিল মেডিকেল সার্ভিস স্বাস্থ্য এর জন্য ৫,৫০,০০০/০০টাকার আর একটি বরাদ্দের অনুমোদন দেন।(সারাংস অফিস মেমো নং 247(4) Cab. তাং ২৫.১০.১৯৭১ এর মাধ্যমে আপনার কাছে পাঠানো হয়েছে)।

(গ) মন্ত্রীসভা ৩০শে অক্টোবর ১৯৭১ এ অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে শহিদদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি ও পঙ্গু সৈনিক ইত্যাদির জন্য ৫০,০০০ টাকার অনুমোদন দেন। সারাংস অফিস মেমো নং 294(3)/Cab. তাং ১.১১.১৯৭১ এর মাধ্যমে আপনার কাছে পাঠানো হয়েছে।

(ঘ) মুক্তিবাহিনীর শীত বস্ত্রের জন্য মন্ত্রীসভা ৩০শে অক্টোবর, ১৯৭১ অনুষ্ঠিত বৈঠকে ৭,০০,০০০ (সাত লাখ) টাকা সমমুল্যের একটি অনুমোদন দিয়েছিল। (সারাংস অফিস মেমো নং 294(5)/Cab. তাং ১.১১.১৯৭১ এর মাধ্যমে আপনার কাছে পাঠানো হয়েছে)।

(ঙ) ৩০শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত একই বৈঠকে মন্ত্রীসভা যুব ও রিসেপশন ক্যাম্পের ছেলেদের জন্য শীত বস্ত্র সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন। (সারাংস অফিস মেমো নং 294(5)/Cab. তাং ১.১১.১৯৭১ এর মাধ্যমে আপনার কাছে পাঠানো হয়েছে)।

(চ) ৩০শে অক্টোবর, ১৯৭১ মন্ত্রীসভার এক সিদ্ধান্তে জেসিও এবং অন্যান্য পদের ভাতা বাড়ানো হয় যা ১লা নভেম্বর ১৯৭১ থেকে কার্যকর। (সারাংস অফিস মেমো নং 297(5)/Cab. তাং ১.১১.১৯৭১ এর মাধ্যমে আপনার কাছে পাঠানো হয়েছে)।

(ছ) ১লা নভেম্বর, ১৯৭১ এ অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে শীতবস্ত্রের জন্য অগ্রীম অর্থ অনুমোদন এবং ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের জন্য বিনামুল্যে উলের সয়েটার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।(সারাংস অফিস মেমো নং 316(2)/Cab. & 313 (2)/Cab. তাং ৩.১১.১৯৭১ এর মাধ্যমে আপনার কাছে পাঠানো হয়েছে)।

(জ) ৭ নভেম্বর ১৯৭১ এ প্রধানমন্ত্রী সাংগঠনিক সেট-আপের অনুমতি দেন এবং পরিকল্পনা বিভাগের মাধ্যমে তিন মাসের জন্য ১,০০,০০০(এক লাখ) টাকার বাজেট পেশ করা হয়।এটা বুধবার(১০.১১.৭১) সেক্রেটারি কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয় এবং সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

আমার মনে হয় উপরে উল্লেখিত (ক), (গ), (ঘ) এবং (চ) অনুচ্ছেদের বিষয় গুলো প্রতিরক্ষা অধিদপ্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই বিষয়গুলো হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপ-শিরোনামে দেখাতে হবে অথবা প্রতিরক্ষা অধিদপ্তর নামে একটি আলাদা বিষয় হিসেবে দেখাতে হবে। অবশ্যই, প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিজেদের আবর্তনশীল ব্যয়ের জন্য ৩৩,০০০/০০ টাকার দাবি খুব বেশি কিছু যোগ করবে না।

উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে এবং প্রধানমন্ত্রীর পর্যবেক্ষনের আলোকে মন্ত্রনালয় ও সংস্থার সেই সকল চাহিদা বাজেটে উল্লেখ করতে হবে। আমি আপনাকে অনুরোধ করব বাজেট পুনর্গঠন করতে এবং সেটি আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে অর্থাৎ সোমবার, ২২শে নভেম্বর, ১৯৭১এ পেশ করুন।

(এইচ. টি. ইমাম)
মন্ত্রীসভা সচিব
১৪.১১.৭১

মেমো নং ……. (3)/Cab. তারিখ ১৪ই নভেম্বর, ১৯৭১

কপি পাঠানো হয়েছেঃ ১. মৌখিক নির্দেশাবলীর প্রেক্ষিতে তথ্যাবলীর সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

২. অর্থমন্ত্রনালয়।

৩. প্রতিরক্ষা সচিব।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!