You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়কের বক্তৃতা এশিয়ান রেকর্ডার অক্টোবর ২২-২৮ , ১৯৭১ ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

 
যুদ্ধ পরিস্থিতি বিষয়ে স্বাধীনতার সর্বাধিনায়কঃ

মুক্তিবাহিনীর প্রধান, কর্নেল এমএজি ওসমানী, ২৫শে সেপ্টেম্বর ঘোষনা দেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হলো সততা এবং ন্যায়-বিচার রক্ষার যুদ্ধ এবং যেকোনো মূল্যে দেশকে স্বাধীন করার জন্য জনগনের দৃঢ় সংকল্পের প্রতিধ্বনি ।
স্বাধীনতা সংগ্রামের ছয়মাস পূর্তিতে এক প্রচারণায় তিনি বলেন , বাংলাদেশে চলমান যুদ্ধ একটি জাতীয় যুদ্ধ যেখানে সমগ্র জাতি তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একতাবদ্ধ হয়েছে । শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি , জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রত্যাহার ব্যতিত বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কোনো সমাধানই আসবে না।
জনগনকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন , তোমরা বাংলাদেশের যেখানেই থাকো না কেন , নদী, বিল, মাঠ প্রত্যন্ত গ্রাম, মহাসড়কে, রাস্তায়, গ্রামের বাজারে , শিল্প কেন্দ্রে , শহর ও নগরে , যা পাবে তাই নিয়ে শত্রুকে আক্রমন করো , কঠিনভাবে আঘাত করো , ধ্বংস করো শত্রুকে। তার অস্তিত্বকে সমূলে ধংস করো ।
ইতিমধ্যেই একটি খবর খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিলো যে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার এটাই প্রমান যে এখন ইন্ডিয়ান বর্ডারসহ ২২৯টি ঘাঁটির মাঝে ৫৪টির বেশী ঘাঁটিতে মানুষ নেই । ১৭৫টি ঘাঁটিই তারা পরিত্যাগ করেছিলো ।
তাদের নিয়ন্ত্রনাধীন স্থানগুলতে , এক কোম্পানি কিংবা দুই-এক প্লাটুন করে তারা উপস্থিত ছিলো।
এটি বিভিন্ন অপারেশনে মুক্তিবাহিনীর নিখুঁত পরিকল্পনা এবং নির্ভুলতার ফলাফল । পৃথক পৃথক দলে এলোমেলো আক্রমনের পরিবর্তে মুক্তিবাহিনী এখন স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে, যেমন : সড়ক, সেতু, রেললাইন এবং পাকিস্তানি সৈন্যদের ঘাঁটি আছে এমন সব স্থানে সুপরিকল্পিত কৌশল অনুযায়ী কাজ করছিলো ।
গেরিলা যুদ্ধের নতুন কৌশলে ছিলো মাইন ও বিস্ফোরক ব্যবহার এবং জাহাজে ঝটিকা আক্রমণ । প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন পশ্চিম পাকিস্তানি হতাহত হচ্ছিলো ।
বর্ষা মৌসুম পরবর্তী অপারেশনগুলোর পরিকল্পনা নিয়ে মুক্তিবাহিনী গভীর চিন্তাভাবনা করছিলো । এটা স্বীকৃত যে বৃষ্টির পরিসমাপ্তি পশ্চিম পাকিস্তানিদের কৌশলগত সুবিধা দেবে । তারা আরও তৎপর হয়ে উঠতে পারবে এবং তাদের বৃহৎ কনভয়গুলোকে চলাচল করাতে সক্ষম হবে । বিমানপথের ব্যবহারও তারা বৃদ্ধি করতে পারে ।
মুক্তিবাহিনী , যারা নিজেদের অর্জনকে দৃঢ় করেছে , মূল্যবান স্থানীয় সমর্থনের কারনে প্রাথমিকভাবে অপারেশন চালাতে পারবে। ট্যাংক এবং বিমান হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকাটা তাদের জন্য অসুবিধাজনক হবে যা দ্রুত সমাবেশ ও ছড়িয়ে পড়া এবং গেরিলা আক্রমনের মাধ্যমে কিছুটা সমাধান করা সম্ভব।
গেরিলা বাহিনী ইতিমধ্যেই তার প্রমান রেখেছে – বন্দর কার্যক্রমে মন্থরতা , জাহাজগুলোতে অতিরিক্ত প্রহরা , অন্ধকারে সৈন্যদের চলাচলে অনাগ্রহ , অফিসগুলোতে কম উপস্থিতি (বড়জোর ২০ শতাংশ), অস্ত্র তৈরী কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং চা ও পাটের ব্যবসায় স্থবিরতা ।
এগুলো এবং চলমান শরণার্থী-প্রস্থান প্রমান করে যে , বেসামরিক শাসনব্যবস্থায় ফেরত যাওয়া পরিস্কার ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয় । পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদলের পাইকারি লুটপাট , হত্যা, ধর্ষন এবং খুন এই বিশ্বাসকে সমর্থন করছে ।
প্রতিদিন গড়ে ৩০০০০ শরনার্থী ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে , ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যার মোট সংখ্যা ছিলো ৮৯,৮৯,০০০ । খাদ্য, ঔষধ এবং চিকিৎসা সুবিধার অভাবও শরনার্থী হবার অন্যান্য কারণ ।
ত্রিপুরায় শরণার্থী প্রবেশের উপর এক বিশ্লেষণে দেখা যায় , ৩০০০-৪০০০ শরণার্থী প্রতিদিন আসছে । এক পর্যায়ে তাদের অধিকাংশই ছিলো হিন্দু , কিন্তু এখন তাদের প্রায় ৪৫ শতাংশই মুসলমান । অধিকাংশ শরনার্থীই কুমিল্লা এবং সিলেট থেকে আগত যে স্থানগুলো পশ্চিম পাকিস্তান সৈন্যদের বিশেষ হামলার লক্ষ্য ছিলো ।
______________________

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!