শিরোনামঃ | সূত্রঃ | তারিখঃ |
স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরী প্রয়োজনের উপর প্রস্তুতকৃত সরকারী প্রতিবেদন। | বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। | ২১ সেপ্টম্বর ১৯৭১ |
১) প্রয়োজনীয়তাসমুহঃ ১) আহত রোগীদের জন্য পরিবহণঃ নিন্মলিখিত স্থানে অতিস্বত্বর এ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে হবে। (A) সেক্টর নাম্বার ১- হারিয়ানা, শ্রীনগর, ঋষিমুখ এবং বেলুনিয়ায় একটি করে মোট ৪টি। (B) সেক্টর নাম্বার ২-রাজগঞ্জ নদিয়া, সালদানাদি মান্দাবাগে একটি করে মোট ৪টি। (C) সেক্টর নাম্বার ৩- সিমনা হেড কোয়ার্টার অথবা নতুন স্থানে ও সিবরিতে একটি করে কমপক্ষে ২টি। (D) সেক্টর নাম্বার ৪- কামালপুর, কৈলাশ শহর, ধর্ম নগর, বড় পুুঞ্জি, মুকিতাল, জালালপুর ও করিমগঞ্জে একটি করে মোট ৭টি। মসিমপুরের সেক্টর কমান্ডারের কাছে কিছু গাড়ি আছে সেগুলি অতিসত্বর মেরামত করে ৪ নাম্বার সেক্টর কমান্ডারকে হস্তান্তর করা। (E) সেক্টর নাম্বার ৫- শিলং, বালাত ডাউকি, শিলা এবং বাসারাতে একটি করে মোট ৫টি। (F) সেক্টর নাম্বার ৬- (পূর্বের সমীক্ষা) পাটগ্রাম, তিনতুলিয়া, সাহেবগঞ্জে একটি করে মোট ৩টি। ২) ওষুধপত্র আমার সর্বশেষ পরিদর্শনের সময় থেকে দুর্ভাগ্যবশত সদর দপ্তর থেকে ওষুধ পাঠাতে ছয় সপ্তাহ দেরি হয়েছে এবং এই ওষুধের স্বল্পতা-অপ্রতুলতা সবজায়গায় অনেক দুর্ভোগ ঘটিয়েছে। আমি বিভিন্ন উৎস থেকে উপহারস্বরূপ ওষুধ সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালিয়ে ৬০০০০ রুপির ওষুধ সংগ্রহ করতে পেরেছি যেগুলি ইতোমধ্যে বিভিন্ন সেক্টরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু জরুরিভিত্তিতে আরো এক লক্ষ রুপিরও বেশি মূল্যের ওষুধ ক্রয় করে তালিকা অনুযায়ী বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো উচিত। অসংখ্য কোয়ার্টারে আমি হাত পেতেছি কিন্তু অধিকাংশ দাতার অজুহাত-তালবাহানা আমাকে হতভম্ব করেছে। আরো শোচনীয় বিষয় হলো বাংলাদেশ রেড ক্রসের মত আমাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সহযোগিতা করছেনা ফলে মুক্তি বাহিনীর নামে আমাদেরকে ওষুধ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি যে আমাদের সকল এজেন্সিগুলোকে দ্রুততার সাথে প্রাপ্ত সকল উপহারসামগ্রিগুলো সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেয়া উচিত যাতে আমরা সুষম বন্টন করতে পারি। জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ক্রয়ের জন্যে অন্তত ১০০০ রুপি প্রত্যেক সেক্টর কমান্ডারের হাতের কাছে রাখতে হবে। জরুরী প্রয়োজন মেটাতে মিঃ এম কে ভিমানি আগরতলার করিমগঞ্জ ও শিলঙয়ের জন্যে ৫০০০ রুপি মুল্যের ওষুধ দান করেছেন। আমার অনুরোধে ঐ ওষুধ কিনা হয়েছিল। ইতোপূর্বে তিনি সদর দপ্তরে ৭০০০ বেশি রুপির ওষুধ প্রদান করেছিলেন। অন্যান্য উপহারসামগ্রীর সাথে ঐ ওষুধও সব সেক্টরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মেডিকেল স্টাফ (১) স্টাফ লিডার ডা: শামসুল হক কর্মরত ছিলেন ১ং সেক্টরে। তিনি একজন সিনিয়র অফিসার। আমি তাঁকে তাঁর হেডকোয়ার্টার সহ ১,২ও ৩ নং সেক্টরের সার্বিক দায়িত্বে আগরতলা নিয়োগ করেছি। প্রতিটি সাব-সেক্টরের চাহিদা ও সরবরাহের সমন্বয় সাধন করবেন তিনি। সমবন্টনের জন্য হেডকোয়ার্টার থেকে প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন ও সরবরাহ গ্রহণের কেবলমাত্র তিনিই আমার নিকট দায়ী থাকবেন। (২) বিলোনিয়ায় A.D.S স্থাপনের জন্য একজন ডাক্তার রয়েছেন। ১নং সেক্টরের আঞ্চলিক মেডিকেল অফিসারের সাহায্যে তিনি সেটা করবেন। (৩) ১,২ও ৩ নং প্রতিটি সেক্টরে একজন করে অফিসার ইনচার্জ রয়েছে। ৩নং সেক্টর কমাণ্ডার আরো একজন ইনচার্জ দাবি করেছেন। (৪) করিমগঞ্জ মুক্তিবাহিনী হাসপাতালে একজন ডাক্তারকে তার হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে ৪নং সেক্টরের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে। (৫) শিলং এ জরুরিভিত্তিতে একজন ডাক্তার প্রয়োজন। আমি দু’য়েক দিনের মধ্যে একজনকে পাঠানোর চেষ্টা করছি। (৬) কিছু একনিষ্ঠ সিনিয়র মেডিকেল ছাত্র প্রতিটি সাব-সেক্টরে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছে। আমার উদ্দেশ্য যত দ্রুত উপযুক্ত ডাক্তার পাওয়া যায় প্রতিটি সাব- সেক্টরে একজন করে এম.বি.বি.এস ডাক্তার নিয়োগ করা। CONVALESCENT HOMES: আমার অনুনয়ে ডা: ত্রিগুনা সেনের পরিচালনায় মি. এম. কে. ভামানী এই সময় আগরতলায় একটি কনভালেসেন্ট হোম(৪০ শয্যাবিশিষ্ট; ১৪.৯.৭১ এর মধ্যে ক্রমান্বয়ে ১০০শয্যা) চালু করেছেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো করিমগঞ্জ কিংবা শীলচরে একটা হোম খোলার কিন্তু উপযুক্ত স্থান বা সাহায্যকারীর অভাবে হয়ে উঠেনি। শিলংয়ের বিভাগীয় কমিশনারের স্ত্রী মিসেস এম. দাস এর তত্ত্বাবধানে শিলংয়ের কনভালেসেন্ট হোম খুব ভালোভাবে কাজ করছে। কনভালেসেন্ট হোমগুলোর পরিচালনা কমিটি পঞ্চপুরুষ দ্বারা বিশ্বস্ত হয়েছে যার ৩জন স্থানীয় বিশিষ্ট নাগরিক এবং ২জন বাংলাদেশি প্রতিনিধি। আমার আগের মন্তব্যে আমি তুরা ও কুচবিহারের কনভালেসেন্ট হোমগুলো সম্পর্কে জ্ঞাপন করেছি। পশ্চিমবঙ্গে বিশেষত কলকাতা এবং বালুরঘাটে আরো কিছু কনভালেসেন্ট হোম খোলার কথা চিন্তাধীন রয়েছে। এসব হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে লাখ টাকা খরচ হবে এবং মাসিক খরচ পড়বে প্রায় ৫০০০০/- মি. ভিমানী এগুলো পরিচালনার জন্য হরিয়ানা বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী সহায়ক সমিতির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।অ্যাম্বুলেন্স সমস্যা: দুইমাস আগে আমি দিল্লি গিয়েছিলাম, আমি মিস. Padmaja Naido এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে বাংলাদেশ অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিটির পক্ষ থেকে ৩৬টি অ্যাম্বুলেন্স প্রদানের অনুরোধ জানাই। এখনো তার কাছ থেকে কোনো সংবাদ পাইনি। আমি তাকে একটি অনুস্মারক পাঠাচ্ছি। এদিকে, ড: সেন এবং মি. ভিমানীর কথা থেকে বুঝতে পারি যে, তারা আমাদের জন্য মুম্বাইয়ের গভর্নরের কাছ থেকে ২টি, ভুটানের মহারাজার কাছ থেকে ৩টি এবং হরিয়ানা থেকে ৩টি অ্যাম্বুলেন্স আহৃত হয়েছেন। চার নং সেক্টরে কমপক্ষে চারটা গাড়ি ছিলো যা এ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যেতো ।
আমি বুঝেত পেরেছিলাম কিছু এ্যাম্বুলেন্স বারাকপুরে আছে ।
আমি জানিনা এটা কতটা সত্য কিন্তু আহত সৈনিকদের জীবন বাচানোর জন্য আমার জরুরি ভিত্তিতে পরিবহন দরকার ।
করিমগঞ্জ মুক্তি বাহিনী হাসপাতাল
জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজী একটা বাড়ীর ব্যবস্থা করেছেন আর জনাব মোসাব্বের আলী বিশজন রোগীর জন্যে বিছানা দান করেন এবং আমরা সেখানে বারজন রোগীকে দেখতে পাই। আমরা একজন ডাক্তার এবং তিনজন নার্স নিয়োগ দিই।
হাসপাতালটি অবশ্যই প্রতিরক্ষা দফতর দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। হাসপাতালটি চালানোর জন্যে জরুরী ভিত্তিতে ৫০০০/- টাকা (রুপি) দরকার। জরুরী ভিত্তিতে কিছু ওষুধ পাঠানো প্রয়োজোন।
বালাত এ ডি এস
শিলং এ থাকা আমাদের রাজনিতীবিদরা চারটা তাবুর সাহায্যে বালাটে এ ডি এস (যুদ্ধক্ষেত্রে জরুরী সেবাকেন্দ্র) ব্যবস্থা করেছেন। একজন ডাক্তার সেখানে কাজ করছেন যার বেতন বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী) বহন করছে। ওষুধপত্র এবং সার্জারির জিনিসপত্র সাথেসাথেই আমাদের কাছে পাঠানো হয়, আরো চারটি তাবু এবং বিশটি বেড বসানো হয়। আমাদের সামরিক বাহিনী থেকে অবশ্যই এই খরচ বহন করতে হবে। শুরুতেই ৫,০০০ রুপি (টাকা) এবং প্রতিমাসে ওষুধ সহ ৩,০০০ রুপি (টাকা) খরচ হবে। এই বিষয়ে আমাদের জরুরী ভিত্তিতে কিছু করা দরকার।
ডাউকি, শোলা এবং বেসারাতে একই রকম এ ডি এস (যুদ্ধক্ষেত্রে জরুরী সেবাকেন্দ্র) বসানো হয়েছে। সেক্টর মেডিকেল অফিসার নিয়োগ পাওয়ার সাথে সাথেই উনি এসব পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করবেন। মেডিকেল অফিসারের জন্যে আমাদের অবশ্যই পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে , অন্যথায় কোনো কাজ করা সম্ভব না।