১২ আষাঢ়, ১৩৭৮ রোববার, ২৭ জুন ১৯৭১
রাজশাহী শহর গত তিনদিন মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড হামলায় পাওয়ার হাউজ, সার্কিট হাউজ ও পুলিশ লাইনে ক্ষতিসাধিত হয়। ধূলাউড়ি ক্যাম্প থেকে ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান রাজার নেতৃত্বে অগ্রসর হয়ে তিনটি উপদলে বিভক্ত হয়। মোঃ আবদুল গফুর, শাহজাহান খান পল্টু ও জহিরুল ইসলাম স্বপন এই তিনটি উপদলের নেতৃত্ব দেয়। ২৪ জুনের গ্রেনেড হামলায় পাওয়ার হাউসের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় রাজশাহী শহর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেনেড আক্রমনের প্রত্যুত্তরে বালুচ রেজিমেন্ট কোন পদক্ষেপগ্রহণ করেনি। রাজশাহী জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরোধ আন্দোলনের অজুহাতে গোপন হত্যা চলতে থাকে। ইতোপূর্বে রাজশাহী জেলায় এম এন এ নজমুল হক সরকার, বিশিষ্ট এ্যাডভোকেট বীরেন্দ্র নাথ সরকার, ও সুরেশ পাণ্ডেকে পাক হানাদার বাহিনী হত্যা করে (এপ্রিল ২) ।(লেখক) মনতলায় মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার চাঁন মিয়ার বীরত্বে এক সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ২০ জন সেনা নিহত হয়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং নয়াদিল্লীতে বলেন, ভারতে শরণার্থীদের আগমনের ফলে ভারতে যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তাঁর জন্য ভারতকে শরণার্থীদের নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য কার্যকর গ্রহণ করতে হতে পারে।
-সাবেক পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক মন্ত্রী শ্রী ডি. এন. বাড়োরী এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করতে ভারতের প্রতি আহবান জানান। (সংবাদপত্র) জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সরকার এই ইশতেহারে ঘোষণা করে যে, বাংলাদেশ থেকে যে সব শরণার্থী ভারতে চলে গেছে তাঁদের সমস্যাকে শুধু যে কেবল আন্তজার্তিক সমস্যা বলে বর্ণনা করা হয়েছে তা নয় বরং দাবি করেছে-বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর প্রত্যাহার, শেখ মুজিবুর রহমান সহ সব রাজনৈতিক নেতার মুক্তি, আওয়ামী লীগের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, গণনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রভৃতি।(খঃ ৫ পৃঃ৬৯) গেরিলা কমাণ্ডার খলিলের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ফরিদপুর জেলার পালং থানার উপর এদিনই, রাত ১১ টায় আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে একজন দালালসহ সাব ইন্সপেক্টর ও দুজন পুলিশ নিহত হয়। গেরিলারা ৯টি রাইফেল দখল করে নেয়। তারা শিবচর ও পালং থানার ওয়ারলেস ষ্টেশনটি ধ্বংস করে দেয়। নড়িয়ার গেরিলাদল মাদারীপুরের ডি আই বি ইন্সপেক্টর ও দালাল সি আই পুলিশ উপর আক্রমণ চালায় এবং নড়িয়ার ওয়ারলেস ষ্টেশনটিও ধ্বংস হয়। (খঃ ৯ পৃঃ ১৭৫)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী