You dont have javascript enabled! Please enable it!

১৮ ফাল্গুন ১৩৭৭ বুধবার ৩ মার্চ ১৯৭১

-মঙ্গলবার শহীদের লাশ নিয়ে  ইকবাল হল থেকে শোভাযাত্রা ও কয়েকটি খন্ড মিছিল বের করা হয়। গতকাল ঢাকা মেডিকাল কলেজের মর্গে এক মর্মস্পর্শী দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এক দিকে লাশের সারী অন্য দিকে কান্নার মিছিল। ঢাকা মেডিকাল কলেজে আনিত শহীদের লাশগুলো হাজারো মানুষের মনে দুরপনেয় সংকল্পের দৃঢ়তা এনে দেয়। ( দৈঃপাঃ)

-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দ শোকমিছিল করে শহীদ মিনারে জমায়েত হন।

– প্রদেশব্যপী হরতালের দিনে চট্টগ্রামের বন্দর নগরীতেও পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। সেখানে আবাঙ্গালীদের লেলিয়ে দেয়া হয় বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে ফলে হামলা , সংঘর্ষ অগ্নিকান্ড ও গুলি বর্ষণে চট্ট্রগ্রামে ঐ এক দিনেই প্রায় চারশত জন হতাহত হয়, সারাদিন ধরে ফিরোজ শাহ কলোনী, ওয়ারলেস কলোনী, আমবাগান, পাহাড়তলী ও পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে । (সংবাদপত্র)

-জেনারেল ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের পার্লামেন্টারী গ্রুপের ১২ জন নেতাকে ১০ মার্চ তারিখে ঢাকায় এক বৈঠকে যোগদানর আমন্ত্রণ জানান, এই দশজন নেতা হলেন শেখ মুজিবুর রহমান, জুলফিকার আলি ভুট্টো, খান আব্দুল কাইয়ুম খান, মিয়া মমতাজ দৌলতানা, মওলানা মুফতি মাহমুদ, খান আব্দুল ওয়ালী খান, মওলানা শাহ আহমদ নুরানী, আব্দুল গফুর আহমদ, মোহাম্মদ জামাল কোরেফা, নুরুল আমীন, মেজর জেনারেল জামালদার, মালিক জাহাঙ্গীর খান।

-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করে এক বিবৃতি দেন । বিবৃতিতে তিনি বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে যখন নিরস্ত্র জনসাধারণকে ব্যাপকভাবে হত্যা করা হচ্ছে, শহীদের তাজা খুন যখন রাজপথে শুকিয়ে যায় নি, কতিপয় নিহত ব্যক্তির লাশ এখনো দাফন করা হয়নি, শত,শত আহত ব্যক্তি যখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম করছে, ঠিক সেই সময় ঢাকায়  ১০ মার্চ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের এক সম্মেলন বসার জন্য বেতার ঘোষণা মারফত আমন্ত্রণ প্রস্তাব একটি নির্দয় তামাসা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলে যখন সামরিক প্রস্তুতি অব্যহত রয়েছে কঠোর অস্ত্রের ভাষায় ধ্বনি আমাদের কানের কাছে এখনো ধ্বনিত হচ্ছে এই অবস্থায় একটি সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর বস্তুত পক্ষে বন্ধুকের মুখে আমন্ত্রণ জানানোর শামিল । এই অবস্থায় এ ধরনের আমন্ত্রণ গ্রহণের কোন প্রশ্নই ওঠেনা । (দৈঃপাঃ)

গতকালের একটি গুজব দাবানলের মত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজারবাগ পুলিশ সদর দফতরকে রক্ষার জন্য চার দিক থেকে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়।  আশংকা অমূলক প্রমাণ হলে জনতা ক্রমে ক্রমে রাজারবাগ ত্যাগ করে চলে যায় । গুজবটি ছিল সামরিক বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন দখল নিচ্ছে ।

-সকাল এগারটায় গনহত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিএর উদ্যেগে বটতলায় ডঃ মোজাফফর আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে শিক্ষকদের এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়, সভায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা জানিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের জনতার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করা হয় । (দৈঃপাঃ)

-৩ মার্চ পল্টনে জনসভা ও স্বাধীনতার ইস্তেহার পাঠ।

-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩ মার্চ অপরাহ্ণে পল্টন ময়দানে এক বিরাট জনসভায় আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন, ৬ মার্চ পর্যন্ত সকাল ৫টা থেকে ২টা পর্যন্ত হরতাল । ঐ সময় কোট-কাচারী ,সরকারী অফিস, কলকারখানা, রেল ষ্টিমার,বিমান ও সকম যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকবে, সামরিক বাহীনি প্রতাহার ও জনগণের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত ট্যাক্স ও খাজনা প্রদান বন্ধ । হরতাল পালনকারী গরীব দুঃখীদের সাহায্য করার জন্যে বেলা ২টার পরে রিক্সাওলাদের বেশি পয়সা দেওয়ার জন্য তিনি জনসাধারন কে অনুরোধ জানান।হাসাপাতালের গুলির আঘাতে আহত ব্যক্তিদের জন্য ব্লাডব্যাংকে রক্ত দানের জন্য তিনি জরুরী আবেদন জানান। সাংবাদিকদের তিনিত নিরভিকভাবে সংবাদ পরিবেশনের এবং কোণ বিধিনিষেধ না মানার আহবান জানান। বঙ্গবন্ধু ঐ সভার ঘোষণা করে যে কয়েকদিনের মধ্যে যদি সরকারী মনোভাব পরিবর্তিত না হয় তাহলে ৭ মার্চ তিনিত ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন ।

পল্টন ময়দানে আয়োজিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, সামরিক বাহিনী শহর থেকে সেনানিবাসে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং জনগণের প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। কায়েমী স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্র সমৃন্ধে সচেতন থাকতে হবে। সকাল থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত হরতাল বলবৎ থাকবে। তিনি ভাবাবেগল্পুত কণ্ঠে বললেন, পল্টনে এই সভা আমার শেষ সভা হতে পারে। আমার অবর্তমানে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা থাকবে- তাঁরাই সংগ্রাম অব্যাহত রাখবেন । তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গতরাতের ঢাকার নারকীয় গুলিবর্ষণে নিহত শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বললেন, সামরিক সরকারের মত পরিবর্তন যদি ৭ মার্চের পূর্বে না হয় তবে ঐ দিন ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। যদি ঐ দিন করমসূচী ঘোষণা না করতে পারি তবে আপনাদের পরবর্তী ঘোষণা জানিয়ে দেয়া হবে । আমার মৃত্যুতে যদি বাঙ্গালী মুক্ত জীবন পায় এবং দু বেলা পেট ভরে খেয়ে পায় তাহলে আমি সুখী হব। বাঙ্গালী রক্ত দিয়ে আমাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছে, এখনো রক্ত দিচ্ছে। তিনি বললেন রক্ত আরও দেব- ৭ কোটি বাঙ্গালী কে গুলি মেরে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আজ থেকে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন চলবে। কোন কড়, খাজনা দেয়া হবেনা। অফিস আদালত বন্ধ থাকিবে কোন সহযোগিতা করা হবে না । (দৈঃপাঃ)

-পল্টনের সভায় যোগদানকারী লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বাধীনতা ঘোষণা প্রত্যাশা করেছিল সে প্রত্যাশা পূরুণ করে  স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদ গঠিত হয়েছিল ডাকসু সহ সভাপতি আ,স,ম , আব্দুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান সিরাজ সমন্বয়ে ।

-৩রা মার্চ পল্টনের ঐতিহাসিক সভায় স্বাধীন বাঙলা দেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ , কতৃক স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা পত্র প্রচার করা হয়। ছাত্রলীগের ঐ ঐতিহাসিক ঘোষণা উদৃত করছি।

 –ছাত্রলীগের আয়োজিত পল্টনের জনসভায় প্রস্তাবলী

১। এই সভা পাকিস্তানী উপনিবেশবাদ শক্তির লেলিয়ে দেওয়া সশস্ত্র সেনাবাহিনী কতৃক বাঙালীদের উপর গুলিবর্ষণের ফলে নিহত বাঙালী ভাইদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করিতেছে এবং শোক সস্তপ্ত পরিবারের পরিবারের পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করিতেছে এবং পাকিস্তানী উপনিবেশবাদ শক্তি সেনাবাহিনীর এই জঘন্য হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়িয়া তোলার আহবান জানাইতেছে

২। এই সভা ভাড়াটিয়া সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণকারী বীর বাঙালী ভাইদেরকে বাচাইয়া রাখার জন্য স্বাস্থ্যবান বাঙালী ভাইদেরকে ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত প্রদানের আহবান জানাইতেছে

৩। এই সভা পাকিস্তানী উপনিবেশবাদের কবল হইতে মুক্ত হইয়া স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা, শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সমাজতান্তিক অর্থনীতি ও নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, করিয়া স্বাধীন বাঙ্গালদেশে কৃষক শ্রমিক রাজ কায়েমের শপথ গ্রহণ করিতেছে।

৪। এই সভা স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা রাখিয়া তাহাঁরা সংগ্রাম চালাইয়ায় যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে।

৫। এই সভা দল্মত নির্বিশেষে বাংলার প্রতিটি নরনারীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বের বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার আহবান জানাইতেছে।

জয় বাংলা                                                 ইশ্তিহার নং/এক

(স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণা ও কর্মসূচি)

 

স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা করা হয়েছেঃ

-গত তেইশ বছরের শোষণ, কুশাসন ও নির্যাতন একথা স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত করেছে যে সাত কোটি বাঙ্গালীকে গোলামে পরিণত করার জন্যে বিদেশী পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র তা থেকে বাঙালীর মুক্তির একমাত্র পথ স্বাধীন জাতি হিসাবে স্বাধীন দেশের মুক্ত নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকা। গত নির্বাচনে গণরায়কে বানচাল করে শেষবারের মতো বিদেশী পশ্চিমা শোষকেরা সে কথার প্রয়োজনীয়তা হাড়ে হাড়ে প্রমাণ করেছে

-৫৪ হাজার ৫শত ৬ বর্গমাইল বিস্তৃত ভৌগলিক এলাকার ৭ কোটি মানুষের জন্যে আবাসিক ভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এ রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের গঠনের মাধ্যমে নিম্নলিখিত তিনটি অর্জন করতে হবে।

(১) স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে পৃথিবীর বুকে একটি বলিষ্ঠ বাঙালী জাতি সৃষ্টি ও বাঙালীর ভাষা ও সাহিত্য, কৃষ্টি ও সংঙ্ক্রৃতির পূর্ণ বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

(২)স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে অঞ্চলে অঞ্চলে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য নিরসনকল্পে বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করে কৃষক শ্রমিক রাজ কায়েম করতে হবে।

(৩) স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের সাধিনতাসহ নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে।

(ক) বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম,মহল্লা, থানা , মহকুমা , শহর ও জেলায় ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম কমিটি গঠন করতে হবে।

(খ) সকল শ্রেণীর জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা ও তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

(গ) শ্রমিক এলাকায় শ্রমিক ও গ্রামঞ্চালে কৃষকদের সুসংগঠিত করে গ্রামে গ্রামে এলাকায় এলাকায় মুক্তিবাহিনী গঠন করতে হবে।

(ঘ) হিন্দু-মুসলমান ও বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিহার করতে হবে এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।

(ঙ) স্বাধীনতা সংগ্রামকে সুশৃঙ্খলার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য পারস্পরিক যোগাযোগ করতে হবে এবং লুঠতরাজসহ সকল প্রকার সমাজবিরোধী ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।

স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারা নিন্মরূপঃ

(অ)বর্তমান সরকারকে বিদেশী উপনিবেশবাদী শোষক সরকার গণ্য করে বিদেশী সরকারের ঘোষিত সকল আইনকে বেআইনি বিবেচনা করতে হবে।

(আ) তথাকথিত পাকিস্তানের স্বার্থের তল্পীবাহী পশ্চিমা অবাগালী  মিলিটারীকে বিদেশী ও হামলাকারী শত্রু সৈন্য হিসাবে গন্য করতে হবে এবং এ হামলাকারী শত্রু সৈন্যকে খতম করতে হবে।

(ই) বর্তমান বিদেশী উপনিবেশবাদী শোষক সরকারকে সকল প্রকার ট্যাক্স খাজনা দেয়া বন্ধ করতে হবে।

(ঈ) স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমনণরত যে কোন শক্তিকে প্রতিরোধ, প্রতিহত, পালটা আক্রমণ ও খতম করার জন্যে সকল প্রকার সশস্ত্র প্রস্তুতি নিতে হবে।

(উ)বৈজ্ঞানিক ও গণমুখী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সকল প্রকার সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

(ঊ) স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি”_সংগীতটি ব্যবহৃত হবে।

(ঝ)শোষক রাষ্ট্র পশ্চিম পাকিস্তানী দ্রব্য বর্জন করতে হবে এবং সর্বাত্মক অসযোগ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

(এ) উপনিবেশবাদী পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে হবে

(ঐ) স্বাধীনতা সংগ্রামরত বীর সেনানীদের সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করে বাঙলার স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ুন

       বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাঅধিনায়কঃ   

স্বাধীন ও সার্বভৌম “বাংলাদেশের গঠন আন্দোলনের এ” পর্যায়ে নিন্মলিখিত জয়ধ্বনি ব্যবহৃত হবে—

  • স্বাধীন সার্বভৌম “বাংলাদেশ” – দীর্ঘজীবি হউক।
  • স্বাধীন কর স্বাধীন কর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর।
  • স্বাধীন বাংলার মহান নেতা-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
  • গ্রামে গ্রামে দূর্গ গড়-মুক্তিবাহিনী গঠন কর।
  • বীর বাঙালী অস্ত্র ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর।
  • মুক্তি যদি পেতে চাও-বাঙ্গালীরা এক হও।
  • বাংলা ও বাঙালীর জয় হোক।
  • জয় বাংলা ।

(সুত্রঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বিতীয় খন্ড পৃঃ ৬৬৬-৬৮)

-সারাদেশে পাক বাহিনীর গুলিবর্ষণে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়। রংপুর, সিলেট কার্ফ্যু জারী করা হয়।

-পাঞ্জাব পাকিস্তান ফ্রন্ট পিপিপি নেতা ভুট্টোর ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছে।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জনাব নুরুল ইসলাম শহীদ মিনারের ছাত্রসভায় বলেন বাংলাদেশ সংগ্রাম শুরু হয়ে গেছে

এয়ার মার্শাল (অবঃ) আসগর করাচীতে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেনঃ আওয়ামীলীগ নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরই বর্তমান সমস্যার একমাত্র সমাধান।

-চট্রগ্রামে পোর্টে আগত এম ভি সোয়াট থেকে সৈন্য এবং গোলা বারুদ নামাতে জনতা পাকবাহিনী ও নাবিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শতাধিক শ্রমিক নিহত হয় । পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস-এর একটি ইউনিট বাঙ্গালী বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালাতে অস্বীকার করায় কোর্ট মার্শালে মৃত্যুবরণ করে। এই ঘটনা বাঙালীদের বিক্ষোভের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলো

-৩রা মার্চ থেকে প্রকৃত অর্থে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। গত দু’দিনে (মারচ১-২) ছিল ক্ষোভ ও বিক্ষোভ প্রকাশের । আজ জনতা পতাকা পেয়েছে। স্বায়ত্ত শাসনের আন্দোলন এদিন থেকে স্বাধীনতার সশস্ত্র পথে এগিয়ে যায়।

-কিসিং কন্টেম্পরারী আরকাইভস –এ এ সময়ের ঘটনা সম্বন্ধে লিখা হয়েছেঃ

“With Dacca and virtually the whole of East Pakistan  paralyzed by the Continuing  general strike, Sheikh Mujibur Rahman issued on March 3 a strongly worded attack on the central government and on Mr. Bhutto, asserting that the president had postponed the Assembly under pressure from a minority group in the country and declaring that the stricke would continue.

(KCApp.24566)

Press statement issued on March 2,1971 -Sheik Mujibur Rahman in a press statement issued last evening strongly condemned the killing of unarmed persons at Farm Gate urged the government to desist forthwith from this reckless course, He reminded that Bengalese could not be suppressed any more and they would no longer tolerate exploitation as a colony or as a market. (The People, March 3,71)

সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয় যে পিপলস পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সভায় প্রেসিডেনট ইয়াহিয়া আহূত ও ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদ অধিবশনে এই জোগদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

                              সংবাদ শিরোনাম মার্চ ৩ ১৯৭১

-বিক্ষুব্ধু নগরীর ভয়াল গর্জন আমি শেখমুজিব বলছি । (ইত্তেফাক)

-দিনের ঢাকায় হরতালঃ রাত্রির রাজধানিতেঃ কারফিউ ভঙ্গ (ইত্তেফাক)

-রাজধানীতে পোস্তগোলায় শ্রমীকদের বিরাট মিছিল।(ইত্তেফাক)

-আজ জাতীয় শোক দিবস (শেখ মুজিবের আহবান)। (সংবাদ)

-ন্যাপের ডাকে পল্টনে বিশাল জনসভা- দৃঢ় প্রত্যয় ও শৃঙ্খলাওসহ গণসংগ্রামকে বঞ্ছিত লক্ষ্যে পৌছাইয়া দিন। (সংবাদ)

-বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিরাট সমাবেশ। (সংবাদ)

-দিন রাতে মিছিল আর মিছিল ।(পূর্বাদেশ)

-বিক্ষুব্ধু পূর্ববাংলা । পূর্বদেশ

MUJIB STRONGLY CONDEMNS FIRING-BANGLADESH CANNOT BE SUPPRESSED AS COLONY ANY MORE.(The people March3.1971)

 

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!