You dont have javascript enabled! Please enable it! ১৫ চৈত্র ১৩৭৭ সোমবার ২৯ মার্চ ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১৫ চৈত্র ১৩৭৭ সোমবার ২৯ মার্চ ১৯৭১

-বহুকষ্টে ঢাকা থেকে গা ঢাকা দিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ ফরিদপুর পৌছেন। -ঢাকা থেকে স্বপরিবার পরিজন নিয়ে জনগণ গ্রামের নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটেছিল। -লক্ষ লক্ষ বিদ্রোহী বাঙালী যশোর পাক সেনাদের উপর আক্রমণ করে। পাকবাহিনী এ অভূতপূর্ব দৃশ্যে আতংকগ্রস্থ হয়ে পিছু হটতে থাকে। জনতা সেনানিবাস ঘিরে রাখে। ১১৮ জন পাকসেনা বন্দী হয়। যশোর শহর থেকে পাকবাহিনী সেনা নিবাসে আশ্রয় নেয়। -স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আছেন, নেতৃত্ব দিতেছেন। কুখ্যাত বেলুচিস্তানের কসাই মেঃ জেনারেল টিক্কা খান গেরিলা অপারেশনে নিহত হয়েছে প্রচার করা হল। রেডিও ঢাকার শত্রুর প্রচার না শোনার জন্য জনগণের কাছে আবেদন জানানো হয়। -চুয়াডাঙ্গা থেকে মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ই পি আর, আনসার, ছাত্র জনতার সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে কুষ্টিয়ার পাকবাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকবাহিনী মর্টার মেশিনগান প্রভৃতি অস্ত্র নিয়ে বেপরোয়া ভাবে গুলি ছুঁড়তে লাগলো। মুক্তি বাহিনী তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে আক্রমণ চালাতে থাকে। -পাক বিমান বাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো শমসের নগর ও আশেপাশের এলাকায় বায়পক গোলা বর্ষণ করে। প্রাথমিক প্রতিরোধ ব্যর্থ হওয়ায় পাকবাহিনী ও স্থানীয় দোশররা অকথ্য নির্যাতন করে। বোমাবর্ষণে বহু হতাহত হয়। -ঢাকায় পাকিস্তান অবজারভার আট কলাম জুড়ে হেডলাইনঃ ইয়াহিয়া ব্রডকাস্টস। ২৬ মার্চে ইয়াহিয়া খানের ভাষণের পুরো বিবরণ ছাপে। একপাশে ছোট হেডিং ছিলঃ মুজিব এরেস্টেড। একই সংবাদ মর্নিং নিউজ পত্রিকায় ছাপা হয়। মেজর রফিকুল ইসলাম (অবঃ) লিখেছেনঃ ২৯ শে মার্চ রাতে ১০০ জনের মত বাঙালি ই, পি, আর, কে পাকসেনারা প্রেসিডেন্ট হাউজ থেকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে রেসকোর্স ময়দানে অবস্থিত (বর্তমান সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) কালীবাড়ি মন্দিরের কাছে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ই, পি, আর, বাহিনীতে চাকুরীরত আবাঞ্চীস অফিসার এবং জোয়ানরাই এই হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করে। প্রথম গ্রুপে সুবেদার আব্দুল লতিফ, নায়েক মুজিবুল হক, নায়েক শাহাব উদ্দিন, নায়েক আমীর আলী, নায়েক মোবারক আলী, নায়েক মমতাজ, নায়েক আতহান আলী, প্রভৃতিকে হাতবাধা অবস্থায় একটি গোলায় মোহাম্মদ নিলে গাড়ী চালাতে থাকেন। অবাঙালী ই, পি, আর, চ্যালীজ রাইফেলস সামনে রেখে রেসকোর্স একাত্তরের দশ মাস ময়দানে কালিবাড়ি মন্দিরের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছে সবাইকে নীচে নামানো হয় এবং মেজর গোলাম মোহাম্মদ স্বয়ং গুলির নির্দেশ দিলে ঝাঁক ঝাঁক গুলি এসে সবাইকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়। এই গুলির মধ্যেও নায়েক মোহাম্মদ আলী, নায়েক মুজিবুল হক আকস্মিকভাবে বেঁচে যান। গুলির পরে মেজর গোলাম মোহাম্মদ ও তার দলবল মৃতদেহ পরীক্ষা করতে এলে মোহাম্মদ আলী মৃত লাশের মাঝে মৃতের ভান করে পড়ে থাকেন। পাকিস্তানীরা তখনই চলে যায় পরবর্তী শিকার আনতে। নায়েক মোহাম্মদ আলী গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত লাশের মধ্যে থেকে পালিয়ে পরবর্তীকালে ৮নং সেক্টরে যোগ দেয়। (পদধ্বনি ১৪/৯/৭১)-পাবনায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক আওয়ামীলীগ নেতা আমজাদ সাহেব যুদ্ধাবস্থায় কঠিন পরিশ্রম ও দারুণ উত্তেজনায় মারা গেলেন। ৯: ৪৯৬। -পাবনায় শাহজাদপুরে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। জনাব আব্দুর রহমান এমপির নেতৃত্বে প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরদারভাবে সংগঠিত হয়। ৯:৫০০। উল্লেখ্য নগরবাড়ি, বাঘাবাড়ী, প্রতিরোধ সর্বজনাব আবদুর রহমান, শামসুদ্দিন এম পি, ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার ভূমিকা অগ্রগণ্য। -বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নাম থেকে ‘বিপ্লবী’কথাটি বাদ দেয়া হয়। উল্লেখ্য চট্টগ্রাম বেতারের কালুরঘাট ট্রান্সমিটারে বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সংগঠিত হয়েছিল। এই কেন্দ্রের সংগঠক ছিলেন সর্বজনাব বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, সৈয়দ আবদুর শাকের, আবদুল্লাহ আব্দুস শাকের, আব্দুল্লাহ আল ফারুক, মোস্তফা আনোয়ার, রাশেদুল হোসেন, আমিনুর রহমান, শারফুজ্জামান, রেজাউল করিম চৌধুরী, কাজী হাবিবুদ্দিন, ডাঃ মনজুলা আনোয়ার, ডাঃ সৈয়দ আনোয়ার আলী, ইঞ্জিনিয়ার আশিকুল ইসলাম, দিলীপ চন্দ্র দাশ এবং কাজী হোসনে আরা প্রমুখ।-২৮ থেকে ২৯ মার্চ রাতে পি এন এস জাহাঙ্গীর যুদ্ধজাহাজ থেকে পাঞ্জাবীরা চট্টগ্রাম শহরে অত্যাধিক শেলিং করেছিল। শেলিং এর দরুণ কয়েক জায়গায় আগুন ধরে যায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয় নিজ নিজ অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে লালদীঘির ময়দানে ক্যাপ্টেন ভূয়ার কাছে রিপোর্ট করুন। উল্লেখ্য সে সময় বেসামরিক লোকজন প্রাণভয়ে পালাতে থাকে। ঘোষণাটি কয়েকবার প্রচারিত হবার পর অধ্যাপক এ আর মিল্লিক অবিলম্বে ঘোষণা বন্ধ করতে বলেন এবং ঘোষণাটি বাতিল হয়। (৯:৬৫)

-A statement by the Martial Law authorities in Dhaka on March 29 said that there had been ‘no untoward incidents’ in that city or Comilla, Jessore, Rangpur, Sylhet, Khulna and other towns; That calm also prevailed in the country side; that in Chittagong, where a ‘group of armed miscreants tried to create a law and order situation and threatened the lives of peaceful citizens.’ The situation was fully under control and returning to normal; and that all government offices banks, business establishments and public services were functioning in Dhaka. [KCA. H. 24569]

-পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (পরবর্তীএ নাম সিপিবি) স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতি প্রচার করে। এই বিবৃতিতে সংগ্রামের পটভূমি আলোচনা করে আবেদন হয় যে, কতকগুলি তথাকথিত কমিউনিস্ট পার্টি জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানাবিধ আওয়াজ তুলছে। মার্কিনি এজেন্টরা এই সংগ্রামের অনুপ্রবেশ করে সংগ্রামকে বিপথগামী করার প্রচেষ্টা করতে পারে। হুশিয়ার থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। (৪:৪৬৭) -পাকসেনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রথম বিমান হামলা চালায়। একজন মুক্তিসৈনিক শহীদ হন। সন্ধ্যায় পাকসেনার রেলিদল মুক্তিসেনার এমবুশে অফিসার সহ সকলেই নিহত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাক বিমান হামলা চলে। মেজর খালেদ মোশাররফ নিয়ন্ত্রণাধীন ৪র্থ বেঙ্গল অন্যান্য দল ভৈরব বাজার এবং নরসিংদীর মধ্যেকার রেল লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। (৯: ১৩৭) উল্লেখ্য ২৭ মার্চ মেজর শাফায়েত জামিল, ক্যাপ্টেন কবির, ক্যাপ্টেন হারুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঞ্জাবী সেনা অফিসার কর্ণেল খিজির হায়াতসহ মেজর নেওয়াজ, ক্যাপ্টেন আমজাদকে বাংলাদেশের নামে গ্রেফতার করে এবং পাঞ্জাবী সৈন্যদের নিরস্ত্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। (৯ঃ১৩৫) এ সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহকুমা প্রশাসক জনাব রকিব, জাতীয় পরিষদের সদস্য তাহের উদ্দিন বাবুর, সাচ্চু মিয়া, বেসামরিক সহায়তা প্রদান করেন। -মেজর খালেদ মোশাররফ জাঙ্গালীয়াতে বাঙালীকমাণ্ডার নায়েক সুবেদার এম এ জলিলকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেন। (৯ঃ১৮৪) সুবেদার জলিলের নেতৃত্বে কুমিল্লা লাকসাম রোডে বেশ কয়েকটি সাফল্যজনক এমবুশ করে। -বিকেল চারটায় পাকবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিমান থেকে দেড় দু’ঘন্টা ধরে বোমা বর্ষণ ক্রএ। একজন বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্য শহীদ হন। (৯ঃ১৯১)

Reference:

একাত্তরের দশ মাসরবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী