You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.08 | ২৩ আষাঢ়, ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

২৩ আষাঢ়, ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ১৯৭১

-পশ্চিম জার্মানী পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক সমাধান না পৌঁছা পর্যন্ত সকল প্রকার উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ ঘোষণা করেছে

-পাকিস্তান সরকার বাধ্যতয়ামূলকভাবে সৈন্যদলে নিয়োগ-সংক্রান্ত সামরিক আদেশ জারি করেছে

-প্রবীন সর্বোদয় নেতা জয় প্রকাশ নারায়ণ কলকাতায় বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানে যদি পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধের সম্ভাবনা বা ঝুঁকি থাকে, তবে ভারকে যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে হবে।

-ফ্রান্স পাকিস্তানকে সব ধরনের অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত ঘোষণা করে মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

-প্রেসিডেন্ট নিক্সনের আদেশে পাকিস্তানের জন্য ৩৫ মিলিয়ন ডলার অস্ত্র জাহাজ বোঝাই করা হয়েছে। এদিন পত্রিকায় এ সংবাদ পরকাশিত হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে ঘোষণা করা হয়। মার্কিন সরকারের বিধি-নিষেধ আরোপের দাবিতেও মার্কিন সামরিক সাজ-সরঞ্জাম পাকিস্তান প্রেরণ করা হবে। উল্লেখ্য প্রেরিতব্য অস্ত্রের মূল্য এক থেকে দেড় কোটি টাকা।

-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ এম মোহর আলী বিদেশে প্রচারতি বাঙালী নির্ধনের নৃশংসতার কাহিনী অস্বীকার করেছেন। টাইম পত্রিকায় লিখিত একপত্রে বুদ্ধিজীবীদের পাইকারী হত্যা করা হয় হয়েছে বলে যে কাহিনী প্রচারিত হয়েছে। অধ্যাপকদ্বয় তাও অস্বীকার করেছেন। ( দৈঃপাঃ)

-ইয়াহিয়া খানের ২৯ জুনের রেডিও ঘোষণাকে ভারত নেতৃবৃন্দ নেতিবাচক বলে উল্লেখ করেন। ঐ ঘোষণা কোনভাবেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমাধানের বাস্তবদিক হতে পারে না। (ষ্টেটসম্যান) ভাষ্যকয়ারদের মতে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। (১৪ খঃ পৃঃ ৪৯) ডঃ কিসিঞ্জার মিসেস গান্ধীর হাতে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের একখানি ব্যক্তিগত পত্র দেন। এই পত্রে বলা হয়, ২৫শে মার্চ আমেরিকা কর্তৃক পাকিস্তানে অস্ত্র চালান নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর যে অস্ত্র বোঝাই জাহাজখানি পাকিস্তানের পথে রওয়ানা হয় তাতে শুধুমাত্র কিছু খুচরা যন্ত্রাংশ এবং প্রাণহরণের অনুপযোগী সরঞ্জাম রয়েছে। এই উত্তরে মিসেস গান্ধী বলেন, একটি পেরেক কিংবা “ ট্যাংক-লিংক” যদি একটি অচল উড়োজাহাজ কিংবা অকোজো ট্যাংককে ব্যবহারযোগ্য করতে পারে তা’হলে এসব খুচরা যন্ত্রাংশ এবং নিরাপদ সরঞ্জাম ধ্বংসত্মক অস্ত্র বলে বিবেচিত হবে। (“দি টাইমস”, ৮ই জুলাই,১৯৭১)

–মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী ডঃ হেনরি কিসিঞ্জার সকালে নয়াদিল্লী থেকে রাওয়ালপিন্ডি আসেন। সন্ধ্যায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। এর আগে ডঃ কিসিঞ্জার ও পাকিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যাণ্ড প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উপদেষ্টা এম.এম. আহমদ ও যুক্তরাষ্ট্রের  পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত আগা হিলালী এক বৈঠক। (সংবাদপত্র)

-পাকিস্তান শান্তি জনকল্যাণ কাউন্সিলের সভাপতি মৌলভী ফরিদ আহমদ পাকিস্তান সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে মিসর ও সৌদী আরপব সফর শেষে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করে এক বিবৃতিতে বলেন তিনি দেশের বর্তমান গুরুতর সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

–বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তানের সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থাকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করা অর্থহীন। কারণ, তা’ বাংলাদেশের জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুস সালাম (জেনারেল সেক্রেটারী), মনি সিং, খোকা রায় ও কবীর আহমদ (কমঃ ফরহাদ) এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন রক্তগংগা প্রবাহিত হওয়ার পর পূর্ণ স্বাধীনতার স্বীকৃতি একমাত্র সমাধান বলে গণ্য করতে হবে। এই অমানুষিক গণহত্যার পর পাকিস্তানের সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থাকার কথাই উঠে না। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একযোগে কাজ করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তাঁরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছেন বলে প্রকাশ করেন। জাতীয় মুক্তিবাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে না বলে তাঁরা মনে করেন। (“মর্নিং ষ্টার” ৬ই জুলাই,১৯৭১) উল্লেখ্য, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক ও কৃষক সমিতির সভাপতি বারীন দত্ত ( ১৯১১-৯১) পাকিস্তানী শাসন বিরোধী সকল আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের জন্য ছদ্মনাম আব্দুস সালাম ব্যবহার করতেন। নানকা বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন, রাজশাহী জেল বিদ্রোহ সহ অগ্নিযুগের সকল আন্দোলনে কমিউনিষ্ট নেতৃত্বে হিন্দুদের প্রাধান্য থাকায় পাক সরকার হিন্দু মানে কমিউনিষ্ট-আর কমিউনিষ্ট মানে দেশদ্রোহী নীতি গ্রহণ করে। (লেখক)

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী