৮ ভাদ্র, ১৩৭৮ বুধবার, ২৫ আগষ্ট ১৯৭১
রুমীর অপারেশনঃ ধানমন্ডীর ২০ নং রোডের চৈনিক কূটনীতিক ও ১৮ নং রোডে জনৈক পাকিস্তানী বিগ্রেডিয়ারের বাসায় মুক্তিযোদ্ধাদল গেরিলা হামলা চালায়। এই অপারেশনের রুমী পাকসেনাদের হাতে গ্রেফতার হয় এবং পরে শহীদ হয়।
একদল পাকসেনা গোমতী নদী পার হয়ে কুমিল্লার জামবাড়ির দিকে যাচ্ছিল। এ পথে অ্যামবুশ পেতে ছিল এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মর্টার হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় পাকদলের নিহতের সংখ্যা ৩০, আহত ১০। মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি অ্যামবুশের স্বীকার পাকবাহিনী ১ টা ডজ গাড়ি ধ্বংস, গ্রেফতার ১ হাবিলদার , ৩ সিপাই, গাড়ি থেকে ৪ টা রাইফেল, ২২৫ রাউন্ড গুলি, ২ টা পিস্তল, ৩ টা গ্রেনেড হস্তগত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। জীপে বিস্ফোরণ, ও আরোহী সকলের মৃত্যু।
এক প্লাটুন পাকসেনা ব্রাহ্মণপাড়া থেকে ধানদাইল গ্রাকমে যাবার পথে অতর্কিতে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আক্রান্ত হয় নিহত হয় ১ ক্যাপ্টেনসহ ১০ সিপাই।
ইরাকে নিযুক্ত পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত আবুল ফতেহ হানাদারদের পক্ষ ত্যাগ করে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে।এদিন পাকিস্তান ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবুল ফতেহকে আশ্রয় দেয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং চাপ দেয় তাঁকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে। হানাদাররা ব্রিটিশ সরকারের হাই কমিশনের ‘রাষ্ট্রোদ্রহী’ কর্মচারীকে আশ্রয় দেয়ার নীতিকে সমালোচনা করেন।
এ সময় ওয়াশিংটন পোষ্টের ষ্টিফেন ক্লাইডম্যান পরিবেশিত এক বিশেষ বিবরণে নিক্সন সরকারের অফিসিয়ালদের বরাত দিতে বলা হয়, ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান করাই মার্কিন সরকারের নীতি। টিক্কা খান সফর করে পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর এলাকা। এসব যায়গায় তিনি বক্তব্য রাখেন শান্তি কমিটির দালাল, রাজাকার ও সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য। এসব এলাকার জনগণের জীবন একদিকে হানাদার অন্যদিকে বন্যার কারণে চরম সংকটে পড়ে গিয়েছিল।
বাঙালীদের ভেতর ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্যে আজ প্রচার করা হয় উদ্বাস্তু শিবিরে মুসলমানদের ওপর অত্যাচার করার ভ্রান্ত সংবাদ।
এ সময় যশোর জেলার মনিরামপুর থানার রাজাকাররা ৩৯ মুক্তিযোদ্ধাকে অতর্কিত আক্রমণ করে হত্যা করে এবং আটক করে অস্ত্রশস্ত্রসহ ৫ জনকে। এই তৎপরতা চালানো হয় মনিরামপুরে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের নির্দেশ। রাজাকাররা এ এলাকার চান্দিপুরে ২ জনকে খুন ও ১ জনকে আটক করে। মোহনপুরের কাপলিয়ার ১৫ জনকে, জাম্পাতে ৩ জনকে হত্যা করা হয়, আটক করা হয় ৪ জনকে। রোহিতায় ও ঢাকুরিয়াতে হত্যা করা হয় যথাক্রমে ৩ জন ও ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে।
এ দিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও ডাঃ এ এম মালিকের মধ্যে আলোচনা বৈঠক হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বিশেষ সহকারী ডাঃ এ এম মালিক পরে ইসলামাবাদে বলেন, ইয়াহিয়া খান দেশে একটি বেসামরিক সরকার গঠনে আগ্রহী।
এ দিন রয়টার পরিবেশিত খবরে বলা হয়, পাকিস্তান সরকার আগামী ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য আদমশুমারী পরবর্তী নির্দ্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেছেন। উল্লেখ্য পাকিস্তানে বিগত লোক গণনা হয় ১৯৬১ সনে।
এদিন সিলেট জেলার বৈরিগাঁতে মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে ৫০/৬০ জন খানসেনা নিহত হয় বলে জানা যায়।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী