শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
৬ দফা ভিত্তিক শাসনতন্ত্র অনুমোদনের বিপক্ষে জনাব ভুট্টোর মন্তব্য | দ্য ডন | ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ |
আওয়ামী লীগের সঙ্গেআপসের কোন অবকাশ নেই
পাকিস্তান পিপলসপার্টি“হুকুমের” সংবিধান অনুমোদন করবে না,
১৯৭১ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি করাচিতে জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিবৃতি
পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো গতকাল পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, যদি দেশেরজন্যএকটি”টেকসই” সংবিধান প্রণীত করতেহয় তাহলে “এতে আমাদের সকলের হাত থাকতে হবে”।
করাচিতেদলের কেন্দ্রীয়কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদসম্মেলনে তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে” ৩রা মার্চ থেকেঢাকায়শুরু হওয়াজাতীয় পরিষদেরঅধিবেশনে পিপলস পার্টির যোগ দেওয়া অর্থহীন।
তিনি বলেন, যেই সংবিধানে পিপিপির জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের বলার অধিকার নেই, শুধু মাত্র সেই সংবিধান অনুমোদনের জন্য তারা ঢাকায় যেতে পারেনা। তিনি বলেন যে পাকিস্তানেরপ্রতি ভারতেরবিবাদমানমনোভাবপশ্চিম পাকিস্তানেএকটি অস্বাভাবিকপরিস্থিতির সৃষ্টিকরেছে। লাহোরসীমান্তেও তৎসংলগ্নএলাকায় ভারতীয়সেনাদলের গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং পাকিস্তানের বিপক্ষেএকটি”শক্তিশালী অবস্থান” নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের রাজনৈতিকদলগুলো পরস্পরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মিস্টার ভুট্টো বলেন অতীতে এই ধরনের পরিস্থিতি ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের সুচনা করেছে। পরিস্থিতি শুধুমাত্র অভ্যন্তরেই সংকটপূর্ণ ছিল না বাহিরের দক্ষিণপূর্ব এশিয়ারউত্তেজনাও বিবেচনায় আনতে হবে, বিশেষকরে লাওস।
এইপরিস্থিতির আলোকেজনাবভুট্টোবলেন, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দলেরনির্বাচিত ৮৫জন সদস্যের ঢাকায় যাত্রাএকটিসহজ ব্যাপারছিল না, বিশেষ করেদলেরনির্দিষ্টমতামতেরপরিপ্রেক্ষিতে। এই অবস্থায় দলের সদস্যদেরপ্রথমদায়িত্বতাদেরজনগনের সাথে থাকা, তিনি বলেন।
জনাবভুট্টোবলেন আজকেরমূল অবস্থানছিলযে, আওয়ামীলীগের বিবৃতি অনুযায়ীতারাছয়দফা কর্মসূচিতেকোন আপসকরবে না এবং সেটা ছিল তাদের “শেষ কথা ও সর্বশেষ অবস্থান”। তিনিবলেন, বাস্তবে, পতন অবশ্যম্ভাবী জেনেও পাকিস্তান পিপলস পার্টি অনেকদূর অতিক্রম করেছে।
তিনিবলেন, পার্টিশিক্ষার্থীদেরসবদাবিমেনে নিয়েছিল। এগারো দফার মধ্যে দশটি গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের এগারতম দফাটিই স্বয়ং ছয়দফা, তিনি যোগ করেন।
তিনি বলেনপিপলসপার্টিখুবশুরুতেইবলেছে যে,কোন মতামত সংবিধানের সাথে সমন্বিত না হলে তা সরিয়ে পদক্ষেপনেয়া হবে।
*******
<2.155.644>
জনাব ভুট্টোবলেন, তার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গেবোঝাপড়া ও কিছু পূর্বসম্মত মিমাংসা করার জন্যসর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু, এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরও আলোচনার কোনো জায়গা নেই, তিনি যোগ করেন।
জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগ না দেবার তার দলের সিদ্ধান্তে যারা আপত্তি জানিয়েছেন এবং পিপিপি সদস্যদের অধিবেশনে সাংবিধানিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা উচিত বলে মনে করেন, পিপিপি নেতা তাদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন যে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই ধরনের আলোচনা অধিবেশনে হত। সব সদস্যরা একসাথে সমর্থন জানাতো। কিন্তু এখানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ছয়দফার উপর কঠোরভাবে টিকে থাকার ভাষণ দিচ্ছে ও তার উপর শপথ নিচ্ছে এবং বারবার শুধুমাত্র পার্টির ছয় দফা কর্মসূচির আওতায় শাসনতন্ত্র গঠনের অভিপ্রায় প্রকাশ করছে। তারা তার সঙ্গে আলোচনা করার সময়ওএ বিষয়ে তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে।
এই পরিস্থিতিতে জনাব ভুট্টো বলেন, যদি পিপিপি সদস্যদরা ঢাকায় অধিবেশনে যোগ দিতে যেতেন এবং আওয়ামী লীগের সংবিধান অনুমোদন না করতেন তাহলে পূর্ব পাকিস্তানে কেন এসেছেন? এই মর্মে আওয়ামীলীগের কাছে থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতেন। “তারা কি আগে থেকেই সংবিধানের বিষয়ে আওয়ামীলীগের মতামত ও অভিপ্রায় জানেনা?”
এই পরিস্থিতিতে জনাব ভুট্টো বলেন,জাতীয় পরিষদের অধিবেশন একটি “কসাইখানায়” পরিণত হতো। এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
*******
আওয়ামীলীগের ছয়দফা প্রসঙ্গে জনাব ভুট্টো বলেন,বিদেশী বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্যের সংক্রান্ত বিষয়টি “সবচেয়ে কঠিন” ছিল।
*******
একটি প্রশ্নে জনাব ভুট্টো বলেন, পরিষদের অধিবেশনে যোগ না দেবার তার দলের যে সিদ্ধান্ত তার বিরুদ্ধে গিয়ে দলের সদস্যদের পদত্যাগ করা নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন না। এখনি পশ্চিম পাকিস্তানের ৮৫টই সিট খালি করে সেখানে উপনির্বাচন দিন, “সবগুলোই আমরা পুনরোদ্ধার করবো” তিনি বলেন।
১৯৬৯ সালের আইউব শাসনামলের সাথে এখনকার পরিষদের অধিবেশনে যোগ না দেবার তার দলের যে সিদ্ধান্ত, তাদের মধ্যে কোন সামঞ্জস্য ছিল কিনা এই প্রশ্নে; জনাব ভুট্টো বলেন, এখানে এক হবার মত কিছু উপাদান ছিল। অবশ্য তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি আগের উপলক্ষ থেকে অনেক ভিন্ন ছিল। “গোল-টেবিল বৈঠকে, বাছাই করার মত কিছু উপাদান ছিল কিন্তু জাতীয় পরিষদে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ছিল।
পরিষদের অধিবেশনে যোগ না দেবার তার দলের যে সিদ্ধান্ত তা বর্তমান শাসকদের আশীর্বাদপুষ্ট বলে তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন “পর্দার অন্তরালে” তার (ভুট্টো) এবং অন্য কারো মধ্যে চুক্তির কোন প্রশ্নই ছিল না। তবে তিনি বলেন, সেটা আওয়ামীলীগ যারা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার প্রশংসা করেছে।
……………………………