১০ ভাদ্র, ১৩৭৮ শুক্রবার, ২৭ আগষ্ট ১৯৭১
এ দিন লন্ডনে ২৪ প্রেসব্রিজ গার্ডন্সে বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী নেতৃত্ব স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় মিশন উদ্বোধন হয়। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে বাঙালী কূটনীতিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবুল ফাতেহ মহিউদ্দিন আহমদ, লুৎফুল মতিন, আব্দুর রউফ, মহিউদ্দিন চৌধুরী, আব্দুস সালাম, এক এম নূরুল হুদা ও ফজলুল হক চৌধুরী। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের দস্তখত সম্বলিত ‘লেটার অব ক্রেডিন্স’ বিচারপতি চৌধুরীকে মুজিব নগর থেকে প্রেরণ করা হয়। দূতাবাস উদ্ধোধনের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশের সাফাল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন। পাক হাইকমিশনার মিঃ সলেমন আলী বাংলাদেশ মিশন স্থাপনে প্রতিবাদ জানায়।
জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে বাংলাদেশ সরকারের শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রসঙ্গে লেখা ১৮ আগষ্টের চিঠির প্রাপ্তির কথা আজ স্বীকার করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ মত জাতিসংঘ মহাসচিব উদ্যোগ গ্রহণ না করতে পারার জন্যে অক্ষমতা ও দুঃখ প্রকাশ করেন। মহাসচিব তার সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান। জাতিসংঘের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারী দপ্তরের পরিচালক ব্রায়ান-ই আরকুহার্ট এ তথ্য জানান।
একাত্তরের এদিনে ভেনেজুয়েলার কারাকাসে ল্যাটিন আমেরিকার পার্লামেন্ট পূর্ব বাংলার পাকিস্তানী সামরিক জান্তার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক প্রস্তাব গ্রহণ করে। প্রস্তাবে বলা হয়, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন রীতিনীতি সবকিছু উপেক্ষা করে, ভৌগলিক, রাজনৈতিক ভাষাগত দিক থেকে স্বতন্ত্র একটি জাতির ওপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে পাকিস্তানীরা। তাদের কার্যকলাপের নিন্দা করে অতি সত্বর পরিস্থিতির সুন্দর রাজনৈতিক সমাধানের জন্যে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। শরনার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয় ঐ প্রস্তাবে।
অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঙালীদের বাঁচিয়ে রেখেছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, যুদ্ধক্ষেত্রের সবাইকে যুগিয়েছিল দূর্বার প্রেরণা। আজকের দিনে প্রচারিত বিশ্ব জনমত অনুষ্ঠানে বলা হয় যে বৃটেন, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণরক্ষার জন্যে অবিলম্বে সক্রিয় ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্বের সকল সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
শেখ মুজিবকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রভাবশালী আইরিশ আইনজীবি রাজনৈতিক বন্দী মার্জনা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার চেয়ারম্যান মিঃ সিয়ান ম্যাকব্রাইড।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে ঢাকায় ফেয়ার পথে আজ ডঃ এম.এ.মালিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাছে বলেন,’প্রেসিডেন্ট বর্তমানে বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত আগ্রহী’। পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করে,’ সেখানে অত্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। ‘সমাজবিরোধীদের প্ররোচনায় যারা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা বুঝতে পেরে আবার ফিরে আসছে। সেনাবাহিনী দেশের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫৫ হাজার উদ্ধাস্তু দেশে ফিরে এসেছে।
পেশোয়ারে জামাত কর্মীদের মধ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আজ গোলাম আযম বলেন,’ পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ১ মাসের মধ্যেই দুস্কৃতকারীদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী এদিন আহবান জানান আসন্ন ৬ সেপ্টেম্বরে সারাদেশে ‘জেহাদ দিবস’ পালন করার। তিনি এই দিনকে সামনে রেখে ’৬৫ সালের মতো আবার আত্মপ্রত্যয় সঞ্চয়ের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ’৬৫ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের আক্রমণের চরম জবাব দিয়েছিল এবার শিক্ষা দেবে তাদের অনুচরদের।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী