You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
নির্বাচনের মাধ্যমে দাবী আদায় না হলে আবার আন্দোলন শুরু হবেঃ শেখ মুজিব দ্য পিপল ১৮ অক্টোবর, ১৯৭০

পূর্ব বাংলার অধিকার রক্ষায় ভোটের লড়াই আমার শেষ লড়াই

ধোলাইখালে শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা
১৭ই অক্টোবর, ১৯৭০
আওয়ামী লীগের দলনেতা শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল ধোলাইখালে সংহত উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আসন্ন “ভোটের যুদ্ধ” হবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলার অধিকার আদায়ের শেষ লড়াই।

পুরোন ঢাকা থেকে তিনি জাতীয় পরিষদের আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সেখান থেকেই তার নির্বাচনী প্রচারণার সূচনা ঘটে। এ সময় শেখ মুজিব যে সব ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো পশ্চিম পাকিস্তানের পুঁজিবাদী একচেটিয়া আধিপত্যকে বজায় রাখার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, সেগুলোকে জাতীয়করণের সংকল্প পুনর্নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে বাংলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে না, ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

শেখ মুজিব বলেন, বোনাস ভাউচার পদ্ধতি বাংলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে বৃহৎ বাণিজ্য ও পশ্চিম পাকিস্তানের পুঁজিবাদী আধিপত্যের গ্রাস থেকে সুরক্ষা করা হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি ভোটকে অন্যান্য দলের দৃষ্টিতেই দেখছেন, যদিও জেলের যন্ত্রণা ভোগের বদলে স্বার্থের কারণে বাংলার মানুষকে বিকিয়ে দেয়া ঝানু রাজনীতিবিদদের মত ক্ষমতা অর্জন তাঁর রাজনীতির লক্ষ্য নয়।

তিনি বলেন, ক্ষমতার লোভ থাকলে জেল থেকে বের হবার পর পরই তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে যেতে পারতেন, বাংলার গভর্নর হতে চাইলে দীর্ঘ কারাবাসের যন্ত্রণা ভোগ না করে সহজেই সেই আসনটি দখল করতে পারতেন। কিন্তু কোন প্রলোভনই তাকে বাংলার মানুষের কল্যাণের ইচ্ছা থেকে সরিয়ে নিতে পারে নি।

আবেগঘন কন্ঠে তিনি সবাইকে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া চাইতে অনুরোধ করেন, যেন তিনি নিজের জীবন দিয়ে হলেও বাংলার সেবার করার শক্তি ধরে রাখতে পারেন। তিনি জানান, মানুষের কাছ থেকে যে বিপুল স্নেহ ও ভালবাসা পেয়েছেন এবং তাঁর ফাঁসি ঠেকাতে মানুষ যে অভাবনীয় আত্মত্যাগ করেছে, একমাত্র নিজের জীবন দিয়ে তিনি তার প্রতিদান দিতে পারেন।

তুমুল করতালির মধ্যে শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, নির্বাচনের মাধ্যমে ছয়-দফা দাবি পূরণ না হলে তিনি আবারও বাংলার তেজোদ্দীপ্ত মানুষকে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে আহ্বান জানাবেন।

শহরের নির্বাচনকেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ঢাকার মানুষই তার মুক্তির জন্য সবচেয়ে বেশি রক্তত্যাগ করেছে এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারেই তিনি তারুণ্যের দশটি বছর কাটিয়েছেন। ঘটনাক্রমে কাশ্মিরি বংশোদ্ভূত খাজা খায়রুদ্দিনের চাইতে তিনি নিজেকে বেশি “ঢাকাইয়া” বলে দাবি করেন। মিথ্যার মাধ্যমে ঢাকাবাসীর সাথে তার রক্তের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন এবং জানান, নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো তাদের সাথেই কাটিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন স্থানীয় সমস্যা নিয়ে, বিশেষ করে অবরুদ্ধ ধোলাইখালের জন্য বিকল্প নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং ভূমিহীন দরিদ্রদের জন্য আবাসন প্রকল্প নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

শেখ মুজিব বলেন, পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে কোটি কোটি রুপি পানিতে ঢালা হচ্ছে এবং ১৯৫৪ সালে যুক্ত ফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয়ের পর যা হয়েছিল, সেভাবেই মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর মুলতুবি রাখার জন্য স্বার্থান্বেষী চক্র এখনও ষড়যন্ত্রের বীজ বুনে যাচ্ছে।

রাওয়ালপিন্ডি, অক্টোবর ২৮:সমগ্র-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট, শেখ মুজিবুর রহমান, একটি “বাস্তব এবং আধুনিক” গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা এবংতার দলের ছয় দফা ফর্মুলার ভিত্তিতে দেশেরঅঞ্চলেরমধ্যেন্যায়বিচারপ্রতিষ্ঠায়পূর্ণপ্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনপ্রদানেরওপরগুরুত্বারোপ করেছেন।

জনগণকেরাজনৈতিকনেতাদেরদলীয়ইশতেহারএবংপ্রোগ্রামসম্পর্কেঅবহিতকরারউদ্দেশ্যেসরকারআয়োজিতএকটিসিরিজেরপ্রথমপর্বেবেতারওটেলিভিশনেপ্রচারিতএকটি৩০মিনিটেরবক্তৃতায়, তিনিবলেন: “এইধরণেরএকটিফেডারেলগণতান্ত্রিককাঠামোতে, সামাজিকবিপ্লবঘটাতেঅবশ্যইএকটিআমূলঅর্থনৈতিককার্যক্রমবাস্তবায়নকরতেহবে।”

আওয়ামীলীগপ্রধানবলেনযে, প্রাদেশিকঅবিচারসমস্যারসমাধানেসাংবিধানিককাঠামোপুনর্বিন্যাসেরজন্যেতারপার্টিরছয়দফাফর্মুলারওপরভিত্তিতেফেডারেশনইউনিটেপূর্ণপ্রাদেশিকস্বায়ত্বশাসনঅর্পণেরমাধ্যমেএকটি “যুক্তিসঙ্গতসমাধান” উপস্থাপিতহয়েছে।

তিনিবলেনঃএধরণেরস্বায়ত্বশাসনকার্যকরীকরারজন্যেঅবশ্যইঅর্থনীতিপরিচালনাঅন্তর্ভুক্তথাকতেহবে, এইকারনেতিনিআর্থিকএবংরাজস্বনীতিএবংবৈদেশিকমুদ্রাআয়এবংবৈদেশিকবাণিজ্যওসাহায্যেমধ্যস্থতাকরাসহঅন্যান্যক্ষমতা, ফেডারেশনইউনিটেরনিয়ন্ত্রণেথাকারওপরজোরপ্রদানকরেন।

তিনিবলেন, একটিন্যায়সঙ্গতফেডারেলসমতাঅর্জনেরজন্যেফেডারেটিংইউনিটকেতাদেরঅর্থনৈতিকভাগ্যেরউপরপূর্ণনিয়ন্ত্রণেরক্ষমতাদিতেহবে, যখনফেডারেলসরকারেরকাছে “পররাষ্ট্রওপ্রতিরক্ষাএবংনির্দিষ্টরক্ষাকবচসাপেক্ষেমুদ্রাব্যবস্থার” দায়িত্বন্যাস্তথাকবে।

শেখমুজিব “দুইপ্রদেশেরমধ্যেবিদ্যমানঅর্থনৈতিকঅসমতারভয়াবহরেকর্ডসম্পর্কেবক্তব্যরাখেন।২২বছরপরে, বাঙালিমাত্র১৫শতাংশএবংপ্রতিরক্ষাচাকুরিতে১০শতাংশেরওকমবলেগণনাকরাহয়েছে।”

তিনিবলেনঃচতুর্থপরিকল্পনায়কেন্দ্রীয়সরকারেরব্যর্থতারএকটিস্বীকারোক্তিবরাদ্দআছে, সরকারযতইশক্তিশালীহোকনাকেন, যেনএটিপূর্বেরঅবিচারেরপ্রতিবিধানকরে।
ফেডারেল সার্ভিস
আওয়ামীলীগেরফেডারেলনকশাবিশদভাবেব্যাখ্যাকরতেগিয়ে, শেখমুজিবুররহমানবলেন, এটিএছাড়াওপাকিস্তানেরসবসার্ভিসবাতিলকরেএবংফেডারেলসার্ভিসদ্বারাতাদেরপ্রতিস্থাপনকরারবিবেচনাকরছ, যেখানেপাকিস্তানেরসকলঅংশথেকেজনসংখ্যারউপরভিত্তিকরেনিয়োগপ্রদানকরাহবে।
তিনিবলেন, “আমরাআরওবিশ্বাসকরিযেএকটিআধাসামরিকবাহিনীহিসেবেএকটিমিলিশিয়াবাহিনীররক্ষণাবেক্ষণজাতীয়নিরাপত্তারস্বার্থেকার্যকরভাবেঅবদানরাখতেসক্ষমহবে।”
<2.128.559>

আওয়ামী লীগ সভাপতির দৃষ্টিভঙ্গি এমন ছিল যে “সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং বৈষম্যের উৎপত্তি” অপসারণের মাধ্যমে, এই নকশা একটি শক্তিশালী পাকিস্তান নিশ্চিত করবে। তিনি বিশ্বাস করতেন এই সাংবিধানিক কাঠামোয়, একটি “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সামাজিক বিপ্লব এবং একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক শোষণমুক্ত অর্ডার তৈরি করতে” সমর্থ হবে।

তার দলের অর্থনৈতিক কর্মসূচী বর্ণনা করতে গিয়ে, আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন জাতীয়করণের মাধ্যম পাবলিক মালিকানার অধীনে ব্যাংকিং ও বীমা সহ অর্থনীতির মূল এলাকা স্থাপন করা একান্ত প্রয়োজনীয় ছিল।
“নতুন অর্ডারে, কর্মীরা শিল্প এন্টারপ্রাইজের মূলধন এবং ব্যবস্থাপনায় ন্যায়সঙ্গত ভাগ বহন করবে” তিনি বলেন।
শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, বেসরকারি খাতেরনিজস্বকর্মক্ষেত্রে ছিল এবং এটিকে অবশ্যই অর্থনীতিতে পূর্ণ অবদান রাখতে হবে তবে একচেটিয়া এবং সিন্ডিকেট “অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে হবে” বলে তিনি যোগ করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, পাট ও তুলার বাণিজ্য জাতীয়করণ, অর্থকরী ফসলের গুণাবলীর উন্নতি এবং উৎপাদনকারীদের একটি সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল মূল্য নির্ধারণে আরও ব্যাপক সমর্থন এবং উৎসাহের আবেদন করেন।

জমিদারির শেষ
কৃষি খাত সম্পর্কে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানেজায়দারগিরি জমিদারি এবং সরদারি ব্যবস্থা অবশ্যই বিলুপ্ত করতে হবে এবং ভূমি সম্পত্তির ওপর আরোপকৃত সর্বোচ্চ উচ্চতার এরূপ জমি এবং সরকারি ‘খাস’ জমি ভূমিহীন কৃষকের কাছে নতুনভাবে বিতরণ করতে হবে।
কৃষিকে আধুনিকায়নের জন্য, তিনি বলেন কৃষকদেরকে তাদের জমি বহুমুখী সমবায় জোটের অন্তর্ভুক্ত করার জন্যে প্ররোচিত করা উচিত।
শেখ মুজিব বলেন, তার দল ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভূমি রাজস্ব বিলোপ করবে এবং এ ধরণের জমির সকল বকেয়া রাজস্ব মওকুফ করবে, “চূড়ান্তভাবে, আমরা বিদ্যমান ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা বাতিলের জন্যে সংকল্প করেছি” – তিনি যোগ করেন।
তিনি অর্থনৈতিক অবকাঠামোর অংশ গঠনে অত্যাবশ্যক এলাকার উদ্ধৃতি দিয়ে, তিনি বলেন এসব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবশ্যই বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ এবং পরিবহন এবং যোগাযোগে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।

তার দ্বারা প্রস্তাবিত ব্যবস্থার মধ্যে ছিলঃ জরুরী ভিত্তিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যে একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, পশ্চিম পাকিস্তানে জলাবদ্ধতা এবং লবণাক্ততা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণে ব্যাপক সম্প্রসারণ, পূর্ব পাকিস্তানের যমুনা, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী নদীর ওপরে এবং সিন্ধু পাঞ্জাবের নদীর ওপরে ব্রীজ তৈরি, এবং সমুদ্রবন্দরের উন্নয়ন এবং অন্তর্দেশীয় নদী বন্দর ও সড়ক ও রেলপথ উন্নয়ন।

শিক্ষা, হাউজিং
শিক্ষা খাতেবৃহত্তর বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, মোট জাতীয় উৎপাদনের অন্তত চার শতাংশ এই খাতে ব্যয় করা উচিত এবং স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা যথেষ্ট পরিমানে বৃদ্ধি করা উচিত, “অনন্য সাধারণ পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে নিরক্ষরতা অবশ্যই নির্মূল করতে হবে” তিনি অনুধাবন করেন।

তিনি বিনামূল্যেপাঁচ বছরের মধ্যে সব শিশুদের জন্য বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারের জন্যে একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করা, সমাজের সকল স্তরের জনগণের জন্যে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ সুগম, মেডিকেল ও কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় সহ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের দ্রুত প্রতিষ্ঠা, অবিলম্বে ইংরেজীর স্থলে বাংলা এবং উর্দু দ্বারা সর্বস্তরে প্রতিস্থাপন নিশ্চিতকরণ এবং আঞ্চলিক ভাষার উন্নয়নে সামগ্রিক প্রচেষ্টার জন্যে বলেন।
শহরগুলোর সমস্যার ব্যাপারে যেখানে নিম্ন আয়ের গ্রুপগুলো “মানবেতর জীবন-যাপন” করছে, তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ উন্নয়ন অবশ্যই দরিদ্র সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রয়োজনকে যোগানের মনোযগ দিয়ে এবং কম খরচের বাসস্থানের প্রয়োজনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, তিনি প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি পল্লী চিকিৎসা কেন্দ্র এবং প্রত্যেক থানা সদরে একটি হাসপাতাল, চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতকদের জন্যে গ্রামাঞ্চলে জাতীয় সেবার প্রবর্তন এবং প্রচুর সংখ্যক পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদেরকে প্যারা-মেডিকেল প্রশিক্ষণের জন্যে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
অর্থনীতিতে শিল্প শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের মৌলিক অধিকার একটি ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে দরকষাকষি এবং একটি ধর্মঘটডাকার নিশ্চয়তা অবশ্যই প্রদান করতে হবে, জীবিকা নির্বাহের জন্যে একটি মজুরি এবং তাদের ও তাদের সন্তানদের জন্যে মৌলিক সুবিধা যেমন আবাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, এবং শ্রম আইনের দ্বারা তাদের মৌলিক অধিকার সীমাবদ্ধ করা অবশ্যই রহিত করতে হবে।
সকল নাগরিকের সমতার বিষয়ে তার দলের বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা সবসময়ই সব ধরনের কমিউনিজমের বিরোধিতা করেছি”। তিনি বলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অন্যান্য সকল নাগরিকের সমান সুবিধা ভোগ করবে এবং আইনেরক্ষেত্রে সমান নিরাপত্তা ভোগ করবে।
তিনি বলেন, “মোহাজিরদেরকে” নাগরিক জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে “যাতে তারা সাধারণ জনগণের সাথে মিশে যেতে পারে এবং ফলশ্রুতিতে জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে তাদের সমান অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে।”
তিনি ছয়-দফা বা “আমাদের অর্থনৈতিক প্রোগ্রাম” ফর্মুলাতে ইসলাম বিপন্ন হয়েছে এমন কথাকে “মিথ্যা প্রচারণা” বলে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, “প্রদেশ ও প্রদেশের মধ্যে এবং মানুষ ও মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার উৎসাহিত করে না এমন যা কিছুই থাকুক, সেটা ইসলামে বিরোধিতা করা যাবে।”
“আমরা সাংবিধানিক নীতির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছি যে ইসলামের সংযোগস্থল পাকিস্তানে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী কোন আইন প্রণয়ন বা আরোপ করা উচিত হবে না।”
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “শক্তিশালী গোষ্ঠি” যা পাকিস্তানকে ২২ বছর শাসন করেছে তারা জনগণের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর প্রতিরোধে যা কিছু করা সম্ভব সবকিছু করবে, কিন্তু তিনি উল্লেখ করেন যে একটি দৃঢ়সংকল্প মানুষ সফলভাবে এই ধরনের নিপীড়নের বাহিনীকে প্রতিহত এবং পরাস্ত করতে পারে।

তিনি বলেন, “আমরা তাই, আমাদের সমাজের প্রতিক্রিয়া বাহিনীর ওপর নোটিস জারি করি যে, পাকিস্তানের জনগণের সাথে আমরা, তাদেরমোকাবিলা করবো এবং যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়, প্রতিটি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে প্রতিহত করবো।”
তিনি বলেন তার দল একটি “সত্যিকারের স্বাধীন, বিশ্বব্যাপী ক্ষমতা দ্বন্দ্বে জড়ানো এড়ানোর জন্যে নিরপেক্ষ বৈদেশিক কূটনীতি” অনুসরণের জন্যে দৃঢ়বদ্ধ।

তিনি বলেন, “আমরা সিয়াটো, সেন্টো এবং অন্যান্য সকল সামরিক চুক্তি থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্যে, এবং ভবিষ্যতে যে কোন ধরনের সমর্থন এড়ানোর জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সাম্রাজ্যবাদ উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামকে সমর্থন করি।”

কাশ্মীর, ফারাক্কা
“সবার সাথে বন্ধুত্ব এবং কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়” – এই নীতির সাথে তাল মিলিয়ে আমরা সব রাষ্ট্রের সাথে এবং বিশেষত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের নিয়মমাফিক সম্পর্ক হবে আমাদের জনগণের জন্যে সেরা সুবিধা।
“আমরা, অতএব, আমাদের অসমাপ্ত দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তির জন্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব অন্তর্ভুক্ত করছি। জাতিসংঘের রেজুলেশন অনুযায়ী আমরা কাশ্মীর বিরোধের একটি ন্যায্য নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।”
“হুমকি বা কবর এবং বাংলার অর্থনীতিকে স্থায়ী ক্ষতিসাধনের নিমিত্তে ফারাক্কা বাঁধের সমাপ্তি অবিলম্বে পূরণ করা আবশ্যক। আরও দেরি না করে এই সমস্যার একটি ন্যায্য সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।”
তিনি আইনি কাঠামো আদেশের আওতায় “নিয়ন্ত্রণ মূলক বিধান” এর প্রত্যাহারের জন্যে, সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কারনে উদ্ভূত সকল মামলা প্রত্যাহারের জন্যে ডাক দেন। — এ.পি.পি.

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!