৭ ভাদ্র, ১৩৭৮ মঙ্গলবার, ২৪ আগষ্ট ১৯৭১
এ দিনে এক কোম্পানী পাকসেনা নাটোদা থেকে মুজিবনগর যাবার পথে নায়েক সুবেদার আবদুল মতিন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধারা অ্যামবুশে পড়ে। এ মুক্তিযোদ্ধারা আগে থেকেই বাগুরাণ ও মানিকনগর নামক স্থানে অবস্থান নিয়েছিল। আড়াই ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে। শত্রুদলের ৯ জন নিহত হয়, আহত অনেকে। বীর মুক্তিবাহিনীর একজন আহত হন। সুবেদার আবদুল ওয়াহাবের দল কামালমুড়া ব্রিজ পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয় এদিন। এখানে সমবেত রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের চাপে পিছুহটে কালামুড়া ব্রিজের ২ মাইল দক্ষিণে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা অ্যামবুশ করে মাধবপুর ও মীরপুরের মধ্যবর্তী স্থানে। পাকসেনা বহনকারী ২ টি বাস, ৩ টি জীপ, দুই ডজন গাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের ফলে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। নিহত হয় অনেক পাকসেনা। ১ রাজাকারসহ ৩ জন পাকিস্তানী সেনাকে আটক করে মুক্তিযোদ্ধারা।
শান্তি কমিটির আহবায়ক মুসলিম লীগ নেতা খাজা খয়েরউদ্দীন এ দিন পশ্চিম পাকিস্তান যান। জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রামে’ এ দিনের প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, লাহোরে জামায়াতে ইসলামীর এক সম্বর্ধনা সভায় গোলাম আযম দেশের বর্তমান অবস্থার জন্যে দায়ী করেন কতিপয় স্লোগান সর্বস্ব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। হানাদাদের নির্বিচার গণহত্যা ‘ দুষ্ক্রিতকারী’ দমনের জন্যে পর্যাপ্ত নয় বলে জানান গোলাম আযম। আর কোনদিন যাতে ‘তথাকথিত স্বাধীনতা’র জন্যে বাঙালীরা মাথাচাড়া দিতে না পারে তার জন্যে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
পূর্ব পাকিস্তান নেজামে ইসলামী দলের জেনারেল সেক্রেটারী মাওলানা আশরাফ আলী ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেন, সীমান্ত এলাকায় নিরীহ জনগণের ওপর ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা অত্যাচার করছে। তিনি এ সময়ে রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও,দিনাজপুর, সৈয়দপুর, রংপুর, বগুড়া এলাকায় ঘাতকদের সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে সফর করেন।
মুসলিম লীগ (কাইয়ুম)-এর ১৮ জন নেতা-কর্মী এক বিবৃতিতে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের শত্রুদের দমনের আহ্বান জানান।
সাতক্ষীরার আসাশুনি থানার বুধহাটার রাজাকাররা আক্রমণ চালায় মুক্তিযোদ্ধাদের ২০/২৫ জনের একটি দলের ওপর। মুক্তিযোদ্ধাদের এ সময় নদীপথে নৌকায় যাচ্ছিলেন। রাজাকাররা অতর্কিতে তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করে ২ জনকে, আটক করে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী