You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.07 | ২১ শ্রাবণ, ১৩৭৮ শনিবার, ৭ আগষ্ট ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

২১ শ্রাবণ, ১৩৭৮ শনিবার, ৭ আগষ্ট ১৯৭১

-এদিন ‘দি টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত মিঃ পিটার হ্যাজেল হার্ষ্ট-এর এক সংবাদে বলেন মস্কো ও দিল্লীতে সম্প্রতি গৃহিত কয়েকটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সম্ভাবনা নিকটতর করবে বলে অনেকে মনে করে। প্রথমতঃ সোভিয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিঃ গ্রোমিকোর অপ্রতাশিতভাবে দিল্লী সফরের ঘোষণায় শীঘ্রই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে সম্ভবনার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এই সফরে দু’টি দেশের বিদ্যমান সম্পর্কে আরো নিকটতর হবে। দ্বিতীয়তঃ প্রবীন কূটনীতিবিদ ডিপি ধরকে গোপন আলোচনার জন্য মস্কো প্রেরণঃ তৃতীয়তঃ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও তাঁর সহকর্মীদের এ সপ্তাহ প্রথম দিকে দিল্লী সফরকালে শ্রীমতী গান্ধী ও ভারতীয় অফিসারদের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। উল্লেখ্য, ‘দি অবজারভার’ পত্রিকায় (আগষ্ট ৮) প্রকাশিত দেব মুরারকা কর্তৃক প্রেরিত এক সংবাদে বলা হয় যে “সম্প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের অবনিত ঘটে। পূর্ব বাংলায় অনুসৃত দমননীতি পরিহার এবং বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রস্তাব উপেক্ষা করার ফলে সোভিয়েত নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন। ডাঃ কিসিংজ্ঞার কর্তৃক গোপনে চীন সফরের ব্যাপারে ইয়াহিয়া খানের সহায়তা ও মস্কোর পক্ষে উদ্বেগজনক। [ The role played by yaha khan in arranging Dr Henry Kissinger’s visit to peking also joilted Moscow severely]”

-দুই নম্বর সেক্টরের সুবেদার আবদুল ওহাব তাঁর প্লাটুন নিয়ে মন্দভাগ গ্রাম এলাকায় পাক বাহিনীর শত্রু ডিফেন্সের ওপর আক্রমণ চালায়। তীব্র আক্রমণে পাক বাহিনী তাহাদের প্রায় ১০০টি বাঙ্কার ছেড়ে পিছু হটে। যাওয়ার পথে তারা বহু আমুনিশন ফেলে যায়। এই আক্রমণের সময় মেজর আজিজ পাশা তার মুজিব ব্যাটারী ও সুবেদার মেজর শামসুল হত তার ৩ “মর্টারের সাহায্যে সর্বপ্রকার সাহায্য করে।

(স্বাঃ যুঃ দঃ)

-তিন নম্বর সেক্টর ও ‘এস’ ফোর্সের অধিনায়ক মেজর কে, এম, শফিউল্লাহ জানিয়েছেন, ৭ আগষ্ট ও ১৬ আগষ্ট কটিয়াদীতে পাকবাহিনীর ওপর অ্যামবুশ করে মুক্তিবাহিনী। বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয় পাক-সেনারা।

-৪ নম্বর সেক্টরের লেঃ কঃ আবদুর রব এদিন শাহাবজপুর ও পল্লাথল এলাকায় অ্যামবুশ করে পাকিস্তানী টহল সেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে তারা ব্যবহার করে মর্টার, ভারি কিছু অস্ত্র। এই হামলায় মারা যায় ৪ জন পাক সেনা।

-৭ নম্বর সেক্টরে এদিন সকালে গেরিলা প্রধান আহসান হাবিবের নেতৃত্ব তার দল সাবগ্রামে একটি মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর একটা লরী সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে।

এতে মারা যায় ৩ জন সেনা, আহত হন ১ জন।

এ দিন কাদেরিয়া বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা খসরু মিয়া কালিহাতী থানায় শয়া পালিমা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে পাকসেনা,রাজাকার, আলসমস ও বদর বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন সে জন্য তাঁকে “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

-গোলাম আযম কুষ্টিয়ার পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে শান্তি কমিটির দালালদের সভায় বলেন, ‘শেখ মুজিব ও বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগ ভারতের সঙ্গে আতাত করে জনগনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকাতা করেছে। তাদের এই বিশ্বাসঘাতকতার ফলশ্রুতিতে দেশের মানুষ আজ অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে। আমাদের ভাবী বংশধররা কোনদিন এই সব বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করবে না। দেশকে এদের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে আমাদেরকেও জবাবদিহি করতে হবে। (সংবাদপত্র)

-নেত্রকোনার বাংলা প্রাইমারী স্কুল প্রাঙ্গনে শান্তি কমিটির নেতা ফারুক  আহমদ বলেন, পাকিস্তানে টিকে না থাকলে মুসলমানের ধর্ম, কৃষ্টি, তাহজীব তমদ্দুন, ইজ্জত কিছুই রখা হবে না। ২৪ বছর পূর্বে এ দেশের মুসলমান যেমন অধিকারবঞ্চিত ও অবেহেলিত ছিলো ঠিক তেমনি অধিকারহীন হয়ে হিন্দুদের গোলাম পরিণত হবে। আর এ জন্যেই শেখ মুজিব ও তার বাহিনী চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। সভায় সভাপতি মঞ্জুরুল হক মুক্তিযোদ্ধাদের ‘ডাকাত বাহিনী’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এই ডাকাতদল দেশকে মুক্ত করার নামে হিন্দুদের দাসত্বে আবদ্ধ করতে চায়। কাজেই এদেরকে মুক্তিবাহিনী বলা ন্যায়সঙ্গত নয়।…আকাশবাণীর জঘন্য, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রচরণা কোনো মুসলমানেরই শোনা উচিৎ নয়। (সংবাদপত্র)

-A Foreign office spokesman of the Bangladesh Government to-day described Pakistan’s ‘White paper’ on Bangladesh as a “Bunch of White lies”. The spokesman said: “The army junta in its heinous move to hoodwick world opinion, so strong against it has completely distorted contemporary events and facts”. The facts were too clear to be reiterated and largely known to the world by the “ courtesy to the world fraternity of journalists” (TOI) (BD-1, P.341)

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী