You dont have javascript enabled! Please enable it! 1970.07.23 | শিরোনাম সূত্র তারিখ ছাত্রলীগ আহূত জরুরী সভার প্রস্তাবাবলী | পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সার্কুলার - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনাম

সূত্র তারিখ
ছাত্রলীগ আহূত জরুরী সভার প্রস্তাবাবলী পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সার্কুলার ২৩ জুলাই, ১৯৭০

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের ২২ এবং ২৩শে জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত জরুরী সভার প্রস্তাবাবলী

শোক প্রস্তাবঃ

আফ্রো-এশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান শিক্ষাগুরু, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা, আধুনিক ইন্দোনেশিয়ার জনক “বাংকার্নো”, বৃহৎ শক্তি জোটবহির্ভূত তৃতীয় জোটের জনক, নয়া উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের শিকার ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ আহমদ সুকার্নোর মহাপ্রয়াণে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের অদ্যকার এই সভা গভীর শোক প্রকাশ করিতেছে এবং তাঁহার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করিতেছে।

রাজনৈতিক প্রস্তাবঃ

এই সভা গভীর উদ্বেগের সহিত দেশের রাজনৈতিক অবস্থার ক্রম-অবনতি লক্ষ্য করিতেছে। আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশবাসী যখন গভীর আগ্রহের সহিত নির্বাচনে সহায়ক সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার আশা করিতেছিল, ঠিক সেই মুহুর্তে সরকার কতৃক ছাত্র, শ্রমিক এবং রাজনৈতিক নেতৃ ও কর্মীদের উপর সরকারী নির্যাতন ও নিষ্পেষণের খড়গ নামিয়া আসিয়াছে। ব্যাপকহারে সামরিক আইনের অপপ্রয়োগ ঘটাইয়া ছাত্র-শ্রমিক রাজনৈতিক নেতৃ ও কর্মীবৃন্দকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হইতেছে। অধিকার এবং রুটি-রুজির দাবী তুলিয়া শ্রমিক পাইতেছে কারাদণ্ড-বেত্রদণ্ড, গুলি, বেয়নেট; খাদ্য ও কর মওকুফের দাবী তুলিয়া কৃষক পাইতেছে চরম নির্যাতন, মেহনতী জনতা বাঁচার নূন্যতম অধিকার চাহিয়া নিষ্পেষিত হইতেছে। সাম্প্রতিককালে ঢাকায় ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘটজনিত পরিস্থিতি, সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার স্টেশনের শ্রমিকদের শাস্তিদান সম্পর্কিত পরিস্থিতি , গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা এবং জননেতা এম, এ আজীজের গ্রেফতারজনিত পরিস্থিতি দেশের জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সঞ্চার করিয়াছে। এই সভা মনে করে যে দেশের ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী জনতা এবং রাজনৈতিক নেতৃ ও কর্মীবৃন্দের উপর এই নির্যাতনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নীরব দর্শক হইতে পারে না। যেহেতু পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ দেশের আপামর জনগণের উপর যে কোন মহলের চক্রান্তকে নস্যাৎ করিয়া দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধমূল। এবং যেহেতু সরকারী নির্যাতন এই গণতান্ত্রিক সরকার গঠন তথা নির্বাচনের সহায়ক গণতান্ত্রিক পরিবেশ গঠনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

উপরোক্ত কারণে এই সভা সরকারের নিকট আগামী ৩১শে জুলাই, ১৯৭০ তারিখের মধ্যে সর্বপ্রকার নির্যাতনমূলক পথ প্রত্যাহার করিয়া নিম্নলিখিত দাবীগুলি পূরণের জোর দাবী জানাইতেছেঃ

(১) জননেতা এম, এ, আজীজ, মন্টু, সেলিম, হোসেন, বিমলসহ সকল ছাত্র-শ্রমিক-রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে হইবে।

(২) সকল ছাটাইকৃত ও সাসপেণ্ডকৃত শ্রমিক বা ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে কাজে পুনর্বহাল করিতে হইতে ও তাহাদের ন্যায্য দাবী মানিয়া লইতে হইবে।

(৩) সকল প্রকার রাজনৈতিক বা ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকলাপ সম্পর্কিত গ্রেফতারী পরোয়ানা, হুলিয়া, খসরুর দণ্ডাদেশসহ সকল দণ্ডাদেশ, মামলা বা নির্যাতনমূলক হয়রানি বন্ধ করিতে হইবে।

(৪) প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসমূহ, নটরডেম কলেজ, নবাবপুর স্কুলসহ প্রদেশের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসমূহ অবিলম্বে খুলিতে হইবে।

অন্যথায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নিজেদের পথ বাছিয়া লইবে এবং দেশব্যাপী তুমূল আন্দোলন গড়িয়া তুলিবে।

 

সাংগঠনিক প্রস্তাবঃ

(১) অদ্যকার এই সভা এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে যে, যেহেতু টাঙ্গাইল মহকুমা শাখা জেলায় রূপান্তরিত হইয়াসে সেহেতু বর্তমান মহকুমা শাখাকে স্বীকৃতি না দিয়া জেলা শাখাকে সরাসরি থানা শাখার সাথে যোগাযোগ করিয়া সাংগঠনিক কার্য পরিচালনা করার নির্দেশ প্রদান করিতেছে।

(২) এই সভা বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে স্ব স্ব জেলা ও মহকুমার যে সমস্ত ছাত্রলীগ কর্মী ও সামরিক আইনে সাজাপ্রাপ্ত, হুলিয়া ও গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হইয়াছে তাঁহাদের পূর্ণ নাম, সাজার বিররণসহ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করিতেছে।

(৩) এই সভা যে সমস্ত জেলা এখনো কেন্দ্রীয় সংসদের প্রতিনিধির নাম প্রেরণ করে নাই সে সমস্ত জেলাকে অবিলম্বে নাম প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করিতেছে।

(৪) এই সভা বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে অবিলম্বে ঠিকানা প্রেরণের জন্য নির্দেশ প্রদান করিতেছে।

শাজাহান সিরাজ

সাধারণ সম্পাদক,

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ।

————————————————————————–

……শাখার জ্ঞাতার্থে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এম, এ, রশীদ এবং রেজাউল হক মোস্তাক দফতর এবং সহ-দপ্তর সম্পাদক, ছাত্রলীগ।