শিরোনাম: আইনগত কাঠামো আদেশের প্রতিবাদ এবং ৬ ও ১১-দফা প্রতিষ্ঠার দাবী দিবস
সূত্র পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ
তারিখ: ৫ এপ্রিল ,১৯৭০
ইয়াহিয়ার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ৭ই এপ্রিল মঙ্গলবার
“দাবী দিবস’’
১৯৬৯ সনের ৬-দফা সম্বলিত ঐতিহাসিক ১১-দফা ভিত্তিতে গত শহীদের রক্তের বিনিময়ে গড়িয়া উঠা গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে দেশব্যাপী সামরিক শাসন জারি করা হইয়াছিলো। সামরিক আইন জারির পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান বিভিন্ন সময়ে তাঁহার বক্তব্যের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর এর কথা ঘোষণা করিয়াছিলেন। ইয়াহিয়ার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসী আশা করিয়াছিলো যে বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবীসহ সমাজের বিভিন্ন মূল সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত সার্বভৌম পার্লামেন্ট এর উপর ন্যস্ত হইবে।
দীর্ঘ বার বছরের আইয়ুবের অগণতান্ত্রিক সরকারের মূল উচ্ছেদ করিয়া সারাদেশে যে মুহুর্তে শর্তবিহীন নিরংকুশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হইবার সামান্যতম সম্ভাবনা দেখা দিয়াছিল গত ২৮শে মার্চে ইয়াহিয়ার ভাষণ ও ৩০শে মার্চ তারিখে ইয়াহিয়ার ঘোষিত “ শাসনতান্ত্রিক আইনগত কাঠামো’’ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সে আশা দূরীভূত হইয়াছে। শুধু তাহাই নয় জনজীবনে এক বিরাট জিজ্ঞাসা দেখা দিয়েছে যে –“ তাহা হইলে বাংলার ও বাঙ্গালীদের কিদ অশা হইবে ’’ ।
ইয়াহিয়া ঘোষিত আইনগত কাঠামোতে একটা দিক লক্ষণীয় যে পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের সংহতি ও অখন্ডতাকে জোর করি চাপাইয়া দেওয়ার চেষ্টা করা হইয়াছে। বিশেষ করিয়া আইনগত কাঠামোর ২৫নং বিধিতে গণপরিষদের উপর সন্দেহ প্রকাশ ও ২৭নং বিধিতে ইয়াহিয়ার একনায়কত্ব মূলক যে মনোভাব প্রকাশ পাইয়াছে তাহা সকলের মূলনীতিবিরোধী। দেশের আপমর জনসাধারণের সার্বিক মঙ্গলের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া আমরা স্পষ্ট ভাবে জানাইয়া দিতে চাই যে ইয়াহিয়া প্রণীত এই নীতিমালা কোন ভাবেই এদেশের সংগ্রামী মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য নহে ।
বাংলার সাত কোটি মানুষের বাঁচিয়া থাকিবার উপায় হিসাবেই ৬-দফা ও ১১-দফা দাবী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই দেশবাসীর মনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর খেয়ালের উপর নির্ভর করিয়া ৬-দফা ও ১-দফা দাবিকে কোন ভাবেই নস্যাৎ হইতে দিবো না। আমরা মনে করি একমাত্র ৬-দফা ও ১১-দফার বাস্তবায়নই পাকিস্তানের অখন্ডতাকে বজায় রাখতে পারে এবং স্বায়ত্তশাসন ও ভাবী শাসনতন্ত্রের প্রশ্নে বাংলার জাগ্রত মানুষ ৬-দফা ও ১১-দফার সামান্যতম বিচ্যুতিও স্বীকার করিবেন না বরং প্রয়োজনবোধে আরও দুর্বার আন্দোলন সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলার ছাত্র-শ্রমিক,কৃষক ও মেহনতি মানুষ বাংলার বিরুদ্ধে সকল প্রকার ষড়যন্ত্রকে রুখিয়া দাড়াইবে।
বর্তমান অস্থায়ী সরকার কত্তৃক ঘোষিত শিক্ষানীতিকে প্রদেশের ছাত্রসমাজ পূর্বেই বর্জন করিয়াছে। পুনর্বার সরকার সেই একই শিক্ষানীতিকে পিছন দরজা দিয়া চালু করার চেষ্টায় লিপ্ত রহিয়াছে। আমরা পুনরায় এই শিক্ষানীতির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করিতেছি।
সারাদেশে বতর্মানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজমান থাকা সত্তেও বতর্মান সামরিক সরকার ছাত্র-শ্রমিক,কৃষক ও রাজনৈতিক কর্মীদের সামরিক আইনে গ্রেফতার বিভিন্ন দন্ডে দন্ডিত করিতেছে। আজ ছাত্রনেতা খসরু,মন্টু ও সেলিমের উপর ১৪ বৎসর সশ্রম কারাদন্ডাদেশ রহিয়াছে।আমি অবিলম্বে উক্ত আদেশ প্রত্যাহারের দাবী জানাইতেছি।
উপরোক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশের মানুষকে এক ও অবিভাজ্যহিসাবে সকল চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইতে হইবে।আসুন দলমত নির্বিশেষে আমরা এদেশের ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক জনতা এক সংগ্রামী ঐক্য গড়িয়া তুলি।তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে আগামী ৭ই এপ্রিল মঙ্গলবার মিছিল ও সভা- বিক্ষোভের মাধ্যমে ‘দাবী দিবস’ পালন করি এবং বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তুলি :
*ইয়াহিয়ার ঘোষিত আইনগত কাঠামো বাতিল করতে ৬ -দফা ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন ও ১১-দফা ভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য সার্বভৌম গণপরিষদ গঠন করিতে হইবে।
*বর্তমান সামরিক সরকার প্রণীত অগণতান্ত্রিক শিক্ষানীতি বাতিল করিতে হইবে।
*ছাত্রনেতা খসরু,মন্টু ও সেলিমে উপর ১৪ বৎসর সশ্রম কারাদন্ডাদেশবাতিল ও বিভিন্ন সামরিক আইনে সাজাপ্রাপ্ত ও বিনা বিচারে আটক রাজবন্দীসহ সকল ছাত্র শ্রমিক কৃষক ও রাজনৈতিক কর্মীর মুক্তি দিতে হইবে।
দাবী-দিবসের কর্মসূচি :
বেলা ১১টায় বটতলায় ছাত্রসভা ,
সভাশেষে শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন।
পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ