You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.02 | ১১ দফার ভিত্তিতে ছাত্র গণ-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ | সংগ্রামী ছাত্র সমাজের প্রচার পত্র - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১১ দফার ভিত্তিতে ছাত্র গণ-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ সংগ্রামী ছাত্র সমাজের প্রচার পত্র ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯

গন-সংগ্রাম ক্ষান্ত হইবে না

সংগ্রামী ছাত্রসমাজের রক্ত শপথ

পূর্ব বাংলার জনগনের গনতান্ত্রিক অভ্যুত্থান ঘটিতে শুরু করিয়াছে। স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী নির্মম গুলিবর্ষনের মাধ্যমে ব্যাপক ছাত্র ও জনসাধারণকে হত্যা করিয়া এবং সর্বোপরি ‘কারফিউ’ জারী করিয়াও এই গণঅভ্যুত্থানকে স্তব্ধ করিতে পারিতেছে না। শাসক গোষ্ঠীর শত গুলিবর্ষনও এই অভ্যুত্থানকে ধ্বংস করিতে পারিবে না। জালেম শাহীকে অবিলম্বে উচ্ছেদ করিয়া গনতান্ত্রিক রাজত্ব কায়েম ও পূর্ব-বাংলার পূর্ন স্বায়ত্বশাসন , সাম্রাজ্যবাদ , সামন্তবাদ  ও একচেটিয়া পুঁজিবাদকে ধ্বংস করিতে না পারিলে এবং ছাত্র, শ্রমিক , কৃষক , চাকুরীজীবি , মধ্যবিত্ত , ব্যাবসায়ী , ছোট-মাঝারি শিল্পপতিদের বিভিন্ন মুখী সমস্যার সমাধান তথা ছাত্র সমাজের ১১-দফা দাবী আদায়ের সুনিশ্চিত ব্যাবস্থা না হওয়া পর্যন্ত গনঅভ্যুত্থান ক্ষান্ত হইবে না। যে সংগ্রাম আজ শুরু হইয়াছে তাহা শেষ না করিয়া তাহার বিরাম নাই। ছাত্র সমাজের পক্ষ হইতে আমরা দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে ঘোষনা করিতেছি যে, এই সংগ্রামের শেষ না করিয়া আমরা থামিবো না এবং অতি শীঘ্র আমরা সংগ্রামের পরবর্তী বৃহত্তর কর্মসূচী দেশবাসীর নিকট উপস্থাপিত করিব। তাই ছাত্রসমাজ ও দেশবাসীর নিকট সেই বৃহত্তর সংগ্রামের প্রস্তুতির জন্য নিন্মলিখিত কর্মসূচীগুলি বাস্তবায়িত করার জন্য আহবান জানাইতেছি :

১।  প্রদেশের সকল জেলায় , মহকুমায় , থানায় , প্রতিটি গ্রামে , প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে , মহল্লায় , এবং                শ্রমিক অঞ্চলে সর্বদলীয় ছাত্র সমাজের উদ্যাগে সংগ্রাম কমিটি গড়িয়া তুলুন। এই সকল কমিটি হইতে আন্দোলনকে সুশৃঙ্খল ও সংগঠিতভাবে পরিচালনা করুন। স্থানীয় কমিটিগুলি উপরের কমিটির সহিত যোগাযোগ করুন।

২। আন্দোলনের কর্মপন্থা ঘোষনার জন্য এই সকল কমিটি হইতে প্রচারপত্র, প্রাচীরপত্র , পথসভা , মাইক ইত্যাদির মাধ্যমে জনগনের মধ্যে ব্যাপক প্রচার করুন।

৩। সকল জনগনকে সংগঠিত করুন।

৪। গ্রাম অঞ্চলে অভ্যুত্থানকে ছড়াইয়া দিন।

৫। সর্বত্র হাজার হাজার সুশৃঙ্খল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করুন।

৬। সংগ্রামকে সফল করার জন্য শ্রমিক স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে আগাইয়া আসুন।

৭। সকল সময় শৃঙ্খলা বজায় রাখুন। সকল প্রকার সরকারি উস্কানীর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন।

৮। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখিয়া ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়িয়া তুলিতে সাহায্য করুন।

৯। সকল কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশাবলী বিনা প্রশ্নে মানিয়া চলুন।

দেশবাসীর নিকট আমাদের আহবান

১। গুলিবর্ষন , বেয়নেট চার্জ ও লাঠির আঘাতে আহতদের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে রক্ত দান করুন। সান্ধ্য আইনের বিরতির মাঝে সম্ভব মত রক্ত দান করুন।

সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবার পরিজনকে সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন। এবং নিন্মরুপ ঠিকানায় সম্ভবমত অর্থ প্রেরন করুন । তোফায়েল আহমেদ , ৩১৩ ইকবাল হল, ঢাকা।

২। রিক্সাচালক, ক্ষুদে মজুর এবং দারিদ্র জনসাধারণকে বেশি করিয়া ভাড়া ও মজুরী দিন ও যথাসাধ্য সাহায্য করুন। রিক্সা মালিকদের নিকট আমাদের আবেদন তারা যেনো পুরোদিনের ভাড়া গ্রহন না করেন।

৩। দোকানদার ও ব্যাবসায়ী ভাইয়েরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অতিরিক্ত মূল্য গ্রহন না করিয়া ন্যায্য মূল্য গ্রহন করুন।

৪। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে অগ্রসর করুন। যে কোন প্রকার সরকারী উস্কানির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন এবং শৃঙ্খলা রক্ষা করুন।

১। আবদুর রউফ, সভাপতি , পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ।

২। সাইফুদ্দিন আহমেদ, সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন।

৩। মোস্তফা জামাল হায়দার, সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন।

৪। খালেদ মোহাম্মদ আলী, সাধারন, পূর্ব পাক ছাত্রলীগ।

৫। মাহবুবুল হক দোলন, জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন।

৬। ইব্রাহিম খলিল, জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন।

৭। সামসুদ্দোহা, সাধারন সম্পাদক, ছাত্র ইউনিয়ন।

৮। মাহবুব উল্লাহ, সাধারন সম্পাদক, ছাত্র ইউনিয়ন।

৯। তোফায়েল আহমদ, সহ-সভাপতি, ডাকসু।

১০। নাজিম কামরুন চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক, ডাকসু।