শিরোনাম |
সূত্র | তারিখ |
আসাদুজ্জামানের মৃত্যুতে ছাত্রদের শোকসভা ও মিছিল | দৈনিক পাকিস্তান | ২১ জানুয়ারী ১৯৬৯ |
আসাদুজ্জামানের মৃত্যুতে ছাত্রদের শোকসভা ও মিছিল
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
গতকাল সোমবার ছাত্র বিক্ষোভকালে জনৈক পুলিশ ইন্সপেক্টরের রিভলভারের গুলিতে জনাব আসাদুজ্জামান নিহত হয়েছেন। পুরনো কলাভবন ও বর্তমানে পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন ইন্সটিটিউট সম্মুখবর্তী রাস্তায় ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বেলা ২টায় পুলিশের একটাই চলন্ত জীপ থেকে জনৈক পুলিশ ইন্সপেক্টর রিভলবার বের করে গুলিবর্ষন করলে আসাদুজ্জামানের বুক গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া আরো তিনজন ছাত্র গুলিতে আহত হন। গুলিবর্ষনকালে উক্ত পুলিশ ইন্সপেক্টর ছাত্রদের ইট নিক্ষেপের ফলে নিজেও আহত হয়েছিলো তার গন্ড বেয়ে রক্ত পড়ছিলো।
ছাত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় কর্মী আসাদুজ্জামানের নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে অন্যান্য ছাত্ররা প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । তাকে দ্রুত মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে পৌছার আগেই তার মৃত্যু ঘটে।
আসাদুজ্জামানের লাশ ময়না তদন্তের জন্য নেয়া হলে বিপুলসংখ্যক ছাত্র লাশ পাহারা দিয়ে পোষ্ট-মর্টেম কক্ষ পর্যন্ত গমন করে এবং তথায় অপেক্ষা করতে থাকে। পরে গতকাল সন্ধ্যার দিকে লাশ নিয়ে ছাত্ররা মিছিলে বের হওয়ার উপক্রম করলে ডিসি ও আইজির নেতৃত্বে ইপিআর ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী মেডিক্যাল কলেজে দ্রুত প্রবেশ করে। ইত্যবসরে ছাত্ররা ট্রাক হতে লাশ হাসপাতালের অভ্যান্তরে সরিয়ে ফেলেন। ফলে পুলিশ লাশের অপেক্ষায় মেডিক্যাল কলেজের চতুর্দিকে গভীর রাত পর্যন্ত ঘিরে থাকে। পুলিশের আই জি জানান যে, নিহত ছাত্রের ভাই ছাত্রদের হাত থেকে লাশ উদ্ধারের জন্য পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন। প্রকাশ, অপর দিকে লাশ নিয়ে ছাত্ররা মিছিল করার প্রস্তুতি নিলে ‘ডাক’- এর কয়েকজন নেতাও সেখানে উপস্থিত হন। লাশের নিরাপত্তা ও আত্মীয়দের কাছে প্রত্যর্পনের নিশ্চয়তা দাবী করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘ডাক’ নেতাদের কাছে হতে মুচলেকা দাবী করলে সংগ্রামী ছাত্র নেতারা ‘ডাক’ নেতাদের প্রতি তাদের বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেন। এই পর্যায়ে নিহত ছাত্রের বড় ভাই পুলিশের আইজির হস্তক্ষেপ কামনা করে টেলিফোন করেছিলেন বলে জানা গেছে।
শোকসভা
জনাব আসাদুজ্জামানের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর গতকাল বিকেল পৌনে তিনটায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা মেডিক্যাল কলেজের সামনে জমায়েত হয়ে শোক সভায় মিলিত হন। শোক সভায় ডাকসু সহ-সভাপতি জনাব তোফায়েল আহমদ ও ছাত্রনেতা জনাব শামসুদ্দোহা সংক্ষিপ্ত ভাষন দেন। সভায় মরহুমের আত্মার সম্মানার্থে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় কালো পতাকাও উত্তোলন করা হয়। বেলা তিনটায় ছাত্র-ছাত্রীরা কালো পতাকা বহন করে একটি দীর্ঘ নীরব শোক মিছিল বের করেন।
মহসীন হলের ছাত্র ও প্রভোস্ট সহ হাউস টিউটরবৃন্দ আসাদুজ্জামানের মৃত্যুতে হলের শহীদ মিনার দেবীতে শোক সভায় মিলিত হয়ে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
অধ্যাপকদের নেতৃত্বে মিছিল
সভা শেষে হলের প্রভোষ্ট ডঃ ইন্নাস আলী, হাউস টিউটর ডঃ আবদুল লতীফ (ভূ-বিদ্যা বিভাগ), অধ্যাপক কামরুদ্দিন হোসেন (দর্শন বিভাগ), অধ্যাপক এ টী এম জহুরুল হক (অর্থনীতি), অধ্যাপক আবদুল মান্নান (আরবী), অধ্যাপক এ এস এম আব্দুল্লাহ (সংখ্যাতত্ত্ব), অধ্যাপক ডঃ আবুল খায়ের (ইতিহাস) এবং ছাত্ররা নগ্ন পদে কালো ব্যাজ পরিধান করে একটি শোক মিছিল বের করেন।
মহসীন হল সংসদের সহ-সভাপতি জনাব মোশাররফ হোসেন ও সাধারন সম্পাদক জনাব ইব্রাহিম খলিল এক যুগ্ন বিবৃতিতে ইপিআর বাহিনীর নগ্ন হামলার শিকার ১৯৬৯ সালের বীর শহীদ আসাদুজ্জামানের উপর ই পি আর বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা করেন। তারা মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোক সন্তপ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তারা ছাত্র হত্যার প্রতিবাদের সংগ্রামী ছাত্র সমাজ কর্তৃক আহুত আজকের হরতালের পূর্ন সমর্থন জানান।
ইকবাল হলে শোকসভা
ইকবাল হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি জনাব খালেদ হাশিমের সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার রাত্রে ইকবাল হলে অনুষ্ঠিত এক শোক সভায় জনাব আসাদুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। সভায় ছাত্রদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ করা হয়।