You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.13 | ২৭ শ্রাবণ ১৩৭৮ শুক্রবার ১৩ আগষ্ট ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

২৭ শ্রাবণ ১৩৭৮ শুক্রবার ১৩ আগষ্ট ১৯৭১

  বাংলাদেশ সরকারের কেবিনেট ডিভিশন আজ বাংলাদেশ সরকারের সচিবদের নিয়মিত সাপ্তাহিক সভা সংক্রান্ত একটা সার্কুলার প্রচার করে। এই সার্কুলারে বলা হয় যে, সাপ্তাহিক এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। এই সার্কুলারে স্বাক্ষর দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচ.টি.ইমাম। (সরকারী নথি)

  লন্ডনের অ্যাকশন কমিটি কেন্দ্রীয় অ্যাকশন কাউন্সিল গঠন করার জন্যে ১৬ আগষ্টও নতুন গঠিত কনভেনশন কমিটির এক সভা আহ্বান করে। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর ছিল আজিজুল হক ভুঁইয়ার।

গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে আফসার বাহিনী মল্লিক বাড়ির ২৬ জন রাজাকার এবং ২ জন পাকিস্তানী শত্রুকে খতম করে।

  ডেমরার কাছে মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশে শত্রুর একটা জীপ আক্রান্ত হলে সেনা ও বিমানবাহিনীর ৪ জন সেনা নিহত হয়।

  এ দিন কাদেরিয়া বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ খোরশেদ আলম তালুকদার ঘটাইল থানার দার্জানার গ্রামে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে আহত হন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলমকে ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

অন্যান্য স্থানে মুক্তিযুদ্ধের খবরঃ ঝিনারদিতে ১ জন নিহত, ১৫ জনের আত্নসমর্পন; বড়গ্রামে ২ জন নিহত, ৫ জন আহত; সুতারকান্দিতে হামলা, কাংলিঘাটে ২টা নৌকা নিমজ্জিত; কোনাগাওতে চেয়ারম্যান অফিস ধ্বংস; মানিকগঞ্জে বেশ কজঙ্কে হতাহত; হরগোবিন্দপুরে ৩ জন হত; মন্দাভাগে ১০০ ফুট রেললাইন উৎপাটন; নাপ্তেরহাটে ২টা বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস ও ৪ শত্রুসেনা হত্যা; ধুলঝুরিতে সেতু আক্রমণ ও ৩ জন রাজাকার হত্যা; শ্রীগ্রামের দালাল মুসলিম লীগ কর্মী হত্যা, নাগেশ্বরীতে ২ জন হত, ৭ জন আহত; দিনাজপুর পুলিশ ষ্টেশনে গ্রেনেড নিক্ষেপ; কাজিপুরে ৩ রাজাকার হত্যা; বাড়িবাঙ্কায় ২ জন শত্রুসেনা খতম; বাগবানে ২ জন পাকসেনা হত্যা ও ৩ জন আহত; মুসলাডাঙ্গায় ১৭ জন হত্যা; বয়রায় ১ জন রাজাকার হত্যা; জামবাড়িতে ৩ জন হত্যা; বড়গ্রামে ৩ জন নিহত ও ৫ জন আহত; আমঝুপিতে ২ জন রাজাকার নিহত, জীবননগরে ২ জন রাজাকার হত, মাটিকাটায় ১৬ জন শত্রুসেনা হত্যা। (মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে)

  শান্তি কমিটির আহবায়ক খাজা খায়েরউদ্দিনের নেতৃত্বে এদিন ‘আজাদী দিবসের কর্মসূচি’ হিসেবে এক মিছিল ঢাকার রাজপথ প্রদক্ষিন করে। (সংবাদপত্র)

 এদিন ‘পাকসামরিক সরকার’এর এক বিবৃতি প্রচারিত হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতে মুসলমান উদ্বাস্তুদের জোর করে বিচ্ছিন্নবাদী প্রশিক্ষণে ভর্তি করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এদিন ঢাকা শহরে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের করণীয় নিয়মাবলী বিলি করে। বেশ ক’জন গ্রেফতার বরণ করে। অন্যদিকে এদিন বিভিন্ন অঞ্চলে দালাল/রাজাকারদের জন্য পাক সরকার দেড় কোটি টাকা মঞ্জুরী দেয় (সংগ্রাম)

 এদিন দিনাজপুরে সামরিক কর্তৃপক্ষ ‘আজাদী দিবসে’ এর রাজাকার সহ পুলিশ প্যারেডে উপস্থিত থাকার জন্য সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আদেশ দেয়। (সংবাদপত্র)

 নৌ-কম্যান্ডো হামলার পরিকল্পনা নিখুতভাবে তৈরির পর দুটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও চালনা-মংলা এবং দু’টি নদী বন্দর-খুলনা ও নারায়ণগঞ্জের ওপর হামলা চালানোর জন্য সর্বমোট তিনশ নৌ কম্যান্ডকে এদিন প্রস্তুতি সংকেত দেয়া হয়। উল্লেখ্য, নৌ-কম্যান্ডো হামলার সাফল্যের একটি পুর্বশর্ত হচ্ছে হামলা সম্বন্ধে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা। কম্যান্ডো বাহিনীর সাথে অপারেশন নিয়ন্ত্রকদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আকাশবাণী কোলকাতার ‘খ-বেতার’ তরঙ্গ। প্রথম সংকেতটি ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমি তোমায় যত শুনিয়ে ছিলাম গান’ এ সংকেতের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হামলার প্রস্তুতি। চূড়ান্ত সংকেত ছিল অপারেশন সংকেত ‘গানঃ আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুর বাড়ি। উল্লেখ্য, কম্যান্ডো মধ্য থেকে ষাটজন করে দু’টি দল গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের জন্য দলনেতা নৌ-সেনা আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী উপনেতা শাহ আলম (মেডিক্যাল ছাত্র)। চালনা-মংলা বন্দরের দলনেতা নৌ-সেনা আহসানুল্লা, উপনেতা বদরুল আলম। তাছাড়া, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, খুলনার জন্য নৌসেনা আব্দুর রহমান, নৌ-সেনা এ আর মিয়া ও নৌ-সেনা মোশারফের নেতৃত্বে বিশ সদস্য করে বিশিষ্ট নৌ-সেনার তিনটি দল গঠিত হয়।

 এ দিন দেড়টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম (বাংলা বিভাগ), অধ্যাপক আবুসাদ (সমাজ বিজ্ঞান) দ. আবুল খায়ের (ইতিহাস), অধ্যাপক শহীদুল্লাহ (গণিত) কে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। ডঃ আহমদ শরীফ (বাংলা) কে পাক বাহিনী খুঁজে পায়নি।

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী