১৮ ভাদ্র ১৩৭৮ শনিবার ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
-বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষথেকে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান জনাব হোসেন আলী বিপ্লবের চারন কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ২১০০ টাকার চেক প্রদান করেন। ইয়াহিয়া সরকার মার্চ মাসে বাঙালী হত্যাযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর থেকে কাজী নজরুলের ভাতাবন্ধ করে দেয়। দিল্লীতে কবিপুত্র কাজী সব্যশাচী এক বিবৃতিতে বলেন, নজরুল ইসলাম তাঁর সঙ্গীত কবিটা এবং সাহিত্যের মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতি এবং বিপ্লবী চেতনার প্রতিকে পরিণত হয়েছিলেন। জল্লাদ ইয়াহিয়া বাহিনী বাংলাদেশের সে চেতনা সমৃদ্ধ জাতিকে হত্যার নেশা পাগল হয়ে উঠেছে। অর্থাভাবের জন্য আমাদের জীবন যতকষ্টই আসুন না, লাখো লাখো নিরপরাধ বাঙালীর রক্তে রঞ্জিত পাকিস্তানী হানাদার দস্যুদের টাকা গ্রহণ করতে পারিনা। (জয় বাংলা) উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জনাব মতিয়ুর রহমান (মন্ত্রী) বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে কলকাতা থেকে ঢাকা নিয়ে আসা হয় এবং কবিকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়।
-গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশঃ বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদ বলেছেন, শীঘ্রই ঐক্যবদ্ধ মুক্তিফ্রন্ট গঠিত হচ্ছে এর ফলে রাশিয়ার সমর্থন লাভ সম্ভব হতে পারে।
-পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিনী রাষ্ট্রদূত ফারল্যণ্ড প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে প্রস্তাব করেন, কোলকাতায় বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে তারা জনিয়ে রাখতে চান যে, ইয়াহিয়া মোশতাওকদের সঙ্গে গোপনে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে। ফারল্যণ্ডের এই প্রস্তাবে ইয়াহিয়া রাজী হন।
-মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্তুযায়ী জনাব আব্দুল খালেক (আইজি পুলিশ) কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সচিব নিয়োগ দেয়া হয়। উল্লেখ্য ইতিপূর্বে জনাব কে এ জামান এ পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতেন।
রাজাকার বাহিনীকে জামাতে ইসলামের প্রাইভেট বাহিনীতে রুপান্তর করা হয়েছে এই মর্মে ভুট্টোর পি পি পি দল প্রকাশ্য সমালোচনা শুরু করে। সিদ্দিক শালিক লিখেছেন, সেপ্টম্বর মাসে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একটি রাজনৈতিক প্রতিনিধি দল জেনারেল নিয়াজির নিকট অভিযোগ উত্থাপন করে বলে যে, জামাতে ইসলামীর নমিনিদের নিয়ে এই সমস্ত বাহিনী গঠন করা হয়েছে। জেনারেল নিয়াজী শালিককে বলেন, এখন থেকে রাজাকারদের আলশামস ও আল-বদর নামে অভিহিত হবে যাতে তারা একই দলভুক্ত এটা কারো মনে না আসে।
-ইসলামী ছাত্র সংঘকে নিয়ে আলবদর গঠনকরা হলো। অন্যান্য দল সহ মুসলীমলীগ গঠনকরলো আলশামস। মাদ্রাসার জমিয়তে তালাবায়ে আবাবিয়ার সহ মুসলিমলীগ , জামাত নিয়ে এসব বাহিনীর নামকরন করেন বিভিন্ন এলাকায় বাহিনী সংগঠন গড়ে তোলেন।
-রাওইয়ালাপিণ্ডির প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ঘোষণা করা হয়, প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান সকলের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করেছে। পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক গোলযোগের সময় গত ১ মার্চ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যারা অপরাধ করেছেন অথবা যাদের প্রতি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের সবাইকে ক্ষময়া করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে কার্যকর এই সাধারণ ক্ষমা সশশ্ত্র বাহিনী ইপিআর, পুলিশ মুজাহিদ আনসারসহ সকলের প্রতিপ্রযোজ্য হবে।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী