বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্বাবিদ্যলয়ের একাডেমিক কাউন্সিল সমীপে হাসান হাফিজুর রহমানের খোলা চিঠিদৈনিক পাকিস্তান
১১ অক্টোবর, ১৯৬৮
ঢাকা বিশ্বাবিদ্যলয়ের একাডেমিক কাউন্সিল সমীপে একটি খোলা চিঠি
হাসান হাফিজুর রহমান
বাংলা বর্ণমালা এবং বানান সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাব পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন উৎসাহে এবং কর্মতৎপরতার দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন, যা তাঁদের সক্রিয়তার অভিনব বলে অনায়াসেই অখ্যায়িত হতে পারে। অবশ্য কি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে তার স্বক্ষরিক বিররণ জনসাধারণের সন্মূখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ পর্যন্ত পেশ করার প্রয়োজনবোধ করেননি। তবে নানা সূত্রে থেকে যতটুকু জানা যায় তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উদ্যমের পেছনে যে অন্ততঃ বাংলা ভাষার বর্তমান লিখিত রুপের খোল-নলচে পাল্টাবার আয়োজন রয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। এতে কি সুবিধা-অসুবিধা হবে প্রশ্ন বাস্তবায়ন একা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম নয় এবং একে স্বার্থক করে তুলতে বহুজনের হাত লাগলেও কয়েক বছরের গন্ডিতে তা সম্পন্ন হবে কিনা এবং তারপরেও নানা বিভ্রান্তি ও জটিলতার জড় এড়িয়ে উক্ত ফরমুলার নির্দেশিত মান এককভাবে এদেশের ভাষার লিখনরীতিতে প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা সে ব্যাপারেও সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়।
অন্যদিকে জানা গেছে, কোন প্রকার সংস্কার ছাড়াই উর্দুকে পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সর্বস্তরে পুরোপরি চালু করার বাঞ্চিত সিদ্ধান্তটি ইতিমধ্যেই গৃহিত হয়েছে এবং অচিরেই তা চালু হবে, যদিও উর্দু বর্ণমালায় তথাকথিত জটিলতা বাংলার কোন অংশেই কম নয়। তাদের এই প্রশংসনীয় ও দৃষ্টান্ত মূলক উদ্যেগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের একটি মাত্র জিজ্ঞাসা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাকে শিক্ষার সর্বস্তরে চালু করার ব্যাপারে কতদূর অগ্রসর হয়েছেন? বাংলা ভাষার বর্ণমালা এবং বানান সংস্কারের বেলায় যে উৎসাহ ও কর্মতৎপরতা তারা দেখাচ্ছেন, বাংলাকে শিক্ষার সার্বিক মাধ্যম করার ক্ষেত্রে তা আদৌ স্পষ্ট নয়। তবে কি এই ভাবতে হবে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বেই বাংলা ভাষার বর্তমান রূপকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে একেবারেই উপযুক্ত মনে করতে পোরছেন না এবং সেই সংস্কারের সাহায্যে একে যোগ্য করতে তুলতে ব্যাস্ত হয়ে উঠেছেন ? এবং সে কারনেই কি শিক্ষার মাধ্যমে বাংলা চালু করার আশু কর্তব্য পালনের পরিবর্তে বাংলা ভাষার সংস্কার তাদের কাছে অধিকতর প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দিয়েছে? তাই যদি হয়, এ সংস্কারের মহান দায়িত্ব তারা সম্পন্ন তারা কিভাবে করবেন, এতে কত সময়ই বা তারা নেবেন এবং অতঃপর কবে নাগাত বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সর্বস্তরে চালু করতে সক্ষম হবেন কিংবা পরিণামে আদৌ তার পওয়োজন হবে কিনা-এসব বিষয়ে অবশ্যই তাঁদের দেশবাসীকে সঠিক ও সৎভাবে জানানো উচিত।
পক্ষান্তরে বাংলাকে অনিশ্চয়তা সংক্রান্ত আমাদের এই সন্দেহ যদি অমূলক হয়, তাহলে বাংলা বর্ণমালা ও বানান সংস্কার এবং বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যমরুপে সর্বস্তরে পুরোপরি চালু করার মতো দুটি আপাতবিরোধী দুরুহ ও জটিল দায়িত্ব একই সংঙ্গে বাস্তবায়ন অনুকূল কি অলৌকিক মন্ত্রসিদ্ধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের লাভ করে বসে আছেন, সে বিষয়েও দেশবাসীকে জানানো তাঁদের অবশ্যই কর্তব্য।
বিশেষতঃ বাংলা ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে বাংলা প্রচলনের ভবিষ্যত শঙ্কাকুল এবং উদ্বেগজনক করে তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মুখে তালা এঁটে চুপ করে থাকার কোন অধিকার নেই।
সর্বসাধারণের ঘনিষ্ট ও অপরিহার্য স্বার্থের সাথে জড়িত এমন একটি বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই এককভাবে সারা দেশব্যাপী এক অসময়োচিত বিভ্রান্তি, বির্তক, ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ ও অনিশ্চতাজনিত তোলপাড়ের সূত্রপাত করেছেন।……….. স্বাভাবিকভাবেই তার নির্মূল তথ্যের ভিক্তিতে জনসাধারণের পরিস্কারভাবে জানার অধিকার রয়েছে ।
ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয় বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যমে সর্বস্তরে চালু করার ক্ষেত্রে কি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং কবে তা বাস্তবায়িত হবে এবং তাদের গৃহীত বাংলা বর্ণমালা ও বানান সংস্কারের তৎপরতা দেশ ও জাতির জন্য অপরিহারর্র্য প্রয়োজনীয় উক্ত কর্তব্য পালনে অদৌ কোন অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে কিনা ?