বাংলা ভাষার বর্ণ বর্জনের প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্র জামায়েত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতির সংসদের প্রচারপত্র
২ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলে সম্প্রতি সংখ্যাগরিষ্ট ভোটে বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের ধুয়া তুলে মূলতঃ বহুল ব্যবহৃত ঙ, ণ, ঞ, ঈ, উ, ঐ, ঔ, ষ, ৎ প্রভৃতি হরফ বর্জনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। উপরন্ত বিশিষ্ট ভাষাতত্ত্ববিদদের বিরোধীতা সত্তেও বাংলা ভাষা প্রচলিত যুক্তক্ষর যথা ঙ্ক, ক্ত, এবং সমুদয় ফলা যথা দ্ম, য্য, স্ম, প্রভৃতি বর্জন, ‘” ও‘” কার বর্জন প্রভৃতির সিদ্ধান্ত উক্ত কাউন্সিলে গৃহিত হয় ।
এই বর্ণমালা বর্জনের দ্বারা ভাষা সহজ হবে এবং তা শিক্ষা কিস্তারে সহায়ক হবে, এই যুক্তি দেখিয়ে একাডেমিক কাউন্সিল বর্ণ বর্জনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মূলতঃ তা বাংলা ভাষা শিক্ষা এবং বাংলা ভাষার শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি করবে।
বর্ণমালা বর্জন বা বানান পরিবর্তনের ফলে শব্দ তার মূলগত অর্থ এবং ব্যবহারগত অনুষঙ্গ বিচ্যুত হবে । ভাষার যে সচল প্রবাহ রয়েছে এই সংস্কার দ্বারা তা ব্যাহত হবে। আমারা জানি সরকার শিক্ষা সঙ্কোচন নীতির ধারক। সেক্ষেত্রে এই বর্ণমালা-সংস্কারের দ্বারা ভবিষ্যতে শিক্ষা বিস্তারের ধুয়া তুলে মূলতঃ জনণনের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমান ব্যুৎপত্তিকেও নাকচ করতে চাইছে, এটা উপলব্ধি করা কষ্টকর নয়।
গভীরভাবে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে মূলতঃ বাঙ্গালী স্বতন্ত্রবোধ তথা বাঙ্গালী সংস্কৃতির যে জাগরণ আজ সর্বত্র দেখা দিয়েছে সেই জাগরণকে স্তিমিত করার জন্যই প্রচেষ্টা গৃহিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই ‘পাকিস্তানী তমদ্দুন’ এই দোহাই দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানী সংস্কুতির উপর আঘাত এসেছে। আজকের এই হীন প্রচেষ্টা এ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়।
আরও লক্ষ্য করার বিষয় বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করার যে প্রবল জনমত গড়ে উঠেছে তার বিরোধিতা করার ক্ষমতা সরকারের আর নেই। আজ তাই পরোক্ষে বাংলা বর্ণমালা বর্জন করে নতুন ‘লেখ্যরীতির’ সূচনা দ্বার এই প্রচেষ্টা মূলে আঘাত হানা হচ্ছে। নতুন লেখ্যরীতিতে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাঙলাকে প্রয়োগ করার প্রচেষ্টা আরও পশ্চাৎপদী হবে ।
এ সকল বিষয় বিশ্লেষণ করেই দেখা যাবে বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের পশ্চাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কার্যকরী। বাংলা ভাষার উপর এই আঘাতকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের আজ প্রবল কন্ঠে প্রতিবাদ জানাতে হবে ।
-সংস্কৃতি সংসদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়