You dont have javascript enabled! Please enable it!

জীবনচিত্র  নামঃ ডা. আব্দুল গফুর আহমদ

Dr, Abdul Gafur Ahmed

পিতার নামঃ মৌলভী হাফিজুদ্দিন আহমদ

পিতার পেশাঃ জোতদারি

মাতার নামঃ ছমিরান নেসা

ভাইবোনের সংখ্যাঃ দুই ভাই, চার বোন। নিজক্ৰম-প্রথম

ধর্মঃ ইসলাম

স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্ৰামঃ খড়খাড়িয়া, ইউনিয়ন/ভাকঘরঃ রমনা

বাজার, থানাঃ  চিলমারী, জেলাঃ কুড়িগ্রাম

শহীদ ডা. আব্দুল গফুর আহমদ

 

নিহত হওয়ার সময় ঠিকানাঃ রেলওয়ে হাসপাতাল, উপজেলা-পাৰ্বতীপুর, জেলা-দিনাজপুর

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

এমবিবিএসঃ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

শখঃ ফুলফলের বাগান করা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেমন-গান, নাটক ইত্যাদি

চাকরির বর্ননাঃ

আরএসএসঃ রেলওয়ে ডিসপেনসারি, সেতাবগঞ্জ

রেলওয়ে হাসপাতাল, পাৰ্বতীপুর

রেলওয়ে হাসপাতাল বোনারপাড়া

রেলওয়ে হাসপাতাল, লালমনিরহাট

চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল, পাহাড়তলী

রেলওয়ে হাসপাতাল, ঢাকা

হত্যাকারীর পরিচয়ঃ শোয়েব, নাঈম, বাচ্চাখান প্রমুখ অবাঙালি (বিহারি)

নিহত/নিখোঁজ হওয়ার তারিখঃ ১০ মে ১৯৭১ মরদেহঃ পাওয়া যায়নিঃ জনশ্রুতি আছে-গুলি করে হত্যার পর রেল ইঞ্জিনের বয়লারে পুড়িয়ে লাশ ছাই করে ফেলা হয়।

স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ আলাদাভাবে নেই। বি.এম.এ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সৈয়দপুর ও লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতাল সংলগ্ন পার্কের স্মৃতিফলকে নামাঙ্কিত আছে।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরষ্কারঃ পাননি

স্ত্রীর নামঃ আছিয়া খাতুন

সন্তান-সন্ততিঃ দুই পুত্র ও ছয় কানা

মমতাজ জাহানঃ বিএসসি (গাৰ্হস্থ্য বিজ্ঞান), গৃহিণী

মনোয়ারা বেগমঃ বিএ, শিক্ষ্যয়িত্রী, পার্বতীপুরের বেসরকারি স্কুল

আসাদুজ্জামান আহমদঃ আইএসসি, প্রধান সহকারী, রেলওয়ে হাসপাতাল, সৈয়দপুর

আনোয়ারা বেগমঃ আইএ, গৃহিণী

নূরজাহান বেগমঃ আইএ, গৃহিণী

নাসিমা আহমদঃ আইএসসি, পিটিআই, শিক্ষায়িত্রী, চিলমারীর বেসরকারি স্কুল

বদিউজ্জামান আহমদঃ এসএসসি, ইলেকট্রিশিয়ান, কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা, পার্বতীপুর

নাফিস আহমদঃ এসএসসি, গৃহিণী

 

 

তথ্য প্রদানকারী

আমিনুল ইসলাম

শহীদ চিকিৎসকের বড় জামাতা

বাসা নং-৪৪, সড়ক নং-৩, ব্লক-বি

সেকশন-১২, মিরপুর, ঢাকা

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ১০৩

আমার শ্বশুর-আমার বাবা

শহীদ ডা. আব্দুল গফুর আহমদ

আমিনুল ইসলাম

 

আমার সঙ্গে ডা. আবদুল গফুর আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা মমতাজ জাহানের (জুয়েল) বিয়ে হয় আগস্ট, ১৯৭০ সালে। যেহেতু আমি চাকরির কারণে ঢাকায় থেকেছি, সেহেতু তার সঙ্গে আমার দেখা-আলোচনার সুযোগ খুব কম হয়েছিল। তবু অতি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আমি তাকে দেখেছি অত্যন্ত প্রাণবন্ত হাস্যোজ্জল স্নেহপরায়ণ একজন মানুষ হিসেবে। তিনি ছিলেন আর্তমানবতার জন্য উৎসর্গীকৃত একজন চিকিৎসক।

একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের অগ্নিঝরা দিনগুলোর শেষের দিকে আমি ঢাকা থেকে পার্বতীপুরে শাশুড়ি, স্ত্রী ও শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে ২২ মার্চ ১৯৭১-এ কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে গমন করি। ২৫ মার্চ ১৯৭১আমরা সবাই পার্বতীপুর ফিরছিলাম। কিন্তু পাৰ্বতীপুর-সৈয়দপুরে তখন অবাঙালিদের মারাত্মক দাঙ্গা শুরু হওয়ায় আমরা পার্বতীপুর যাওয়া বাতিল করে লালমনিরহাট যাই। সেখানে রেলের ডাক্তার ডা. আবদুর রহমানের চেম্বার থেকে আমার শ্বশুরকে ফোন করি (ড়া. আবদুর রহমান সাহেবও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়েই পরবর্তীকালে নিহত হন)আমার শ্বশুর সৈয়দপুর-পাৰ্বতীপুরের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জানান এবং আমাদের পাৰ্বতীপুর ফেরার ব্যাপারে কড়াকড়িভাবে নিষেধ করেন। আমি বলি, ‘কী হবে! ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া-বঙ্গবন্ধু আলোচনা চলছে; জয় বাংলা হয়ে যাবে।’ এতে তিনি ফোনের অপরপ্রান্তে খুব করে হাসলেন। সেই হাসির রেশ আজও আমার কানে অনুরণিত হয় এবং সে জন্যই আজ আমার এ স্মৃতিচারণ। তিনি আমাদের পাটগ্রামের বুড়িমাড়ীতে গিয়ে আমার খালা শাশুড়ির বাড়িতে অপেক্ষা করতে ও পরবর্তী নির্দেশের জন্য যোগাযোগ করতে বলেন। তারপর থেকে তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ চিরতরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন সূত্র থেকে বাবার হত্যাকাণ্ডের বিবরণ পাইপার্বতীপুর রেলওয়ে হাসপাতালে মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই বাবা এএসএস পদে নিযুক্ত ছিলেন। তবে তারও বেশ ক’বছর আগে ঐ হাসপাতালে বাবা

 

১০৪ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

শহীদ ডা. আব্দুল গফুর আহমদ

 

‘আরএসএস’ পদে চাকরি করতেন। ফলে চিকিৎসক হিসেবে এলাকায় বাবার বেশ পরিচিতি ছিল।

রেলওয়ের একজন অবাঙালি ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টরের(নাম স্মরণে নেই)স্ত্রীকে বাবা নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিতেন। সেই সূত্র ধরেই ঐ পরিবারের সাথে বাবার বেশ অন্তরঙ্গতা ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পার্বতীপুরে অবাঙালিরা বাঙালি নিধন শুরু করলে উল্লিখিত ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টরের অনুরোধক্রমে বাবা তাঁরই বাসায় আশ্রয় গ্রহন করেন। ঐ বাসায় বাবা নিরাপদেই ছিলেন। কিন্তু প্রতিবেশী অবাঙালিরা বিষয়টিকে বাঁকা চোখে দেখতে থাকে এবং তারা ঐ ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টরসহ বাবাকে জীবননাশের হুমকি দিতে থাকে। চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকলে উপায়ান্তর না দেখে ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টর স্থানীয় সংসদ সদস্য অবাঙালি কামরুজ্জামানকে সমস্যা সমাধানের জন্য বাসায় ডেকে আনেন।

অবাঙালি হলেও সংসদ সদস্য কামরুজ্জামান আগে থেকেই বাবার প্রতি অত্যন্ত সহৃদয় ছিলেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোরআন শরীফ ছুঁয়ে শপথ করে বাবাকে বলেন, ‘আপনি চলেন। আমার বাসায় থাকবেন। আমি বেঁচে থাকলে আপনিও বেঁচে থাকবেন।’ তার কথায় বাবা সত্যিকার অর্থেই আশ্বস্ত বোধ করেন এবং আরেক বাঙালি সহকর্মী ডা. মতিউর রহমানকে নিয়ে কামরুজ্জামানের শহরস্থ বহুতল বাসভবনে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কামরুজ্জামানের বাসার ছাদের চিলেকোঠায় বাবা তার চিকিৎসক বন্ধু এবং পণ্ডিত আলী নামের একজন বাঙালি বাবুর্চির ঠাঁই হয়। কামরুজ্জামান এদের বসবাসের অনেক সুযোগ-সুবিধা করে দেন। খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করে দেন। বাবা অসম্ভব ধূমপায়ী ছিলেন, সেই সিগারেটও কামরুজ্জামান সরবরাহ করতেন। বাবা এবং ডা. মতিউর রহমান ঐ বাসায়ই অন্তরীণ থেকে দাড়ি রাখা শুরু করেন। নামাজ পড়তেন।

একদিন বাবা কামরুজ্জামানকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন বাবুর্চি পণ্ডিত আলীকে ছেড়ে দেন; ছেড়ে দিলে বাবুর্চি তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে চলে যাবে। কামরুজ্জামান বাবার সে অনুরোধও রক্ষা করেন।

তারপর এলো সেই দুর্যোগের দিন। ১০ মে ১৯৭১শুক্রবার। আহত পাকবাহিনীর চিকিৎসা করাবার কথা বলে বাবাকে নিতে ঐ বাসায় আসে বাবারই পরিচিত অবাঙালি কোনো এক মোদীকিন্তু কামরুজ্জামান তাকে বাসায় ঢুকতে দেননি। এতে মোদী প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে পাকবাহিনীকে খবর দিতে চলে যায়।

এদিকে জুমার ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ায় কামরুজ্জামান মসজিদে চলে যান। সে সুযোগে কামরুজ্জামানের সবচেয়ে ছোট ছেলেটি স্থানীয় অবাঙালি সন্ত্রাসী শোয়েব, নাঈম, বাচ্চা খানকে সাথে নিয়ে বাবার ঘরে ঢুকে পড়েতৎক্ষণাৎ তারা বাবাকে ও ডা. মতিউর রহমানকে গুলি করে হত্যা করে।

শুধু হত্যা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। উভয়ের মরদেহ তারা রেল ইঞ্জিনের বয়লারে ফেলে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে।

 

প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ

 

ক. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা; বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যালয় বিএমএ ভবনের(তোপখানা রোড, ঢাকা) শোভিত স্মৃতিফলকে উৎকীর্ণ। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)

খ. শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ; সম্পাদনাঃ রশীদ হায়দার; প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; প্রকাশকালঃ অগ্রহায়ণ ১৩৯২, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫; পৃ. ২৬।

গ. মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুর; লেখকঃ এম এ কাফি সরকার; প্রকাশনাঃ অংকুর প্রকাশনী, দিনাজপুর, প্রকাশকালঃ মার্চ ১৯৯৬; পৃ.৫৯-৭১।

ঘ. রংপুর জেলার ইতিহাসঃ প্রকাশনাঃ জেলা প্রশাসন, রংপুর, প্রকাশকালঃ ৩০ জুন ২০০০ পৃ. ২৩৫-২৩৬

ঙ. মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস; সম্পাদনাঃ আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন; প্রকাশনাঃ সাহিত্য প্রকাশ।

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ১০৫

Reference:  মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!