You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.18 | রে পার্থ! কোথায় সে বীরত্ব তব? | ত্রিপুরা - সংগ্রামের নোটবুক

রে পার্থ! কোথায় সে বীরত্ব তব?

১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। পূর্ব পাকিস্তানে কর্তব্যরত পশ্চিম পাকিস্তানি ফৌজ বাংলার বুকে স্বাধীনতা উৎসব পালন করিতে না পারিয়া উৎসবের ঝাল মিটাইয়াছে ভারতের মাটিতে। এই চৌদ্দই আগস্ট দিনটিতে জাকার্তায় সফররত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার স্বর্ণ সিংহ যখন সদর্পে ঘােষণা দেন ‘ভারতের মাটিতে বিদেশি সৈন্যদের পা ফেলতে দেওয়া হবে না, ঠিক সেই সময়ই বােধহয় এক কোম্পানির মতাে পাক হানাদার বীরদর্পে ভারতের মাটিতে শুধু পদার্পণ করিয়াই সেই ঘােষণার জবাব দেয় নাই, রীতিমতাে পৈশাচিক তাণ্ডব নৃত্যও করিয়াছে এক নাগাড়ে তিন চারি ঘণ্টা। ত্রিপুরা রাজ্যের সিধাই থানান্তর্গত জলিলপুর গ্রামে পাক হানাদারদের তাণ্ডব উৎসবে এগার জন নিহত, বহু আহত এবং চারিজন মহিলা অপহৃতা হন। পক্ষান্তরে সংবাদে প্রকাশ হানাদাররা নিহতদের মাথার খুলি ভাঙ্গিয়া মগজ লইয়া গিয়াছে।
শুধু ত্রিপুরায় নহে, আসামেও পাক দৌরাত্ম ঘটিয়াছে এই ১৪ আগস্ট। সেখানে প্রকাশ্যে কিছু করে নাই। গুপ্তভাবে মাইন পাতিয়া দুইটি রেলগাড়ি লাইনচ্যুত এবং একটি এ্যাম্বুলেন্স কার ধ্বংস করিয়াছে।
১৫ আগস্ট, ভারতের স্বাধীনতা দিবসে ত্রিপুরা রাজ্যের পূর্বোক্ত সিধাই থানান্তর্গত রামুটিয়া অঞ্চলে সীমান্ত প্রহরারত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী দলকে পাক হানাদাররা তিনদিক হইতে বেষ্টন করিয়া গুলি বর্ষণ করিয়াছে। সীমান্তরক্ষী দল পাল্টা গুলি করিয়াছে।
সংবাদে প্রকাশ কয়েক দিন যাবতই ঐ সিধাই অঞ্চলে পাক হানাদারদের আনাগােনা এবং লঘুগুরু গুলিগােলা নিক্ষেপ চলিতেছিল। ঘটনার দিন (কমপক্ষে তিন চারি ঘন্টা সময়ব্যাপী) আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিঘােষিত- (আমাদের সৈনিকেরা জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষার জন্য সীমান্তে অতন্দ্র আছেন।) বক্তৃতার সহিত বাস্তবের কোনাে সামঞ্জস্যই খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। আমাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রীরামের নিকট কর্ণাৰ্জ্জুন নাটকের ভাষায় একটি জিজ্ঞাসা নিবেদন করিতে হয়। সেই পাঠটি হইল ‘রে পার্থ! কোথায় সে বীরত্ব তব?

সূত্র: ত্রিপুরা
১৮ আগস্ট, ১৯৭১
০১ ভাদ্র, ১৩৭৮