২৩ শ্রাবণ, ১৩৭৮ সোমবার, ৯ আগষ্ট ১৯৭১
-রেডিও পাকিস্তানে ঘোষণা দেয়া হয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও অন্যান্য অভিযোগে বিশেষ সামরিক আদালতে বেআইনি ঘোষিত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার করা হবে। ১১ আগষ্টের গোপনে বিচার শুরু হবে।
KCA. লিখেছেঃIt was officially announced on Aug.9 that the trial of Sheikh Mujibur Rahman for “Waging war against Pakistan” and other offences would open in camera before a military court on Aug.11. The announcement, however, aroused concern in various countries. (P.24955)
সোভিয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিঃ গ্রোমিকা পাঁচ দিনের সফরে আগষ্ট ৯ তারিখে নয়া দিল্লী আসেন। তিনি ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। এদিন ভারত-সোভিয়েতের মধ্যে – Treaty of Peace. Friendship and Co-operation শীর্ষক প্রাথমিক পর্যায়ে বিশবছর স্থায়ী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০ বছর সমাপ্তির পর উভয়দেশ থেকে কোন আপত্তি উত্থাপিত না হলে, চুক্তির মেয়াদ আরো ৫ বছর স্থায়ী হবে। KCA লিখছে, “Signed by MR Gromyko and Mr Swaran Sinh the treaty contained calluses which interalia provided for immediate provided for immediate consultations between India and the USSR in the event of either country being subject to attack or threat of attack by a third country and which prohibited either country from entering into a military alliance which was directed against the other” The Indo-Soviet treaty consisted of a preamble and 12 Articles.’ (P 24773) উল্লেখ, এই চুক্তির ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যাপারে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক সাহায্যের নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় বলে দিল্লীর কূটনৈতিক মহল মনে করেন। ‘দি গার্ডিয়ান’ লিখেছে ‘বাংলাদেশ সমস্যার ব্যাপারে ওয়াশিংটোনের বেয়াড়া নীতি এবং চীনে সঙ্গে পুণরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা ছাড়া মিসেস গান্ধীর পক্ষে আর কোন উপায় ছিল না। প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও তার বিশেষ উপদেষ্টা হেনরী কিসিংঞ্জারকে এ ব্যাপারে দায়ী করা চলে। … গার্ডিয়ান পত্রিকা আরো উল্লেখ করে যে, দক্ষিণপন্থী স্বতন্ত্র দল এই চুক্তি সম্পর্কে তাদের অস্বতি প্রকাশ করে। অন্যান্যরা এই চুক্তির অপরিহার্য বলে স্বীকার করেন। The Indo-soviet treaty ratified in New Delhi on Aug 9 by President vvgiand in Moscow on Aug 13 by the President of the Presidium of the supreme Soviet of the USSR.
এ দিন দিল্লীর রামলীলা ময়দানে দশলক্ষ লোকের বিশাল সমাবেশে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, পাকিস্তানের হুমকি উপেক্ষা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যাপারে ভারত সর্বপ্রকার সাহায্যদানের জন্য প্রস্তুত। (সংবাদপত্র) উল্লেখ্য, ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুতি স্বাক্ষরের পর মুক্তিযুদ্ধের এক নতুন আশাব্যঞ্জক অধ্যায় শুরু হয়। জুলাই মাস থেকে প্রতিমাসে বিশ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে অস্ত্র ও বিস্ফোরণ দিয়ে দ্রুতগতিতে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা শুরু হয়। এই চুক্তিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি রুশ নীতিতে পরিবর্তন হলো। ভারত-সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্ত বিবৃতিতে ‘রাজনৈতিক সমাধান ও পূর্ব পাকিস্তান শব্দ ব্যবহৃত হয়। (লেখক)
এদিন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, যুব শিবির, যুব অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলো এখন থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে সুষ্ঠ প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্বার্থে জোনাল প্রশাসন এবং জোনাল কাউন্সিল গঠন অনুমোদন দেয়া হয়। উল্লেখ্য, জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের নির্ণীয়মান প্রশাসনের অন্যতম মূল কাঠামো। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার অঞ্চলভেদে ১১ টি প্রশাসনিক এলাকায় ভাগ করা হয়। (৩খঃ পৃঃ ৮৬-৯০)। এই এগারটি জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও জোনাল প্রশাসক ছিলেন নিম্নরূপঃ
১. দক্ষিণ পূর্ব জোন-১ জনাব নূরুল ইসলাম চৌধুরী (চেয়ারম্যান); এস এ সামাদ (প্রশাসক)
২.দক্ষিণ পূর্ব জোন-.২ জনাব জহুর আহমেদ চৌধুরী চৌধুরী (চেয়ারম্যান);কে আর আহমেদ (প্রশাসক)
৩.পূর্ব অঞ্চল জোন-২ কর্ণেল এম এ রব চৌধুরী (চেয়ায়ম্যান) ডাঃ কে এ হাসান (প্রশাসক)
৪.উত্তর পূর্ব জোন-১ দেওয়ান ফরিদ গাজী চৌধুরী (চেয়ারম্যান) এস এইচ চৌধুরী (প্রশাসক)
৫.উত্তর পূর্ব জোন-২ জনাব শামসুর রহমান খান ‘চেয়ারম্যান” লুৎফর রহমান (প্রশাসক)
৬.উত্তর জোন-মতিউর রহমান চেয়ারম্যান ফয়েজউদ্দিন আহমেদ (চেয়ারম্যান)
৭.পশ্চিম জোন-১ আব্দুর রহিম ‘ চেয়ারম্যান’ এ কাসেম খান (চেয়ারম্যান)
৮.পশ্চিম জোণ-২ আশরাফুল ইসলাম ‘চেয়ারম্যান” জে আই ভুঁইয়া
৯.দক্ষিণ পশ্চিম জোন-১ এম এ রউফ চৌধুরী (বগামিয়া) চেয়ারম্যান শামসুল হক
১০.দক্ষিণ পশ্চিম জোন-২ ফনীভূষণ মজুমদার ‘চেয়ারম্যান’ বি বি বিশ্বাস
১১.দক্ষিণ জোন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ‘চেয়ারম্যান’ এ মোমেন
উল্লেখ্য, এই ১১ টি জোনাল কাউন্সিলের সদর দপ্তর ছিল ভারতীয় সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যথাক্রমে,সাব্রুম, আগরতলা, ধর্মনগর, ভাউকী,তুরা কুঁচবিহার, বালুরঘাট, মালদা, কৃষ্ণনগর, বনগাঁ ও বারাসাত।
এ দিন পাক সেনারা ত্রিপুরার সোনামুরা শহরে লক্ষ্য করে কামানের গোলাবর্ষণ আব্যাহত রাখে। এতে বহু ভারতীয় শরণার্থী নিহত হয়।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী