শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পূর্ব পাকিস্থানের স্বায়ত্বশাসন দেশে বির্পযয় সৃষ্টি করবে বলে আইয়ুব খানের বিবৃতি | দৈনিক ‘আজাদ’ | ৩১ মার্চ,১৯৬৭ |
মোমেনশাহীর জনসভায় প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারী পূর্ব পাকিস্থানের স্বায়ত্বশাসন দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে
মোমেনশাহী,২৯ শে মার্চঃ- অদ্য বিকালে মোমেনশাহীর সার্কিট হাউস ময়দানে এক বিরাট জনসভায় ভাষণ দানকালে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আইয়ুব খান দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন যে, বর্তমান সরকারের আমলে পূর্ন স্বায়ত্বশাসন ভোগ করিতেছে।
সভায় পূর্ব পাকিস্থানের গভর্ণর জেনারেল আন্দুল মোনায়েম খানও উপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের এই সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পরিষদের স্পীকার আব্দুল জববার খান। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব তাহার বক্তৃতায় বলেন, নিজস্ব বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য পূর্ব পাকিস্থানের যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হইয়াছে। ই,পি,আই, ডি,সি, রেলওয়ে এবং গুরুত্বপূর্ন এজেন্সীসমূহ প্রাদেশিক সরকারের হাতেই ন্যস্ত করা হইয়াছে। এ দেশের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের যে একটি মাত্র ক্ষমতা রহিয়াছে তাহা হইতাছে প্রাদেশিক গভর্নরের নিযুক্তি। তিনি বলেন, এই ক্ষমতাও কেন্দ্রীয় সরকারের হাত হইতে লইয়া যাওয়া হয়,তাহা হইলে দেশের দুইটি অংশ একে অপর হইতে বিছিন্ন হইয়া পড়িবে। প্রেসিডেন্ট আরও বলেন যে,যাহারা প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের দাবীতে চেঁচামেচি করিচেতে তাহারা প্রকৃতপক্ষে দেশের দুইটি অংশের বিছন্নতা কামতা করে। কিন্তু প্রকাশ্যে এই কুমতলব স্বীকার করার মতো সৎসাহস তাহাদের নাই। এই জন্যই জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করিতেছে।
বিপর্যয় সৃষ্টি হইবে
তিনি এই মর্মে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন যে,প্রাদেশিক স্বাতত্বশাসনের প্রশ্নে শসনতন্ত্রে কোন পরিবর্তন সাধন করা হইলে বিপর্যয় সৃষ্টি হইবে। তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্থানীরা পূর্ব পাকিস্থানীদের ভালবাসা ও বন্ধূত্ব কামনা করে। বিভিন্ন উন্নয়ন্মূলক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্থান অগ্রাধিকার লাভ করিতেছে বলিয়া প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,এই প্রদেশ বর্তমানে বার্ষিক ২ শত টাকা লাভ করিতেছে,কিন্তু সসামরিক শাসনপূর্ব কালে ইহার ৬ কোটি টাকা ব্যয় করার ক্ষমতাও ছিল না। কাজেই এই অবস্থান পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি পূর্ব পাকিস্থানীর কর্তব্য হইতাছে নিজেকে আরও খাঁটি পাকিস্থানী হিসেবে প্রমাণ এবং জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠায় সহয়তা প্রদান।
বিস্ময়কর অগ্রগতি
প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন যে, ৮ বতসরের পূর্ব পাকিস্থানের শিল্প ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধণ করিয়াছে। বিস্ময়কর অর্থনৈতিক অগ্রগতির দরুন পাকিস্থান বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সামরিক শাসনের পূর্বে দেশ চরম অবনতির গহ্বরে পতিত ছিল। দেশে তৎকালে কোন উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তব্যন করা হয় নি। রাজনীতিকরা শুধু ক্ষমতার দ্বন্দ লইয়াই ব্যস্ত ছিলেন।
পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র
বিরোধী দলসমহের প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন ও পার্লামেন্টারী গনতন্ত্রের দাবীর উল্লেখ করিয়া তিনি বলেন যে, বিপ্লবের পূর্বে দেশে এই ব্যবস্থা চালু ছিল এবং জনসাধারণের এই ব্যবস্থাসমূহের পূর্ব অভিজ্ঞতা রহিয়াছে। তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনপূর্ব যুক্তফ্রন্টের সমালোচনা করেন এবং বলেন যে, ইহা দেশে রাজনৈতিক বিবাদ-বিসস্বাদ,বিভ্রান্তি ও অনৈক্যের সৃষ্টি করিয়াছিলেন। ঐ সময় দেশে দ্রুত সরকার পরিবর্তন হইত। তিনি বলেন, এই ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হইলেই বা ইহার পক্ষে জনসাধারণের কি কল্যানণ সাধন করা সম্ভব।