You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.06.09 | পুলিশের গুলি বর্ষণ সংক্রান্ত মূলতবি প্রস্তাব বাতিলের বিরোধী দলের জাতীয় ও প্রাদেশিক উভয়ই পরিষদ কক্ষ বর্জন | দৈনিক ‘সংবাদ’ - সংগ্রামের নোটবুক
    শিরোনাম      সুত্র      তারিখ
পুলিশের গুলি বর্ষণ সংক্রান্ত মূলতবি প্রস্তাব বাতিলের বিরোধী দলের জাতীয় ও প্রাদেশিক উভয়ই পরিষদ কক্ষ বর্জন দৈনিক ‘সংবাদ’ ৯ইজুন,১৯৬৬

পুলিশের গুলি বর্ষণ সংক্রান্ত মূলতবি প্রস্তাব বাতিলের বিরোধী      দলের জাতীয় ও প্রাদেশিক উভয়ই পরিষদ কক্ষ বর্জন

রাওয়ালপিন্ডি,৮ই জুন(এ,পি,পি)ঃ অদ্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে বিরোধী দল কর্তৃক উত্থাপিত পূর্ব পাকিস্তানে পুলিশের গুলি বর্ষণ সংক্রান্ত তিনটি মূলতবি প্রস্তাব স্পীকার জনাব আব্দুল জববার খান বাতিল করায় উহার প্রতিবাদে বিরোধী দলীয় সদস্যগণ পরিষদ কক্ষ বর্জন করেন।স্পীকার তাহার চেম্বারেই মূলতবি প্রস্তাব তিনটি অগ্রাহ্য করেন।

স্পীকারের মূলতবি প্রস্তাব তিনটি অগ্রাহ্য করার নিয়মতান্ত্রিকতা সম্পর্কে বিরোধী দলের নেতা জনাব নূরুল আমীন পরিষদে বক্তব্য পেশ করিতে ওঠেন।তিনি বলেন,বাহিরে যে সমস্ত গুলি বর্ষিত হইতেছে,সেই মুহূর্তে তাহদের জাতীয় পরিষদে বসিয়া থাকার কোণ যৌক্তিকতা নাই।তিনি ইহাকে “অবাস্তব পরিস্থিতি” বলিয়া আখ্যায়িত করেন।স্পীকার জনাব নূরুল আমিন বারংবার বসার অনুরোধ জানান এবং বলেন রূলিং চ্যালেঞ্জ করিতেছেন না,তবে মূলতবি প্রস্তাবের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলিতেছেন।অতঃপর স্পীকার বলেন যে,তিনি মূলতবি প্রস্তাবের উপর কোনরূপ আলোচনা করিবেন না।

এই সময় পরিষদ কক্ষে প্রবল হৈচৈ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।এই সময় বিরোধীদলীয় নেতা জনাব নূরুল আমীন উহার প্রতিবাদে বিরোধীদলীয় সদস্যদের পরিষদ বর্জনের আহবান জানান।তিনি আরোও বলেন যে,জনগণের মনোভাব প্রতিফলনেরই নিমিত্তে তাহার পরিষদে প্রেরিত হইয়াছেন।গুলীবর্ষণের উপর উত্থাপিত মূলতবি প্রস্তাবের গুরত্ব সম্পর্কে আলোচনার অধিকার হৃত হওয়ার পর পরিষদে আসন গ্রহণ করার আর কোন যৌক্তিকতা নাই।

এই সময় কতিপয় স্বতন্ত্র দলীয় সদস্যসহ বিরোধীদলীয় সদস্যগণ পরিষদ কক্ষ বর্জন করেন।

প্রাদেশিক পরিষদ

ঢাকা, ৮ই জুন (এ,পি,পি)ঃ নারায়নগঞ্জে পুলিশের গুলিবর্ষণ সংক্রান্ত মূলতবি প্রস্তাব স্পীকার কর্তৃক প্রত্যাখাত হওয়ার প্রতিবাদে অদ্য প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় ও স্বতন্ত্র গ্রুপের সদস্যবৃন্দ পরিষদ কক্ষ বর্জন করেন।বিষয়টি বিবেচনাধীন রহিয়াছে বলিয়া স্পীকার উহা প্রত্যাখ্যান করেন।

আমাদের নীরব প্রতিবাদ

যে মর্মান্তিক বেদনাকে ভাষা দেওয়া যায় না সেখানে নীরবতাই একমাত্র ভাষা।তাই গতকল্য ‘সংবাদ’ প্রকাশিত হইতে পারে নাই।আমাদের এই নীরব প্রতিবাদ একক হইলেও ইহাতে আমাদের পাঠকরা ও শরিক হইলেন,ইহা আমরা ধরিয়া লইতেছি।

কর্মধাক্ষ্য, “সংবাদ”

দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনা বাতিল – পাকিস্তান অবজারভার, ১৮জুন ১৯৬৬

ইস্ট পাকিস্তান ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টের তীব্র নিন্দা প্রকাশ

দৈনিক ইত্তেফাকের প্রেস বাজেয়াপ্ত

শুক্রবার পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের আদেশে নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করার পরে সরকার “ইত্তেফাক-একটি বাংলা দৈনিক” যার প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়।

পাকিস্তান রুলস অফ ডিফেন্সের বিধি ৫২- এর উপ-বিধি ২ অনুসারে নিয়ন্ত্রণমূলক বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে উক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

[Two week lies of Dacca,]পত্রিকা ঢাকা টাইমস ও পূর্বাণী – একটি বাংলা সিনেমা পত্রিকা যা সহযোগী প্রকাশনা, এই বাজেয়াপ্তের ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কারণ নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেসে এই দুইটি পত্রিকাও ছাপানো হত।

আদেশটি শুক্রবার সকালে জনাব তফাজ্জল হোসেন, ইত্তেফাকের সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক –এর নামে জারি করা হয়,কিন্তু এক মাসের মধ্যে প্রাদেশিক সরকারের নিকট  এই আদেশটি বাতিল, সংশোধন ও সরকারিভাবে তুলে নেয়ার জন্য একটি উপস্থাপনা করা যাবে।

পত্রিকাটির বিরুদ্ধে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন ও অখন্ডতার ক্ষতিসাধন করতে পারে বা এর উদ্দেশ্যে  প্রতিবেদন, মন্তব্য, মতামত ও বক্তব্য প্রকাশে অভিযুক্ত করা হয় যা নিষেধাজ্ঞামূলক অর্ডার লঙ্ঘন ।

এটা আরো অভিযোগ করা হয় যে, পত্রিকাটিতে বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকদের মধ্যে শত্রুতা বা ঘৃণা তৈরি করতে পারে বা করার উদ্দেশ্যমূলক উপাদান প্রকাশ করা হত।

প্রকাশিত উপাদানের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য অভিযোগগুলো হচ্ছে-  ছাত্রদের ধর্মঘট, আন্দোলন, অস্থিরতা ইত্যাদি এবং গত ৭ জুন আওয়ামীলীগের প্রতিবাদ দিবস পালন।

উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংবাদপত্রটি বেশ কয়েকবার বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করেছে।

আরো উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হোসেনকে পাকিস্তান রুলস অফ ডিফেন্সের অধীনে তার নিজস্ব বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ইস্ট পাকিস্তান ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টের পদক্ষেপ

ইস্ট পাকিস্তান ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টের নির্বাহী পরিষদের বর্ধিত জরুরি বৈঠকে গত বৃহস্পতিবারে সরকার কর্তৃক দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হোসেনের গ্রেফতার ও নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেসের বাজেয়াপ্তের ব্যাপারে গুরুত্বর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ।

বৈঠকটি সরকারের এই পদক্ষেপটিকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা , সামগ্রিকভাবে সম্পূর্ণ সংবাদপত্র শিল্প এবং এর সাথে জড়িত ও কর্মরত  সাংবাদিক, বিপুল সংখ্যক ছাপাখানার কর্মী, হকার ও এজেন্টদের জীবিকার উপর গণনালব্ধ  আঘাত হিসেবে বিবেচনা করছে ।

সভায় সরকারের সম্ভাব্য শক্তিশালী কঠোর পদক্ষেপের প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয় এবং নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেসের প্রতি জারীকৃত বাজেয়াপ্ত আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি করা হয় ।

সভাটিতে বিবেচিত মতামত ছিল যে,  ডিফেন্স অফ পাকিস্তান রুলস এর অধীনে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর সরকারের ক্রমাগত আঘাতগুলো  সরকার এবং সংবাদপত্র মালিক ও সম্পাদকের মধ্যে সংঘটিত যা “ভদ্রলোকের চুক্তি” নামে পরিচিত এবং যাতে বিশেষ প্রেস আইন রয়েছে তারও বিরোধিতা করে।  হামলাগুলো সংবাদপত্র শিল্পের সব বিভাগ- কর্মরত সাংবাদিক, ছাপাখানার শ্রমিক, সম্পাদক এবং সংবাদপত্রের মালিকের উপর পরিচালিত হচ্ছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তোলা এবং সরকার কর্তৃক সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সৎ ও আন্তরিক সংবাদপত্র শিল্পের উপর    আঘাতের মাধ্যমে যে গুরুত্বর চ্যালেঞ্জ তৈরি করা হয়েছে,  সেটা মোকাবেলা করার জন্য সংবাদপত্রের সম্পাদক, স্বত্বাধিকারী,ছাপাখানার শ্রমিক ও পাকিস্তানের সর্বত্র কর্মরত সাংবাদিকদের এই বৈঠক থেকে আহ্বান জানানো হয়।

সভা থেকে পাকিস্তান রুলস অফ ডিফেন্সের অধীনে আটক  দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হোসেন ও সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য দাবি করা হয়।

সভায় নির্বাহী পরিষদের জরুরি বৈঠকে পাকিস্তান ফেডারেল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টকে যোগদান এবং ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে বিস্তারিত কর্মসূচির কাঠামো তৈরি করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

সংকল্প গ্রহণ করার পরে সভা সমাপ্ত করা হয় এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে অধিকতর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবার শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় সভায় মিলিত হওয়ার কথা বলা হয়।